বছর পেরিয়ে মাস। মাস পেরিয়ে দিন। আর এবার দিন পেরিয়ে কাউন্টডাউন্ড এসে ঠেকেছে ঘণ্টায়। আর কয়েক ঘণ্টা পরেই আসছে অ্যাভেঞ্জার্স মুভির তৃতীয় কিস্তি। এ বছরই মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের (এমসিইউ) দশ বছর পূর্তি। অ্যাভেঞ্জার্স ইনফিনিটি ওয়্যার হতে যাচ্ছে এমসিইউ-এর ১৯তম মুভি। সুপারহিরো মুভি ভক্তদের মাঝে ঈদের মতো আনন্দ। আর আরো স্পেসিফিক্যালি এমসিইউ ভক্তরা ভেতরে ভেতরে খুব এক্সাইটেড। দেখতে তো হবেই। এই মুভির জন্যেই তো দশ বছরের অপেক্ষা। সব মিলে- এটাই এ বছরের মোস্ট অ্যান্টিসিপেটেড মুভি। তবে এই বিশাল কাস্টিং (রুশো ব্রাদার্স পরিচালিত এই মুভিতে নাকি দেখা যাবে অন্তত ৭৬টা ক্যারেক্টারকে) দেখার আগে কিছু জিনিস ঝালিয়ে নেয়া আবশ্যক। এর আগে মুভিটি দেখার আগে রিভিশন হিসেবে এমসিইউ-এর কোন ৫টি মুভি দেখা যেতে পারে তার একটা লিস্টি দেয়া হয়েছিলো। তবে সময় যেভাবে কমে আসছে তাতে ওই সবগুলো দেখার সময় হয়তো পাবেনও না। অবশ্য যদি প্রথম সপ্তাতেই দেখার চিন্তা বাদ দিয়ে থাকেন তাহলে সময় যথেষ্টই আছে। তবে যতো দেরি করবেন ততোই কিন্তু অনলাইনে আর অফলাইনে সোশ্যাল গ্যাদারিং থেকে দূরে থাকতে হবে। খামোখাই স্পয়লার খেয়ে যাবার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। রুশো ব্রাদার্স যতোই থানোসের বরাত দিয়ে কাহিনী নিয়ে নীরবতা পালন করতে চিঠি দেক, বীরবাঙালির ওসব থানোস-মানোস ভয় পাবার কোনো কারণ নেই।
তাই চলুন চটজলদি নিয়ে নেই ইনফিনিটি ওয়্যার দেখার আগের সহজপাঠ- কোন কোন বিষয় অবশ্যই অবশ্যই জানা থাকা লাগবে। আর এই শর্ট নোটগুলো বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট আর ইউটিউব ভিডিও দেখে বানানো। তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা।
অ্যাভেঞ্জার্স–এ হিরোদের মিলনমেলা:
তৃতীয় অ্যাভেঞ্জার্স মুভি হলেও টাইমলাইনের ঘটনাপ্রবাহ অনুযায়ী এখন অ্যাভেঞ্জার্স আর আগের মতো সুখী সংসার নয়। ক্যাপ্টেন আমেরিকা শেষ সিভিল ওয়্যারেই তার ঢাল হারানোর পাশাপাশি হারিয়েছেন অ্যাভেঞ্জার্স-এ থাকার আগ্রহও। বাকিরাও তথৈবচ। হকআই যে কই আছে। হাল্ক আর থর তো এ গ্রহেই নেই। হোমকামিংয়ে স্পাইডিও আগ্রহ দেখায়নি। (ব্ল্যাক প্যান্থার না দেখা থাকলে স্পয়লার অ্যালার্ট) ‘বাকি’ তো পড়ে আছে ব্ল্যাক প্যান্থারের ‘ওয়াকান্ডা’য়। ভিশন আর ওয়্যার মেশিনকে নিয়ে টনি স্টার্কের একলা সংসার। তাই ইনফিনিটি ওয়্যারে একটা মেগা-পুনর্মিলনী আর নবীন বরণ দেখার জন্য রেডি থাকতে হবে দর্শককে।
কে এই থানোস?:
