উপমহাদেশের অন্যতম আলোচিত এবং প্রায়শই বিতর্কিত চিত্রশিল্পী ছিলেন মকবুল ফিদা হুসেন। তাঁর কাজ সম্মানিত হয়েছে সারা পৃথিবীতেই। গেল শতকের চল্লিশ দশকের শেষের দিকেই এম. এফ. হুসেন চিত্রশিল্পী হিসেবে শিল্পের আঙ্গিনায় পরিচিতি পেতে শুরু করেন। যদিও তাঁর ক্যারিয়ারের শুরু কিন্তু সামান্য পারিশ্রমিকে সিনেমার ব্যানার আর পোস্টার আঁকার মাধ্যমে।
মাত্র দুই বছর বয়সে হারিয়েছেন মা জয়নবকে। মায়ের সাথে কোনো স্মৃতি, মায়ের মুখটাও তাঁর কাছে অস্পষ্ট বলেই সারা জীবন মায়ের মুখ এবং স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করেছেন। যার প্রতিফলন পাওয়া যায় তাঁর চিত্রকর্মেও মূর্তিমতী করুণা মাদার তেরেসার সাথে শিশুর ভালোবাসার প্রগাঢ় বন্ধন ও স্নেহময়ী ছবি আঁকলেও তাতে মাদারের মুখের ছবি স্পষ্ট নয়।
এঁকেছেন ঘোড়া সিরিজ। হুসেন এই ঘোড়াগুলোকে পুরুষ ও নারীর মিলিত রূপ হিসেবে চিন্তা করতেন। একাধিক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ঘোড়ার সামনের দিকটা পুরুষ। তেজি, দুরন্ত গতিতে ছুটে চলার প্রতীক আর পরের দিকটা নারী। শান্ত, সৌন্দর্য আর ভালোবাসার প্রতীক। হুসেনের ঘোড়া সিরিজ এতোই জনপ্রিয় হয় যে, বলিউডের জনপ্রিয় সিনেমা ‘লেডিস ভার্সেস রিকি বেহেল’-এ হুসেনের ঘোড়া চুরি করার গল্প পর্যন্ত দেখানো হয়েছে।
আধুনিকতার পাশাপাশি হুসেন পৌরাণিক প্রেক্ষাপটেও চিত্রকর্ম এঁকেছেন। পৌরাণিক কাহিনী, রামায়ণ, মহাভারতের বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে হুসেন ক্যানভাসে নিজের ভাবনার রূপায়ণ করেছেন। হিন্দু দেবীর নগ্ন রূপ এঁকে বিতর্কিত হয়ে নিজের জন্মস্থান ছাড়তে হয়েছে তাঁকে।
শুধু ক্যানভাসেই থেমে থাকেননি। ১৯৬৭ সালে ‘থ্রু দ্য আইজ অব আ পেইন্টার’ নামে ১৮ মিনিটের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন যা বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন বিয়ার জয় করে। ১৯৩৪ সালে মাত্র দশ রুপিতে চিত্রকর্ম বিক্রি করা হুসেন মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করেছেন নিজের কাজ, যা রেকর্ডও গড়েছে। ভারতীয় শিল্পীর আঁকা ছবিও যে মিলিয়ন ডলার দামে বিক্রি হতে পারে তার নমুনাও দেখিয়েছেন এম. এফ. হুসেনই।
১৯৫০ সালে বোম্বেতে (বর্তমান মুম্বাই) হয়েছিল হুসেনের প্রথম একক প্রদর্শনী। যদিও বাংলাদেশের শিল্পমনারা তাঁর একক প্রদর্শনী দেখছেন শিল্পীর মৃত্যুর পরে, উত্তরার গ্যালারি কায়ায়। ভারতের দুই সংগ্রাহক গণেশ প্রতাপ সিং ও বিনয় এম শেঠের সংগ্রহশালা থেকে কিংবদন্তি এই শিল্পীর চিত্রকর্মগুলো বাংলাদেশে প্রদর্শনীর জন্য নিয়ে এসেছেন গ্যালারি কায়ার পরিচালক গৌতম চক্রবর্তী। ‘মকবুল ফিদা হুসেন : জার্নি ইন গ্রাফিকস’ শীর্ষক প্রদর্শনীটি শুরু হয়েছে ২৪ জানুয়ারি। চলবে ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা এগারটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।