বিশ্বকাপের ১২ স্টেডিয়াম, কোথায় কোন খেলা

বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো বিশাল আয়োজনে স্টেডিয়াম নিয়ে আয়োজক দেশের তুমুল প্রস্তুতি না নিয়ে আর কোন উপায় থাকেনা। বিস্তর টাকাকড়ি তো ঢালার পাশাপাশি, নজর রাখতে হয় আরো নানান বিষয়ে। এবারের বিশ্বকাপের মোট ৬৪টি খেলা অনুষ্ঠিত হবে রাশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের ১২টি স্টেডিয়ামে। এই স্টেডিয়ামগুলো কোথায়, আর কোন খেলা কোন স্টেডিয়ামে হবে; তা জানাতেই এই লেখা।

১. লুঝনিকি স্টেডিয়াম, মস্কো

ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে মস্কোর এই মাঠে

৮০,০০০ দর্শকের ধারণক্ষমতার এই লুঝনিকি স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। রাশিয়ার সমস্ত স্টেডিয়ামের নয়নের মণি এই লুঝনিকি! ফাইনাল খেলা যে এখানে! লুঝনিকিতে হবে যে খেলাগুলো- রাশিয়া বনাম সৌদি আরব (১৪ জুন), জার্মানি বনাম মেক্সিকো (১৭ জুন), পর্তুগাল বনাম মরক্কো (২০ জুন), ডেনমার্ক বনাম ফ্রান্স (২৬ জুন), রাউন্ড অব সিক্মটিন (১ জুলাই), সেমি-ফাইনাল (১১ জুলাই), ফাইনাল (১৫ জুলাই)।

২. অটক্রিট স্টেডিয়াম, মস্কো

স্পার্টাকাসের বিখ্যাত মূর্তিটি রয়েছে এই স্টেডিয়ামেই

ভ্রমণপিয়াসীরা অটক্রিট স্টেডিয়ামের আশেপাশে ঢুঁ মারেন দাস বিপ্লবী স্পার্টাকাসের বিখ্যাত মূর্তিটির আকর্ষণে। স্টেডিয়ামটির দর্শক ধারণক্ষমতা ৪৫,৩৬০। এই স্টেডিয়ামে পৌঁছোনোর জন্য আলাদা আস্ত একটা মেট্রো রেলস্টেশনও রয়েছে। খেলা হবে- আর্জেন্টিনা বনাম আইসল্যান্ড (১৬ জুন), পোল্যান্ড বনাম সেনেগাল (১৯ জুন), বেলজিয়াম বনাম তিউনিসিয়া (২৩ জুন), ব্রাজিল বনাম সার্বিয়া (২৭ জুন), রাউন্ড অব সিক্সটিন (৩ জুলাই)।

৩. নিঝনি নভগরোদ স্টেডিয়াম, নিঝনি নভগরোদ

টুর্নামেন্ট শেষে অলিম্পিয়েটস নিঝনি নভগরোদ ক্লাবের হোমগ্রাউন্ড হবে এই স্টেডিয়াম

দুর্দান্ত ডিজাইনের জন্য নিঝনি নভগরোদ স্টেডিয়ামটি এবারে নজর কাড়বে দর্শকদের। টুর্নামেন্ট শেষে এই স্টেডিয়াম পরিণত হবে অলিম্পিয়েটস নিঝনি নভগরোদ ক্লাবের হোমগ্রাউন্ডে। দর্শক ধারণক্ষমতা প্রায় ৪৫ হাজার। খেলা- সুইজারল্যান্ড বনাম দক্ষিণ কোরিয়া (১৮ জুন), আর্জেন্টিনা বনাম ক্রোয়েশিয়া (২১ জুন), ইংল্যান্ড বনাম পানামা (২৪ জুন), সুইজারল্যান্ড বনাম কোস্টারিকা (২৭ জুন), রাউন্ড অব সিক্সটিন (১ জুলাই), কোয়ার্টার ফাইনাল (৬ জুলাই)।

