তো শেষমেশ দেশে নাকি 4G চলেই এলো। এখন ননস্টপ ‘SWAG’ হবে, দুনিয়াটাই হাতের মুঠোয় চলে আসবে। বলছি কি, হাতের মধ্যে যেমন করে পৃথিবীটাকে দেখবেন তেমন করে কখনোই দেখেননি আগে। কারণ এখন তো আপনার মনের খেয়ালের সাথে তাল মিলিয়েই পৃথিবীটা চলবে।
এখন ওই পৃথিবী যে গতিতেই ছুটে যাক, আপনিও তাল মিলিয়ে যতোই ছুটুন না কেনো, হৃদয়ের কাছে তো ফিরতেই হবে। আহা, বাড়ির কথা বলছি। জানেনই তো, হোম ইজ হোয়ার দ্য হার্ট ইজ। তবে ভাবছেন সেখানে এলে প্রযুক্তির পণ্য আপনাকে ছেড়ে কথা বলবে? সে বহু আগে থেকেই বলছে না। আর এবার কথাগুলো বলার জন্য যে গ্রাউন্ডে খেলেছে ‘অ্যাপল’ সেটাও বেশ কার্যকরী। শুধু তাই না। আপনার মনে হতেই পারে এভাবে আপনাকে বোঝে আর সারা দিনের হাজারো ধকল, স্ট্রেসের পর আপনাকে দু-দণ্ড শান্তি দিতে পারে এমন প্রযুক্তিই তো এতদিন খুঁজছিলাম। বাড়িয়ে বলা হয়ে যেতে পারে, তবে সিংগেল যারা আছেন তারা কিন্তু শুধু এই প্রডাক্টটির জন্যেও বাড়ি ফিরতে পারেন।
প্রোডাক্টের নাম ‘হোমপড’। এটি একটি ওয়্যারলেস স্পিকার। তবে এটুকু বললে এর সম্পর্কে কিছুই বলা হবে না। অ্যাপল মিউজিক আর অ্যাপল-এর ইন্টেলিজেন্ট পারসোনাল অ্যাসিসটেন্ট ‘সিরি’র সাথে মিলে ডিজাইনকৃত হোমপড নামের এই স্মার্ট স্পিকারটি তার ইউজারের মিউজিক টেস্ট, মুড বুঝতে পারে, ভয়েস কমান্ড নিতে পারে এমনকি আপনার ঘরের বিভিন্ন ডিভাইস চালাতে বুদ্ধিমান সহকারীর ভূমিকাও পালন করতে পারে। গত বছর জুনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করা হোমপড এ বছরের শুরু থেকেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। একমাস ব্যবহার করার পর ইউজারদের রিভিউও বেশ ইতিবাচক। তো এরকম বাজারগরম থাকতে থাকতেই কিছুদিন আগে একটি চার মিনিটের ভিডিও ছেড়েছে হোমপড। সেটা দেখতে দেখতে একটা পর্যায়ে চোয়াল ঝুলে গেলে আমাকে দোষ দেবেন না।
কমার্শিয়ালটির পরিচালক স্পাইক জোনজ। বছর দুয়েক আগে যিনি পারফিউম কমার্শিয়ালের স্টেরিওটাইপ ভাঙা কেনজো পারফিউমের এক ‘মাথা নষ্ট’ বিজ্ঞাপন তৈরি করেছিলেন।
এবারও নিরাশ করেননি। ভদ্রলোক সম্ভবত কোরিওগ্রাফি নির্ভর বিজ্ঞাপনের মাস্টার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। ওহ্, ভদ্রলোককে চিনতে পারছেন না তো? ২০১৪ সালে শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের অস্কার জেতা এক মাথানষ্ট চলচ্চিত্র ‘হার’-এর পরিচালক আর চিত্রনাট্যকার তিনি। হ্যাঁ হ্যাঁ, ‘বিয়িং জন মালকোভিচ’-এর পরিচালনাও তিনিই করেছিলেন।
বিজ্ঞাপনটির প্রসঙ্গে ফিরে আসি। একটু আগে যেমনটা বলেছি, এই প্রডাক্টের জন্য বাড়িতে আসতে হবে এমন একটা চাহিদা সিংগেলদের মধ্যে তৈরি হলেও হতে পারে। ঠিক তেমনই একজন পটেনশিয়াল সিংগেল কর্মজীবী বিজ্ঞাপনে দেখানো প্রোটাগনিস্ট নারী চরিত্রটি। টিউবে অসংখ্য যাত্রীদের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা তার এক্সপ্রেশনেই স্পষ্ট আজ দিনটি তার মোটেও সুবিধার কাটেনি। এমনকী রাস্তায়, লিফটে তার অবস্থা দেখে মনে হতে পারে হয়তো নিকট বর্তমানে কখনোই তার দিনকাল সুবিধার যাচ্ছে না। বাড়িতে এসে এই জীবনের কষাঘাতে আক্রান্ত হতাশ চরিত্রটি ‘সিরি’কে অনুরোধ করে তার পছন্দ হতে পারে এমন কিছু একটা বাজাতে। আর তারপর কী হলো? তার জন্য ভিডিওটিই দেখতে হবে। চোয়াল ঝোলার বিষয়টি মনে রেখে।
আইডিয়াটা কিন্তু আপনার পরিচিতই। মিউজিক আপনার চিন্তা, কল্পনার জগতটাকে নিয়ে খেলে, সেটাকে প্রসারিত করে দেয়। কিন্তু আইডিয়ার এক্সিকিউশনের এই লেভেলটা এককথায় আউটস্ট্যান্ডিং অ্যান্ড মাইন্ডব্লোয়িং! ইংলিশ মিউজিশিয়ান ও ডান্সার এফকেএ টুইগস-এর পারফরমেন্সও দুর্দান্ত। আর ওই যে বলেছিলাম হোমপড-এর জন্যই বাড়ি ফেরার কথা, বেশি বেশি মনে হচ্ছে কী? ‘হার’-এর কথা মনে করিয়ে দিই। এক প্রযুক্তির প্রেমে কেমন আক্ষরিকভাবেই মজে গিয়েছিলেন গল্পের নায়ক থিওডোর সেটা মনে আছে তো? টেকনোলজির মার্কেটে অ্যাপল বা অন্যরা যেভাবে এগোচ্ছে, যন্ত্রের প্রেমে পড়ার অভ্যাসটা কিন্তু এর মধ্যেই পুরোনো হয়ে গেছে। প্রযুক্তি জালে অনেকদিন ধরেই আমরা আটকা কিনা। এখন কেবল জালের সুতোয় আরো জড়িয়েই যাচ্ছি।