সমসাময়িক সামাজিক পরিবেশ এবং প্রকৃতি নিয়েই সাধারণত নির্ধারিত হয় মানুষের মানবিক বৈশিষ্ট্যাবলী। বিচিত্র সব মানব বৈশিষ্ট্যের বিবর্তন ঘটে সময়ের সাথে তাল মিলিয়েই। যে কারনে হিউম্যান ইকোলজি বরাবরই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বিশেষ করে আমাদের মত ভৌগলিক বিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাওয়া দেশগুলিতে। নিত্যকার সামাজিক পরিবর্তন এবং ভৌগলিক গতি-প্রকৃতি এই উপমহাদেশে তাই অনেকখানিই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই ভাবনা থেকেই গেল বছরের শেষ সপ্তাহে চট্রগ্রামে আয়োজিত হয় ৩য় মাল্টি ডিসিপ্লিনারি আর্ট শো। সন্তরণ আর্ট অর্গানাইজেশনের উদ্যোগে এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিল এই উপমহাদেশের বেশ কয়েকটি দেশের শিল্পীরা।
হিউম্যান ইকোলজি নিয়ে সন্তরণ আর্ট অর্গানাইজেশনের আয়োজনে এই শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আসরের মূল থিম ছিল- ‘Human Ecology and Art’। ২০১১ সালে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনীর উদ্যোগের পেছনে মূল লক্ষ্যই ছিল দেশের এবং দেশের বাইরের শিল্পীদের মাল্টিডিসিপ্লিনারি শিল্পকর্মগুলো প্রদর্শনের জন্য যথাযথ সুযোগ দেওয়া। প্রদর্শনীর শিল্পকর্মগুলোতে মূলত প্রাধান্য পায় মানব মনের প্রকৃতি এবং তাদের ভৌগোলিক-সামাজিক এবং পরিবেশের নানা বৈচিত্রতার প্রকাশক শিল্পকর্ম।
১৯৮৬ সালে Bill Carpenter হিউম্যান ইকোলজিকে একটি নান্দনিক রূপ দেয়ার কথা ভেবেছিলেন। সেখান থেকেই শুরু আর সেই অনুপ্রেরণায় সন্তরণের আর্ট অর্গানাইজেশনের আজকের এই যাত্রা।
গেল বছরের এই প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে দক্ষিন এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মরিশাস এবং তাইওয়ানের শিল্পীদের কাজ। কয়েক ধাপে সাজানো হয়েছিল এই মাল্টিডিসিপ্লিনারি আর্ট শো। শো-এর প্রধান কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করেন মনজুর আহমেদ। পাশাপাশি অংশগ্রহনকারী বাকি ৪টি দেশ থেকেও সহকারী কিউরেটর হিসেবে কাজ করেছেন আরও চারজন শিল্পী।
‘A SITESPECIFIC DIALOGUE IN TRANSITION’ এই শিরোনামের কর্মশালা দিয়ে যাত্রা শুরু হয় ৩য় মাল্টি ডিসিপ্লিনারি আর্ট শো-এর প্রথম ধাপের কার্যক্রম। সাইট স্পেসিফিক কর্মশালাটির স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয় সেই ভবনকে যেটি একসময় পরিচিত ছিল ইউরোপীয়ান ক্লাব বলে। এই ভবনেই ১৯৩২ সালে সফলভাবে আক্রমণ করেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী-প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। কর্মশালা পরিচালনা করেন সঞ্চয়ণ ঘোষ।
মূল পর্বের প্রদর্শনীতে ঠাঁই পায়- ইন্সটলেশন আর্ট, সাইট স্পেসিফিক আর্ট, ভিডিও আর্ট, পারফরম্যান্স আর্ট, নিউ মিডিয়া আর্ট, সাউন্ড আর্ট, ফটোগ্রাফী, ভাস্কর্য, নীরিক্ষামূলক নাচ এবং শিশুদের নির্মিত শিল্পকর্ম।
মূল পর্বের আয়োজনের প্রথম এবং শেষ দিনটি নির্ধারিত ছিল শুধুই পারফরম্যান্স আর্টের জন্য। প্রাকৃতিক পরিবেশে নারী দেহের গতি-প্রকৃতি এবং অনুভূতি ছিল মূল থিম। এই নিয়েই কাজ করেছেন প্রদর্শনীর পারফরম্যান্স আর্টের শিল্পীরা।
উৎসবের ২য় দিনের আয়োজনে ছিল প্যানেল ডিসকাশন এবং প্রেজেন্টেশন। যেখানে বক্তব্য রাখেন ছত্রপতী দত্ত, মাহবুবুর রহমান, শাহেলা শারমিন, সঞ্চয়ণ ঘোষ, মনজুর আহমেদ এবং তানজীম ওহাব।
প্রোগ্রাম এর ৪র্থ দিনে ছিল চাইল্ড আর্ট ইভেন্ট এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। ৫ম দিনে ছিল নীরিক্ষামূলক নাচ এবং ইন্টারঅ্যাক্টিভ মিউজিকের আয়োজন।। নিউ মিডিয়া আর্ট প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে সন্তরণ আর্ট অর্গানাইজেশনের এই উদ্যোগ বেশ সময় উপযোগী বলা চলে। অস্থির সময় এবং পরিস্থিতি বিচারে শিল্পীদের এই শিল্পকর্মগুলোতে ভাষা পায় বাস্তব সময় এবং মানব মনের নানা আঙ্গিকের গতি প্রকৃতির ধারা। বর্তমান সময়ের তরুণ শিল্পীদের জন্য ৫ দিন ব্যাপী এই প্রদর্শনী তাই বেশ বড় পরিসর এবং অনুপ্রেরণার স্থান হয়ে গড়ে উঠছে অপার সম্ভাবনায়।