৪. মরদোভিয়া অ্যারেনা, সারানসক

ছোট্ট অঞ্চল সারানসকে মরদোভিয়া অ্যারেনার মতো স্টেডিয়ামই এক বড় চমক

স্টেডিয়াম হিসেবে মরদোভিয়া অ্যারেনার নির্বাচনই ছিল চমকপ্রদ। কারণ ছিমছাম ছোট্ট অঞ্চল সারানসকের ফুটবলীয় ঐতিহ্য বেশি দিনের না। তবে স্টেডিয়ামটিকে একেবারেই নতুন করে সাজিয়ে, রঙিন করে তুলেছেন আয়োজকরা। এখানে একসাথে খেলা দেখতে পারবেন প্রায় সাড়ে ৪৪ হাজার দর্শক। সেই খেলাগুলো হল- পেরু বনাম ডেনমার্ক (১৬ জুন), কলম্বিয়া বনাম জাপান (১৯ জুন), ইরান বনাম পর্তুগাল (২৫ জুন), পানামা বনাম তিউনিসিয়া (২৮ জুন)।

৫. কাজান অ্যারেনা, কাজান

রুবিন কাজানের হোমগ্রাউন্ড

রুবিন কাজানের হোমগ্রাউন্ড প্রাচীন এই স্টেডিয়ামটি অবশ্য নতুন করে কনস্ট্রাকশন করা হয়েছে এই বিশ্বকাপ উপলক্ষেই। দর্শক ধারণক্ষমতা ৪৫,৩৭৯। যে খেলাগুলো হবে- ফ্রান্স বনাম অস্ট্রেলিয়া (১৬ জুন), ইরান বনাম স্পেন (২০ জুন), পোল্যান্ড বনাম কলম্বিয়া (২৪ জুন), দক্ষিণ কোরিয়া বনাম জার্মানি (২৭ জুন), রাউন্ড অব সিক্সটিন (৩০ জুন), কোয়ার্টার ফাইনাল (৬ জুলাই)

৬. সামারা অ্যারেনা, সামারা

রাশিয়ার মহাকাশ লড়াইয়ের মূলভূমি সামারা

এককালে সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশ জয়ের মূলভূমি ছিল সামারা। বিস্তর টাকাকড়ি খরচ করে সামারা অ্যারেনাকে এই বিশ্বকাপে দেওয়া হয়েছে চমকপ্রদ আধুনিক এক ডিজাইন। স্টেডিয়ামটির দর্শক ধারণক্ষমতা প্রায় ৪৫ হাজার। যে খেলাগুলো হবে- কোস্টারিকা বনাম সার্বিয়া (১৭ জুন), ডেনমার্ক বনাম অস্ট্রেলিয়া (২১ জুন), উরুগুয়ে বনাম রাশিয়া (২৫ জুন), সেনেগাল বনাম কলম্বিয়া (২৮ জুন), রাউন্ড অব সিক্সটিন (২ জুলাই), কোয়ার্টার ফাইনাল (৭ জুলাই)

৭. সেন্ট্রাল স্টেডিয়াম, ইয়েকাতেরিনবুর্গ

এফসি উরালের হোমগ্রাউন্ড এই স্টেডিয়াম

এবারের বিশ্বকাপের অন্যান্য অনেক স্টেডিয়ামের তুলনায় ইয়েকাতেরিনবুর্গের সেন্ট্রাল স্টেডিয়ামকে মোটামুটি ছোটই বলা চলে। বিশ্বকাপের পর এফসি উরালের হোমগ্রাউন্ড হিসেবে বিবেচিত হবে সেন্ট্রাল স্টেডিয়াম। যার দর্শক ধারণক্ষমতা ৩৫,৬৯৬। ইয়েকাতেরিনবুর্গে হবে নিচের খেলাগুলো- মিশর বনাম উরুগুয়ে (১৫ জুন), ফ্রান্স বনাম পেরু (২১ জুন), জাপান বনাম সেনেগাল (২৪ জুন), মেক্সিকো বনাম সুইডেন (২৭ জুন)

৮. ক্রেস্তোভস্কি স্টেডিয়াম, সেন্ট পিটার্সবুর্গ

চোখ ধাঁধানো এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে লেগেছে পুরো এক দশক

সেন্ট পিটার্সবুর্গের চোখ ধাঁধানো এ স্টেডিয়ামটি নির্মাণেই লেগেছে পুরো একটি দশক, খরচাও হয়েছে বেশুমার। টুর্নামেন্ট শেষে ইউরোপ কাঁপানো ক্লাব জেনিত সেন্ট পিটার্সবুর্গ চলে আসবে এ মাঠে। দর্শক ধারণক্ষমতা প্রায় ৬৫ হাজার। যে খেলাগুলো হবে- মরক্কো বনাম স্পেন (১৫ জুন), রাশিয়া বনাম মিশর (১৯ জুন), ব্রাজিল বনাম কোস্টারিকা (২২ জুন), নাইজেরিয়া বনাম আর্জেন্টিনা (২৬ জুন), রাউন্ড অব সিক্সটিন (৩ জুলাই), সেমি-ফাইনাল (১০ জুলাই), তৃতীয় স্থান নির্ধারণী (১৪ জুলাই)।

