বানাম চেঞ্জ হতেই পারে, সিমপোল ব্যাপার

সুপ্রিয় দর্শক, আই মিন পাঠক, বলুন তো, কোন ইংরেজি শব্দের প্রথম অক্ষরের চার জন ফলোয়ার, কিন্তু তারা টুঁ শব্দটি করে না? পারবেন? পারলে ভালো।

না পারলে শব্দটা হচ্ছে- ‘Queue’। প্রথমে থাকা ‘Q’ দিয়েই কিন্তু উচ্চারণের কাজ চলে যায়, বাকি অক্ষরগুলো নিঃশব্দে তাকে অনুসরণ করে কেবল। আচ্ছা, এবার মার্সেডিজ-এর ইংরেজি বানানটা খেয়াল করুন। Mercedes-এ বেচারা ‘e’ এসেছে তিনবার। কিন্তু তিনবার তার উচ্চারণ কিন্তু তিন রকম। ঠিক ওরকমভাবে খাঁটি অস্ট্রেলীয় উচ্চারণে ‘Australia’ নামটা শুনে দেখুন। তিনটা ‘A’  তিন রকম শোনাবে। উচ্চারণ বা ‘accent’ আসলে ভানুমতির খেল। সবসময় যে একটা নির্দিষ্ট ব্যাকরণ সে মানবে তা কিন্তু না।

উচ্চারণতো ভানুমতীর খেল!!

এই উচ্চারণের ফেরেই হয়েছে যতো জ্বালা! বাপ-দাদার নাম বদলে দেওয়ার মতো ঘটনা। তা নয়তো কি! চট্টগ্রাম বোর্ড থেকে যে ভাই-বাবা-চাচা-দাদারা পাশ করে সার্টিফিকেট জুটিয়েছেন, তাদের ইংরেজি সনদে বোর্ডের নামের জায়গায় যা লেখা তার তো এখন আর কোনো অস্তিত্বই নেই। দেশের বাইরে কোথাও আবেদন করতে গেলেই হয়েছে। আবার সার্টিফিকেট বদলাতে হবে হয়তো। তো হোক না সনদ বদল। জটিল কোনো বিষয় না তো, সিমপোল ব্যাপার। এ বিষয়েই বসেছিলো এক টক-শো। মানে একটি গোলটেবিল বৈঠক। যেখানে হাজির হয়েছিলেন নাম বদলে যাওয়া শহরগুলোর প্রতিনিধিবৃন্দ। সাথে এসেছিলেন অন্যান্য শহর থেকেও আগত বিজ্ঞ বন্ধুরা। তো এই নাম বদলে যাওয়া নিয়ে কী মন্তব্য জনৈক চিটাগাং থুক্কু চট্টগ্রামবাসীর? গোলটেবিল আলোচণার শুরুটা হোক তাকে দিয়েই।

চট্টগ্রাম: এটা কোনো কথা হলো বদ্দা? আরে ‘ভারত’-এর কি ইংরেজিতে আরেকটা সুন্দর নাম ‘ইন্ডিয়া’ নেই? ইজিপ্ট-কে কি আমরা বাংলায় আদর করে ‘মিশর’ বলে ডাকি না? কোলকাতাকে কি ইংরেজিতে ‘ক্যালকাটা’ লেখা হচ্ছে না? সব চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

(সাধারণের বোঝার সুবিধার্থে তার কথাকে চলতি ভাষায় কনভার্ট করা হয়েছে)

এমন সময় পাশে থাকা কুমিল্লাবাসী হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলেন। কিন্তু এ কী! আমাদের সাথে একজন ভারতীয় বন্ধুও যে রয়েছেন।

ভারতীয় ‘বন্ধু’: কী বলছেন মশাই? ক্যালকাটা তো সেই কবেই কোলকাতা (Kolkata) হয়ে গিয়েচে। সে খবর বুঝি রাখেন না দাদারা? তা রাখবেন কি? বইটই খোলার কথা উঠলে আপনারা তো নাকি শুধু ফেসবুকই খোলেন শুনেচি আজকাল। হে হে হে!!

চট্টগ্রাম: আমরা না হয় ফেসবুক খুলি, আপনাদের যে ইয়ে করতে হলেও খোলা আকাশের নিচে বসতে হয়, তা কি আমরা জানি না? সবার জন্য টয়লেট নেই। ছি ছি!

ওদিকে টয়লেটের কথা শুনে কুমিল্লাবাসী আবারো হুঁ-হুঁ করে উঠলেন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবার পথে বিশেষ প্রয়োজনে অনেকেই তার ওখানে নামেন কি না!

ভারতীয় ‘বন্ধু’: ওই বলার মতো একটা টপিক-ই আছে আপনাদের। কিন্তু আসল কথা হচ্চে ‘ক্যালকাটা’ বদলে ‘কোলকাতা’ হয়ে গেচে, ‘বেনারস’ হয়ে গেচে ‘ভারানসি’, ‘বেঙ্গালোর’ হয়ে গেচে ‘বেঙ্গালুরু’…এমনকি আপনাদের ‘ডাক্কা’ও তো কবেই ঢাকা হয়েছে!

কুমিল্লা: কিন্তু কোথাও কম (COM) থেকে তো আর কাম (CUM) হয় নাই! আঁ-আঁ-আঁ!

