কার জার্সি সবচে’ সুন্দর?

এমনিতেই এখন সারাদেশে চলছে ‘অপরাধী’ ক্রেজ। বাচ্চা-বুড়ো-তরুণ-তরুণী-ছাত্র-খেলোয়াড়-শ্রমিক-চাকুরে সবাই বিভিন্নজনকে গেয়ে গেয়ে ‘অপরাধী’ বানিয়ে চলছেন। সেখানে আমি এখন যা নিয়ে বলতে এসেছি তাতে আমাকেও কোনো না কোনো গোষ্ঠীর অপরাধী সাব্যস্ত না করে উপায় নেই। করুন অপরাধী, শাস্তি মাথা পেতে নেবো ইয়োর অনার। তবে তার আগে জানিয়ে দেই রাশিয়া বিশ্বকাপে কার জার্সি বেশি সুন্দর আর কারটা কম তা আমার একার মতামত নয়। বিভিন্ন এক্সপার্ট আর ভক্তজনের মাঝে চালানো জরিপেই বেরিয়ে এসেছে এই র‌্যাংকিং। আবার কেউ যদি বলতে চান, জার্সিতে কী বা আসে যায়? তাহলে ফুটবলবোদ্ধা না হয়েও বলতে পারি একটা দলকে আপনি কিন্তু প্রথম চিনছেন তাদের জার্সি দিয়েই। এতে কিছু বিষয় আসে-যায় অবশ্যই। আবার বড় আসরে কার জার্সি কেমন হবে তা নিয়ে চলে অনেক পরিকল্পনা। জার্সিতে শুধু দেশের গর্ব নয়, স্পন্সরশিপ আর ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্টও জড়িয়ে থাকে। সবমিলে প্রতি আসরেই হয় ডিজাইনে, নয়তো কাটিং, কিংবা কালার শেডে কিছু না কিছু বদল ঘটেই। এবারও দলগুলোর জার্সিতে তেমনটাই ঘটেছে। চূড়ান্ত ডিজাইনের ভিত্তিতেই কিছু জার্সি পেয়েছে প্রশংসা, কারোটায় জুটেছে গালি। এই র‌্যাংকিংটি তৈরি হয়েছে হাইস্নবিটি ডট কম নামের একটি অনলাইন লাইফস্টাইল স্টোর সাইটের পরিচালনায়। খেলার ফলাফলে যাই-ই হোক, জার্সির র‌্যাংকিং অনুযায়ী ‘বাজে ছয়’ আর ‘সেরা ছয়’ দেওয়া হলো এখানে। এই দুই তালিকার বাইরে উল্লেখযোগ্য দেশগুলোও ঠাঁই পেয়েছে আলাদা তালিকায়। সাথে ব্র্যাকেটে দেয়া আছে জার্সি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম। এবার দেখুন তো আপনার প্রিয় দলের জার্সি কতো নম্বরে?

বাজে ৬ জার্সি: (৩২ থেকে ২৭)

সুইজারল্যান্ড (পুমা)

সুইসদের জার্সি হতাশ করেছে ভক্তদের

এমন জার্সিতে একটা হাইস্কুল ফুটবল টিমও মাঠে নামতে লজ্জা পাবে। এমনই সাধারণ রাস্তার ধারের দোকানে বিকোনো কোয়ালিটির ডিজাইন নাকি সুইশ জাতীয় দলের জার্সির।

সৌদি আরব (নাইকি)

সৌদিদের জার্সিটাও হয়েছে খানিকটা হতাশাজনকই

সৌদি দলকে নিয়ে বেশি আশাবাদী হওয়া ততোটাই সম্ভব নয়, ঠিক যতোটা বোরিং তাদের এই জার্সি।

অস্ট্রেলিয়া (নাইকি)

কাহিল অবস্থা টিম কাহিলের দলের জার্সির

বলা হচ্ছে সকারুদের সলিড ইয়েলোর উপর সবুজ শিরাসদৃশ ডিজাইনের এই জার্সি জৌলুশহীন একটা দাবা টুর্নামেন্টের ডিজাইনের থেকেও নিস্প্রভ।

ইংল্যান্ড (নাইকি)

ব্রেক্সিটের হতাশা ছুঁয়েছে ইংলিশদের জার্সিকেও

খুবই সাধারণ দেখতে। কেতাদুরস্ত ইংরেজরা হয়তো এতেই খুশিও থাকতে পারেন। কিন্তু এটা ডেভিড বেকহামের মতো স্টাইল আইকনের দেশের জার্সি, তা ভুলে যাওয়াটা কি ঠিক হবে?

সুইডেন (অ্যাডিডাস)

মাঠে ইব্রা একাই একশো কিন্তু এই জার্সিতে কি তরী পার হবে?

জার্সি কে পরছে তা হয়তো একটা বিষয়। নইলে ইব্রাহিমোভিচরা যখন পরেছেন তখন এই হলুদের মধ্যে নীল ট্রিমওয়ালা জার্সিটা নাকি এতোটা সাদামাটা লাগেনি।

মরক্কো (অ্যাডিডাস)

মরক্কোর জার্সি নিয়ে হতাশ জার্সির রেপ্লিকা ব্যবসায়ীরাও

অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে সস্তা রেপ্লিকা না বানাতে পারে তার জন্য মরক্কোর এবারের জার্সিটা অনেক দেরিতে উন্মোচন করা হয়েছিলো। তারপর যখন দেখা গেলো এই হাল, বলতেই হয় অপেক্ষার মর্যাদা রাখা হয়নি।

সেরা ৬ জার্সি (৬ থেকে ১)

রাশিয়া (অ্যাডিডাস)

আয়োজকদের জার্সি বলে কথা!

স্বাগতিক রাশিয়ার জার্সি হয়েছে ৬ষ্ঠ। ডিজাইনে অনুপ্রেরণা রেট্রো লুক। আশির দশকের শেষভাগে যখন তারা সোভিয়েত ইউনিয়ন নামে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় হয়েছিলো, সেসময় নাকি তাদের জার্সিটা ছিলো এরকমই।

স্পেন (অ্যাডিডাস)

টিকিটাকার দিন ফুরালেও স্পেন জার্সির মান কিন্তু সেই!!

স্পেনের পরিচিত রেডের আধিপত্যের উপর ডায়মন্ড চেকারবোর্ড ইফেক্ট, একপাশে ইয়েলো আর পার্পল কালারের উপস্থিতি নিয়ে জার্সিটি পেয়েছে পাঁচ নম্বর স্থান।

পেরু (আমব্রো)

সুন্দর এই জার্সি পরে পেরু কি পারবে?

হোয়াইটের উপর রেড স্যাশে টাইপড স্ট্রাইপ নিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপে এসে পেরুর জার্সি পেয়েছে চতুর্থ স্থান। তাদের বিকল্প জার্সিটা আসলেও বিকল্প ডিজাইন। রিভার্সড। রেডের উপর হোয়াইট স্যাশে।

জাপান (অ্যাডিডাস)

নীল হয়েছে জাপান। বেদনায় নয়, বিশ্বকাপে

প্রথম দেখায় মনে হবে নীল জমিনে নকশিকাঁথার বুনন। তবে আসলে এটা প্রাচীন সামুরাই যোদ্ধার পোশাক প্যাটার্ন থেকে অনুপ্রাণিত। যেখানে বাকিরা ৮০-৯০ এর দশক থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজেছে, জাপান সেখানে রেট্রো ইন্সপিরেশনে সবার থেকে এগিয়ে। নাকি পিছিয়ে?

জার্মানি (অ্যাডিডাস)

ভালো হয়েছে কিন্তু আরও ভালো করতে হবে

ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানি এ তালিকায় অল্পের জন্য চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। নব্বই দশকের শুরুর দিককার রেট্রো (আবারো রেট্রো) ডিজাইনের সুবাদে হয়েছে রানার্স আপ।

নাইজেরিয়া (নাইকি)

নাইজেরিয়া এবারে হিট!

এবং সেরা জার্সি তালিকায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সুপার ঈগলস নাইজেরিয়া। সাম্প্রতিক কিছু প্রতিযোগিতায় নাইজেরিয়ার জার্সি ডিজাইন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তৈরি হয়েছে এই মডার্ন লুকিং জার্সি। গ্রিনের একটি এক্সাইটিং শেডের উপর হোয়াইট শেভরন প্যাটার্ন, যেরকম কালো প্যাটার্ন আছে হাতাতেও। মাঠে যে তারা আফ্রিকার প্রতিনিধি, ডিজাইনেও মিলবে তার প্রমাণ।

অনারারি মেনশন:

পর্তুগাল (নাইকি), র‌্যাংকিং: ২১

CR-7 এর স্ট্যাইলের সাথে তাল মিলিয়ে উৎরে গেছে পর্তুগাল

স্টাইলিশ ক্রিস্টিয়ানো রোনালডোর জন্য তেমন স্পেশাল জার্সি ডিজাইন করে দেয়নি নাইকি। অন্যদের মতো রেট্রো ডিজাইন ট্রেন্ড অনুসরণ করে পর্তুগিজ রেডের উপর গ্রিন কলার আর কিছু জায়গায় গোল্ডেন টাচ দিয়েই ডিজাইন কমপ্লিট।

মিশর (অ্যাডিডাস), র‌্যাংকিং: ১৪

সালাহর মিশরও পিছিয়ে নেই

হালের সেনসেশন সালাহ তার সতীর্থদের সাথে যে জার্সি পরে খেলবেন সেটাকে এমনিতে আহামরি বলে মনে হবে না। তবে খুব কাছ থেকে দেখলে বোঝা যাবে এতে আছে সুন্দর চেক প্রিন্ট ডিজাইন।

ব্রাজিল (নাইকি), র‌্যাংকিং: ১৩

সেলেসাওরা থাকছেন

হলুদ-নীল চিরচেনা জার্সিতে সাম্বার দেশের ফুটবলারদের পায়ের নৃত্য দেখা ফুটবলেরও একটি চিরচেনা দৃষ্টিসুখকর দৃশ্য। এবারের জার্সিতে আছে ৭০-এর জার্সির মতোই উজ্জ্বল ‘সাম্বা গোল্ড’ কালারের উপস্থিতি।

উরুগুয়ে (পুমা), র‌্যাংকিং: ১২

প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী উরুগুয়ে আসছে সূর্যের রং মেখে

খুব খেয়াল করলে বোঝা যায় স্টাইলে উরুগুয়ের জার্সির সামনের অংশজুড়ে ‘সান’ মোটিফ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে পতাকার মতো এই সানের মাঝে চোখ আর দাঁত দেখানো মুখ নেই। কে জানে, হয়তো সুয়ারেজকে থামাতেই।

আর্জেন্টিনা (অ্যাডিডাস), র‌্যাংকিং: ১০

জার্সি গায়ে এক ভিনগ্রহের খেলোয়াড়

চিরপরিচিত আকাশি-সাদা সামনে আর পিঠে, দু’কাঁধে কালো স্ট্রাইপ। ম্যারাডোনা থেকে বাতিস্তুতা হয়ে মেসি এমন ক্লাসিক ডিজাইনের জার্সিতেই তো মাঠ মাতিয়ে চলেছেন।

ফ্রান্স (নাইকি), র‌্যাংকিং: ৭

লা ব্লুজ

লা ব্লুজ-দের মটো: আওয়ার ডিফারেন্স ইউনাইটস আস। অর্থাৎ আমাদের পার্থক্যগুলোই আমাদের একত্রিত করে। এই মটো প্রিন্টেড ব্লু’র দুই শেডের ডিজাইনটি ক্লাসি লুক দিয়েছে ফরাসীদের জার্সিকে।