জেনিফার অ্যানিস্টন। ব্লন্ড এই অনন্যরূপসী অভিনেত্রীকে অধিকাংশই চিনি র্যাচেল গ্রিন হিসেবে। ফ্রেন্ডস সিটকমে টানা দশ বছর ধরে অভিনয় করা এই চরিত্রটিই যে তার সবচেয়ে বড় পরিচয়। ধনী পিতার টাকা-উড়ানো মেয়ে, প্রথম দৃশ্যেই যাকে দেখি নিজের বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠে এসেছে- শেষমুহূর্তে বসতে ইচ্ছা হয়নি বলে। ধুলোবালির পৃথিবী থেকে অনেক দূরে বাস করা, এমনি নিজের খেয়ালখুশি মতো চলা র্যাচেলকে দশম সিজনে দেখা যায় অনেক পরিণত হিসেবে। ততদিনে বাস্তবের জেনিফার অ্যানিস্টনের-ও ক্যারিয়ার চলে গেছে অনেক দূর।
জেনিফারের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ায়, ১৯৬৯-এ। বাবা-মা দুজনেই ছিলেন অভিনেতা। শুরুর দিকে কিছুদিন মঞ্চে কাজ করেছেন। ফ্রেন্ডস তার অভিনয়জীবনের এতোটাই জুড়ে ছিল যে দর্শকদের অনেকেই তাকে সিনেমায় অন্য চরিত্রে দেখতেই চাইতেন না- হলিউডে প্রথম দিকের ব্যর্থতার পর ১৯৯৬ এ তিনি আবার চলচ্চিত্রে ফেরত আসেন। টানা বেশ কিছু ইন্ডিপেন্ডেন্ট চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন অ্যানিস্টন। সমালোচকদের দৃষ্টিতে তখন পর্যন্ত তার অবস্থান ভালো ছিলো না খুব একটা, সেটাও পালটে যায় ২০০২ সালের ফিল্ম দ্য গুড গার্ল থেকে- কম বাজেটের এই ছবিতে অ্যানিস্টন খুবই সাধারণ এক ক্যাশিয়ারের চরিত্রে অভিনয় করেন- একেবারেই গ্ল্যামারহীন সাদামাটা একটা চরিত্রে। রজার ইবারটের মতো জাঁদরেল সমালোচকরাও প্রশংসা করেন তার অভিনয়ের।
২০০৩ সালে জিম ক্যারির বিপরীতে অভিনয় করেন কমেডি সিনেমা ব্রুস অলমাইটি-তে। দর্শক তাকে র্যাচেল গ্রিনের বাইরেও ভাবতে শুরু করে এইসময়, তার ক্যারিয়ার-ও বিস্তৃত হয় আরো। জেনিফার আনিস্টন হলিউডের সর্বাধিক আয় করা অভিনেত্রীদের মধ্যে প্রথম সারিতে পৌঁছান। নতুন শতাব্দীতে তার অভিনীত বেশিরভাগ ছবিই ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছে বিশ্বজুড়ে। ফ্রেন্ডস এর শেষ দুই সিজনে প্রত্যেক এপিসোডের জন্য অ্যানিস্টন পেতেন এক মিলিয়ন ডলার। ২০১৭-তে ফোরবস তাকে সর্বোচ্চ আয় করা অভিনেত্রীদের মধ্যে দ্বিতীয় হিসেবে শনাক্ত করে।
গত শতাব্দীর শেষদিকে ব্রাড পিটের সাথে তার সম্পর্কের শুরু। প্রথম থেকেই মিডিয়ার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন এই তারকা জুটি। বিয়ে করেন ২০০০ সালে, টিকেছিল ৫ বছর। ২০০৫ এ পিটের সাথে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি-র সম্পর্কের গুজব রটে। ওই বছর শেষের দিকে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। কারণ সম্বন্ধে মুখ খুলেননি দুজনার কেউই। ২০১৫ থেকে জাস্টিন থেরো-র সাথে সংসার করছেন এই অভিনেত্রী।
সুন্দরী হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ছিলেন সবার নজরে। ২০০৪ সালে পিপল ম্যাগাজিনের জরিপে সবচেয়ে সুন্দরী নারী বলা হয় জেনিফার আনিস্টন-কে। এক যুগ পরে ২০১৬-তে তিনি আবার-ও এই লিস্টে প্রথম হন। ২০১২ সালে হলিউড ওয়াক অফ ফেইম-এ স্টার পান জেনিফার অ্যানিস্টন। নব্বইয়ের শুরু থেকে তার অভিনয়জীবনের সূচনা, কয়েকটা ছোট টেলিভিশন রোল আর দুএকটা কম বাজেটের সিনেমা- এতটুকুই। শুরুতে নিজের অভিনয় জীবন নিয়ে খুব ডিপ্রেসড ছিলেন অ্যানিস্টন- ব্যাপারটা জমছিলো না ঠিক। তারপর ঘটলো ফ্রেন্ডস! ১৯৯৪ এর শুরুতে তিনি অডিশন দিলেন, প্রথমে প্রযোজকরা তাকে পছন্দ করেছিলেন মনিকা গেলার- এর চরিত্রে। ভাবা যায়! কিন্তু না শেষমেষ ব্যাপারটা যে তা হয়নি, এবং না হয়েই যে চমৎকার হয়েছে তা বোঝা গেলো ফ্রেন্ডস এর পরবর্তী দশ সিজনে- ২০০৪ অব্দি। পুরোটা সময়ই র্যাচেল গ্রিন চরিত্রে দেখা গিয়েছে অ্যানিস্টনকে। র্যাচেল গ্রিনের চরিত্রটি আমেরিকান টেলিভিশনের সবচে’ জনপ্রিয় চরিত্রগুলোর একটা। এই চরিত্রের অভিনয়ে জেনিফার অ্যানিস্টনের প্রাপ্তি একটা প্রাইমটাইম অ্যামি অ্যাওয়ার্ড এবং গোল্ডেন গ্লোব। অ্যাশটন কুচার আর জেইক জিলেনহ্যালের মতো অভিনেতারা অ্যানিস্টনের প্রতি তাদের ক্রাশের কথা অকুণ্ঠে স্বীকার করেন। নব্বই দশকের হার্টথ্রব এই অভিনেত্রীর ৫০ তম জন্মদিন আজকে। শুভ জন্মদিন জেনিফার অ্যানিস্টন!