৯. কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়াম, কালিনিনগ্রাদ

বাল্টিকা কালিনিনগ্রাদ পাচ্ছে এই মাঠ

নির্মাণের প্রথম পর্যায়ে খানিকটা আর্থিক টানাপোড়েনের মুখোমুখি হতে হয়েছে এই স্টেডিয়ামের কর্তৃপক্ষকে। টুর্নামেন্ট শেষে রাশিয়ার মধ্যম সারির ক্লাব বাল্টিকা কালিনিনগ্রাদের হোমগ্রাউন্ড হবে এ মাঠ। দর্শক ধারণক্ষমতা ৩৫,২১২। কালিনিনগ্রাদে হতে চলা খেলাগুলো হল- ক্রোয়েশিয়া বনাম নাইজেরিয়া (১৬ জুন), সার্বিয়া বনাম সুইজারল্যান্ড (২২ জুন), স্পেন বনাম মরক্কো (২৩ জুন), ইংল্যান্ড বনাম বেলজিয়াম (২৮ জুন)

১০. ভলগোগ্রাদ স্টেডিয়াম, ভলগোগ্রাদ

২০১৪ সালে নির্মিত স্টেডিয়াম ভলগোগ্রাদ স্টেডিয়াম

২০১৪ সালে নির্মাণ পরবর্তী সময়ে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হলেও সেগুলো থেকে এখন মুক্ত ভলগোগ্রাদ স্টেডিয়ামটি। দর্শক ধারণক্ষমতা সাড়ে ৪৫ হাজার। এখানে হবে যে খেলাগুলো- তিউনিসিয়া বনাম ইংল্যান্ড (১৮ জুন), নাইজেরিয়া বনাম আইসল্যান্ড (২২ জুন), সৌদি আরব বনাম মিশর (২৫ জুন), জাপান বনাম পোল্যান্ড (২৮ জুন)।

১১. রোস্তভ অ্যারেনা, রোস্তভ-অন-দন

চমকপ্রদ ছাদের স্টেডিয়াম

প্রশান্ত দন নদীর তীরে গড়ে ওঠা রোস্তভ অ্যারেনা দর্শকদের নজর কাড়বে নিজের চমকপ্রদ ছাদের জন্য। টুর্নামেন্টের পর হোমগ্রাউন্ডের অধিকারে এখানে ঘাঁটি গাড়বে এফসি রোস্তভ। দর্শক ধারণক্ষমতা ৪৫ হাজার। দন নদীর তীরে হতে চলা খেলাগুলো হল- ব্রাজিল বনাম সুইজারল্যান্ড (১৭ জুন), উরুগুয়ে বনাম সৌদি আরব (২০ জুন), দক্ষিণ কোরিয়া বনাম মেক্সিকো (২৩ জুন), আইসল্যান্ড বনাম ক্রোয়েশিয়া (২৬ জুন), রাউন্ড অব সিক্সটিন (২ জুলাই)

১২. ফিশত অলিম্পিক স্টেডিয়াম, সোচি

২০১৪ সালের উইন্টার অলিম্পিক ও প্যারা-অলিম্পিকের জন্য নির্মিত হয় সোচির এই স্টেডিয়াম

২০১৮ বিশ্বকাপের অন্যতম আকর্ষণ সোচির ফিশত স্টেডিয়ামটি ২০১৪ সালের উইন্টার অলিম্পিক এবং প্যারা-অলিম্পিকের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। যার অবস্থান শহর থেকে ১৮ মাইল দূরে। ফিশতের দর্শক ধারণক্ষমতা প্রায় ৪৮ হাজার। এখানে হবে নিচের খেলাগুলো- পর্তুগাল বনাম স্পেন (১৫ জুন), বেলজিয়াম বনাম পানামা (১৮ জুন), জার্মানি বনাম সুইডেন (২৩ জুন), অস্ট্রেলিয়া বনাম পেরু (২৬ জুন), রাউন্ড অব সিক্সটিন (৩০ জুন), কোয়ার্টার ফাইনাল (৭ জুলাই)