বাংলা নববর্ষকে ঘিরে দেশজুড়ে তৈরি হয় উৎসবের আমেজ। বর্ষের এই প্রথম দিনে, পহেলা বৈশাখে আয়োজনগুলো সাজানোও হয় নানা আঙ্গিকে। নতুন আশা, উৎসাহ আর গভীর মানবিক উজ্জীবনকে সঙ্গী করে আয়োজিত হয় নানা অনুষ্ঠান, দেশজুড়ে। সেই আয়োজনের বেশ জমজমাট একটি অংশ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এই রাজধানীতেও। এবারের ঢাকার বৈশাখের প্রধানতম আকর্ষণ ছিল বেঙ্গল বই আয়োজিত ৪ দিন ব্যাপী বৈশাখী উৎসব। এবারের আয়োজনের শিরোনাম ছিল ‘পরান ভরি দাও’।
বাঙালির ঐতিহ্যে ও জীবনযাপনে নববর্ষের বহুমাত্রিক আবেদনে বেঙ্গল বইয়ের এই আয়োজন নতুন করে প্রাণের সঞ্চারণ করেছে নাগরিকদের মাঝে। মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রীতি ও সম্মীলন তৈরি করেছে, একটু নতুন মাত্রা পেয়েছে এই ইট-কাঠ-পাথরের শহরে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কগুলো।
বেঙ্গল বই অবশ্য প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই নিজেদের কর্মসূচিতে বোধ ও চেতনা সঞ্চারে প্রয়াসী থেকেছে। নববর্ষ উপলক্ষে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত চার দিনব্যাপী (১২-১৫ এপ্রিল) অনুষ্ঠানে পুরাতন বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ২৯ চৈত্রে ছিল বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয় শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা। সাথে ছিল বিশিষ্ট শিল্পী শারমিন সাথী ইসলামের পরিবেশনায় পঞ্চ কবির গানও। এরপর কবিতা পাঠ করেন হাসান আরিফ।
৩০ চৈত্রে সংক্রান্তির রাতে ছিল চেতনার গান নিয়ে জনপ্রিয় ‘জলের গান’ এর পরিবেশনা। বাংলা নাগরিক গানের এই দলটি নিজেদের উদ্ভাবিত নানারকম যন্ত্রানুষঙ্গ সহযোগে গান পরিবেশন করে। যে পরিবেশনায় মুগ্ধ হয় শ্রোতারা, কারণ গানগুলো যে একদম প্রাণের কথাই বলে। লোকসংগীত ধাঁচের গানে আর নৃত্যদোদুল ছন্দে জলের গানের পরিবেশনা ছিল মনোমুগ্ধকর।
পহেলা বৈশাখ ছিল উৎসবের তৃতীয় দিন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আয়োজন ছিল পথিক বাউলের বাঁশি ও গানকে ঘিরে। দিনব্যাপী ৫ জন বাউল গান এবং বাঁশিসহ নানা যন্ত্রের মোহন সুরে মুগ্ধ করেছেন শ্রোতাদের। এসময় বাউলরা তাদের লোকজ যন্ত্র (একতারা, বাওয়া, খমক, সারিন্দা) বাজিয়ে গান করেন। শিল্পীরা ছিলেন সিরাজ বাউল, মহর বাউল, সুমন বাউল, আরিফ এবং শিশু শিল্পী আরিফা। শিল্পীদের সাথে যন্ত্রানুষঙ্গে আরও ছিলেন হারমোনিয়ামে আব্দুল আজিজ, বাঁশিতে মো. আখতারুজ্জামান, মন্দিরায় মো. আব্বাস এবং ঢোলে মাসুদ সরকার।
উৎসবের শেষ দিন রোববারে ছিল লোকগানের অনুষ্ঠান। এদিনের সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী হালিমা পারভীন এবং ভজন বাউল। বেঙ্গল বইয়ের জমজমাট এই অনুষ্ঠানগুলি ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত।