‘টুয়েন্টি সেভেন ক্লাব’-এর নাম শুনেছেন? কার্ট কোবেন, জিমি হেনড্রিক্স, জিম মরিসন, জেনিস জপলিন, অ্যামি ওয়াইনহাউস সহ অনেক মিউজিশিয়ানই ওই ক্লাবের সদস্য। তবে কোন বিশেষ যোগ্যতাবলে তারা ওই ক্লাবের সদস্যপদ পেয়েছেন জানলে কষ্টই বাড়বে শুধু। টুয়েন্টি সেভেন ক্লাবের সদস্যরা টুয়েন্টি সেভেন অর্থাৎ কিনা মাত্র ২৭ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। ২৭ বছরে মৃত্যু এমনিতেই প্রত্যাশিত নয়। আবার এঁদের অনেকের মৃত্যুটাও স্বাভাবিক নয়। তাই এই ক্লাব নিয়ে একটা রহস্যময়তা কাজ করে। কেনো সাতাশেই এত মৃত্যু? আর এই রহস্যময়তার কারণেই কি না ‘২৭’ ঘিরে একটা মৃত্যু প্রবণতাও মিউজিশিয়ানদের মাঝে প্রচ্ছন্নভাবে গড়ে উঠেছে। বিষয়টিকে প্রশ্রয় দেয়া কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়, তবুও পৃথিবীজুড়ে অনেক মিউজিশিয়ানেরই নাকি সাতাশে বিদায় নেবার ব্যাপারে গোপন রোমান্টিসিজম বা আকাঙ্ক্ষা থাকে। খুব ভয়ংকর একটি ব্যাপার। তবে অনেকে আবার উড়িয়ে দেন এসব। বলেন এই ‘টুয়েন্টি সেভেন ক্লাব’ একটা মিথ। এর’চে অনেক বেশি সেলিব্রেটি তো ২৮ বছর বয়সেও বিদায় নিয়েছেন।
পরের দলের যুক্তিও কিন্তু উড়িয়ে দিতে পারবেন না। কারণ ২০ এপ্রিল এ তালিকায় আরেকটি নাম যোগ করে চলে গেলেন সুইডিশ ইলেকট্রনিক ডান্স মিউজিক বা সংক্ষেপে ইডিএম আর্টিস্ট, ডিজে টিম বার্জলিং। স্টেজ নেম ‘এভিচি’ দিয়েই যিনি বেশি পরিচিত। বয়স হয়েছিলো ওই ২৮ বছর। মৃত্যুর সময় ছিলেন ওমানের মাস্কাটে। মৃত্যুর কারণ এখনো অফিশিয়ালি জানানো হয়নি।
এভিচি’র বিদায়ের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর হ্যাশট্যাগ এভিচি-তে ছেয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু ওসব তো আর ওপার থেকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না তাঁকে। ইডিএম কমিউনিটির যতো বিগ শট- ডেভিড গ্যেটা, টিয়েস্টো, ক্যালভিন হ্যারিস, মার্টিন গ্যারিক্স, মার্শমেলো, ডেডমাউস, জেড, স্টিভ এওকি, ডিপলো-সহ মাইক শিনোডা, চার্লি পাথ, ডুয়া লিপা সবাই শোকে স্তব্ধ, ব্যথিত। হওয়ারই কথা। এভিচি তো ছিলেনই মনেপ্রাণে উচ্ছ্বল, মিশুক, বন্ধুঅন্তঃপ্রাণ। আর পাঁচটা ইডিএম আর্টিস্টের মতোই। এমনিতে ডিজে বা ইলেকট্রনিক ডান্স মিউজিশিয়ানরা অন্যদের সাথে কোলাবরেশনে প্রচুর কাজ করে থাকেন। আবার বছরজুড়ে বড় বড় মিউজিক ফেস্ট লেগেই থাকে। তাই তাদের মধ্যে যোগাযোগ, বন্ধুত্ব দু’টোই বেশ গভীর। এভিচি অন্য ইডিএম মিউজিশিয়ানরা ছাড়াও এমনকি ম্যাডোনা, রিটা ওরা, কোল্ড প্লে, ইমেজিন ড্রাগনসের সাথেও কোলাবরেশনে কাজ করেছেন। তবে বাইরে অনেক উচ্ছ্বলপ্রাণ হলেও ভেতরে যে প্রাণশক্তি কমে আসছিলো গত কয়েক বছর যাবৎ। গলব্লাডার, লিভারে বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছিলো। একটা বড় সার্জারির পর দু’বছর আগেই থামিয়ে দেন লাইভ শো।
এভিচি’র মা ছিলেন সুইডিশ অভিনেত্রী। লাখো দর্শকের সামনে পারফর্ম করার তাঁর ক্ষমতাটা জিনগত, সহজাত। বাবার কাছ থেকেও সবসময় উৎসাহই পেয়েছেন। তাঁর একটি হিট নাম্বার ‘দ্য নাইটস’-এর প্রিল্যুড থেকে জানা যায় মিউজিক ক্যারিয়ারের শুরুতে তাঁর বাবা বলেছিলেন, তুমি জীবনে যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারো। তবে সেটা পাবার জন্য কঠোর পরিশ্রমে যেনো কোনো কমতি না থাকে। তারপরই এভিচি ঠিক করেন মারা যাবার পর কীভাবে বেঁচেছেন তা দিয়েই মনে থাকতে চান, কতো টাকা কামিয়েছেন তা দিয়ে নয়।
তা এভিচি তাঁর কাজ দিয়ে মনে থাকবেন অবশ্যই। গত দশ বছরে ডান্স মিউজিকে সেরাদের তালিকা করলে ওপর দিকেই তো থাকবে এভিচি’র নাম। আবার ওই করতে গিয়ে সবচে’ ধনী ডিজেদের তালিকাতেও তিনি সামনের সারিতে।
তাঁর স্টেজ নেম ‘এভিচি’র অর্থটা কিন্তু বেশ অদ্ভুত- ‘দ্য লোয়েস্ট লেভেল অব বুদ্ধিস্ট হেল’। যদিও এই নামটা নেয়ার পেছনে বিশেষ কোনো কারণ নেই। একসময়ের জনপ্রিয় অনলাইন সোশ্যাল মাধ্যম ‘মাইস্পেস’-এ তার অন্য নামটা আগেই নেয়া হয়ে গিয়েছিলো বলে এই নাম বেছে নিয়েছিলেন। পরে এই নামেই স্টেজ পারফর্ম শুরু করেন। ২০০৮-এ প্রফেশনালি মিউজিক করা শুরু। আর ২০১৩-য় রিলিজ পাওয়া ‘ওয়েক মি আপ’ তাঁর প্রথম মেগা হিট।
প্রায় মাঝরাতে ফেসবুক হোমফিড থেকে যখন জানলাম তাঁর মৃত্যুর খবর, তখনই মনে হলো আরেহ্ একটু আগেই ইউটুব মিক্সে এভিচি ফিচারিং রিটা ওরা’র ‘লোনলি টুগেদার’ বাজছিলো না? মিউজিশিয়ান তো বেঁচে থাকেন তার সৃষ্টিতে, তার মিউজিকেই। তাই এভিচি বিদায় নিয়েছেন মানতেই কষ্ট হচ্ছিলো। তারচে’ বরং ভাবি লোকটা ঘুমিয়েছেন।
আর ঘুমানোর আগে বলে গেছেন- “ওয়েক মি আপ হোয়েন ইটস অল ওভার”।