ইঞ্জিনে ময়লা জমেনি। ডায়নোমা বিকল হয়নি। চালকের আসনে পেশাদার ড্রাইভার। তবু গাড়ি চলে না। এটাই ঢাকা শহর! ক্ষুব্ধ, ক্ষুব্ধ মানুষ। কেউ নেই সহানুভূতি, সহমর্মিতা জানানোর। বৃষ্টির কান্না দেখে আপ্লুত হওয়ার সুযোগ নেই এখানে। ভিজে চাপ কমানোর বদলে উল্টো আতঙ্কে বাড়ে রক্তচাপ!
বৃষ্টি হলে মোটামুটি সবাই ধরে নেন, বাইরে অপেক্ষা করছে ‘ভোগান্তি’। সেটা সইতে সইতে অভিযোজনে পারঙ্গম বাঙালির গা-সওয়া হয়ে গেছে। এখন চিন্তা ভোগান্তির মাত্রাটা কী! বাইরে কি আদৌ যানবাহন পাওয়া যাবে? পেলে কত ঘণ্টা যাবে যানজটে? মাঝেপথে কিছুটা পায়ে হেঁটে গেলে কি সময় কিছুটা কম লাগবে? ওই পথটুকু কি আদৌ হাঁটার উপযুক্ত?
নগরজীবনের এই যন্ত্রণার খবর কমবেশি প্রতিদিনই প্রচার-প্রকাশ হচ্ছে গণমাধ্যমে। তাতে কাজের কাজ যে তেমন কিছুই হচ্ছে না, তা বোঝা যায় মানুষের কাছে গেলে। পেটের দায়ে হোক, পেশার দায়ে হোক, দুর্ভোগের সময়টাতে নাগরিকদের পাশে থাকতে হয় গণমাধ্যমকর্মীদের। এ বিষয়ে কথা বলতে চেয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপহাসও সইতে হয় তাদের। অনেকের সোজা কথা- ‘এসব প্রচার করে কী হবে? শুধু শুধু সময় নষ্ট। এসবে কোন কাজ হয় না।’ হতাশ হলেও থেমে থাকারও উপায় জানা নেই। তাই আবারও শিরোনাম।
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের পেছনেও বহু ঘটনা থাকে। রাজধানীতে বসবাসকারীরা দেখছেন, তাদের যন্ত্রণার কোন মূল্য নেই। হাসপাতালে না নিয়ে যাক, কেউ অন্তত একটু মলম লাগিয়ে দিতেও আসে না। বলে না, আপনারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, আমি/আমরা চেষ্টা করছি সমস্যা সমাধানের। ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েও সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করতে না পারার জন্য দুঃখিত!
আফসোস!! নগরবাসীর প্রতি সহমর্মিতা জানাতে কেউ রাস্তায় আসেন না। যদিও একই নগরের আবার ‘পিতা’ আছেন দু’জন। চিত্র তুলে ধরে দায় সারে গণমাধ্যম। তৃপ্ত হয় না দর্শক/পাঠক। টিপ্পনি শুনতে হয়, এখানকার ছবি দিয়েছে, ওখানে ভোগান্তি আরও বেশি ছিল। এই রাস্তায় খালি একঘণ্টা লেগেছে, আমার লেগেছে আড়াই ঘণ্টা। এমন আরও কতো কী! তারা তখন ভাবে না, দিন শেষে একরাশ হতাশা নিয়ে এই সংবাদকর্মীরাও সামিল হন ভুক্তভোগীদের দলেই। এভাবেই চলেছে, চলছে এবং চলবে- জীবন!