শেষ হয়ে গেল গেম অফ থ্রোনসের সপ্তম সিজন। এই সিজনে আগের চেয়ে তিনটা পর্ব কম হয়েছে, যদিও ৮১ মিনিট দীর্ঘ ‘দ্যা ড্রাগন অ্যান্ড দ্যা উলফ’ নামের শেষ পর্বটি নিজেই একটা ফিচার ফিল্মের মতো লম্বা। স্বভাবতই সিজন জুড়ে ঘটে চলা ঘটনাবলীকে গুছিয়ে আনতে এই অতিরিক্ত সময়টুকু দরকার ছিল।
আগের পর্বের শেষে ওয়ালের ইস্টওয়াচ থেকে মৃতবাহিনীর একটা ওয়াইটকে (wight) ধরে বেঁধে রওনা দিয়েছে জন, ডেনেরিস, টিরিয়ন, জোরাহ, হাউন্ড। উদ্দেশ্য ড্রাগনস্টোন, সেখান থেকে কিংস ল্যান্ডিং গিয়ে সার্সেইকে এই ওয়াইট দেখিয়ে প্রমাণ করা যে মৃতবাহিনী আসছে। টরমুন্ড আর বেরিক ডন্ডারিয়ন ইস্টওয়াচেই থেকে গেছে। ওদিকে সানসার কাছে আসন্ন সভার আমন্ত্রণ পাঠিয়েছিল সার্সেই, কিন্তু সানসা নিজে না গিয়ে ব্রিয়েন আর পড্রিককে পাঠিয়ে দিয়েছে। এই পর্বের শুরুতেই দেখা গেল ডেনেরিসের দুই বাহিনী, ডোথরাকি আর আনসালি’ডরা কিংস ল্যান্ডিংয়ের পশ্চিমের প্রাচীরের বাইরে এসে ঘেরাও করেছে। আনসালি’ডরা টিরিয়নের পরিকল্পনা-মোতাবেন ক্যাস্টারলি রক দখল করতে গিয়ে সেখানে আটকা পড়েছিল। বন্দরের দিক থেকে ইউরন গ্রেজয়ের নৌবাহিনী তাদের জাহাজ ধ্বংস করে দিয়েছিল, আর ক্যাস্টারলি রক থেকে কিংস ল্যান্ডিংয়ের গোল্ড রোড জুড়ে ছিল ল্যানিস্টারদের পাহারা। কিন্তু ডেনেরিসের রোজ রোডে আক্রমণ (স্পয়েলস অফ ওয়ার) এবং টিরিয়নের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে (ইস্টওয়াচ) সম্ভবত জেইমি আর সার্সেইয়ের ল্যানিস্টার সৈন্যবাহিনী আনসালি’ডদেরকে ওয়েস্টেরোসের পশ্চিম থেকে পূর্বে আসতে দিয়েছে। বিশেষত ড্রোগনের ধ্বংসযজ্ঞের পরে ল্যানিস্টার সৈন্যদের খোলা রাস্তায় পাহারা দেয়ার সাহস না থাকারই কথা।
কিংস ল্যান্ডিং
একদিকে বাইরে ঘিরে থাকা ডোথরাকি আর আনসালি’ড বাহিনী, অন্যদিকে ব্ল্যাকওয়াটার বে’ দিয়ে শহরে এসে পৌঁছেছে টিরিয়ন, ভ্যারিস, জন, থিয়ন, জোরাহসহ অন্যান্যরা। ল্যানিস্টার সৈন্যদের পাহারায় তাদেরকে ড্রাগনপিট-এ নিয়ে যাওয়া হলো। এই ড্রাগনপিট দুর্গটা এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। একসময় যখন টারগারিয়েন রাজারা প্রতাপে রাজত্ব করতো আর তাদের পরিবারের অনেকেই বিভিন্ন ড্রাগনে চড়তে পারতো, তখন সেই ড্রাগনগুলোকে রাখার জন্য এই প্রকাণ্ড দুর্গ বানানো হয়েছিল।
“In King’s Landing, your ancestors raised an immense domed castle for their dragons. The Dragonpit, it is called. It still stands atop the Hill of Rhaenys, though all in ruins now.”
– Ser Barristan Selmy to Daenerys Targaryen (A Storm of Swords)
কিংস ল্যান্ডিং শহরটা মূলত তিনটি পাহাড়কে তিন দিকে রেখে গড়ে ওঠা এক নগরী। এর দক্ষিণে ব্ল্যাকওয়াটার রাশ নদীটা ব্ল্যাকওয়াটার বে’তে এসে ন্যারো সি-এর সাথে মিলিত হয়েছে। তার তীরেই সবচেয়ে বড় পাহাড়টি, যার নাম এয়গন’স হাই হিল। এই পাহাড়ের ওপর লাল রঙের প্রকাণ্ড প্রাসাদ রেড কিপ। এয়গনের পাহাড়ের উত্তর-পশ্চিমে ভিসেনিয়ার পাহাড়, যে পাহাড়ের ওপরে সেপ্ট অফ বেয়লর বানানো হয়েছিল। গত সিজনের শেষে সার্সেই ওয়াইল্ডফায়ার দিয়ে এই সেপ্ট ধ্বংস করে দিয়েছে। রেড কিপের উত্তরের পাহাড়টির নাম রেয়নিসের পাহাড়, যার ওপরে ড্রাগনপিট দুর্গটি বানানো হয়েছিল। গোলাকার এক ময়দানে চারপাশের প্রাচীর ধীরে ধীরে উঠে গিয়ে বিশাল এক গম্বুজ। টারগারিয়েনদের প্রথম দিকের ড্রাগনগুলোর আকার ছিল প্রকাণ্ড, ড্রোগনের চেয়েও কয়েকগুণ বড়। তারা সাধারণত উন্মুক্তই থাকতো। ধীরে ধীরে কিংস ল্যান্ডিং যত জনবহুল হয়েছে ততোই ড্রাগনগুলোকে রাখা নিয়ে ঝামেলা বাধলো। এয়গন টারগারিয়েনের ছোট ছেলে মেয়গর “দ্যা ক্রুয়েল” রাজা হবার পর ৪৫ সালের দিকে ড্রাগনপিট বানানোর নির্দেশ দেন। এরপর থেকে টারগারিয়েনদের ড্রাগনগুলো এখানে থাকতো। মুক্তভাবে উড়ে বেড়ানো বিশালাকার ড্রাগনকে এমন বদ্ধ জায়গায় আটকে রাখার কারণে সেগুলো আর বেশি বড় হতে পারলো না। ধীরে ধীরে তাদের আকার ছোট হতে হতে শেষ দিকে প্রায় কুকুরের সমান হয়ে গিয়েছিল। ড্রাগনপিট অবশ্য তারও আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে।
১২৯ সালে রাজা প্রথম ভিসেরিস মারা যাওয়ার পর সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে ঝামেলা দেখা দেয়। একদিকে সে তার প্রথম স্ত্রীর মেয়ে রায়েনারাকে অনেক আগেই পরবর্তী রাণী হবার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এর মাঝে অনেক সময় পেরিয়েছে। তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন আরেক শক্তিশালী হাউজের মেয়ে অ্যালিসেন্ট হাইটাওয়ারকে। অ্যালিসেন্টের বাবা অটো হাইটাওয়ার ভিসেরিসের হ্যান্ড ছিলেন। বয়স্ক, রাশভারী, প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান লর্ড অটো হাইটাওয়ারের প্রতিপত্তি আর দাপট ছিল দেখার মতো। ভিসেরিস মারা যাওয়ার সাথে সাথেই রায়েনারাকে পাশ কাটিয়ে অটো হাইটাওয়ার তার নাতি ২য় এয়গন টারগারিয়েনকে রাজা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে দেন। রাজপরিবার ও রাজ-সভাসদদের পাশাপাশি পুরো সাম্রাজ্যই দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেল। শুরু হলো দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ, যার নাম ‘ড্যান্স অফ দ্যা ড্রাগনস’। দুইপক্ষেই যুদ্ধবাজ ড্রাগনরাইডার আর দুর্ধর্ষ ড্রাগনের অভাব ছিল না। কিন্তু সব শেষে দেখা গেল দু’পক্ষেই ক্ষয়ক্ষতি প্রচুর আর বড় বড় প্রায় সব ড্রাগনই মৃত। ড্রাগনে ড্রাগনে যুদ্ধের পাশাপাশি একবারে অনেকগুলো ড্রাগন হত্যা হয়েছিল এই ড্রাগনপিটে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে ১৩০ সালে রায়েনারা টারগারিয়েন কিংস ল্যান্ডিং দখল করে ফেলে। তার বাহিনী রেড কিপে ঢুকে বিপক্ষের রাজা ২য় এয়গনের স্ত্রী হেলেনাকে তার বাচ্চাসহ আটক করে। আগে থেকেই হেলেনার মানসিক অবস্থা ভাল ছিল না। এক রাতে সুযোগ পেয়ে সে রেড কিপের উঁচু মিনার থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। যুদ্ধের অশান্ত পরিবেশে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে হেলেনাকে রায়েনারার নির্দেশে খুন করা হয়েছে। হেলেনা ছিলেন জনগণের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয় রাণী, তাই তার মৃত্যুর খবরে পুরো রাজধানী জুড়ে রায়ট শুরু হয়। ‘ফ্লি বটম’ থেকে দলে দলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। নগররক্ষীরা সংখ্যায় এত কম ছিল যে হাজার হাজার মানুষের উন্মত্ত খুনে ঢলকে থামাতে পারে নি। জনতার সব আক্রোশ গিয়ে পড়ে রায়েনারার ওপর। ড্রাগনপিটে থাকা ড্রাগনদের মারলে রায়েনারা পরাস্ত হবে, এমন ভেবে শয়ে শয়ে জনতা এই দুর্গের দরজায় আছড়ে পড়ে। ড্রাগনপিটে তখন চারটা ড্রাগন ভারী ভারী শেকলে আটকানো ছিল। আক্রান্ত হয়ে আশেপাশের জনতাকে পোড়ানো ছাড়া খুব বেশি কিছু করতে পারলো না তারা। আগুন, ধোঁঁয়া, পুড়ে যাওয়া মানুষের আর্তনাদ, বর্শায় আহত ড্রাগনের তীক্ষ্ণ চিৎকার – সব মিলিয়ে নারকীয় পরিবেশ। একে একে তিনটা ড্রাগন জনতার হাতে প্রাণ হারালো। শেষ ড্রাগনটির নাম ছিল ড্রিমফায়ার। সে শেকল ভেঙে উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গম্বুজের চূড়ার কাচ ভেঙে পড়লো চারপাশে। আর সেই কাচের আঘাতেই মারা গেল ড্রিমফায়ার।
যুদ্ধের পরেও এই ড্রাগনপিটে টারগারিয়েনরা ড্রাগন রাখতো। তবে ড্রাগনের সংখ্যা আর আকার ছোট বলে দুর্গটাকে ঠিকভাবে মেরামত করা হয় নি। শেষদিকের ড্রাগনগুলোর আকার এতো ছোট ছিল যে তাদের রাখতে এতো বড় দুর্গের দরকারই হতো না। ড্রাগন পুরোপুরি বিলুপ্ত হলে ধীরে ধীরে এই জায়গাটাও ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। আজ সেখানেই সার্সেই সবাইকে ডেকেছে। রেড কিপে না ডেকে ড্রাগনপিটে ডেকে সার্সেই বোধহয় ডেনেরিসকে মানসিক চাপে ফেলার চেষ্টা করছে। ইঙ্গিতে বোঝানো যে তোমার ড্রাগনদের পরিণতিও ড্রাগনপিটের ড্রাগনদের মতোই হবে।
ড্রাগনপিটের দিকে যেতে যেতে ডেনেরিস বাহিনীর সাথে ব্রন, ব্রিয়েন এবং পড্রিকের দেখা হয়ে গেল।
পড্রিককে প্রায় শূন্য থেকেই তুলে এনেছিল টিরিয়ন। জফ্রি ব্যারাথিয়নের খুনের দায়ে যখন টিরিয়নকে বন্দী করা হয়, তখন পড্রিক ছিল তার স্কয়ার। তাকে একজন এসে টিরিয়নের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বলেছিল। পড্রিক তাতে রাজি হয়নি। টিরিয়নের সাথে কারাগারে দেখা করতে গিয়ে এই কথা জানালে টিরিয়ন তাকে দ্রুত রাজধানী ছেড়ে চলে যেতে বলে। কারণ পড্রিক যদি সাক্ষ্য দিতে রাজি না হয়, তাহলে তাকে সার্সেইয়ের লোকরা মেরেও ফেলতে পারে।
“I will not have you dying on my behalf. Do you hear me? If I have to take that long walk to the executioner’s block, I don’t want to see your head already mounted.”
