তারুণ্য বৈচিত্রে বার্জার পেইন্টসের ২২ তম আসর

কেমন হয় তরুণদের গল্প? কিভাবে ভাবছে তারা? এই সময়ে? এই পরিস্থিতির মুহূর্তে? চিন্তা কখনো থেমে থাকে না। বরং প্রতিনিয়ত বদলায়। সময়ের গল্প বদলে যায় সময়ে। সেখান থেকেই জন্ম নেয় চিত্রীর ভাষা। নতুন করে তৈরি হয় চিত্রপট। প্রতিটি দিনের শুরুতে কিংবা শেষে।

ঝলমলে তারুণ্যের গল্প বলতে প্রতিবছর অনুপ্রেরণা হয়ে এগিয়ে আসে বার্জার পেইন্টস। তাদের আয়োজনে অংশ গ্রহণ করে দেশের আগ্রহী তরুণ শিল্পীরা। সেখান থেকেই নির্বাচিত ৪০ টি ছবি নিয়ে প্রতিবছর আয়োজিত হয় এক প্রদর্শনীর। নতুন করে পথ চলতে শুরু করে নতুন তরুণ দিগন্ত। শুধু নির্বাচিত ৪০টি কাজই নয়, নির্বাচিত হয় ছয়জন সেরা শিল্পীও। তরুণদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই উদ্যোগ বেশ প্রশংসাতুল্য। একটু একটু করে পথ চলেছে তাদের এই প্রয়াস। গত ২১ নভেম্বর শুরু হয়েছে তাদের ২২ তম প্রদর্শনী। চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারীতে। এর আগে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে সম্মানিত করা হয়েছে শিল্পীদের।

এবছরের প্রতিযোগিতায় সেরা পুরষ্কারটি ছিনিয়ে নিয়েছেন ঊর্মি রায়। ‘এমব্রেস দ্য সোল থ্রি’ শিরোনামে তার ছবিতে অর্জন করেছে প্রথম পুরষ্কার। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জেবা ফারিয়ার ‘পেইন্টিং ফ্রম থ্রি হুইলারস’ এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে মং মং সুর ‘লাইফ অ্যান্ড ফিশারবোটস-৬’  যেখানে গল্প জেলেদের জীবন যুদ্ধের। সুলতানা শারমীন, সুরাইয়া আক্তার ও নওশীন তারান্নুম সকলেই রয়েছেন সেরা ৬-এর তালিকায়। প্রতিবছরের মত এবারওআজীবন সম্মাননা দেওয়া হয় শিল্পী মাহমুদুল হককে।

কেমন সেই তরুণদের গল্প? যারা এমন প্রাণের আসরে অংশ নেয় প্রতিবছর? কেমন গল্প থাকে তাদের ছবিতে?

এমব্রেস দ্য সোল থ্রি

ছবিটি এঁকেছেন উর্মি রায়। লিথোগ্রাফ মাধ্যমে করা এই ছবিটির গল্প বর্তমান সময়কে নিয়ে, যখন এই প্রজন্মে সবাই জ্ঞানের চর্চায় ব্যস্ত কেবল নিজের জন্য, বেঁচে থাকার তাগিদে। সেখানে নেই কোন বইয়ের ক্ষুধা। এমনই এক সময়ে উর্মি রায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন আরুজ আলী মাতব্বরের কোন এক বচনে। সেখানে বলেছেন প্রকৃতির পালাবদলের কথা, যা কেবলই শুধু উপন্যাসের পাতার মতই ধরা দেয় ইতিহাসে। যদি বই হয় আপনার সঙ্গী, তবেই বিদায় নেবে সময়ের হতাশা আর একাকিত্বের গল্প।

পোর্টফোলিও

সেরা দশ কাজগুলোর মাঝে অন্যতম এই ছবিটি। শিল্পী সুবর্না মোর্শেদা তার জীবনের গল্প বলেছেন তার কাজে। যেখানে তার পারিবারিক স্মৃতি, বাবা-মায়ের জীবনযাপন ঠাঁই পেয়েছে ছাপচিত্র মাধ্যমে। কাজ করেছেন কাঠ-খোদাই, এচিং এবং লিথোগ্রাফে। জীবন হোক উচ্ছ্বলতায় ভরা, সেটিই তো সুখের মূল মন্ত্র।

এনলাইটমেন্ট

সেরা কাজ গুলো থেকে আরও একটি, এঁকেছেন দীপংকর সিংহ। তার এই ছবির গল্প আত্মনির্ভরতার গল্প। যেখানে মানুষ প্রাকৃতিক ভাবেই নির্ভর করে তার পারিপার্শ্বিকতার উপর। আর সেখান থেকেই জন্ম নেয় তাদের ভঙ্গুর মানসিকতার। ফলাফল, বিধ্বস্ত পথচলা। সেই গল্পের শেষ চেয়েছেন শিল্পী দিপংকর। তবেই একদিন মানুষ উড়তে পারবে নিজের আকাশে, ডানা মেলে। শুধু এড়িয়ে যেতে হবে না-বাচক শব্দকে।

তরুণ এই শিল্পীদের শিল্পকর্মগুলোর দর্শন পেতে চলে আসুন জয়নুল গ্যালারীতে। প্রদর্শনী চলবে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত।