যে মানুষটি নিজের শিল্পে, জীবনে গল্পের মিথ ভেঙ্গে স্বর্গকে মর্ত্যের রূপে প্রতীয়মান করেছিলেন; তিনি একজনই। আজ তাঁরই এ মর্ত্যলোকে আসার দিন। শুভ জন্মদিন এস. এম. সুলতান।
শেষ জীবনে আপন খেয়ালে নড়াইলে গ্রামে শিশুদের জন্য বানিয়েছিলেন ‘শিশুস্বর্গ’। যে স্বর্গ ভেসেছে নদীতে। নিজ মনে, একান্তে দুর্দান্ত সব ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন প্রতিটি পদরেখায়। পুরোনো ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় তাঁর দেখা মিলেছে অন্যরূপে। পড়নে শাড়ি!! পায়ে ঘুঙুর। নিজেকে নাকি নারীর রূপে দেখবার স্বাদ হয়েছিল তাঁর! আহা!! কি অদ্ভুত তাঁর চাওয়া। নিজের গন্ডিকে ছাড়িয়ে একটু একূল-অকূল করতেই যেখানে হাসফাঁস করে মানুষ। সেখানে অস্তিত্বের উলটো রথ! সেকি আমাদের মনের জানালায় ভুলেও উঁকি দেয়?
দেশ-বিদেশের যেখানেই গিয়েছেন, আলোর কেন্দ্রবিন্দুতে বরাবরই একজন, সুলতান। চলার পথের খোরাকি মেটাতে একেঁছেন একটানা, বিক্রি করেছেন জীবিকার তাগিদে। কাজের টানে নাকি আরেক আকাশে নিজস্ব সীমানার খোঁজে চষেছেন প্রতিবেশী বা অনেক দূরের ইউরোপ-আমেরিকা। কদরের কমতি ভাববার অবকাশ পাননি। এত ভাবার সময় কোথায়? ছুটেছেন তো নিজের গতিতে। আবার হুট করেই ফিরেছেন ঘরে। এ যেন লাল মিয়াঁর প্রত্যাবর্তন। এভাবেই, নড়াইলেই একদিন তৈরি হল শিশুস্বর্গ।
অনন্য নিজস্ব ধারার কাজ যা এক পলকেই চিনিয়ে দেয় সুলতানকে। পকেটে বিড়াল আর গায়ে জড়ানো সাপ? গঞ্জিকার ভুরভুরে গন্ধ? আরো বিচিত্র কিছুর সাথে। সোনারগাঁয়ের এক বাড়িতে বসবাসের প্রয়াস। একা একা। ফিরে ফিরে যাওয়া নড়াইলে, গ্রামীন জীবনে।
শেষ বয়সে প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ তাঁকে নিয়ে প্রথম তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন, আদমসুরত নামে। সেই চলচ্চিত্রও ছিল সুলতানের মতোই, দর্শক যাকে নির্মাণের ২২ বছর পর যার আনুষ্ঠানিকভাবে আলোর মুখ দেখেছিল।