ইদের পর আর যেসব কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে

ইদের পর কী হয়? কী হয় আবার? ইদের তৃতীয়দিন ঐচ্ছিক ছুটি। ওটাই প্রথম কর্মদিবস। ওইদিন বেশিরভাগ অফিস থাকে ফাঁকা, রাস্তাঘাটে যান চলাচল থাকে কম। সেদিন খবরের চ্যানেল খুললে একটা নিউজ কমন। সচিবালয় সহ বিভিন্ন কর্মপ্রতিষ্ঠানে লোকসমাগম তেমন ছিলো না, যারা এসেছেন তারা ইদ পরবর্তী কোলাকুলিতেই দিনগুজরান করেছেন। সাথে ফাঁকা রাস্তায় হাসিখুশি ট্রাফিক পুলিশ ও পথচারীর সাক্ষাৎকার। আর তার ক’দিন বাদের খবর- আস্তে আস্তে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে ঢাকা শহর, ইদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া নগরবাসী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। প্রতিবছর ইদের পর পর এমন ‘সিম্পল’ দৃশ্যই তো দেখে আসছি আমরা। এখন এমতাবস্থায় একটু ‘গর্জিয়াস’ বিষয়টা হলো ‘কঠোর আন্দোলন’। আনন্দের বিষয় হচ্ছে কয়েক বছরের বিরতির পর আবার ফিরে এসেছে সেই গর্জিয়াস বিষয়টির প্রতিশ্রুতি। তাই দেশবাসী ইদের পর সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস- কঠোর আন্দোলন পাবার আশায় বুক বাঁধতে পারে।

তবে ইদের পর কঠিন আন্দোলনের আওয়াজ তোলার এ মৌসুমী বাতাস কাজে লাগিয়ে সমাজের আরো কিছু জনগণ একই স্টাইলে ইদের পর কঠোর কর্মসূচির আশ্বাস প্রকাশ করতে পারেন। দেখবেন নাকি তার কয়েকটা?

জনৈক ফাঁকিবাজ ছাত্র: “ইদের পর পুরোদমে পড়ালেখার কর্মসূচি”

অনেক টাল্টিবাল্টি হয়েছে। আজ করি, কাল করি করে পুরো রোজার মাসটাই পড়ালেখা না করে কাটিয়ে দিলাম। শত্রুবেশী বন্ধুর প্ররোচনায় চায়ের দোকানে অনেক বেশি সময় ব্যয় হয়েছে। বইপত্রের সাথে সম্পর্ক না রাখতে রাখতে আমি তো সায়েন্স না কমার্স সেটাই ভুলে গেছি। যথেষ্ট হয়েছে। আর নয়। ইদের পরই পূর্ণ উদ্যমে পড়ালেখা করে পরীক্ষায় ফার্স্ট সেকেন্ড থার্ড হয়ে দেখানো হবে।

আজ করি, কাল করি করে পুরো রোজার মাসটাই পড়ালেখা না করে কাটিয়ে দিলাম।

জনৈক নিগৃহীত গৃহস্বামী: “ইদের পর অব্যাহত বঞ্চনার বিরুদ্ধে জোরদার কর্মসূচি”

দৈনিক কাঁচাবাজারের সামগ্রীতে খুঁত প্রাপ্তি থেকে শুরু করে মশারি টানানোয় কিঞ্চিত অনীহা এবং বাল্বের হোল্ডার ঠিক করায় অপারগতা প্রকাশের মতো সামান্য ঘটনার জের ধরে স্ত্রী কর্তৃক ক্রমাগত মানসিক চাপ সৃষ্টির বিরুদ্ধে ইদের পর পরই রুখে দাঁড়ানো হবে। নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ইতিমধ্যে অনেকবার চেষ্টা করেছি। তবে সেগুলোয় কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ না করায় ইদের পর নিগৃহীত হবার ওজরে জোরদার কর্মসূচি গৃহীত হবে। তাতে যদি ড্রয়িংরুমে ঘুমাতে হয় তা-ও রাজি। ইয়ে মানে, তার আগে সোফার ফোমগুলো বদলানো দরকার …।

