ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে শেষ হলো নারীর ‘ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্ব’ নিয়ে চট্টগ্রামের একমাত্র পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু চিটাগং বে ভিউ’র ‘হাই-টি’ কর্মসূচী।বেসরকারী ব্যাংকিংয়ের অগ্রপথিক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচীতে চট্টগ্রামের ব্যাংকিং,শিক্ষা,স্বাস্থ্য,আইন,ব্যবসা,সাংবাদিকতাসহবিভিনক্ষেত্রে কাজ করা দুই’শ নারী অংশ নেন। শনিবার বিকাল তিনটায় রেডিসনের মোহনা বলরুমে তিন ঘন্টা ব্যাপী এ কর্মসূচী শুরু হয়।
কর্মসূচীতে অংশ নেওয়া নারীদের উদ্দেশ্যে ইউসিবি’র চেয়ারপারসন রুখমিলা জামান বলেন, দেশে নারীর ক্ষমতায়ন এবং নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এজন্য সবার আগে নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা নারীদের একটি প্ল্যাটফর্মে এনে ইউসিবি সে কাজটি করতে চায়। উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য গতিতে যেভাবে দেশ এগিয়ে চলছে, তাতে নারীদের আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে চায়।
তিনি বলেন, ইউসিবি’র প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী ‘ঐক্যবদ্ধ কাজের মাধ্যমেই সবকিছু অর্জন করা যায়’ এ মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। দেশের জন্য, চট্টগ্রামের জন্য আজীবন কাজ করতে গিয়ে তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, সমাজসেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ মূলমন্ত্র মেনে চলতেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে চট্টগ্রামকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে তিনি যে স্বপ্ন দেখতেন, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে ইউসিবি পরিবার বদ্ধপরিকর। এ জন্যই আজকের এ আয়োজন।
পরিবার থেকেই নারীর ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্ব শুরু করার আহ্বান জানিয়ে ইউসিবির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শিল্পোদ্যক্তা মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরীর মেয়ে আফরোজা জামান বলেন, রাতারাতি সব যায়গায় নারীর ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্ব নিশ্চিত করা প্র্যাকটিক্যালি অসম্ভব। এজন্য পরিবার থেকেই বিষয়টি শুরু করতে হবে। বাবা বিশ্বাস করতেন, নারীর উন্নয়ন ছাড়া একটি সামাজ বা দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই ছেলেদের পাশাপাশি তিনি আমাদেরকেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। বাবার ব্যবসা, সমাজ সেবাসহ নানা কাজে আমাদেরকেও সম্পৃক্ত করেন। বাবার পরিচালিত সব প্রতিষ্ঠানে তিনি নারীদের বিশেষ সম্মান দিতেন।
বাঁধা ডিঙিয়ে স্বপ্ন পূরণের শপথ নিতে নারীদের আহ্বান জানিয়ে হাই-টি কর্মসূচীর কী-নোট স্পীকার ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পীকার, ব্যাংকের চেয়ারপারসন থেকে থেকে শুরু করে মর্যাদাপূর্ণ সব যায়গায় নারীরা সফলতার সাথে কাজ করছে। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে কাজ করতে গেলে বাঁধা আসবেই। এসব বাঁধা ডিঙিয়ে স্বপ্ন পূরণের পথে চলতে হবে। দেশের জন্য কাজ করতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে রেডিসন ব্লু চিটাগং বে ভিউ’র মহাব্যবস্থাপক এডওয়ার্ড’স রবিন বলেন, দীর্ঘ একমাসের কর্মযজ্ঞ শেষে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা আত্মবিশ্বাসী নারীদের জন্য ‘হাই-টি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন আমরা সফলভাবে করতে পেরেছি। এতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করায় ইউসিবি কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সফলতার সাথে কাজ করা নারীরা একে অপরকে জানার মাধ্যমে নিজেদের আইডিয়া শেয়ার করার সুযোগ পেলেন। পারষ্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে সাফল্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পথ তৈরি হলো।
তিনি বলেন, হাই-টি অনুষ্টানে অংশ নিতে দুই হাজারেরও বেশি নারী আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু আসন সীমিত থাকায় আমরা মাত্র দুইশ নারীকে এ সুযোগ দিতে পেরেছি। নারীর ‘ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্ব’ নিয়ে প্রথমবারের মতো এ আয়োজনে এত বিপুল সংখ্যক সাড়ায় আমরা সত্যিই অভিভূত। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে এ ধরণের আয়োজন করতে আমরা কাজ করবো। শুধুমাত্র নারীদের জন্য নয়, পুরুষদের জন্যও কিছু করার প্রচেষ্টা আমাদের থাকবে।
কর্মসূচীতে ‘কী-নোট’ স্পীকার হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন, বিশ্বব্যাংকের ‘ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট’ স্পেশালিস্ট সুরাইয়া জান্নাত, বাংলাদেশ নারী উদ্যোক্তা সমিতির সভাপতি নাসরিন আওয়াল, বাংলাদেশ গলফ ফেডারেশনের ‘ল্যাডি ক্যাপ্টেন’ মাহমুদা চৌধুরী, চিটাগং গ্রামার স্কুলের পরিচালক ফারহাদ খান,লিটল জুয়েল’স স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ দিলরুবা আহমেদ, লুসি বিউটি পার্লারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লতিফা হক লুই।