১৯৩০ সাল থেকে নিয়ম করে চলছে বিশ্বকাপ ফুটবল। বিশ্বনন্দিত জাদুকরি ফুটবলাররা মাতিয়েছে একের পর এক টুর্নামেন্ট। কিন্তু দেড়ঘন্টাজুড়ে লাথিগুতো খেয়েই যার প্রাণবায়ু ‘ওষ্ঠাগত’ সে ছিলো নিয়ত পরিবর্তনশীল। প্রতি আয়োজনেই নতুন রূপ এবং গুণ নিয়ে হাজির হয়েছে মাঠে। জালে জড়ানোই যার জীবনের প্রধান মোক্ষ রবিঠাকুর কি তার প্রত্যাশাতেই বলেছিলেন, ‘বল দাও মোরে বল দাও।’ বিশ্বকবি আর নেই কিন্তু বলের প্রতি এই আকাঙ্ক্ষা রয়ে গেছে। তাই প্রায় শতাব্দি প্রাচীন এই টুর্নামেন্ট দেখেছে ২১টি নতুন বল। দেখে নেওয়া যাক তাদের কার কী নাম, কেমন ‘কাম’…
এই বলটির নাম ছিল ‘টি-মডেল’। বলটির দুই পাশের প্যানেল কিছুটা ইংরেজি ‘টি’ আকৃতির ছিল বলেই এমন নামকরণ।
দ্বিতীয় বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিলো ইতালি, মুসোলিনির আমলে। তার খায়েশেই তৈরি হয় এই বল।
এই বলটি তৈরি হয়েছিল ফ্রান্সে। বলা হয়ে থাকে, এই টুর্নামেন্টে নাকি অ্যালেন ছাড়াও অন্য বল ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে সেগুলো কতটি বা কোন রকমের, তা আর সেভাবে জানা যায় না।
দেখতে সুপারহিরোদের মতোই খানিকটা পেশিবহুল ছিল পুরো ১২ প্যানেলের সুপারবল। এই বলের কেরামতি দেখিয়ে ব্রাজিলকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল উরুগুয়ে।
ফুটবলের বল স্রেফ গোলাকার নয়, তাতে নানা জিগজ্যাগও যে থাকতে পারে, তারই অভিনব নিদর্শন ছিল এই বল।
এই প্রথম বল তৈরি নিয়ে লাগল কম্পিটিশন, আর তাতে জিতে ‘টপ স্টার’ বানাল এক সুইডিশ কোম্পানি। এই বলটি ছিলো বিশেষভাবে ওয়াটারপ্রুফ!
‘দ্য ক্র্যাক’ নামেই পরিচিত হয়ে ওঠা এই বলটির ডিজাইন আদতেই একটু ‘ক্র্যাক’ ছিলো বটে!
স্লেইনজার নামের এক বিলিতি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলো এই বল। এর গায়ে অবশ্য কোনো রকমের ব্র্যান্ডিংয়ের চিহ্ন ছিলো না।
টেলস্টার ছিল বিশ্বকাপে অ্যাডিডাসের বানানো প্রথম বল। সেই থেকে এখনতক বিশ্বকাপের বল বানিয়ে চলছে অ্যাডিডাস। সাদা আর কালোয় ২০টি ষড়ভুজ আর ১২টি পঞ্চভুজের ডিজাইনে বানানো টেলস্টার বলটি ভীষণ জনপ্রিয় হয়। কারণ এই ডিজাইনের জন্যে সে সময়ের সাদাকালো টেলিভিশনে বলটি দৃষ্টিগোচর হতো সহজেই।
১৯৭৪ : অ্যাডিডাস টেলস্টার ডিউরলাস্টআগেরবারের বলটির জনপ্রিয়তার কারণে সামান্য ফন্ট সংযোজন করা ছাড়া ডিজাইনে আর কোনো পরিবর্তন ছাড়াই মাঠে ছেড়ে দেয় ‘টেলস্টার ডিউরলাস্ট’ নাম দিয়ে।
এবারে অ্যাডিডাস। বলের ডিজাইনে ফুটবলের জন্য আর্জেন্টিনার তীব্র ভালোবাসা ও অনুভূতিকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।
ট্যাঙ্গো এসপানা ছিল প্রথম চামড়া আর সিনথেটিক ম্যাটেরিয়ালের মিশেলে গড়া বিশ্বকাপের ফুটবল। ওয়াটারপ্রুফ হলেও বলটিতে মাঝেমধ্যে পরিবর্তন আনতে হয়েছিল। ফলাফল, বিশ্বকাপে ব্যবহৃত এটিই সর্বশেষ চামড়ায় গড়া বল!
গেলবারের ‘তিক্ত অভিজ্ঞতা’র কারণেই বুঝি অ্যাডিডাস অ্যাজটেকা ছিল পুরোদস্তুর সিনথেটিক ম্যাটেরিয়ালে বানানো বল। এটিও কিন্তু প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিনথেটিক বল।
এবারের খেলা ছিল ইতালিতে। এই বলটিতে প্রাচীন ইতালি এবং এত্রুসকানদের ইতিহাসকেই উদযাপন করা হয়েছিল। বলের ডিজাইনে একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলে তিনখানা এত্রুসকান সিংহের নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়।
পাঁচটি ভিন্ন ম্যাটেরিয়াল আর পলিস্টেরিনে তৈরি করা হয়েছিল এই বলটি। নির্মাণগত কারণে এর পানিনিরোধক ক্ষমতা ছিল অনেক বেশি।
বিশ্বকাপে নানা রঙে রঙিন প্রথম বল ছিল এটি। ফরাসি পতাকার ঐতিহ্য ফুটে উঠেছিল এর রঙে।
দেখতেও দারুণ, কাজেও দুর্দান্ত এক বল ছিল বটে ফিভারনোভা। স্পেশাল ইনার ফোম লেয়ারের কারণে একেবারে লাগসই এক বল হলেও ভীষণ হালকা ওজনের কারণে একটু সমালোচিতও হয়েছিল বলটি।
পুরো টুর্নামেন্টে সাদাকালো, আর ফাইনালে বিশেষ রঙিন হয়ে মাঠে নেমেছিল এই বলটি।
টুর্নামেন্টে জাবুলানি দিয়ে খেলা হয়েছে ফাইনালের আগতক। ফাইনালে গিয়ে, একটু নতুন ডিজাইনে আর জোহানেসবার্গ স্টেডিয়ামের নামের সাথে সঙ্গত মিলিয়ে মাঠে নামানো হয় ‘জো’বুলানি।
এবারেও ফাইনালে স্পেশাল এডিশন বলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে অ্যাডিডাস। বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম পরীক্ষিত এই বলের ডিজাইনে ব্রাজিলের জীবনধারা, আমাজন নদীর বহমানতা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।
সেই প্রথম টেলস্টারের ডিজাইনেই আধুনিকতা এনে সবার সামনে হাজির করতে যাচ্ছে অ্যাডিডাস। বলটিতে প্যানেল থাকবে ৬টি। ফাইনালে কোনো স্পেশাল এডিশন বল আসবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত হয়নি।