ঢাকায় মোবাইল অ্যাপভিত্তিক যত গাড়িসেবা

যানজটের এই ঢাকার শহরে শুধু যে রাস্তাঘাট আর ফ্লাইওভারেই ট্রান্সপোর্টেশনের সম্পূর্ণ সমাধান আসবে না, তা বুঝতে শুরু করেছেন উদ্যোক্তারাও। জনগণের সংকট যেখানে, সেখানেই উদ্যোক্তারা খুঁজে নেয় সেবা দানের সুযোগ। আর এই ঢাকায় থাকি জনতার সবচেয়ে বড় সংকট যে উপযোগী পরিবহন সেবা, সেটা বুঝতে উদ্যোক্তাদের খুব বেশি দেরি হয়নি।। আর এই চিন্তাভাবনা থেকেই একে একে তৈরি হয়েছে মোবাইল অ্যাপভিত্তিক নানান পরিবহন সেবা। আসুন বর্তমানে ঢাকায় মোবাইল অ্যাপভিত্তিক গাড়ির যে সেবা আছে সেগুলো সম্বন্ধে একটু জেনে নিই।

উবার

উবার

উবার  মোবাইল অ্যাপ-ভিত্তিক ট্যাক্সি সেবা ২০১০ সালে আমেরিকায় যাত্রা শুরু করে। যাত্রা শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই দ্রুত জনপ্রিয়তাও অর্জন করে। বর্তমানে বিশ্বের ৭৪টি দেশের সাড়ে চারশ শহরে মানুষ উবার অ্যাপ দিয়ে ট্যাক্সি সেবা নিচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ এশিয়ায় ৩৩তম শহর হিসেবে ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর ঢাকায় যাত্রা শুরু করে উবার। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের নিকট জনপ্রিয় হয়ে উঠে উবারের এই পরিবহন সেবা।

গুগল প্লে বা অ্যাপল স্টোর থেকে বিনামূল্যে অ্যাপটি ডাউনলোড করে পাওয়া যাবে এই সেবা। পরবর্তীতে মোবাইল ফোন নম্বর ও ই-মেইল ব্যবহার করে নিবন্ধন করে নিতে হবে। উবার-এক্সউবার প্রিমিয়ার দু’ধরনের গাড়ি সেবা দিচ্ছে তারা। যাত্রী তার পছন্দ মতো যেকোন একটি বেছে নিতে পারবেন। প্রিমিয়ারে ভালো মানের এবং নতুন মডেলের গাড়িগুলোকে রাখা হয়েছে। উবার-এক্স এ থাকছে বাকি সব ধরনের গাড়ি। বর্তমানে উবার প্রিমিয়ারে বেইজ ভাড়া ৮০ টাকা। পরবর্তীতে যাত্রাপথে প্রতি মিনিটে ৩ টাকা ও প্রতি কিলোমিটার ২২ টাকা হারে ভাড়া গুণতে হবে। আর উবার এক্সে বেইজ ভাড়া ৪০ টাকা, প্রতি মিনিতে ৩ টাকা ও প্রতি কিলোমিটার ১৮ টাকা হারে ভাড়া দিতে হবে।

পাঠাও

পাঠাও কারস

এই শহরে পাঠাও যাত্রা শুরু করেছিলো শুধুই মোটরবাইক সেবা নিয়ে। কদিন আগে তারা চালু করেছে পাঠাও কারস। মোবাইল অ্যাপভিত্তিক এই সেবাটি পাওয়ার জন্যেও প্রথমেই যাত্রীকে প্লে স্টোর বা অ্যাপল স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করে রেজিস্টার করতে হবে। পাঠাও কারসে  বর্তমানে বেইজ ফেয়ার ৫০ টাকা, প্রতি কিলোমিটার ২০ টাকা এবং প্রতি মিনিট ২.৫ টাকা হারে ভাড়া নির্ধারিত আছে।

বাহন

 

 

বাহন

এবছরের ২৭ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে বাহন । এটি একই সাথে ইকোনমি গাড়ি, লাক্সারি গাড়ি ও মোটরবাইক ৩ ধরনের সেবাই প্রদান করে তারা। ইকোনমি গাড়ির ক্ষেত্রে বেইজ ফেয়ার ৩৫ টাকা, প্রতি কিলোমিটার ১৮ টাকা ও প্রতি মিনিট ২.৮ টাকা হারে ভাড়া প্রযোজ্য হবে। আর প্রিমিয়াম গাড়ির ক্ষেত্রে বেইজ ফেয়ার ৫৫ টাকা, প্রতি কিলোমিটার ২০ টাকা ও প্রতি মিনিট ২.৯ টাকা হারে ভাড়া প্রযোজ্য হবে। এতে বিল্ট-ইন জরুরি যোগাযোগ সেবা রয়েছে যার মাধ্যমে যাত্রীরা সরাসরি নিজেদের আত্নীয়/ পুলিশ স্টেশন/ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে পারবেন।

চলো

চলো

মোবাইল অ্যাপভিত্তিক এই গাড়িসেবা দানকারী স্টার্ট আপটি বাকিগুলোর চেয়ে একটু আলাদা। মূলত দূরপাল্লার যাত্রায় আমরা রেন্ট এ কারের উপরই ভরসা করে এসছি এতদিন। কিন্তু চলো  অ্যাপটির মাধ্যমে ঘরে বসে সহজেই আপনি যেদিন যেখানে যেতে চান সেই অনুযায়ী আপনার পছন্দসই গাড়ি বুক করে ফেলতে পারবেন। সেডান, ইকোনমি ও মাইক্রো- এই তিন ক্যাটাগরিতে গাড়ি পাওয়া যাবে। অন্তঃশহর বা আন্তঃশহর দু’ধরনের সেবাই তারা প্রদান করে থাকে।

দিন দিন ঢাকায় যেভাবে বাড়ছে মানুষ, সেভাবে বাড়ছে ট্রাফিক জ্যামও। শুধুমাত্র সরকারের নানা অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে এই অনন্ত জ্যাম সামাল দেয়া অসম্ভব। এই সেবাগুলোর মাধ্যমে যাত্রীরা যেমন সহজে যাত্রার বাহন খুঁজে পাচ্ছেন, তেমনি অনেকে আবার আয়ের খাত হিসেবেই বেছে নিয়েছেন এর যেকোন একটিকে, আবার গরিবের পাবলিক ট্রান্সপোর্টের উপর কমছে চাপও।