ইয়ে মানে, তার আগে সোফার ফোমগুলো বদলানো দরকার …।

জনৈক কর্মজীবী: “ইদের পর মিটারে যেতে অপারগ সিএনজি চালকদের বিরুদ্ধে অবস্থান কর্মসূচি”

 

অফিসের জন্য বেরুতে সামান্য দেরি হয়ে যাবার পর বাধ্য হয়ে সিএনজি অটোচালকের দারস্থ হতে হয়। কিন্তু সে সময় এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মিটারে যেতে তো রাজি হয়ই না, দ্বিগুণ, তিনগুণ ভাড়া দাবি করে। অনেক সয়েছি এই অবিচার। ইদের পর আর এই অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। প্রয়োজনে অফিস-চাকরি-বেতন ইত্যাদির মায়া ত্যাগ করে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়ায় না যেয়ে সিএনজি অটোস্ট্যান্ডেই অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

অনেক সয়েছি এই অবিচার। ইদের পর আর এই অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।

জনৈকা সুন্দরী আপ্পি: “ইদের পর আটা-ময়দা মেখে ফেসবুক লাইভে না আসার দৃঢ় কর্মসূচি”

‘লাভার বয়’, ‘অবুজ মন’, ‘কী প্লাম তোমেয় বালোবেসে’-সহ বিভিন্ন ফেসবুক ইউজারের অভিযোগ আমি নাকি তাদের কমেন্টের রিপ্লাই দেই না। আরেহ্ আমার কি এতো সময় আছে? যাইহোক, ইদের পর তারা যাতে এমন অভিযোগ না করতে পারে তার কী করা যায় দেখবো। এছাড়া আমার হেটার্সরা বলে আমি নাকি আটা-ময়দা মেখে সেলফি তুলি, ঘনঘন লাইভে আসি (হাহা। আমি বুঝি না ওদের এতো জ্বলে কেনো)। তো কেউ যাতে এমন আর না বলে তাই ইদের পরই লাইভে আসা কিংবা মেকআপ করে সেলফি তোলা বন্ধ করে দেবো। হ্যাশট্যাগ নো-মেকআপ, #নো-ফিল্টার, #ক্যান্ডিড, #কিউট-মি, #ডেডি’স-প্রিন্সেস।

হ্যাশট্যাগ নো-মেকআপ, #নো-ফিল্টার, #ক্যান্ডিড, #কিউট-মি, #ডেডি’স-প্রিন্সেস।

জনৈক মোটিভেশনাল স্পিকার: “ইদের পর মোটিভেশন দেয়ার নামে নিজের গুণকীর্তন বন্ধের কঠিন কর্মসূচি”

ঠিক করেছি স্পিচ দেয়ার সময় আর কখনো নিজেকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে জাহির করবো না। কিন্তু স্পিচ দেয়া তো আর বন্ধ করা যাবে না। প্রতিদিন কতো কোম্পানি, ইউনিভারসিটি থেকে কল আসে, ফেসবুকে নক্ করে, ভাইয়া একটু মোটিভেট করে যান। ওদের ইগনোর করা পসিবল না। আফটার অল এই ইয়াং জেনারেশনকে জাগানোর জন্যই তো আমি। ওদের জন্যই স্যাটেলড লাইফকে গুডবাই বলেছি। সিক্স ডিজিটের স্যালারিকে ইগনোর করেছি। তারপরও আমাকে ট্রোল করছো তোমরা?

ঠিক করেছি স্পিচ দেয়ার সময় আর কখনো নিজেকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে জাহির করবো না।

এই ছেলে এই, তুমি কোন্ কোম্পানির জুতো পরো? তুমি কি জানো শার্টের হাতা কীভাবে ভাজ করতে হয়? জানোনা। আর আমার হাতে দেখো কতো দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি …।