বিদায় গিরিজা দেবী

বেনারসের সংগীতের রাণীর জীবনাবসান হয়েছে গতকাল। এই উপমহাদেশের কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী বিদুষী গিরিজা দেবী আর নেই। ম্যেহফিলে বসে তার অসাধারণ বেনারসী ঠুমরীর চলন-বোল আর উপেভাগ করবে না কোন শাস্ত্রীয় সংগীত সমঝদার।

বেনারসেই জন্ম, ৮৮ বছর আগে। সেনিয়া ও বেনারস ঘরানার এই শিল্পীর যাত্রা শুরু পিতার অনুপ্রেরণায়। তখন বয়স ছিল মাত্র ৪ বছর। যেই ঠুমরীর যাদুতে মোহিত করেছেন এতকাল সকলকে, সেই গল্পের শুরু হয় বেনারসেই। পণ্ডিত সূর্যপ্রসাদ মিশ্রের কাছে হাতেখড়ি। খেয়াল, টপ্পা আর উত্তর ভারতীয় লোকসংগীত- একে একে সবকিছুতেই অর্জন করেছিলেন অনায়াস দক্ষতা।

গুরু শ্রীচাঁদ মিশ্রর কাছেও তালিম নিয়েছেন। সময়ের সাথে আরও আয়ত্ত্ব করেছিলেন নানা আঙ্গিকের গায়কী। তার সুরেলা গলায় প্রাণ পেয়েছে কাজরি, চৈতি আর হোলির গান। প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে সংগীত পরিবেশন করেন ১৯৫১ সালে। যদিও রেডিওতে অভিষেক ঘটেছিল আরও আগে, ১৯৪৯-এ। সেসময় এমন নারী চরিত্রের খোঁজ মিলত কই, যে কিনা শুধু সঙ্গীতকেই তার আরাধনার জায়গা হিসেবে গ্রহণ করবে।

শুধু পরিবেশনার মাঝেই নিজেকে বেঁধে রাখেননি। আশির দশকে কলকাতায় প্রতিষ্ঠার প্রায় শুরু থেকে কাজ করেছেন আইটিসি সংগীত গবেষণা একাডেমিতে। শিক্ষকতা করেছেন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে। পেয়েছেন অনেক সম্মাননা। ভারত সরকারের তরফ থেকে পেয়েছেন পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ ও পদ্মশ্রী।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এই কিংবদন্তি সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশেও এসেছিলেন একাধিকবার; প্রথমবার ২০১২ তে, শেষবার ২০১৬ তে। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবের আসরে তিনি বিমোহিত করেছিলেন অসংখ্য শ্রোতাকে। ভেবেছিলেন, এরপর শুধুই শিষ্যদের শেখানো নিয়েই ব্যস্ত রাখবেন নিজেকে। মঞ্চকে বিদায় বলে, একটু অবসরও নিতে চেয়েছিলেন তিনি। সঙ্গীত জগত অথবা তার অনুরাগী ভক্তকূল কি জানত? একেবারেই বিদায় নেবেন তিনি পৃথিবী থেকে। আর কোনদিন তার সুরেলা কণ্ঠের জাদুতে মেতে উঠবে না সঙ্গীত পিপাসুর মন।

ছবিঃ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন