মধুমিতার বয়স এখন ৫০!

১৯৬৭ সাল। তৎকালীন ঢাকার একজন ব্যবসায়ী ছিলেন সিরাজ উদ্দিন। অবসর সময়ে বন্ধু ও কাছের মানুষদের নিয়ে গল্প-গুজব করতে পছন্দ করতেন। ভালোবাসতেন এক সাথে অনেককে নিয়ে সিনেমা দেখতে। তখন এদেশে সিনেমার রমরমা যুগ। ডিভিডি, ভিসিডি বা কম্পিউটার তখনো কেউ চেনেই না। টেলিভিশনও খুব বেশি মানুষের ঘরে নেই। সিনেমাহলে গিয়ে ছুটির দিনগুলোয় সপরিবারে বা বন্ধুবান্ধব সহ সিনেমা দেখাই শহুরে মানুষদের অবসর কাটানোর উপায়। একদিন তিনি বলাকা সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে যাবেন বলে ১২টি টিকেট চেয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন তার ভাগ্যে জুটেছিল মাত্র ২টা টিকেট। টিকেট না পাবার ঘটনাটি পছন্দ হলো না পুরান ঢাকার বড় ব্যবসায়ী সিরাজ উদ্দিনের। সিনেমা দেখতে গিয়ে টিকেট না পাওয়া সেই মানুষটি ঠিক করলেন তিনি নিজেই একটা সিনেমা হল বানাবেন। যে সিনেমা হলটি হবে সব শ্রেণির মানুষের। যাদেরকে সিরাজ উদ্দিনের মতো টিকেট না পেয়ে মন খারাপ করতে হবে না। আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষেই তিনি অগ্রসর হলেন। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে নির্মাণ করলেন একটা সিনেমাহল। দৈনিক পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপনও দেন তিনি। বিজ্ঞাপনটি ছিল মতিঝিলে অবস্থিত সিনেমা হলটির নাম চাওয়া প্রসঙ্গে। ‘সিনেমা হলের নাম কি হবে?’- এ বিজ্ঞাপনটি দেখে অনেক নামই জমা পরে। সেখান থেকে ‘মধুমিতা’ নামটি পছন্দ করেন সিরাজ উদ্দিন।  সিনেমা হলের নাম প্রস্তাবকারীকে ৫০০ টাকা পুরস্কার সহ উদ্বোধনী ছবির টিকিটও ফ্রি দেওয়া হয়। ১৯৬৭ সালের ১ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে ‘মধুমিতা’ সিনেমাহল। ‘মধুমিতা’ হলটি উদ্বোধন করেছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার বিচারপতি আবদুল জব্বার খান। ‘ডাকবাবু’ এবং ‘ক্লিওপেট্রা’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল এই সিনেমা হলটির যাত্রা। সে যাত্রা অতিক্রম করলো দীর্ঘ ৫০ বছর। সিনেমা হলটি ঘিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার স্মৃতিঘেরা সম্পর্কের কথা জানালেন সিনেমা হলটির বর্তমান কর্ণধার সিরাজ উদ্দিনের ছেলে ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি বলেন, “১৯৬৭ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বাবার সঙ্গে এসেছিলেন আমাদের হলে। তখন প্রদর্শিত হচ্ছিল ‘ক্লিওপেট্রা’ সিনেমাটি।” গত ১ ডিসেম্বর মধুমিতা সিনেমা হলের বয়স ৫০ বছর উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন হলের বর্তমান কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন। তিনি বলেন, “বাবার সেই সিনেমা হলটি আজ ৫০ বছরে পা রাখলো আর সাথে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছাও পেল। এর থেকে বড় পাওয়া কি হতে পারে।”

ক্রমাগত বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমাহলগুলোর ভিড়ে এতদিন ধরে মতিঝিলের মতো বাণিজ্যিক একটি এলাকায় এই সিনেমাহলটিকে টিকিয়ে রাখা সহজ ছিলো না মোটেই। মধুমিতা তাও টিকে আছে স্বমহিমায়!