এটাই ছিল টিরিয়নের সাথে পড্রিকের শেষ কথোপকথন। এরপরে পড্রিক ব্রিয়েনের সাথে রাজধানী ছেড়ে চলে যায়। আজ এত বছর পরে আবার তাদের সেই কিংস ল্যান্ডিংয়েই দেখা হয়ে গেল। টিরিয়ন এখন মুক্ত এবং সার্সেইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বীর হ্যান্ড, আর পড্রিক এখন সানসা ও আরিয়ার রক্ষক লেডি ব্রিয়েনের স্কয়ার।
হাউন্ড আর ব্রিয়েনের সাক্ষাতের ইতিহাস যদিও এত মধুর ছিল না। আরিয়াকে নিয়ে হাউন্ড যখন ভেইল থেকে ফিরছিল তখন ব্রিয়েন ও পড্রিকের সাথে দেখা হয়েছিল। ব্রিয়েন কেইটলিন স্টার্কের কাছে দেয়া প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে রাস্তায় নেমেছিল। সানসা আর আরিয়ার খোঁজে ভেইলের দিকেই যাচ্ছিল, পথে দেখা হয়েছে এক কিশোরীর সাথে। একা একা ছোট তলোয়ার হাতে কসরৎ করছে। মেয়েটি আরিয়া বোঝামাত্রই ব্রিয়েন তাকে জানিয়েছিল যে কেইটলিন স্টার্কের কাছে সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, এবং সে তাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু সন্দেহপ্রবণ হাউন্ড ব্রিয়েনের ভ্যালিরিয়ান স্টিলের তলোয়ার ‘ওথকিপার’ (যেটা জেইমি তাকে দিয়েছিল) দেখে স্বভাবতই তাকে ল্যানিস্টারের চর ভেবে বসে। রক্তারক্তি লড়াইয়ে ব্রিয়েন হাউন্ডকে মারাত্মকভাবে আহত করে পাহাড় থেকে ফেলে দেয়। আরিয়াও শত্রুমিত্র বুঝতে না পেরে লুকিয়ে পড়েছিল। এতদিন পরে দেখা হলো ব্রিয়েন আর হাউন্ডের। সে যখন হাউন্ডকে জানালো যে আরিয়া নিরাপদেই আছে, এমনকি দারুণ দক্ষ যোদ্ধা হয়ে উঠেছে, তখন হাউন্ডের মুখে ফুটে ওঠে একচিলতে অমূল্য হাসি।
অবশেষে সকলে ড্রাগনপিটে হাজির হলো। এই প্রথম কোন দৃশ্যে গেম অফ থ্রোনসের মূল কুশীলবদের প্রায় সবাই একত্র হয়েছে। সার্সেই এলো জেইমি আর স্যার গ্রেগর “মাউন্টেন” ক্লেগেইনের প্রহরায়, সাথে হ্যান্ড কাইবার্ন আর ইউরন গ্রেজয়। একদিকে জন আর স্যার ড্যাভোস, সাথে লেডি ব্রিয়েন। আরেকদিকে টিরিয়ন, ভ্যারিস ও থিয়ন। ডেনেরিস এলো সবার পরে, ড্রোগোনের পিঠে চেপে। সার্সেই যদি ড্রাগনপিটে সভা ডেকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে থাকে, তাহলে ড্রোগোনের পাখার ঝাপ্টায় ধুলিঝড় উড়িয়ে ডেনেরিসও কম দাপট দেখায় নি। জন বা ডেনেরিসের শিবিরের সকলেই এখন জানে নাইট কিং আর মৃতবাহিনী কী ভয়ানক হুমকি নিয়ে আসছে, কিন্তু সার্সেই বা ইউরন যেন তাদের সিংহাসনের রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত। হাউন্ড গিয়ে মৃতবাহিনীর ওয়াইটটাকে ছেড়ে দিলে জন দেখালো যে আগুন বা ড্রাগনগ্লাস ছাড়া ওয়াইটদের ধ্বংস করা যায় না। ওয়াইট দেখে সার্সেই, জেইমি আর ইউরন ঘাবড়ে গেলেও কাইবার্নের চোখে-মুখে প্রশংসা ফুটে উঠেছিল। কাইবার্নের জীবন্মৃতের ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ আছে, মাউন্টেন তার প্রমাণ। তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছিল পারলে ওয়াইটটাকে না মেরে ধরে নিজের গবেষণাগারে নিয়ে যাবে।
যুদ্ধবিরতিতে সায় জানাতে সার্সেই দেরি করলো না। মনে হচ্ছিল, এত সহজে নিশ্চয়ই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে না, এবং তাই হলো। ডেনেরিস আর সার্সেইয়ের যুদ্ধবিরতিতে জনের ভূমিকা নিরপেক্ষ হওয়ার কথা, অর্থাৎ সে নর্থে ফিরে যাবে এবং ডেনেরিস বা সার্সেইয়ের পক্ষ নিবে না। কিন্তু জন বলে ফেললো যে সে ডেনেরিসের আনুগত্য স্বীকার করেছে, অর্থাৎ ডেনেরিসের হাতে পুরো নর্থের নিয়ন্ত্রণ। সার্সেইয়ের পক্ষে এটা জানার পরে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মানার প্রশ্নই আসে না। সার্সেই চলে যাওয়ার পরে সবার সব রাগ গিয়ে পড়লো জনের ওপর। সে একটু মিথ্যা করে বানিয়ে বললেই আর এতো ঝামেলা হতো না। কিন্তু নেড স্টার্কের ছেলে তো মিথ্যা প্রতিজ্ঞা করে না। জনের পরিচয় এরইমধ্যে দর্শকদের কাছে প্রকাশ পেয়েছে। সে নেড স্টার্কের ছেলে না, এমনকি জারজ ছেলেও না। সে নেডের বোন লিয়ানা স্টার্কের ছেলে, রেয়গার টারগারিয়েন তার জন্মপিতা। কিন্তু জ্ঞান হবার পর থেকে সে নেডকেই নিজের বাবা বলে জেনেছে। তার হাঁটা-চলা, পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে আদর্শশিক্ষার সবটুকুই নেড স্টার্কের অবদান। নেডের শিক্ষার প্রভাব তার সন্তানদের মাঝে এতটাই যে এই পর্বে সেগুলো বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। জন, থিয়ন, সানসা, আরিয়া – প্রত্যেকেই নেডকে কোন না কোনভাবে স্মরণ করেছে। তাই জনের রক্তে যতই ড্রাগনের সঙ্কেত থাকুক না কেন, সে আপাদমস্তক একজন স্টার্ক।
আপাতদৃষ্টিতে জন এমন সরল সত্য বলে সার্সেইয়ের কিছুটা সুবিধা করে দিল। এই সভার আগে সার্সেই বেশ নাজুক অবস্থানে ছিল। হাইগার্ডেন দখল করে আয়রন ব্যাঙ্কের দেনা পরিশোধ করতে পারলেও সৈন্যবলে তারা অনেক পিছিয়ে, বিশেষ করে স্পয়েলস অফ ওয়ার পর্বে ড্রোগোনের আগুনে তাদের বাহিনীর বড় অংশ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ড্রাগনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাকি সৈন্যদের মনোবল বা সদিচ্ছা কতটুকু আছে সেটাও ভাবার বিষয়। সুতরাং তার মূল উদ্দেশ্য কোন না কোনভাবে ডেনেরিসকে খতম করা। এজন্য ইউরনকে পাঠিয়ে এসোস থেকে গোল্ডেন কোম্পানির বিশ হাজার সৈন্য আনাচ্ছে সে। পুরো নর্থ যদি ডেনেরিসের হাতে থাকলেও নাইট কিং ও মৃতবাহিনীর সাথে যুদ্ধে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হবে। যুদ্ধবিরতি বদলে সৈন্যবাহিনী গড়ে তুললে সার্সেইয়ের আখেরে লাভ হবে। কারণ নাইট কিংয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যদি এতকিছুর পরেও জন-ডেনেরিস বাহিনী জিতে যায়, তবুও তারা কিংস ল্যান্ডিং দখলের মতো অবস্থায় থাকবে না। ঠিক এই উদ্দেশ্যেই জনকে প্রতিজ্ঞা দিয়ে বাঁধতে চেয়েছিল সার্সেই। নেড স্টার্কের মতো আদর্শবান মানুষের নাম মুখে নেয়া সার্সেইয়ের জন্য স্পর্ধারই শামিল। নেড স্টার্কের করুণ পরিণতির পেছনে সার্সেইয়ের প্রধান ভূমিকা ছিল। আবার সেই নেডের কথা বলেই জনকে নিরপেক্ষ থাকতে বাধ্য করতে চেয়েছিল সে।
সার্সেইয়ের বিরতিস্বীকার ছাড়া চলছেই না। টিরিয়ন তাই একাই রেড কিপে গিয়ে সার্সেইকে বোঝানোর চেষ্টা করে। জনের কথায় যেমন নেড চলে আসে, তেমনি সার্সেই-টিরিয়নের কথার মাঝেও টাইউইন ল্যানিস্টার চলে আসে। সার্সেই নিজেকে টাইউইনের যোগ্য সন্তান বলে মনে করে, অন্যদিকে টিরিয়ন জানে যে টাইউইনের চোখে সে এক কুলাঙ্গার ছাড়া আর কিছুই হতে পারেনি। নিজের বাবা, তা সে যেমনই হোক না কেন, তাকে কেউ নিজ হাতে খুন করলে মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিগড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। টিরিয়ন যতবারই টাইউইনকে নিয়ে কথা বলতে যায়, ততবারই হুট করে আবেগী হয়ে পড়ে। এটা আগে জেইমির সাথে দেখা করার দৃশ্যেও খেয়াল করেছি, আজও হয়েছে। সার্সেই অবশ্য আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিছুটা ইচ্ছে করেই টিরিয়নকে ইশারায় বুঝিয়ে দেয় যে সে গর্ভবতী। ঠিক এর পরেই দৃশ্যটা হুট করে শেষ হয়ে যায়। টিরিয়ন সার্সেইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করাতে। সার্সেই শুধু মুখের কথায় রাজি হবার পাত্র না। তাই টিরিয়ন নিশ্চয়ই এমন কোন বিশেষ প্রস্তাব দিয়েছে যাতে সে রাজি হয়েছে (পরে আমরা দেখব ওই সভায় সার্সেই কোন কথাই মন থেকে বলেনি)। টিরিয়ন এর বিনিময়ে কী প্রস্তাব দিয়েছে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলতে পারে। নিঃসন্দেহে সার্সেই এই পুরো আলোচনায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে যাচ্ছে। ওয়েস্টারল্যান্ডের সব ব্যানারম্যানদের জড়ো হতে বললো, ওদিকে আবার গোল্ডেন কোম্পানিও আসছে।
জেইমির সাথে সার্সেইয়ের শেষ দৃশ্যটাও চমৎকার ছিল। এতদিন ধরে সার্সেই নানাভাবে জেইমিকে ব্যবহার করে এসেছে। কিন্তু জেইমি তার প্রেমে এতই অন্ধ যে সার্সেইয়ের ভয়ানক দিকগুলো তার চোখেই পড়ে নি। আজ প্রথম সে বুঝতে পারল নিজের স্বার্থে সার্সেই তাকেও মেরে ফেলতে পারে। এই সিজনের প্রথম পর্বে জেইমি প্রশ্ন করেছিল, “Should I be afraid of you?”, সে প্রশ্নের জবাবও হাতেনাতে পেয়ে গেল। জেইমির কাছে সার্সেইয়ের প্রতি ভালোবাসা আর নাইটহুডের সম্মান সবচেয়ে বেশি মূল্যবান। আজই প্রথম তার ‘honor’ আর সার্সেইয়ের আদেশের সংঘর্ষ হলো, আর জেইমিও প্রথমবারের মতন সার্সেইকে ছেড়ে পথে নামলো। হয়তো ওলেনা টাইরেল তাকে সার্সেইকে নিয়ে যা বলেছিল সেটা সে মনে রেখেছে, কিংবা ব্রিয়েন ড্রাগনপিটে তাকে যা বলেছে সেটার প্রভাব পড়েছে, কিন্তু সে সত্যি সত্যি বুঝতে পারলো সার্সেই তাকে কতোটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। তাই জেইমি কিংসগার্ডের দায়িত্ব ছেড়ে নর্থের দিকে রওনা দিয়েছে। পরনে সাধারণ চামড়ার পোশাক, ল্যানিস্টার লাল রঙ নেই, কিংসগার্ডের সোনালি বর্ম নেই। এমনকি তার সোনার বাঁধানো ডান হাতটাও সে চামড়ার দস্তানায় ঢেকে ফেললো। জেইমির প্রস্থানের সাথেই কিংস ল্যান্ডিংয়ে তুষারপাত শুরু হলো। শীতের বিষণ্ণ করুণ ছোঁয়ায় আলো ঝলমলে রাজধানীও কুঁকড়ে অন্ধকার হয়ে এলো।
ড্রাগনস্টোন
কিংস ল্যান্ডিংয়ের এমন ঘটনাবহুল অংশের পরে ড্রাগনস্টোনের দৃশ্যগুলো কিছুটা বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছে। উত্তরে নাইট কিং ওয়ালের এত কাছে চলে এসেছে, এখন সার্সেইয়ের সম্মতি ও সহযোগিতা পাওয়ামাত্রই কিংস ল্যান্ডিং থেকে সরাসরি নর্থে সবার চলে আসার কথা। তা না করে ডেনেরিস ও জনসহ সবাই ড্রাগনস্টোনে গিয়েছে শুধুমাত্র এই একটি আলাপ করার জন্য যে তারা কীভাবে নর্থে যাবে। আনসালিডদের পদাতিক বাহিনীও ডেনেরিসের সাথে কিংস ল্যান্ডিং থেকে ড্রাগনস্টোনে এসেছে নৌপথেই, এটা বুঝলাম ডেনেরিসের পাশে গ্রে ওয়র্মকে দেখে। পেইন্টেড টেবিল ঘিরে জন, ডেনেরিস, টিরিয়ন, ড্যাভোস, জোরাহ, মিসান্দেই, গ্রে ওয়র্ম, সবাই দাঁড়িয়ে যে আলাপ করলো, সে আলাপটুকু যদি কিংস ল্যান্ডিংয়ের ড্রাগন পিটের দৃশ্যের পরপরই করে ফেলতো তাহলে এই খটকাটুকু থাকতো না। যাই হোক, সিদ্ধান্ত হলো যে ডোথরাকিরা স্থলপথে যাবে, কিংস ল্যান্ডিং থেকে উইন্টারফেল যেতে তাদের দিন পনেরো লাগবে। ডেনেরিসের নৌজাহাজগুলো আনসালিডদের নিয়ে ড্রাগনস্টোন থেকে হোয়াইট হার্বার বন্দরে গিয়ে সেখান থেকে ডোথরাকিদের সাথে বাকি রাস্তা যাবে। হোয়াইট হার্বার হলো নর্থের সবচেয়ে দক্ষিণের বন্দর। ম্যান্ডারলি হাউজের এলাকা এটা, যারা স্টার্কদের খুবই অনুগত।
“I always wanted to do the right thing. Be the right kind of person. But I never knew what that meant.”
