পুরুষতন্ত্রের দুর্গ ধসছে

যাত্রা, নতুন দিগন্তের পথে। গেল বছরের আলোচিত ঝড় ছিল #MeToo। সেই ঝড়ের গতিতেই এবারও এল নতুন এক ঝড় নিউ ইয়ার্স ইভে। প্রতীক্ষিত গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডের সবচেয়ে সম্মানিত পুরস্কারের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন সব অর্থেই নতুন একজন। কে তিনি? তিনি কিন্তু আমাদের সবার চেনা, অপরাহ উইনফ্রে। প্রতিকূল পথে যার যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই কবে! তিনিই প্রথম যিনি আফ্রিকান-আমেরিকান নারী যার হাতে প্রতিবাদের আলোকবর্তিকা জ্বলে পাল্টে গেছে মার্কিন টেলিভিশনের চালচিত্র। বিশ্ব বিনোদনের জগতে বিশেষ অবদানের জন্য তার হাতেই শোভা পেল চিরচেনা সেসিল বি ডিমিল পুরস্কার।

৭ জানুয়ারি বসেছিল গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডের ৭৫তম আসর। যেখানে ‘সেসিল বি ডিমিল অ্যাওয়ার্ড’ এর মত সর্বোচ্চ সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন অপরাহ উইনফ্রে। কেবল নিজের কাজের স্বীকৃতিই নয়, দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ভেঙ্গেছেন প্রচলিত বহু প্রথাও।  বর্ণভিত্তিক এই ভেদাভেদের প্রথা হলিউডে প্রথম ভেঙ্গেছিলেন Sidney Poitier। সেই ১৯৬২ সালে তিনি নিজের করে নিয়েছিলেন অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের মঞ্চ। এরপর গোল্ডেন গ্লোবের দ্বারও উন্মোচন হয় তার হাতেই, ১৯৮২ সালে। এবং সেই সম্মাননায় সেদিন অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ছোট্ট অপরাহও। আজ সেই অনেকটা পথ পেরিয়ে অপরাহ স্বীকৃত হলেন ‘সেসিল বি ডিমিল অ্যাওয়ার্ড’ এ। এ সম্মাননা দেওয়া হয় তাকেই, যার অনন্য অবদান ভাস্বর হয় বিশ্ব বিনোদনের দরবারে। আজ সেই মহীয়সী ব্যক্তিটিই হয়েছেন অপরাহ।

সম্মাননা অনুষ্ঠানে অপরাহ শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেছেন সকল নারীদের যারা আজ সোচ্চার হয়েছেন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে, কথা বলছেন জোরালো গলায়। বিশ্বব্যাপী যারা শামিল হয়েছেন #MeToo ঝড়ে, আওয়াজ তুলেছেন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরে। অপরাহ উইনফ্রে স্মরণ করেছেন মাথা নতজানু না করে ঘুরে দাঁড়ানো নারী রেসি টেইলরকে। স্বপ্ন দেখিয়েছেন সবাইকে, যেদিন আর এমন #MeToo ঝড়ে পৃথিবীর কেঁপে উঠবার প্রয়োজন পড়বে না। প্রতিবাদ হবে সময়ের সাথে, গোপনে বয়ে যাওয়া কোন ক্ষোভ হয়ে নয়।মঞ্চে তার দেওয়া বক্তব্য আজ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। অনুপ্রাণিত হয়েছে অনেক তরুণ হৃদয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় ৯ মিনিট দীর্ঘ এই বক্তৃতা ইউটিউবে দেখে ফেলেছে ৩০ লাখের বেশি মানুষ।

প্রথার বাইরে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ-মার্কিন নারী তিনি, যিনি আজ এই সম্মাননায় ভূষিত। যিনি আজ বিশ্বজুড়ে অনুকরণীয় চরিত্র। হ্যাঁ, তিনি পুরুষ নন। ‘হিরো’ শব্দের অন্যরকম এক মুখ তিনি। যেখানে প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পেশীর ব্র্যান্ডিংকে হার মানিয়েছেন অনেক আগেই, আজ সেই অপরাহকে দিয়েই শুরু হয়েছে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের ইতিহাসের নতুন এক যাত্রা।