সাদা শাড়ি লাল পাড়ে সিডনিতে বাংলাদেশিদের বর্ষবরণ

বৈশাখী কনসার্টে গাইছেন এন্ড্রু কিশোর। হাততালি দিয়ে নাচছে পাঞ্জাবী পরা তরুণ, অদূরে আকাশের দিকে মুখ করে দু আঙুলে একটা ফুচকা মুখে পুরে চোখ বুজে ফেলছে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পরা তরুণী। কোমরে গামছা বেঁধে গোল হয়ে সবান্ধব চলছে পথনাটক দেখা।

নিশ্চিন্তে বলে দেওয়া যায় ঢাকা শহরের ধানমণ্ডি কিংবা চারুকলার পরিচিত দৃশ্য বলে। কিন্তু ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মাইল দূরে, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে।

ঢাকে ঢোলে বর্ষবরণ

গেল ২৫ বছর ধরেই সিডনিতে নিয়মিত আয়োজন হচ্ছে বৈশাখী মেলার। এ বছর ইস্টারের ব্যস্ততায় জেরে, একটু দেরিতে মানে মে মাসের ১৩ তারিখে আয়োজন করা হয় এ মেলার। এবারের বাড়তি আকর্ষণ ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। প্রবাসী বাংলাদেশিরাতো বটেই অস্ট্রেলীয়রাও সার বেধে মঙ্গল শোভাযাত্রার মিছিলে যোগ দিয়েছে। সেজেছে নানা রং-ঢংয়ের মুখোশে।

হাজার পচিশেক বাঙালি জড়ো হয়েছিল সিডনির এবারের বৈশাখী মেলায়

সিডনির বাংলা বর্ষবরণের আয়োজনে ছিল গান, একক নৃত্য, দলীয় নৃত্য, আধুনিক গান, নাটক, আবৃত্তি, ফ্যাশন শোও।  যাতে শিশু কিশোরসহ স্থানীয় বাঙালি শিল্পীরাও অংশ নেন। পরিবেশনার একটা অংশ জুড়ে ছিলেন সেখানকার বাংলা স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরাও। কয়েক মাস ধরে রীতিমতো ট্রেনিং করে পোক্ত করা হয়েছে এসব ক্ষুদে পারফর্মারদের।

শিল্পী এন্ড্রু কিশোর ছাড়াও মঞ্চ মাতিয়েছেন অভিনতা আরেফিন ‍শুভ। আমি তোমার পিতা’ (আই অ্যাম দাই ফাদার) নাটকে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকায় অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। শুভর কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ভাষণ মুহূর্তের জন্য হলেও সিডনির সবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ’৭২ এর জানুয়ারিতে।

মঞ্চ মাতিয়েছেন শুভ, কম যাননি প্রবাসী শিল্পীরাও

সব মিলে প্রায় অর্ধলক্ষ বাঙালির বাস অস্ট্রেলিয়ায়। তারমধ্যে বলতে গেলে প্রায় সবাই বাংলাদেশী। দেশের বাইরে আরেকটা দেশ যেন। সেখানে নববর্ষ উদ্‌যাপন হচ্ছে, মেলা হচ্ছে, শিশুরা পরিচিত হচ্ছে বাংলা সংস্কৃতির সাথে। আয়োজকরাও বলছেন সিডনির অলিম্পিক পার্কের এই বৈশাখী মেলা বাংলাদেশ ও ভারতের বাইরে সবচেয়ে বড় বাঙালি সমাবেশ! আয়োজকরা জানিয়েছেন এবারে প্রায় ২৫ হাজার বাঙালি অংশ নিয়েছেন এ মেলায়।

বাঙালির প্রাণের উৎসব বৈশাখী মেলা টানা ১২ বছর ধরে এই অলিম্পিক স্টেডিয়ামেই চলছে! অলিম্পিক ভিলেজ কর্তৃপক্ষের হিসাবে এতদিন ধরে চলা উৎসব তাদের কাছেও একটি রেকর্ড। এই সুযোগ হাতছাড়া করেননা স্থানীয় রাজনীতিকরা। দুটো কথা বলতে মঞ্চ ওঠেন তারাও।

বৈশাখী মেলা উপলক্ষে প্রতি বছর কোনও এক জন বিশিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু পদক। এবার এই পদক দেওয়া হয়েছে সিডনির বিখ্যাত চিলড্রেন হসপিটালকে। শিশু চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার এই হাসপাতালকে সম্মাননাটি দিয়েছে সিডনির বাঙালিরা।

এক সংগঠিত ডায়াসপোরার আভাস পাওয়া যায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের একুশে ফেব্রুয়ারি কিংবা নববর্ষ উদ্‌যাপন দেখে। তাদের হাতেই বিশ্ব মানচিত্রের কানাচে রোপিত হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির বীজ। ধীরে ধীরে এর প্রসারে বাংলা সংস্কৃতি পৃথিবীর বুকে মহীরুহে রূপ নেবে এমনটাই আশা আয়োজকদের।

প্রতিবার অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয় আতশ বাজি পুড়িয়ে। এবারে অবশ্য আয়োজন ছিল মনোমুগ্ধকর লেজার শোয়ের।

প্রশান্ত মহাসাগরের পাড় থেকে বাংলাদেশ ও বাঙালির জয়কার জানান দিচ্ছে। শুনতে কি পাচ্ছেন?