যে ৬ টি কারনে OnePlus 6 কে ফ্ল্যাগশিপ কিলার বলা যাবে না

ওয়ানপ্লাস সিক্স রিলিজ হয়েছে এখনো এক মাসও হয়নি, কিন্তু গেজেট ফ্রিক মানুষেরা যেভাবে এটার চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে, তা দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। মে মাসের ২২ তারিখে বিশ্বজুড়ে রিলিজ পেলো এবং সেদিন থেকে এর জয়-জয়কার । এক সাথে রিলিজ দিল লন্ডন, বেইজিং এবং ভারতের মুম্বাইতে। এখন পর্যন্ত ওয়ানপ্লাস সিক্স এর মিনিমাম অফিসিয়াল দাম এসে দাঁড়িয়েছে ৫২৯ ডলারে, যা আমাদের টাকায় প্রায় ৪৫ হাজার টাকার কাছাকাছি হবার কথা। প্রথম থেকেই বাজারে রাজত্ব করছে মিরর ব্ল্যাক (৬ জিবি র‍্যাম ও ৬৪ জিবি রম) আর মিডনাইট ব্ল্যাক (৮ জিবি র‍্যাম ও ১২৮ জিবি রম)। মিডনাইট ব্ল্যাকের দাম ধরা হয়েছে ৫৭৯ ডলারে, যা বাংলা টাকায় কনভার্ট করলে পৌঁছে যাচ্ছে প্রায় ৫০ হাজারে কাছাকাছিতে। কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে এখনো এর দাম বেশ চড়া। এমনকি এই দেশের অফিসিয়াল দাম, ওয়ানপ্লাস ওয়েবসাইটের অরিজিনার অফিসিয়াল দামের চেয়েও বেশি।  গেল সপ্তাহে তারা সিল্ক হোয়াইট (৮ জিবি র‍্যাম ও ১২৮ জিবি রম) নামে এর আরো একটি লিমিটেড এডিশন বাজারে ছেড়েছে। এছাড়া প্রি-বুকের মাধ্যমে আপনি Avengers Edition (৮ জিবি র‍্যাম ও ২৫৬ জিবি রম) ও পেতে পারেন।

যাই হোক, ওয়ানপ্লাসের দাবী, এটা তাদের ফ্ল্যাগশীপ ডিভাইস। কি আছে এতে? তার চেয়ে ভালো জিজ্ঞেস করুন, কি নেই এতে! আইফোন ৮ ও ৮ প্লাস, গুগল পিক্সেল ২ ও ২ এক্স এল এবং স্যামসাং এস ৯ কে টক্কর দেবার জন্য মাঠে নেমেছে ওয়ানপ্লাস সিক্স। এতে পাবেন স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ প্রসেসর, জিপিউ হলো এড্রিনো ৬৩০, ৮ জিবি র‍্যাম, ১২৮ জিবি স্টোরেজ, ফেস আনলক, Oxygen OS সহ আরো নানাবিধ ভুবন ভোলানো ফিচারস। যেহেতু ওয়ানপ্লাসের দাবী এটা তাদের ফ্ল্যাগশীপ ডিভাইস, কাজেই সে তো বাকী ফ্ল্যাগশীপ ডিভাইসগুলোর সাথে টেক্কা দিবেই। এটাই তো স্বাভাবিক, তাই না! কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে,বাজারের অন্যান্য ফ্ল্যাগশীপ ডিভাইসগুলো যে বৈশিষ্ট্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ৬টি-ই নেই ওয়ানপ্লাস সিক্সের। ভাবছেন কি কি! চলুন শেয়ার করি আপনার সাথে।

১) ওয়ানপ্লাস-সিক্স বাজারে আসার পরে প্রথম যে আবেদনটা তৈরি হলো- ওয়ানপ্লাস সিক্স কি ওয়াটারপ্রুফ, না কি শুধুই ওয়াটার রেসিস্ট্যান্ট! কিন্তু, ভিতরের কথা হচ্ছে- ওয়াটার প্রুফ হবার জন্য ওয়ানপ্লাস সিক্সের কোন অফিসিয়াল আইপি রেটিং নেই। যেমন- আইফোন টেন IP67 সার্টিফাইড, স্যামসাং-গ্যালাক্সি এস-নাইন-প্লাস IP68 সার্টিফাইড। তেমনি ওয়ানপ্লাস সিক্সের কোন অফিসিয়াল আইপি রেটিং নেই এখন পর্যন্ত। তবে পুরো সেটটির ভিতরের লুপ জুড়ে রয়েছে সিলিকন সীলস এর লাল রঙের রাবার বা বলয়, যা বাইরে থেকে পানি ঢোকা আটকাতে সহায়তা করবে। তবে সর্বক্ষেত্রে এর নিশ্চিত কোন গ্যারান্টি নেই। এই একই ব্যবস্থা কিন্তু ওয়ানপ্লাস ফাইভটিতেও ছিলো। যদিও এই ওয়াটার প্রুফ লেভেল কিন্তু ওয়ার‍্যান্টি সিস্টেমের বাইরে।

২) যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অন্যান্য ফ্ল্যাগশীপ ডিভাইসগুলো যেখানে ওয়্যারলেস চার্জিং নিয়ে বেশ শোরগোল করছে, সেখানে ওয়ানপ্লাস-সিক্সের পুরো ব্যাক প্যানেল কাঁচের (গরিলা গ্লাস ৫) হবার পরেও এতে নেই কোন ওয়্যারলেস চার্জিং এর সুব্যবস্থা। যদিও তাদের যে ড্যাশ চার্জার রয়েছে, তা বাজারের যে কোন ফোনের চার্জার কে প্রতিযোগীতায় হারিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। তবে আশার কথা হচ্ছে, ওয়ানপ্লাস-সিক্স-টি তে ওয়্যারলেস চার্জিং সুবিধা থাকতেও পারে।

৩) এরপরের কথা হচ্ছে, ওয়ানপ্লাস সিক্সে নেই হাই-রেজুলেশনের স্ক্রিন। যেখানে অন্যন্য ফ্ল্যাগশীপ ডিভাইসগুলোর স্ক্রিন রেজুলেশন হচ্ছে (১৪৪০x২৯৬০) পিক্সেলস, সেখানে ওয়ানপ্লাস সিক্স এখনো আটকে আছে (১০৮০x২২৮০) পিক্সেলসে। ওয়ানপ্লাস-ফাইভ-টি তে রেজুলেশন ছিলো (১০৮০x২১৬০)। তাহলে খুব একটা বেশি আপগ্রেড আর হলো কই! আবার ওয়ানপ্লাস সিক্সের ডিস্প্লের ভাইভিড কালার নিয়েও প্রশ্ন উঠছে, যা কি না গুগল-পিক্সেল-২-এক্সএল বা স্যামসাং গ্যালাক্সি এস নাইন প্লাস এর মত অতোটা উজ্জ্বল নয়। আবার ওয়ানপ্লাস সিক্সের নচ ডিজাইন যে আইফোন টেন এর কপি, সেটা নিয়েও বেশ তর্ক চলছে ওয়ানপ্লাস ফ্যানদের মধ্যে।

৪) এবার আসা যাক, সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশে, ওয়ানপ্লাস সিক্সের ক্যামেরা। ওয়ানপ্লাস সিক্সের পিছনের অংশে ব্যবহার করা হয়েছে দুইটি ক্যামেরা আর সামনে আছে একটি ক্যামেরা। পিছনের দুইটি ক্যামেরার প্রথম ক্যামেরায় ব্যবহার হয়েছে SONY IMX 519 এর সেন্সর, যা কিনা ১৬ মেগা পিক্সেলের, অ্যাপারচার হলো 1.7 এবং এতে অপ্টিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (OIS) ও ইলেক্ট্রনিক ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (EIS) আছে। শুধুমাত্র এই প্রথম ক্যামেরাটি বাদে বাকী দুইটি ক্যামেরা হুবহু ওয়ানপ্লাস ফাইভ টি এর সমান রয়ে গেছে। তাছাড়া, এতে এবারো যোগ করা হয়নি কোন টেলিফটো লেন্স।

