সারা রাত চোখের পাতা এক করা যায়নি! সারা দিন পার করতে হয়েছে ঘুমঘুম চোখে। আশপাশের প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গেও অযথাই কথা কাটাকাটি হচ্ছে, আসলে কথা বলার ধরণটাই এমন হয়ে গেছে যে সবাই ভাবছে তাদের ওপর চটে আছি! কিন্তু মাথার মধ্যে কি অস্বস্থিকর অনুভূতি কাজ করছে তা আসলে অন্যদের বোঝানো মুশকিল।
‘অ্যাংজাইটি’ এবং ‘নার্ভাস ব্রেকডাউন’ এমন মানসিক অবস্থাগুলো নিয়ে যারা দিন কাটান তাদের জন্য উপরের পরিস্থিতিগুলো বেশ পরিচিত। আবার অনেকে এই সমস্যাগুলোর সঙ্গে পরিচিত হলেও এর গোড়ার কারণগুলো সম্পর্কে জানেন না।
‘নার্ভাস ব্রেকডাউন’-কে মূলত কোনো অসুস্থতা হিসেবে ধরা হয় না। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, আর্থিক অস্থিতিশীলতা, সম্পর্কের টানাপোড়ন, বেকারত্ব, পারিবারিক কলহ আবার অনেক সময় নিজের উপর অসুন্তষ্টি থেকেও এই সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে বিভিন্নভাবে ব্যস্ত রাখা, হালকা ব্যয়াম, বাইরে হাঁটাহাঁটি করা ইত্যাদি সাহায্য করতে পারে। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে ঘরের বাইরে বের হওয়া একেবারেই সম্ভব নয়।
তাছাড়া এই সময়ে যে শুধু মাত্র যারা মানসিক অস্বস্থিতে ভুগছেন তাদের জন্য ক্ষতিকর তা নয়, এই অবস্থা সবার জন্যই মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আইসোলেশনে থাকার কারণে নিজের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হতে পারে যে, বর্তমান পরিস্থিতি আমার নিয়ন্ত্রণে নেই বা আমি সবার থেকে বিচ্ছিন্ন। দীর্ঘ সময় বাসায় কাটানোর কারণে দিনগুলোকে দীর্ঘ মনে হতেই পারে। আর নিত্যদিনের রুটিনে ছন্দপতনের ফলে সব কিছু এলেমেলো লাগাটাও সাভাবিক।
সারাদিন ঘরে থাকার কারণে তরুণদের ক্ষেত্রে রাত জাগার প্রবণতাও বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। আর অপর্যাপ্ত বা ঘুমের অনিয়মের কারণে মানসিক অস্থিতিশীলতা খুব স্বাভাবিক।
এখন দিন দিন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর এই অবস্থায় অবসাদ, ভয়, অনিশ্চয়তা, অতীতের কোনো স্মৃতি বারবার মনে উঁকি দেওয়া, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি মানসিক সমস্যা সবার ক্ষেত্রেই হতে পারে।
এমন পরিস্থিতে নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। কারণ বর্তমান পরিস্থিতি রাতারাতি বদলে ফেলার ক্ষমতা কারো হাতে নেই। তাই এ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করে বরং নিজেকে কিভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পরলে তা শারীরিক অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
‘নার্ভাস ব্রেকডাউন’ থেকে নিজেকে সামলে নেওয়ার আসলে কোনো ধারাবাঁধা নিয়ম বা উপায় নেই। একেক জনের ক্ষেত্রে একেক ভাবে এটি কাজ করে। তাছাড়া একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের উপরও নির্ভর করে সে কতটা সহজে এই কোয়ারেন্টিনের সময়টি পার করতে পারবেন। যারা একটু ‘এক্সট্রুভার্ট’ তাদের জন্য এই সময়টি তুলনামুলকভাবে কিছুটা কঠিন। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা মানুষের মধ্যে এবং ঘরের বাইরে সময় কাটাতে পছন্দ করেন।
এই সমস্যা থেকে নিজেকে বাঁচাতে কিছু সাধারণ বিষয় মেনে চলা যেতে পারে।
– সারাদিন ঘরে কাটানোর কারণে আমরা অনেকেই রুটিন মেনে চলার প্রয়োজন অনুভব করি না। তাই শুরুতেই নিজের জন্য একটি রুটিন করে নিতে পারেন। এতে করে খাওয়া, ঘুম এবং প্রতিদিনকার কাজের মধ্যে কিছুটা সামঞ্জস্যতা ফিরে আসবে।
– ঘরে বসে ব্যয়াম করা যাবে না এমন কোনো কারণ নেই। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে কিছুটা সময় ব্যয়াম করুন। ব্যয়াম শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপোকারী।
– একঘেঁয়েমি কাটাতে একেক দিন একেকটি কাজ করতে পারেন। কাবার্ড গোছানো, ঘরের আসবাবের স্থান পরিবর্তন এবং ঘর পরিষ্কার করা, শখের বই বা গেইমের সিডিগুলোতে ধুলো জমলে তা ঝেরে পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি সময় কাটানোর বেশ ভালো উপায়। এমনকি এই সুযোগে রান্নাটাও শিখে নিতে পারেন, যদি না জানা থাকে।
– দেখা করা সম্ভব না হলেও বন্ধু এবং প্রিয় মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগে বাঁধা নেই। তাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন এতে মন ভালো থাকবে।
– বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ রাখা এখন খুবই জরুরি। তাই বলে অনিশ্চয়তা নিয়ে বেশি চিন্তা করা উচিত নয়। সচেতন থাকুন এবং নিয়ম মেনে থাকুন। তবে অতিরিক্ত চিন্তা এবং গুজব এড়িয়ে চলুন।
– গান শুনুন, ভালো গল্প বই পড়ুন, সিনেমা দেখুন, যা করতে ভালো লাগে সেগুলো করে সময় কাটান।
ঘরের শিশুদেরও এই সময় মানসিক অস্বস্থি অনুভব হওয়া স্বাভাবিক, তাই তাদের দিকে বিশেষ নজর দিন। খেয়াল রাখুন শিশুরা যেনো অবশাদগ্রস্থ না হয়ে পরে।
সব শেষে যদি কোনোভাবে নিজেকে সামলানো সম্ভব না হয় তাহলে কাছের মানুষদের সঙ্গে কথা বলুন। সমাধান না পেলেও অনেক সাময়িক স্বস্থি পাওয়া যেতে পারে। এই পরিস্থিতে হাল না ছেড়ে নিজেকে এবং পরিবারকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করতে হবে।