ধূসর, শুভ্র ক্যানভাসে ব্রাশের একাকী পথচলার মধ্যেই ফুটে উঠে নিরেট গল্প। তাতে থাকে মুগ্ধতা, মগ্নতা, মাদকতাও। ব্রাশের শৈলীতে গল্পের মোড় হয় পরিবর্তিত, পরিবর্ধিত। এ অদ্ভুত এক গল্পকথক, যার গল্প কখনো যেন শেষ হয়না। গল্পকথক বিখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। তার চিত্রকর্মগুলো সাধারণের মধ্যে অসাধারণ, অনন্য, অনবদ্য। প্রতিটি চিত্রকর্ম আনে মুগ্ধতা। দেখে মনে হয় এমনিতেই কিছু রঙ যেন চোখের সামনে খেলা করছে, খেলতে খেলতে্ই রঙগুলো যেন এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে করতে অনায়াসে এক-একটি বিশাল চিত্রকর্ম তৈরি করেছে।
প্রতিটি চিত্রকর্মই আলাদা। গল্পে, মেজাজে, দৃষ্টিভঙ্গিতে। বাঘের প্রতিকৃতি যে এতো দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় তা শিল্পী শাহাবুদ্দিনের ক্যানভাস না দেখলে বিশ্বাস হওয়ার নয়। যেখানে বাঘ হিংসা নয়, বরং মায়াময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সর্বত্র। একইভাবে চিত্রে ফুটে উঠেছে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস চিন্তা, অহিংস নীতির প্রতি ব্যক্তিগত আনুগত্য। তেমনি ফুটে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বজনীনতাও।
চিত্রকর্মে স্থান পেয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিও। যিনি আমৃত্যু স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন, সেই স্বাধীনতা বাঙালি জাতির স্বাধীনতা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম নির্দয় হত্যাকাণ্ডের প্রতিকৃতিও এঁকেছেন তিনি।
ধূসর ক্যানভাসের মাঝেও দুর্দান্ত চিত্রকর্মগুলো এক বিস্ময়ের ঘোর জাগায় মনে। প্রতিটি চিত্রকর্মে গল্পের প্রখরতা এতোটাই দৃপ্ত যে, তা সবাইকে আকৃষ্ট করে রাখে। একজন মহান গল্পকথক না হলে এইভাবে প্রতিটি চিত্রকর্মে ব্রাশ এবং রঙের মধ্যদিয়ে আলাদা আলাদা গল্প বলা অসম্ভব।
একজন মহান মুক্তিযোদ্ধার দেশপ্রেম, দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং নিজেকে পরিশুদ্ধ করে তোলার মধ্যদিয়ে শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ নিজেকে এগিয়ে নিয়েছেন। পৃথিবীজুড়ে যে সহিংসতা, অশান্তি বিরাজ করছে তার মধ্যে একটু নিরাপত্তা স্বস্তি খুঁজে পেতেই শিল্পী নিজের ধূসর ক্যানভাসে খুঁজেছেন শান্তি।