ড্রাগনস্টোনে এর পরের অংশটুকু এই পর্বের অন্যতম সেরা অংশের একটি। অপরাধবোধ, গ্লানি এবং প্রায়শ্চিত্তের টানাপোড়েন নিয়ে দারুণ কিছু সংলাপ আর থিয়ন চরিত্রে অ্যালফি অ্যালেনের চমৎকার অভিনয় অনেকদিন মনে থাকার মতো। থিয়ন সম্ভবত পুরো গল্পের সবচেয়ে দুর্ভাগা বেপথু চরিত্রদের একটা। ছোটবেলায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘরছাড়া, অন্যের বাড়িতে আশ্রিত ও কিছুটা আটকাবস্থায়ই তার বেড়ে ওঠা। নামে গ্রেজয়, অথচ নিজের বাবা বেয়লন গ্রেজয় কোন চেষ্টাও করেননি তাকে ফিরিয়ে আনার। আবার স্টার্কদের সাথে উইন্টারফেলে যে তার সাথে দুর্ব্যবহার করা হতো – এমনও না। বরং উল্টোটাই সত্যি, নেড স্টার্ক থিয়নকে নিজের ছেলেদের মতোই দেখতেন। সেই থিয়ন প্রথম সুযোগ পাওয়ামাত্রই রব স্টার্কের সাথে প্রতারণা করেছিল। তার কারণে উইন্টারফেলের পতন হয়, ব্র্যান আর রিকনকে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পালাতে হয়, আর তার অদক্ষতার সুযোগে র্যামসে বোলটন উইন্টারফেল দখল করে জ্বালিয়ে দেয়। বিনিময়ে তাকেও চরম মূল্য দিতে হয়েছে। নির্যাতনের চূড়ান্তে নিয়ে র্যামসে তাকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে ফেলেছে। থিয়নের নিজের স্বত্ত্বা বলতে কিছুই বাকি ছিল না। সে হয়ে গিয়েছিল র্যামসের দাসানুদাস রিক। এতটাই যে ইয়ারা যখন তাকে মুক্ত করতে আসে তখন সে ভয়ে খাঁচার ভেতর থেকে বেরুতেই চায় নি। সেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ছাপ থিয়নের ভেতর থেকে এখনো যায় নি। এজন্যই ইউরন গ্রেজয়ের আক্রমণে থিয়ন ও ইয়ারার নৌবাহিনী ছত্রভঙ্গ হলে বোনকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে থিয়ন পানিতে লাফিয়ে পড়ে পালিয়ে বেঁচেছে। এই মানসিক বৈকল্য সত্ত্বেও থিয়ন অপরাধবোধে ভোগে এবং কৃতকর্মের শাস্তি বা ক্ষমাপ্রার্থনা করতে চায়। জনও থিয়নের মতই নেড স্টার্কের ঘরে আশ্রিতের মতো বড় হয়েছে। নেড তাকে রব বা সানসার চেয়ে আলাদা চোখে দেখেনি, কিন্তু বাকি সবাই তাকে মনে করিয়ে দিয়েছে সে নেডের বৈধ সন্তান না। তাই থিয়নের এই পরিচয়-সঙ্কটের সাথে জন আগে থেকেই পরিচিত। একদিকে থিয়ন যেমন গ্রেজয় আর স্টার্ক পরিচয়ের ভেতর বিভ্রান্তিতে ভোগে, তেমনি জনও তার জারজ পরিচয় নিয়ে দ্বিধায় ভুগতো। কিন্তু জন্মপরিচয়ের চেয়ে বেড়ে ওঠার পরিবেশের গুরুত্ব অনেক বেশি হয়, আর সেদিক দিয়ে থিয়ন স্টার্কদের আদর্শে বড় হয়েছে। তাই মারাত্মক অপরাধ করেও দিনশেষে সে প্রায়শ্চিত্ত করতে চায়। জনের কথাগুলো আবার তার নিজের বেলাতেও খাটে, যা সে এখনও জানে না। জন্মসূত্রে স্টার্ক এবং টারগারিয়েন উভয় রক্তই বইছে জনের ধমনীতে। এই পর্বের নাম ‘দ্যা ড্রাগন অ্যান্ড দ্যা উলফ’ তার বাবা-মায়ের পরিচয়েই রাখা হয়েছে। সে যদিও বড় হয়েছে স্টার্কদের একজন হিসেবে, তবু রক্তের পরিচয়ের গুরুত্ব ওয়েস্টেরোসে অনেক। সামনের সিজনে যখন জন তার পরিচয় জানবে, তখন তার প্রতিক্রিয়া দেখার মতো হবে মনে হচ্ছে।
জনের এই আশ্বাসবাণী থিয়নের জন্য খুব জরুরি ছিল। র্যামসের হাতে বন্দীত্বের সময়ে একমাত্র ইয়ারা তাকে মুক্ত করতে এসেছিল, নিশ্চিত মৃত্যুর আশঙ্কার তোয়াক্কা না করে। তাই আজ সে ঠিক করে ইয়ারাকে ইউরনের কাছ থেকে উদ্ধার করবে। থিয়নকে যে জাহাজটা উদ্ধার করেছিল তার ক্যাপ্টেনের নাম হ্যারাগ। মোটাসোটা গড়নের এই আয়রনবর্নকে মানানো বেশ কঠিন, কারণ সে ইয়ারার অনুগত, থিয়নের না। থিয়নের ব্যাপারে তার ধারণা খুব একটা ভাল না, ভীতু কাপুরুষকে কে-ইবা পছন্দ করে? তবু থিয়নের হার না মানা জেদের কাছে শেষমেশ পরাজিত হয় হ্যারাগ। রীতিমত রক্তারক্তি মারামারি করে থিয়ন শেষপর্যন্ত জয়ী হয়, চারপাশে দর্শক হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যান্য নাবিকেরা তাকে এখন সমর্থন দিল। সামনের সিজনে বড় বড় চোখ ধাঁধানো ঘটনাবলীর মাঝে থিয়নের প্রায়শ্চিত্তের গল্পের ঘটনায় আগ্রহ থাকবে অনেক।
উইন্টারফেল
গত পর্বে (বিয়ন্ড দ্যা ওয়াল ) সানসা আর আরিয়ার মাঝে বাকবিতণ্ডা এক পর্যায়ে খুনের হুমকি পর্যন্ত গড়িয়েছিল। তখনই সন্দেহ হয়েছিল যে হয়তো এগুলো সব ভান, কারণ সানসা বা আরিয়ার চরিত্রের সাথে এই আচরণ যাচ্ছে না। লিটলফিঙ্গারের লুকিয়ে রাখা চিঠির টোপ আরিয়া এতো সহজে গিলে ফেলবে, আর চিন্তাভাবনা না করেই সানসার সাথে ঝগড়া লাগাবে – এটা আরিয়ার চরিত্রের সাথে ঠিক যায় না। একইভাবে সানসাও যথেষ্ট বুদ্ধিমতী, আরিয়ার সাথে তার ঝামেলা হলেও সেটা মেটানোর পরামর্শ লিটলফিঙ্গারের কাছ থেকে নিতে যাবে না। কারণ লিটলফিঙ্গারকে সে অনেক আগে থেকেই অবিশ্বাস করে। এই পর্বে প্রথম দৃশ্যে দেখালো সানসার কাছে জনের চিঠি এসেছে। জন ইস্টওয়াচ এবং তার পরবর্তী ঘটনা জানিয়ে লিখেছে যে সে ডেনেরিসের প্রতি সমর্থন দিচ্ছে। সানসা সেই চিঠি নিয়ে লিটলফিঙ্গারের সাথে আলোচনা করছে এমনভাবে যেন জনের প্রতি তার অনেক অভিযোগ। সানসা যতটা বুদ্ধিমত্তার সাথে নিজেকে গড়ে তুলেছে তাতে এতটা সরল আচরণের একটাই ব্যাখ্যা হতে পারে – সে লিটলফিঙ্গারকে ফাঁদে ফেলতে চাইছে। লিটলফিঙ্গারও সেই ফাঁদে পা দিল। বলতে শুরু করলো সে কীভাবে একজন মানুষের আসল উদ্দেশ্যকে বোঝার চেষ্টা করে।
“Sometimes when I try to understand a person’s motives, I play a little game. I assume the worst. What’s the worst reason they could possibly have for saying what they say and doing what they do?”
লিটলফিঙ্গার ওয়েস্টেরোসের সবচেয়ে ধূর্ত বুদ্ধির কূটকৌশলীদের একজন। তার মতো বুদ্ধিমান লোক কখনই নিজের অভিসন্ধির কথা কাউকে অকপটে বলে না। সবসময়ই মুখে অমায়িক হাসি ঝুলিয়ে রাখা, মকিংবার্ডের মত নিরীহ সিজিল পরে ঘুরে বেড়ানো লিটলফিঙ্গারের কারণেই অনেক বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। শুধু তাই না, তার নিয়ন্ত্রণে এখন ভেইলের শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী আছে। এতটা বুদ্ধিমান ও প্রভাবশালী লোক কেন দিনের পর দিন উইন্টারফেলে পড়ে আছে, সে প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া যায় না। সানসার প্রতি তার দুর্বলতা আছে, কিন্তু এটা স্পষ্ট যে জনকে ডিঙিয়ে সানসা উইন্টারফেলের হর্তাকর্তা হতে চায় না। বিশেষ করে সামনের যুদ্ধকে অগ্রাহ্য করার মতো মেয়ে সানসা নয়। তাহলে লিটলফিঙ্গারের আশা কতটুকু? আকারে ইঙ্গিতে প্রস্তাব তো সে কম ও দেয়নি, যা ইতোমধ্যেই সানসা প্রতিবার প্রত্যাখ্যান করেছে। আরিয়া আসার পরে সে আবার চেষ্টা করছে দুই বোনের মধ্যে বিরোধ লাগিয়ে দিতে, যেন সানসা আরিয়াকে বন্দী করে বা মেরে ফেলে। এই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় সে একবারও ভাবছে না যে এরা সবাই স্টার্ক, ল্যানিস্টার না। স্টার্কদের পরিবারের প্রতি আনুগত্য আর বিশ্বাস তুলনাহীন। অবস্থা বিবেচনা করে বাহিনী নিয়ে কোন ছুতোয় চলে যাওয়াই তার জন্য ঠিক সিদ্ধান্ত হতো। ব্র্যানও যখন তাকে “Chaos is a ladder” বলে চমকে দিয়েছিল, তার বোঝা উচিত ছিল যে সে নিজেকে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ফেলে দিচ্ছে। সানসাকে পাওয়ার আশায় খুব বেশি ঝুঁকি নিয়ে ফেলছে, যে কোন মুহূর্তে অবস্থা বেগতিক হয়ে যেতে পারে। এই পর্বে যদিও আগের দুই পর্বের মতো চরিত্রের খুঁটিনাটি গলদ কম আছে, তবে লিটলফিঙ্গারের চরিত্রটাকে যে প্রায় নিরামিষ বানিয়ে ফেলা হয়েছে তা বলাই বাহুল্য। আরেকটি ব্যাপার , ভ্যারিসকে পুরো পর্বে একটা শব্দও উচ্চারণ করতে দেখা গেল না। ড্রাগনপিট, কিংস ল্যান্ডিং, ড্রাগনস্টোন – সব মিলিয়ে প্রায় ৪০-৫০ মিনিটের দৃশ্যায়নে, আলাপে, আলোচনায় পেছনে এক্সট্রাদের মতো দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া তার কিছুই বলার নেই। ব্যাপারটা যুগপৎ দুঃখের ও হতাশার। লিটলফিঙ্গার ও ভ্যারিসের চরিত্র দুটি অনেক দিক থেকেই ফ্যান্টাসি জঁরার গল্পে নতুনতর সংযোজন ছিল। তাদের বুদ্ধিমত্তা, কৌশল, গুপ্তচরবৃত্তি, ডাবল-ক্রসিং যেমন গল্পে নতুন মাত্রা এনেছিল, তেমনি দুর্দান্ত সংলাপ উপভোগের বিষয় ছিল।
ক্রমশ নিরামিষ হয়ে আসা লিটলফিঙ্গার তাই শেষমেশ ধরা পড়লো। সানসার সাথে এই প্রথম ব্র্যান এসে গ্রেট হল-এ বসেছে। আরিয়াকে ডেকে বিচারের ভান করে সানসা খুন ও বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুললো লিটলফিঙ্গারের দিকে। যদিও এই অভিযোগের বেশ কয়েকটি তার জানার কথা ছিল না। প্রথম অভিযোগ ছিল লাইসা টালির মৃত্যু, যা সানসার সামনেই ঘটেছিল। দ্বিতীয় অভিযোগ ছিল লাইসার মাধ্যমে জন অ্যারিনকে বিষ দিয়ে মারার অভিযোগ। লাইসা না জানালে সানসার এটা জানার উপায় নেই। তৃতীয় অভিযোগ ছিল লাইসাকে দিয়ে কেইটলিনের কাছে চিঠি পাঠানোর। এই চিঠিতে লেখা ছিল জন অ্যারিনকে ল্যানিস্টাররা হত্যা করেছে। কেইটলিন এই চিঠি পাওয়ামাত্রই পুড়িয়ে ফেলেছিল। সে ঘরে কেইটলিন, নেড আর মেয়স্টার লিউইন ছাড়া কেউ ছিল না। সুতরাং এই ঘটনাও সানসার জানার কথা না। চতুর্থ অভিযোগ অবশ্য অনেকেই দেখেছে। নেড স্টার্ককে প্রতারিত করে সার্সেই ও জেইমিকে সমর্থন দিয়েছিল লিটলফিঙ্গার। নেডের কৌশলগত ভুলের মাঝে লিটলফিঙ্গারকে বিশ্বাস করা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। আর সে ভুলের মাশুল সে নিজের জীবন দিয়ে দিয়েছে। পঞ্চম অভিযোগ ছিল ব্র্যানকে দেয়া ভ্যালিরিয়ান ছুরিটার মালিকানা নিয়ে। ব্র্যানের ওপর হামলা হওয়ার পর ছুরিটা নিয়ে কেইটলিন লিটলফিঙ্গারকে প্রশ্ন করেছিল যে এটার মালিক কে তা সে জানে কি না। জবাবে সে বলেছিল এই ছুরিটি তারই ছিল, তবে জফ্রির জন্মদিনের টুর্নামেন্টে সে টিরিয়নের সাথে বাজি ধরে ছুরিটা হারিয়েছে। লিটলফিঙ্গারের চাতুরিটা ছিল খুবই সূক্ষ্ণ। সে প্রতিটা কথাই সত্যি বলেছিল। ছুরিটা তার ছিল, জফ্রির টুর্নামেন্টে বাজি ধরে সে হেরেছে, এর সবই সত্যি। তবে সে হেরেছিল রাজা রবার্ট ব্যারাথিয়নের কাছে, টিরিয়নের কাছে নয়। কেইটলিনকে সে ইচ্ছা করেই টিরিয়নের নাম বলেছিল, যেন ল্যানিস্টারদের প্রতি কেইটলিনের সন্দেহ আরো দৃঢ় হয়। সানসা এই বিষয়টাকে একটু ভুলভাবে উপস্থাপন করলো, “You told our mother this knife belonged to Tyrion Lannister. But that was another one of your lies. It was yours.” লিটলফিঙ্গার এখানে বলতেই পারতো যে সে আসলে সত্যি কথাই বলেছে, শুধু টিরিয়নের জায়গায় রবার্ট হবে। দৃশ্যটি দেখা যাবে এখানে-
তবে এটা বলেও খুব একটা লাভ হতো না, বরং সে যে ল্যানিস্টার বনাম স্টার্ক রেষারেষির চক্রান্ত করেছিল সেটাই আরো প্রমাণিত হবে। অভিযোগগুলো যখন একে একে বলা হচ্ছিল, তখন লিটলফিঙ্গারের চরিত্রে এইডেন গিলেনের অভিনয় ছিল দেখার মতো। প্রথমে অবাক হয়ে যাওয়া, নিজেকে বাঁচানোর জন্য ফুঁসে ওঠা, ভেইলের রুনস্টোনের লর্ড ইয়ন রয়েসের দিকে ফিরে তাকে নিরাপদে ঈরিতে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়া, সবশেষে অশ্রুসজল চোখে মাটিতে ভেঙে পড়া – জাত অভিনেতার কাজ। তার মুখের শেষ বাক্যটি শেষ হবার আগেই আরিয়া এসে সেই ছুরি দিয়েই এক পোচে গলা কেটে দিল। উইন্টারফেলের গ্রেট হলের পাথুরে মেঝে ভেসে গেল ওয়েস্টেরোসের সবচেয়ে ধুরন্ধর লোকটার রক্তে।
স্যাম ও গিলি ওল্ডটাউন থেকে রওনা দিয়ে উইন্টারফেলে এসে পৌঁছালো। গত সিজনের শেষ পর্বে ত্রিকালজ্ঞ ব্র্যান টাওয়ার অফ জয়ের ঘটনা মনোশ্চক্ষে দেখতে পেয়েছিল। সেখানে মৃত্যুর আগে লিয়ানা নেডের হাতে নিজের সন্তানকে তুলে দিয়েছিল। নেড প্রতিজ্ঞা করেছিল এই সন্তানের পরিচয় কাউকে বলবে না। সেই সন্তান তার জারজ হিসেবে বেড়ে ওঠা জন স্নো। স্যামের সাথে ব্র্যানের আলাপে আমরা লিয়ানা আর রেয়গারের পূর্ব ঘটনাগুলো ছাড়াছাড়াভাবে দেখতে পেলাম। গিলি হাই সেপ্টন মেয়নার্ডের দিনলিপিতে পেয়েছিল যে সে রাজপুত্র রেয়গার ও রাজকন্যা এলিয়ার বিয়ে নাকচ করে দিয়েছিল, কারণ রাজপুত্র আরেকজন মেয়েকে গোপনে বিয়ে করতে চেয়েছিল। তাদের বিয়েই এই মেয়স্টারই পড়িয়েছিলেন। তখন রাগের মাথায় স্যাম ঠিকমতো শোনে নি। তবে পরে ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দুইয়ে দুইয়ে চার করতে তার অসুবিধা হয়নি। উইন্টারফেলে এসে তাই সে ব্র্যানের সাথে দেখা করলো। এদেরও এখানে পুনরায় দেখা হচ্ছে, অনেক আগে ব্র্যান যখন হোডর, জোজেন ও মিরার সাথে ওয়াল পার হচ্ছিল তখন ফিরতে থাকা স্যাম ও গিলির সাথে তাদের দেখা হয়েছিল। এখানে তাই ভূমিকা ছাড়াই ব্র্যান বলে দিল যে জনের জন্মের ঘটনা সে অন্তর্দৃষ্টিতে দেখতে পেয়েছে। জনের জন্ম হয়েছিল ডর্নের সীমানায় টাওয়ার অফ জয়ে। তাই তার শেষ নাম ‘স্নো’ না হয়ে ‘স্যান্ড’ হওয়া উচিত।
তবে এখানে একটা তথ্যগত ভুল আছে, জারজদের নামকরণের একটি বিশেষ নিয়ম ওয়েস্টেরোসে মেনে চলা হয়। সাধারণত তারা যে অঞ্চলে বা রাজ্যে বড় হয়, সেখানের বিশেষ নামটাই তাদের শেষ নাম হয়। যেমন নর্থে বেড়ে উঠলে স্নো, বা রিভারল্যান্ডে বড় হলে রিভার্স, ইত্যাদি। জন স্নো উইন্টারফেলেই বড় হয়েছে, সুতরাং তার জারজ হিসেবে নামকরণ ঠিকই আছে। জন্ম কোথায় হয়েছে তার ভিত্তিতে সাধারণত নাম দেয়া হয় না। এই নিয়মের ব্যতিক্রমও আছে। অনেক সময় রাজ্যের নির্দিষ্ট নাম না নিয়ে বাবার রাজ্যের নামে নাম রাখা হয়। যেমন ওবেরিন মার্টেলের জারজ মেয়ে ওবারা স্যান্ড রিচ রাজ্যে বড় হয়েছিল। কিন্তু তার শেষ নাম রিচের ‘ফ্লাওয়ার্স’ না হয়ে ‘স্যান্ড’ হয়েছে বাবার নামের সাথে মিলিয়ে। যদি জনের নাম সেভাবে রাখতে হয়, তাহলে রেয়গারের বসতি ক্রাউনল্যান্ডের সাথে মিলিয়ে ‘ওয়াটার্স’ রাখতে হবে। ব্যতিক্রমের হিসেবেও তার নাম ‘স্যান্ড’ হতে পারে না।