ওরা কারা, ‘জারা’ লুঙ্গিকে জাতে ওঠালো?

দিনকয়েক আগে দেখলাম লুঙ্গির নাকি ব্যাপক উন্নতি। হাজার সাতেক টাকায় বিকোচ্ছে প্রায় লুঙ্গির মতো দেখতে একরকম পোশাক। চালাচ্ছে অবশ্য অন্য নামে। জনৈক মনীষী বলেছিলেন, লুঙ্গি আর কপাল কখন খুলে যায় বলা মুশকিল! তো খোদ লুঙ্গির কপালটাই যে এভাবে খুলে যাবে তা আগে জানলে এখনকার কুল+(হট)অঙ্গার জেনারেশন বাপ-চাচার লুঙ্গি ধরে টানাটানি শুরু করে দিতো। আহা, ওভাবে ভাবছেন কেনো? আমি তো আলনায় ঝোলানো লুঙ্গিটা টেনে নামানোর কথা বলছি। ডার্টি মাইন্ড! দুয়েকটা কাপড়ের ভাজে আটকে থাকলে লুঙ্গি বের করতে টানাটানি করতেই হবে।

আগে নাকি বাড়িতে মেহমান আসলে হাত-মুখ ধোয়ার পানির সাথে গামছা আর একটা লুঙ্গি এগিয়ে দেয়া হতো। বেয়াইন বাড়ি হলে তো কথাই নেই। অতিথি নতুন একটা লুঙ্গি পেতেনই। তো তারা, আই মিন, জারা যদি লুঙ্গিকে ওপরে তুলেই দেয় তাহলে তো আরো মুশকিল। আহা! আবার ডার্টি মাইন্ড। বলছি, লুঙ্গির দামের কথা। বেয়াইবাড়িতে কি কেলেঙ্কারির কথা ভেবে বসেছিলেন বলুন তো? যা ভাবেন, ভাবুন। তো যেটা বলছিলাম আর কী। দাম ওই ওপরে উঠে গেলে বেয়াই বাড়িতে লুঙ্গি পাবার আশা ছেড়েই দিতে হবে। যাবার সময় এক্সট্রা লুঙ্গিকে সফরসঙ্গী করতে ভুলবেন না।

কথা উঠতে পারে, ‘জারা’ যা বিকাচ্ছে তা মোটেও লুঙ্গি নয়। বরং হয় লুঙ্গির অপভ্রংশ কিংবা আপডেটেড ভার্শন। কারণ ওর মধ্যে জিপার আছে, ড্রেপ আছে। আবার মাপেও ছোটো। খালি প্রিন্টটাই লুঙ্গির সাথে মেলে। আচ্ছা, ধরলাম না হয় ওটা লুঙ্গিই। তাহলেও কি ‘জারা’-র সেটাকে লুঙ্গি না বলে স্কার্ট বলে চালানো জায়েজ আছে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় তো ভারতীয়, বাংলাদেশি অনেকেই ক্ষোভ জানিয়েছেন, কেন ‘জারা’ একবারও পোশাকটির অরিজিন কী, কোত্থেকে এসেছে এ বিষয়গুলো জানায়নি? কেন একটা অঞ্চলের কালচারকে এভাবে অস্বীকার করা হলো? হুম, গুরুতর অভিযোগ। লুঙ্গি যখন খুলেছে ‘জারা’, তখন এটা তো কর্তব্যই ছিলো। এই দাঁড়ান দাঁড়ান, আমি লুঙ্গি, মানে লুঙ্গি বেইজড নতুন একটা ডিজাইন-লাইন খোলার কথা ভাবছিলাম। আপনি কি ভাবছিলেন? যা হোক। এই দাবি তো আমরা করতেই পারি। আমাদের পোশাক বিক্রেতারা তাদের আউটলেট কিংবা ওয়েবসাইটে নিয়মিত শার্ট-প্যান্ট-ডেনিমের হিস্টরি, ঠিকুজি দিয়ে থাকে। ছেলেরা এখানে ‘পাঞ্জাবি’ নামে যে পোশাকটি পরে থাকে তার নাম আর পোশাকটির আদি ইতিহাস আমাদের সবার জানা। না জানলে ‘গুগল’ করেও সব জেনে নিই নিয়মিত। সব যখন জানিই, জারা-র অনৈতিক এই কাজটি নিয়ে ভার্চুয়ালি প্রতিবাদ আমরা করতেই পারি।

লুঙ্গি অবশ্য আমাদের জন্য বেশ স্পর্শকাতর ইস্যু। ঢাকার এক অঞ্চলে যখন লুঙ্গি নিষিদ্ধ হলো, তখন কম প্রতিবাদ হয়নি। আবার যখন প্র্যাংক ভিডিও শিল্পের রমরমা, তখন অন্য সব প্র্যাংকের সাথে লুঙ্গিরটাও ঝাঁকে ঝাঁকে চরম সমালোচনার মুখে পড়েছিলো। তবে দুঃখের কথা হলো ওসব প্রতিবাদ-সমালোচনায় লুঙ্গি যেমন ছিলো তেমনই আছে। জাত বাড়েনি। তাই সরাসরিই হোক আর ঘুরিয়েই হোক, জারা লুঙ্গিকে জাতে উঠিয়েছে। দাম বাড়লেই তো জাত বাড়ে। আপনার আমার ঘরে পরার কিংবা অনায়াসে কোঁচ মেরে পুকুরে ঝাপিয়ে পড়ার স্বাচ্ছন্দ্যময় পোশাকটা স্পেনের ব্র্যান্ডেড শপের ডিসপ্লেতে শোভা পাচ্ছে এই দৃশ্যটা এই বাংলাদেশে বসে ভাবতেই জলে চোখ ভিজে যায়। হুম জলে চোখ ভেজার কথাই বলা হয়েছে। আবারো ডার্টি মাইন্ড। কেনো খামোখা লুঙ্গি ভিজে যাবার কথা ভাবছেন বলুন তো? ওটা ভিজে গেলে মুশকিল।

ধুর, বাদ দেই লুঙ্গিকাহিনি। চলুন লুঙ্গি নিয়ে অমর একটি গান শুনে আসি।