দীর্ঘ একটি সময় ধরে আমরা গৃহবন্দি। আর সেই সাথে সোশাল মিডিয়া আর টিভি চ্যানেল জুড়ে কেবলই করোনা মহামারীর খবর। এসব নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করা এবং ফলশ্রুতিতে অবসাদগ্রস্থ হয়ে পরাটাও স্বাভাবিক। অনেকেই আবার এই সময় ঘুমের সমস্যাতেও ভুগছেন কিংবা দেখছেন অদ্ভুত সব স্বপ্ন।
ঘুমের সময় স্বপ্ন দেখা খুবই স্বাভাবিক বিষয়, কিন্তু প্রতিনিয়ত যদি দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো কারণ ।
আমরা কি ধরনের স্বপ্ন দেখবো তা নির্ভর করে মানসিক অবস্থা এবং পারিপার্শিক পরিস্থিতির ওপর । তাছাড়া ঘুমের আগের খাদ্যাভ্যাস, কোনো দুর্ঘটনা বা ওষুধ খাওয়ার কারণেও দুঃস্বপ্ন দেখার প্রবৃত্তি বেড়ে যেতে পারে।
বর্তমানে যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি এই সময় অনিশ্চয়তা এবং দুশ্চিন্তা হওয়া খুব সাভাবিক। তাছাড়া দীর্ঘ সময় সাধারণ রুটিনের বাইরে দিন পার করার ফলে ঘুমের সময়েও পরিবর্তন এসেছে অনেকের। সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতিতে অনেকেই ঘুমের সমস্যা এবং দুঃস্বপ্ন বেশি দেখার মত সমস্যায় ভুগছেন।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের মনস্তত্ত্ববিদ ডা. ডিয়াড্রে ব্যারেট বহু বছর ধরে ঘুম এবং স্বপ্ন দেখার কারণ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তিনি সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জানান, কিছুদিন ধরে অনেকেই দুঃস্বপ্ন দেখার বিষয়ে জানিয়েছেন।
কয়েক সপ্তাহ আগে ডিয়াডে্র একটি জরিপ করেন বিশ্বব্যাপী বর্তমান সময়ে মানুষের স্বপ্নের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য। এই জরিপে তিনি জানতে চান, কোভিড ১৯ এর এই মহামারীর সময় কেউ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো স্বপ্ন দেখছেন কিনা। এছাড়া যারা এই জরিপে অংশ নিয়েছেন তারা কি সরাসরি এ পরিস্থিতিতে কাজ করছেন কিনা বা আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা এই সব তথ্যও তিনি যুক্ত করেন।
ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা, ভয় এবং দুশ্চিন্তার থেকে দুঃস্বপ্ন দেখার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। তাছাড়া যারা সরাসরি এই পরিস্থিতিতে রয়েছেন তাদের মানসিক চাপ বৃদ্ধির কারণে এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। মূলত যখন কোনো মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায় তখন দুঃস্বপ্ন বৃদ্ধি পেতে পারে। তাছাড়া পূর্বের কোনো আঘাতের কারণেও এর প্রভাব বাড়তে পারে।
ডা. ডিয়াড্রে জানান, যারা স্বাস্থ্যকর্মী এবং সরাসরি করোনা আক্রান্তদের সেবায় কাজ করছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি তীব্র হতে পারে। তাছাড়া সারাদিনই এখন সংবাদমাধ্যম এবং সোশাল সাইটে ভাইরাসের সংক্রমন এবং মৃত্যু নিয়ে প্রচার চলছে। এ কারণে সাধারন মানুষের মধ্যেও এই বিষয়ে ভীতি ও মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এর থেকেই দুঃস্বপ্ন দেখার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাছাড়া দীর্ঘ সময় গৃহবন্দী অবস্থায় থাকার কারণে অবসাদ এবং বিষন্নতা বৃদ্ধি পেতে পারে। পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং অপারগ মনোভাব এবং ভবিষ্যৎ চিন্তা সব মিলিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়াও স্বাভাবিক। আর এই সবও হতে পারে দুঃস্বপ্নের কারণ।
দুঃস্বপ্ন পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব নয়, তবে এর মাত্রা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা যেতে পারে। ডা. ডিয়াড্রে পরামর্শ দেন, যাদের কল্পনা শক্তি প্রখড় তারা যেনো, ঘুমানোর আগে নিজের পছন্দ মতো একটি পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করেন। তাছাড়া গল্প বই পড়া, সিনেমা দেখা, প্রিয়জনের সঙ্গে ভালো কিছু নিয়ে আলাপ করা যেতে পারে। এতে ঘুমানোর আগে দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও মাথা থেকে ঝেরে ফেলা যাবে।
আর কারো যদি এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে কোয়ারিন্টিনে থাকার কারণে বা অন্য যেকোনো কারণে, তার মাথায় রাখা উচিত, এই সমস্যায় এখন অনেকেই ভুগছেন। এই কঠিন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়, তবে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।