- যাই হোক, এই বিষয়টা ছোট মাছের চিকন কাঁটার মতো। গলায় বিঁধে গেলে খুব বেশি ব্যথা লাগে না, কিন্তু খচখচ করতে থাকে একটু পরপর। এই শো’এর লেখকরা অনেক পরিশ্রম করে ওয়েস্টেরোসের জগতকে গড়ে তুলেছেন। বিশেষত বইয়ের লেখক জর্জ আর আর মার্টিনের মনোযোগ আর খুঁটিনাটির ব্যাপারে অবিশ্বাস্য রকমের সতর্কতা বইগুলোতে লক্ষ্য করা যায়। তাই এমন ত্রুটি স্বভাবতই মনোযোগী দর্শকদের ভাবায়। ফ্যান্টাসি জঁরার সাহিত্য, চলচ্চিত্র বা টিভি শো-তেও একটা বিশাল জগত থাকে, নিজস্ব explanation থাকে এবং প্লট বিল্ডিং থাকে – সেটা থেকে সরে আসলে বা বেখেয়ালে তথ্যগত ভুল থাকলে, যারা শো আর বই সিরিজ দুইটারই প্রচণ্ড রকম ভক্ত- তাদের একটু হলেও খারাপ লাগাই স্বাভাবিক ।
রেয়গারকে এই প্রথম সিরিজের কোন দৃশ্যে দেখা গেল। এক শান্ত নদীর তীরে তাদের নিরিবিলি বিয়ের দৃশ্যটি আরেকটি দুর্ভাগা বিয়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলো। রব স্টার্ক আর ট্যালিসাও এভাবে নিরিবিলিতে বিয়ে করেছিল। তবে মনে আফসোস জাগে যে রব যদি রেয়গারের মতো বিয়ের খবরটা লুকিয়ে রাখতো তাহলে রেড ওয়েডিংয়ের ঘটনাবলী হয়তো অন্যরকম হতে পারতো। ব্র্যানের দৃষ্টিতে আমরা জনের আসল নামও জানতে পারলাম। লিয়ানা আর রেয়গার তার নাম ঠিক করেছিল এয়গন। রেয়গারের আগের দুই সন্তানের নাম যথাক্রমে রেয়নিস ও এয়গন। এদের মা এলিয়া মার্টেল। লিয়ানার সাথে রেয়গারের তৃতীয় সন্তানের নামও এয়গন রাখাটা তাই একটু খাপছাড়া মনে হয়। হতে পারে, লেখকরা ভেবেছেন এয়গন নামটার সাথে দর্শকরা পরিচিত আছে, আর রেয়গারের আগের দুই বাচ্চার নামও সম্ভবত খুব বেশিবার শো’তে উল্লেখ করা হয়নি। কেউ হয়তো জানেও না। তাই এয়গন নামটাই ব্যবহার করা হলো।
রেয়গার ও লিয়ানা : ভ্রান্তিবসন্ত, নীল গোলাপ আর নেকড়েমানবীর গল্প
ব্র্যানের কণ্ঠে ঘটনাবলীর বর্ণনার সময় স্ক্রিনে জন এবং ডেনেরিসের একান্ত মুহূর্তের দৃশ্য বেশ অস্বস্তিকরই হয়ে দাঁড়ালো। টারগারিয়েনদের প্রথাকে আমাদের আধুনিক চোখে মানিয়ে নিতে একটু সমস্যা হয় বৈকি। তবে এটাও ঠিক যে জন বা ডেনেরিস কেউই তাদের আত্মীয়তার সম্পর্কের কথা জানে না। তাই অস্বস্তিটুকু শুধুই আমাদের। পরের সিজনে এই সম্পর্ক প্রকাশিত হলে জন ও ডেনেরিসের প্রতিক্রিয়াও বেশ কৌতূহলোদ্দীপক হবে বলে ধারণা করছি।
ইস্টওয়াচ
একদম শেষে এসে বড়সড় একটা ধাক্কা দিল হোয়াইট ওয়াকারের বাহিনী। ইস্টওয়াচের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে তারা। টরমুন্ড আর বেরিকের বিস্ফারিত চোখের সামনে ওয়ালের সামনের বনজঙ্গল থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এল তাদের মৃতবাহিনী। আর সে বাহিনীর সামনে মৃত ঘোড়ার পিঠে কয়েকজন হোয়াইট ওয়াকার। সবচেয়ে ভয়াল আবির্ভাব যদিও নাইট কিংয়ের। মৃত ড্রাগনের পিঠে চড়ে সাক্ষাৎ মৃত্যুদূতের মতো উড়ে এলো নাইট কিং। আর ভিসেরিয়নের মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো নীল রঙের আগুন। হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে শুরু করলো ইস্টওয়াচের পুরো দেয়াল। টরমুন্ড আর বেরিকের কী পরিণতি হলো সেটা আর বোঝা গেল না। হয়তো সামনের সিজনে তারা বেঁচে আছে না মরে গেছে সেটা জানা যাবে। গত তিন পর্ব ধরে টিরিয়নের উদ্ভট পরিকল্পনার ফলাফল দেখছি আমরা। ধরে আনা ওয়াইট দিয়ে সার্সেইকে পুরোপুরি বোঝানো গেল না। ধরে আনতে গিয়ে মারা গেল থোরোস অফ মির এবং ড্রাগন ভিসেরিয়ন। আর নাইট কিংয়ের হাতে পড়ে সেই ড্রাগন ভেঙে দিল অপ্রতিরোধ্য দেয়াল। এই অভিযানের ফলশ্রুতিতে একমাত্র জন ও ডেনেরিসের ধর তক্তা মার পেরেক ধরণের প্রেম ভালোবাসা ছাড়া আর কোন বলার মতো কোন কিছু পাওয়া গেল না। উল্টো অবিমৃশ্যকারিতার চূড়ান্ত করে মানুষরা নিজেরাই নিজেদের মৃত্যুদূতকে আসার পথ করে দিল।
সব মিলিয়ে শেষ সিজনের জন্য সবগুলো গল্পকে বেশ গুছিয়ে আনতে পেরেছে এই পর্বের গল্পকাররা। রাজ্যে রাজ্যে যুদ্ধ গুরুত্ব হারিয়েছে, এবং পুরো মনোযোগ এসে গেছে ওয়াল পেরিয়ে আসা নাইট কিং ও তার বাহিনীর ওপরে। এক বছরেরও বেশি বিলম্বে আসবে গেম অফ থ্রোনসের অষ্টম তথা শেষ সিজন। সেই অপেক্ষায় এই বছরের মতো রিভিউ আর পুরনো গল্পের বাখানি এখানেই শেষ হচ্ছে।