এর আগে এমসিইউ-এর মুভিতে থানোসের দেখা পাওয়া গেছে তিনবার। তবে সেগুলো সব মিড বা পোস্ট ক্রেডিট সিন হিসেবে। জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড সুপারহিউম্যানদের গোত্র ‘এটারনাল’-এর সদস্য থানোসের ফন্দি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় সেগুলোতে। তার উদ্দেশ্য পৃথিবী আর মহাজগতের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ছয়টি শক্তিশালী ইনফিনিটি স্টোন তার ইনফিনিটি গন্টলেটে পোরা। আর ছয়টা স্টোনের বদৌলতেই সে হয়ে যাবে অমিত শক্তির অধিকারী। গামোরার মতে এক তুড়িতেই উল্টে দেবে পাশার দান। অ্যাভেঞ্জার্সের লড়াইটা ইনফিনিটি স্টোনগুলোকে রক্ষা করার।
থর: দ্য রাগনারক-এর মিড ক্রেডিট সিনে থর যখন অ্যাসগার্ডিয়ানরা সহ স্পেসশিপ নিয়ে এগোচ্ছে তখন বিশালাকায় আরেকটা শিপকে তাদের দিকে এগোতে দেখা যায়। রুশো ভাইয়েরা এক সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেছেন সেই শিপটা নাকি থানোসেরই। তার মানে থানোসের সাথে কোনো অ্যাভেঞ্জারের প্রথম সাক্ষাৎটা ওখানেই হচ্ছে সম্ভবত।
গ্যালাক্সির গার্ডিয়ানরা কেনো অ্যাভেঞ্জার্স–এ:
স্টারলর্ড-এর নেতৃত্বে গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি কেনো যোগ দেবে থানোস-বধ কাব্যে, তার পেছনে শুধু পাওয়ার স্টোন-ই কারণ নয়। কয়েকজনের ব্যক্তিগত কারণও রয়েছে। গার্ডিয়ানস-এর গামোরা এবং নেবুলা থানোসের পালক সন্তান। তা হলেও তাদের কেউই পালক বাবার প্রতি একেবারেই অনুরক্ত নন। কারণ থানোস তাদের পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করেই তাদের তুলে এনেছিলো। পারিবারিক এমন বিরোধ আছে ড্রাক্স-এরও।
ইনফিনিটি স্টোন–এর যা যা ঘটনা:
ছয়টা পাথরের কথা তো শুনলাম। তো এই পাথরগুলো কী, কী এদের ক্ষমতা আর আছেই বা কই?
প্রথমে আসবে নীল রংয়ের স্পেস স্টোন। টেসারেক্ট নামের কিউবের ভেতর রাখা আছে। এটার সাহায্যেই জাগতিক ও মহাজাগতিক আসা-যাওয়ার রাস্তা তৈরি করা যায়। এটা পেয়ে গেলেই কিন্তু থানোস যখন যেখানে ইচ্ছে চলে যেতে পারবে। এরপর আসবে হলদেরঙা মাইন্ড স্টোন। লোকিকে থানোসই দিয়েছিলো এ পাথর। যা পরে নানা হাত ঘুরে এখন আছে ভিশন-এর মাথায়। এর আছে মাইন্ড ম্যানিপুলেশনের অদ্ভুত ক্ষমতা।
সবচে’ জটিল স্টোন সম্ভবত লাল রংয়ের রিয়্যালিটি স্টোন। প্রথম দেখা গিয়েছিলো থর: দ্য ডার্ক ওয়ার্ল্ড-এ। এটার অন্যান্য বিধ্বংসী ক্ষমতার পাশাপাশি রয়েছে বাস্তবতাকেই বদলে ফেলার শক্তি। এটি যে এখন কই আছে কে জানে।
বেগুনি রংয়ের পাথরটির নাম পাওয়ার স্টোন। চক্ষের পলকে পুরো একটা প্ল্যানেটকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া এটি এর বহনকারীর ক্ষমতা কয়েকশো গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে, এমনকি এর সাথে বাকি পাথরগুলো থাকলে সেগুলোর শক্তিও বেড়ে যাবে এর প্রভাবে। গার্ডিয়ান অব দ্য গ্যালাক্সি’র স্টারলর্ড এটিকে নোভাকর্প নামের একটা প্ল্যানেটের অধিবাসীদের কাছে রাখতে দিয়েছে।
সবুজ রংয়ের টাইম স্টোন যেটি ডক্টর স্ট্রেঞ্জের গলায় ঝুলতে দেখা গেছে, তার আছে সময়কে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা। বর্তমানে আছে কামার-তাজের ম্যাজিকাল কম্পাউন্ডে। লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট- কমলা রংয়ের সোল স্টোন। এটি এখনো অনাবিষ্কৃত।
ভিশন–এর বাঁচা–মরা:
গুজব আছে ইনফিনিটি ওয়্যার-এ মহাপরাক্রমশালী থানোসের প্রতাপে এক বা একাধিক সুপারহিরোর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। এদিকে ভিশন-এর মাথায় আছে মাইন্ড স্টোন। তার মানে ওকে হত্যা করেই ওই স্টোন পেতে হবে থানোসের। ট্রেলারে এরকম ইঙ্গিতও আছে। ওদিকে ভিশন আশেপাশে থাকলেই স্কারলেট উইচের সাইকিক ক্ষমতা ভালো কাজ করে। অর্থাৎ তাকে হারানো মানে স্কারলেটের ক্ষমতার বারোটা। আগের মুভিতে দু’জনের মধ্যে একটা রোমান্টিক রিলেশনের আভাস ছিলো। এক সাক্ষাৎকারে স্কারলেট চরিত্রে রূপদানকারী এলিজাবেথ ওলসেন জানিয়েছেন ইনফিনিটি ওয়্যারে নাকি তাকে ঘিরে ইমোশনের বালতি অপেক্ষা করছে। এ সব দুই আর চার মিলে যদি ধরে নেন ভিশন মরতে যাচ্ছে তাহলে জেনে রাখুন প্রিমিয়ারে আবার ওলসেন বলেছেন এ মুভিতে তিনি দেখিয়েছেন ব্যক্তিগত অ্যাকশনের চূড়ান্ত। ভিশন মরলে কি সে অ্যাকশন দেখাতে পারতো?
কোথায় শুরু হতে পারে লড়াই?
মহাশক্তিধর থানোসের সাথে সম্ভাব্য লড়াইয়ের ভেন্যু হতে পারে টেকনোলজিক্যাল মার্ভেল- ওয়াকান্ডা। প্রথমে সবাই একে তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে জানলেও পরে আবিষ্কৃত হয় এর প্রাচুর্য কোনো অংশেই কম নয়। এই ওয়াকান্ডার উল্লেখ এমসিইউ-তে হয়েছে বেশ ক’বার। কারণ ওয়াকান্ডা’য় প্রাপ্ত দুষ্প্রাপ্য আর দামী ধাতু ভাইব্রেনিয়াম দিয়েই তো তৈরি হয়েছিলো ক্যাপ্টেন আমেরিকার শিল্ড সহ অনেককিছু। টনি স্টার্ক অনেক আগে থেকেই এই অঞ্চল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এই ইনফিনিটি ওয়্যারে ওয়াকান্ডা কিন্তু পালন করতে যাচ্ছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কারণ? (মেজর স্পয়লার অ্যালার্ট)
.
.
.
.
সাক্ষাৎকারে রুশো ভাইদের একজন জানিয়েছেন মাইন্ড স্টোন যা কি না আছে ভিশন-এর মাথায় সেটা শেষমেশ ওয়াকান্ডায় গিয়ে পৌঁছাবে। আর সেটি হলে মাইন্ড স্টোনকে রক্ষা করতে ওয়াকান্ডাই যে হবে সবচে’ বড় কুরুক্ষেত্র তাতে আর আশ্চর্য কী। আবার ওদিকে ক্যাপ্টেনের ‘বন্ধু আমার শত্রু আমার’ বাকি-কে আগের পর্বে আইস চেম্বারে ঢুকতে দেখা গেলেও ব্ল্যাক প্যান্থারের শেষে তাকে ওয়াকান্ডাতেই দেখা গেছে।
পুনশ্চ, ইনফিনিটি ওয়্যারের প্রমোশনে হকআই মিসিং ছিলেন। সিভিল ওয়্যার-এর প্রেক্ষাপটকে দেখার দৃষ্টিকোণে ভিন্নতার কারণে তিনি নিজেকে গুটিয়ে এনেছিলেন সে মুভিতেই। তবে আজ ছোটো বলে আরো একজন যে মিসিং তা নজরে আসেনি অনেকের। তিনি অ্যান্ট-ম্যান। এ দু’জন যে যেকোনো সময় মুভিতে আবির্ভাব করতে পারে- সম্ভাবনাময় এ তথ্যটাও জানা রাখা জরুরি।
প্রিয় পাঠক, এবার আশা করি আপনি ২৭ তারিখ প্রথম শো-তেই অ্যাভেঞ্জার্স: ইনফিনিটি ওয়্যার দেখার জন্য মোটামুটি প্রস্তুত।