চট্টগ্রাম: আহা কুমিল্লা, শান্ত হও। এখন কান্নার নয়, প্রতিবাদের সময়।

খুলনা: আর প্রতিবাদ বদ্দা! যশোরের মেয়ে বিয়ে করে ঘরে এনেছিলাম। বাসর রাতে আমি তারে মিষ্টি করে বললাম, আমার জেলার নাম জানো নাকি? লাজুকলতা হয়ে সে বলে, আপনেই বলেন। আমি দুষ্টু হাসি দিয়ে বললাম, ‘KHULNA’! সে আমারে উত্তর দেয়, আমার জেলার নাম জানেন কি? আমি ভাবলাম একদম মনের মতো মেয়ে মিলছে। পাল্টা রসিকতায় অভ্যস্ত। গদগদ হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমিই বলো। উত্তর দেয়, ‘Ja-shore’! আঁতকে উঠে সেই যে ‘সর্’লাম, এরপর দুই সপ্তাহ হয়ে গেলো, কাছে ভিড়তে পারলাম না। কুমিল্লার ইংরেজি বানানের প্রথম অংশটা পড়ি আর দুঃখে হাসি।

বরিশাল: তবে এর মাঝে আমাদের ‘BARI’র ‘সাল’টা যে শেষমেশ ‘শাল’ হলো তা আমাদের বড়ই সৌভাগ্য।

ঝিনাইদহ: সৌভাগ্যের দেখা তো আর সবাই পায়নি জনাব। উচ্চারণ অনুযায়ী যদি নাম পাল্টাতে হয় তাহলে আমাদের জেলার নাম আগে পাল্টাক। কবে থেকে ‘Jhenaidah’ হয়ে রয়েছে। আমরা বানাম বৈষম্যের শিকার।

গাইবান্ধা: ্রআরে রাখেন! জেলা সৃষ্টির সেই আদিকাল থেকে বৈষম্যের শিকার। কোথায় কে কবে কেন এই গাই-গরুর সাথে আমাদের অ্যাসোসিয়েশন খুঁজে পেয়েছিলো, যে নামই রেখে দিলো গাইবান্ধা। কোনো হিস্টোরিকাল রেফারেন্স দিতে পারবেন? আরে, গরুর সাথে নিবিড় সম্পর্ক বিষয়ে কানাঘুষা সবইতো ময়মনসিংহের নামে।

ময়মনসিংহ: আরে ওই গাইবান্ধা, আমরা মৈমনসিংগা ‍লুক, উস্তাদি আলাপ আংগর লগে … ও আচ্ছা দুঃখিত, এখানে তো প্রমিত ভাষায় কথা হচ্ছে। না, বলছিলাম যে উচ্চারণ অনুযায়ীই করতে হলে কথা উঠবে কোন উচ্চারণ বিবেচনা করা হবে? আঞ্চলিকভাবে যে নাম প্রচলিত, নাকি সর্বসম্মতভাবে যেটি স্বীকৃত?

ফেনী: কীসের সর্বসম্মতি? আঞ্চলিক উচ্চারণই গৃহীত হওয়া উচিত। তাহলে আমাদের জেলার বানান হবে এইচ-ই-এন-ওয়াই, ফেনী!

রংপুর: হয় হয়। ও-এন-জি-পি-ইউ-আর, রংপুর।

ঝালকাঠি: তাহলে আমাদেরটা হোক জে-এইচ-এ-এল-ও-কে-এ-ডি-আই।

গোপালগঞ্জ: এই যে, কী হচ্ছে কী এখানে? আপনাদের যাদেরটা যেমন ইচ্ছে নাম বদলান। কিন্তু আমাদেরটার দিকে কেউ নজর দিলে তার জেলার নামই বদলিয়ে দেব।

এ সময় জনৈক বগুড়াবাসীকে নীরবে চোখের পানি ফেলতে দেখা যায়। অনিবার্য কারণে তার গলা বসে গিয়েছে। ইশারা ভাষায় জানান যে, তিনি কথা বলতে অপারগ।

ঢাকা: আরে না নাহ্! কী যে বলেন। বানাম চেঞ্জ হতেই পারে। সিমপোল ব্যাপার। এই কে আছিস, সবাইকে চা দিতে বল। সিলোটি চা দিক। সিলোটি ভা্ই কই? দেশে নাকি লন্ডনে?

সিলেট: ওহ দুঃখিত। ল্যান্ডন থেকে একটা ফোন এসেছিলো। তাই এতক্ষণ আলোচনায় যোগ দিতে পারিনি। তো আমার কথা হলো আমরা সেই কবে থেকে ইংরেজিতে লিখে আসছি ‘সিল্-হেট’, বাংলায় পড়ছি ‘সিলেট’, আর মুখে বলছি ‘সিলোট’। পরিবর্তনের প্রথম দাবিদারতো আমরা! আর চা আমরা দেবো কেন? আমরা চা এক্সপোর্ট করি। যত্তসব রাবিশ! এই যে ভাই নোয়াখালী, আপনি কিছু বলুন-

নোয়াখালী: আমার এক দফা, এক দাবি- নোয়াখালী বিভাগ চাই!

ঢাকা: এরপর আর কোনো কথা থাকতে পারে না। আজকের আলোচনা এখানেই সমাপ্ত ঘোষণা করাই ভালো হবে।

[বিঃদ্রঃ লেখাটি নিছক স্যাটায়ার। শুধুমাত্র মজা পাবার উদ্দেশ্যে বিষয়টিকে বিবেচনার অনুরোধ করা হলো। কাউকে বা কারো কোন ধরনের অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিপ্রায়ে এটি প্রকাশিত হয়নি।]