চিত্রা, মধুমতীর পর এবার রূপসা নদীর বাঁকে

তানভীর মোকাম্মেল এর আগে মুক্তিযুদ্ধ, দেশভাগের মতো ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র তো বটেই, কাহিনিচিত্রও নির্মাণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের একটি কাহিনিচিত্রের কাহিনি স্থাপন করেছিলেন মধুমতি নদীর এক খাল পাড়ে। নাম নদীর নাম মধুমতী। আর দেশভাগের কাহিনিচিত্রের কাহিনি গড়ে তুলেছিলেন চিত্রাপাড়ে। নামও তাই দিয়েছিলেন চিত্রা নদীর পাড়ে। এবার তিনি নতুন কাহিনিচিত্র বানাচ্ছেন স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশের ত্যাগী বামপন্থী নেতাদের উপজীব্য করে। আর আগেরগুলোর মতো এই চলচ্চিত্রটিতেও থাকছে একটি নদী। নতুন এই চলচ্চিত্রটির নাম রেখেছেন রূপসা নদীর বাঁকে

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল অসংখ্য ভুলে যাওয়া বামপন্থী নেতাদেরও। আদর্শিক এই বাম নেতারা দেশ ও মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। মার্ক্সের আদর্শকে তারা এতটাই ধারণ করতেন যে, অধিকাংশই বড় ঘরের সন্তান হয়েও অভিজাত জীবন যাপন করেননি। অনেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত প্রভূত বিত্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বামপন্থী রাজনীতির ক্ষয় হয়। বিশেষত আদর্শিক বিভাজনের কারণে বামপন্থা ভীষণ দুর্বল হয়ে পরে। পাশাপাশি অসংখ্য বাম নেতাদের আদর্শিক স্খলন হয়। ফলে বামপন্থী রাজনীতির প্রতি মানুষ আগ্রহ হারায় তো বটেই, এই রাজনীতির প্রতি একটা নেতিবাচক ধারণাও গড়ে ওঠে।

রূপসা নদীর বাকে

অথচ বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং দেশে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে ওই ত্যাগী বামপন্থী নেতাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ইতিহাসের এই ভুলে যাওয়া মহান লোকদের গল্প বলতেই তিনি নতুন এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করছেন। তাতে উঠে আসবে মানব মুখার্জি নামের এক ত্যাগী বামপন্থী নেতার গল্প। তিনি আদর্শিকভাবে বামপন্থী রাজনীতি করেন বটে, তবে তার রাজনীতির মূল উদ্দিষ্ট মানুষ। তিনি বড় নেতার চেয়েও বেশি বড় মানুষ ছিলেন। এই মানুষটির জীবন ও তার ত্যাগী রাজনৈতিক জীবনই চলচ্চিত্রটির মূল উপজীব্য। আর চলচ্চিত্রটির শেষ হবে মুক্তিযুদ্ধে এসে, রাজাকারদের হাতে তার মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে।

চলচ্চিত্রটির এই মূল চরিত্রটি একটি ফিকশনাল চরিত্র বটে, তবে ঘটনাগুলো পুরোপুরি কাল্পনিক নয়। সে সময় এমন প্রায় সোয়া শর বেশি নেতা ছিলেন, বামদলের ভেতর যাদের বলা হতো দাদা কমরেড। এরা ছিলেন সত্যিকারের ত্যাগী নেতা। তাদের কর্ম ও নেতৃত্বের উপর ভিত্তি করেই এই অঞ্চলের বামপন্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই নেতাদের জীবনকাহিনির ভিত্তিতেই সৃষ্টি করা হয়েছে মানব মুখার্জি চরিত্রটি। তার ভিত্তিতেই নির্মিত হচ্ছে তানভীর মোকাম্মেলের রূপসা নদীর বাঁকে

চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত অনুদানের জন্য মনোনীত হয়েছে। চলচ্চিত্রটির মোট বাজেট ধরা হয়েছে ৯৬ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে অনুদান বাবদ পাওয়া যাচ্ছে ৫০ লক্ষ টাকা। বাকি টাকা তোলার পদ্ধতিটাও আমাদের দেশে বেশ নতুন। বাকি টাকা তোলা হবে ক্রাউড ফান্ডিং বা গণ অর্থায়নের মাধ্যমে। অবশ্য পরিচালক তার এর আগের প্রামাণ্যচিত্র সীমান্তরেখা নির্মাণের সময়ও এই পদ্ধতিতে টাকা তুলেছেন। সেটার সাফল্যই সম্ভবত তাকে এই কাহিনিচিত্রেও ক্রাউড ফান্ডিংয়ে উৎসাহী করেছে। তবে আরেকটা কারণও আছে। যেহেতু চলচ্চিত্রটি সত্যিকার বামপন্থী আদর্শের নেতাদের কেন্দ্রীয় চরিত্রে রেখে নির্মিত করছেন, তাই পরিচালক কোনো বাণিজ্যিক উৎস থেকে টাকা তোলাটাকেও বিবেচনা করতে চাননি। আর সেজন্যই এই গণ অর্থায়ন।