অদ্বিতী ইরা
কোভিড ১৯ বা করোনাভাইরাস আক্রান্ত হবার অন্যতম লক্ষণগুলো হলো জ্বর, কাশি, দম আটকে আসা, বমি, নাক দিয়ে পানি আসা, গলা ব্যথা ইত্যাদি। যাদের সংক্রমণের মাত্রা বেশি হয় তাদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট এবং জ্বরের মাত্রা বেশি থাকে। তাই এই সময় যাদের ফুসফুস সুস্থ তাদের জন্য এই সমস্যা উতরে ওঠা কিছুটা সহজ হতে পারে।
সুস্থ শরীরের জন্য যেমন সঠিক খাদ্যাভ্যাস জরুরি, তেমনি ফুসফুসের সুস্থতা নিশ্চিত করতেও সঠিক খাবার খাওয়া উচিত। এই প্রতিবেদনে এমনই কিছু খাবার তুলে ধরা হলো যেগুলো ফুসফুস সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
পানি
শরীরের জন্য পানি কতটা জরুরি তা নিয়ে নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। পর্যাপ্ত পানি রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে। সঠিক রক্ত সঞ্চালন ফুসফুসের জন্য জরুরি। তাছাড়া পানি ফুসফুসের আর্দ্রতা ধরে রাখে। ফুসফুসে শ্লেষার মাত্রা ধরে রাখতেও সাহায্য করে পানি। সঠিক মাত্রায় শ্লেষা টক্সিন, মাইক্রবস এবং দূষণ পরিষোধিত করে ফুসফুস সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আপেল
গবেষকদের মতে সুস্থ ফুসফুসের জন্য ভিটামিন সি, ই এবং বেটা ক্যারোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই প্রতিটি উপাদান পাওয়া যায় আপেলে। আপেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফুসফুস সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আখরোট
আখরোটে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। প্রতিদিন এক মুঠ আখরোট খেলে তা শ্বাসকষ্ট সহ অন্যান্য ফুসফুস জনিত রোগ উপশমে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ব্রোকলি
ব্রকলিতে প্রচুর ভিটামিন সি এবং ক্যারাটেনয়েডস সহ অন্যান্য জরুরি পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে যা ক্ষতিগ্রস্থ ফুসফুস সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
পেঁয়াজ ও রসুন
আমাদের খাবারের তালিকায় প্রায় প্রতিদিনই এই দু’টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। খুবই পরিচিত এই দুইটি খাবার হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের জন্য খুবই উপকারী। পেঁয়াজ ও রসুন ইনফ্লেমেশন কমায় এবং কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষা করার পাশাপাশি প্রদাহ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপায়ীদের মধ্যে যারা কাঁচা রসুন খেয়ে থাকেন তাদের ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৪০% কমে আসে।
আদা
আদায় থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপদান ফুসফুসে জমে থাকা দূষণ পরিশোধিত করতে সাহায্য করে। এমনকি ফুসফুসে যেনো বাতাস স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে সেই ক্ষেত্রেও কার্যকর ভূমিকা পালন করে আদা। শুধু ফুসফুসের জন্য নয়, শরীরের জন্য আদা অত্যন্ত উপকারী।
মরিচ
মরিচে রয়েছে ক্যাপসাইসিন নামক একটি উপাদান যার কারণে এটি মূলত ঝাল স্বাদ হয়। ক্যাপসাইসিন রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে ও প্রদাহ সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে।
ফুলকপি, ব্রকলি, বাধাকপি
কপি জাতীয় খাবার ফুসফুসের ক্যান্সার রোধে সহায়তা করে। এই সবজিগুলোতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এছাড়া এতে থাকা ক্লোরোফিল রক্ত তৈরিতে এবং রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
বেদানা
বেদানার রস ফুসফুসে টিউমার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। তাছাড়া এতে রয়েছে কিছু বিশেষ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার রোধে সহায়তা করে।
হলুদ
হলুদে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের কোষ নষ্ট করতে সাহায্য করে। এছাড়া হলুদে রয়েছে কাকিউমিন নামক একটি উপাদান যা শ্বাসকষ্ট উপশমে সাহায্য করে।
গাজর
গাজরে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ, সি, লাইকোপেন সহ আরও বেশ কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। এই উপাদানগুলো ফুসফুসকে সুস্থ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
কমলা
ভিটামিন সি এবং বিসিক্স সমৃদ্ধি এই ফলটি ফুসফুসে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে। তাছাড়া কমলায় রয়েছে বেশ কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ফুসফুস সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
মিষ্টি কুমরা
গাজরের মতো মিষ্টি কুমরাতেও রয়েছে প্রচুর বেটা ক্যারটিন এবং ভিটামিন সি। তাছাড়া এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফুসফুস ও প্রোস্টেট ক্যান্সার রোধে সহায়তা করে।
করোনা থেকে বাঁচতে ঘরে থাকা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। কারণ যেকোনো শারীরিক অসুস্থতা থেকে বাঁচতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।