৫) আমাদের নেক্সট টপিক হচ্ছে, স্লো-মো ভিডিও। স্লো মোশনের ভিডিও শুধুমাত্র নামীদামী প্রফেশনাল ক্যামেরাতেই এখন আর বন্দী নয়, সেটা এখন চলে এসেছে আমাদের হাতের মুঠোয়, মানে আমাদের রেগুলার ডিভাইসগুলোর মধ্যে। ওয়ানপ্লাস সিক্সে রয়েছে ১০৮০ রেজুলেশনে ২৪০ এফপিএস এর স্লো মোশনে ভিডিও করার ক্ষমতা। আবার সেই একি ভিডিও ৭২০ রেজুলেশনে আপনি পাবেন ৪৮০ এফপিএস এর সুপার স্লো মোশনে। এই ফিচারটা নিঃসন্দেহে বেশ ভালো, কিন্তু এখানে একটা কথা আছে। এখন পর্যন্ত বর্তমান চাহিদাপূর্ণ বাজারে মোবাইল ডিভাইসে স্লো-মোশনের ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে ৯৬০ ফ্রেম পার সেকেন্ডে। ভাবতে পারেন, কোথায় ৯৬০ আর কোথায় ৪৮০ এফপিএস! সনি এক্সপেরিয়া এক্স-জেড প্রিমিয়াম বাজারে আসে ২০১৭ সালের জুনে এবং তখন থেকেই তারা ৯৬০ এফপিএস এর সুপার স্লো মোশনের ভিডিও অফার করে আসছে। একি ভাবে, হালের ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসগুলোর মধ্যে স্যামসাং গ্যালাক্সী এস-নাইনও ৯৬০ এফপিএস রেজুলেশনের স্লো-মো ভিডিও অফার করছে। তাহলে ওয়ানপ্লাস সিক্সের মুখ রক্ষা হলো কিভাবে!

৬) সবশেষে যে টপিকটি নিয়ে কথা বলবো, তা হলো স্টীরিও স্পীকারস। দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে যে, ওয়ানপ্লাস সিক্সে স্টীরিও স্পীকারস নেই। ওয়ানপ্লাস তাদের অডিও ডিপার্টমেন্ট নিয়ে খুব একটা যে মাথা ঘামায় নাই সেটা বুঝাই যাচ্ছে। কারন, অন্যন্য ফ্ল্যাগশীপ ডিভাইসগুলো যেখানে স্টীরিও স্পীকার আর সাউন্ড সিটেম নিয়ে বেশ এগিয়ে আছে, সেখানে ওয়ানপ্লাস সিক্সে আপনি পাবেন সেটের নিচের দিকে মুখ করা একটি মাত্র স্পীকার। যে দাম ওয়ানপ্লাস তাদের নতুন ডিভাইসের জন্য হাঁকছে, সেখানে স্টীরিও স্পীকার সিস্টেম থাকাটা বেশ জরুরী ছিল।

তাহলে আপনি এখন কি ভাবছেন, ওয়ানপ্লাস সিক্স কি নিবেন, না কি, নিবেন না। হ্যা, এটা অবশ্যই মানতে হবে, ওয়ানপ্লাস সিক্স হচ্ছে বর্তমানের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রসেসর স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ দিয়ে তৈরি করা খুব-ই দ্রতগতি সম্পন্ন একটি ফোন, যাতে রয়েছে ১৯:৯ এর অ্যামোলেড ডিস্প্লে, আছে উপরে ছোট্ট একটি নচ এবং অসম্ভব শক্তিধর ড্যাশ চার্জার। এই ড্যাশ চার্জার দিয়ে আপনি ফোন ৩০ মিনিটে ৬৪% চার্জ করতে পারবেন। এই ডিভাইসটি ল্যাগ করার কোন অপশন-ই রাখে নাই। এমনকি গেমারদের জন্য এই বাজেটের মধ্যে এই ডিভাইস বহু আকাঙ্ক্ষিত।
বর্তমানে আপনি যদি ওয়ান প্লাস ফাইভ বা ওয়ান প্লাস ফাইভ’টির একজন ইউজার হয়ে থাকেন, তাহলে আমি সাজেস্ট করতে পারি যে, নভেম্বরে ওয়ানপ্লাস-সিক্স-টি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন। সিক্স-টি তে হয়তো বা এই ফিচারগুলো চলেও আসতে পারে। তখন হয়তো সবাই ওয়ানপ্লাস সিক্স-টি কে পুরোপুরি একটি ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইস বলেই ডাকবে।

*ছবি কৃতজ্ঞতাঃ www.oneplus.com/6