বাংলাদেশের শিল্পকলায় আবদুর রাজ্জাক শুধু নিজের শিল্পীসত্তার জন্য নন, বরং তার সময়ে শিল্প জগতের পুরোধা, অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত। পৃথিবী থেকে তার বিদায় নেওয়ার একযুগ পেরিয়ে এখন শুধু তার কাজের ব্যাপ্তি পরিসীমায় স্তম্ভিতই হতে হয়। সেই গল্পটা যে অনেকটা পথ পেরোনোর গল্প, যেখানে ছিল সংগ্রাম, ছিল নতুন কিছু করার তাগিদ। সব থেকে বেশি ছিল তার সংশ্লিষ্টতা, বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের উত্তাল সময়গুলোতে যার ছিল পরিস্কার অবস্থান।
শিল্পী আবদুর রাজ্জাক নিজের শিক্ষাজীবনে ছিলেন কৃতী ছাত্র, তবে সে যাত্রা কেবল ভালো ছাত্রের খেতাব অর্জনেই সীমাবদ্ধ ছিলোনা। বরং স্বপ্ন দেখেছিলেন বড় কিছু হওয়ার, করার। তাই যাত্রা করেন সুদূর আমেরিকায়, ফুল ব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে, নিজেকে প্রমাণ করে তো বটেই। সেইসময় আমাদের দেশের শিল্পীদের মাঝে তিনিই ছিলেন প্রথম স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থী। শুধু তাই নয়, প্রতিকূল সময়ে অনেকটা সাহস করেই প্রতিষ্ঠা করেছেন ভাস্কর্য বিভাগ। প্রাথমিক জীবনে রঙের নানা মাধ্যম নিয়ে নিরীক্ষা, উচ্চশিক্ষায় প্রিন্ট মিডিয়া নিয়ে দক্ষতা অর্জন এবং কর্মজীবনে ভাস্কর্য বিভাগ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথে আবদুর রাজ্জাক সমৃদ্ধ হয়েছেন ব্যক্তিজীবনে, পরিণত হয়েছেন অগ্রজ হিসেবে। যেভাবে তিনি আজও স্মরনীয় আমাদের মাঝে, যাকে স্মরণ করি আমরা শ্রদ্ধায়।
গ্যালারী চিত্রকে গত ৩১ অক্টোবর শুরু হয়েছে প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক শিরোনামে বিভিন্ন মাধ্যমে করা তার শিল্পকর্মের এক প্রদর্শনী। গ্যালারীর ৫টি ঘর জুড়ে ঝোলানো কাজগুলো ক্রমাগত মুগ্ধ করবে আপনাকে। হয়তো মনে আকুতির উদয় হবে, শিল্পীর একঝলক দেখা পাওয়ার।
শিক্ষাজীবনে আবদুর রাজ্জাক যেসব কাজ করেছেন সেসব কাজের মাঝে অনেকগুলোই এই ঢাকা শহর নিয়ে। পঞ্চাশের দশকের ঢাকা আর এই সময়ের ঢাকা, হতভম্ব হয়ে যেতে পারেন আপনি। কেমন ছিল সেসময়ের ঢাকা? দেখা যাক নাহয় শিল্পীর ক্যানভাসেই।
দেখুন ১৯৫২ সালের চকবাজার। মিক্সড মিডিয়ায় আঁকা
![](http://icetoday.net/wp-content/uploads/2017/11/1-13.jpg)
এবারের গল্পটা বুড়িগঙ্গার। তিন দশক আগের বুড়িগঙ্গা, তখনো নদীর জলে ছিল প্রাণের ছোঁয়া, গল্প ছিল নদী ও জীবনের। আজকের মতো এমন নিকষ কালো পানিতে হারিয়ে যায়নি নদী। ছবিটি ১৯৮৮ সালের, এঁকেছেন কালি ও কলমে।
![](http://icetoday.net/wp-content/uploads/2017/11/2-8.jpg)
পেন স্কেচে করা বুড়িগঙ্গার আরও একটি ছবি রয়েছে এই প্রদর্শনীতে। সেই ছবির বয়সও দুই দশক পেরিয়ে গেছে। ছবিটি এঁকেছিলেন ১৯৯৭ সালে।
![](http://icetoday.net/wp-content/uploads/2017/11/3-8.jpg)
বুড়িগঙ্গার বুকে পাল তোলা নৌকা! হ্যাঁ, শিল্পী আবদুর রাজ্জাক এমনই এক ঢাকা শহরের দেখা পেয়েছিলেন সেই সময়ে। এই ছবিটির বয়স? খুব বেশিদিন নয়, মাত্র তিন দশক। ছবিটি জল রঙয়ে আঁকা হয়েছিল ১৯৮৮ সালে।
![](http://icetoday.net/wp-content/uploads/2017/11/4-6.jpg)
আবদুর রাজ্জাক নিজের অনেকটা সময় ক্যানভাসের কাজে বিমূর্তকলা অবলম্বন করেছেন। বিমূর্ততার সাথে তার পরিচয় উচ্চশিক্ষার সময়ে, সেখানে তার শিক্ষক ছিলেন পিকাসোর প্রিয় ছাত্র। বিমূর্ততার ভঙ্গীতে আঁকা ছবিটি রায়ের বাজারের। জল রঙ মাধ্যমে এঁকেছেন তুলনামূলক অনুজ্জ্বল রঙ দিয়ে। ছবির সাল ১৯৭৫।
![](http://icetoday.net/wp-content/uploads/2017/11/5-5.jpg)
পুরোদস্তুর গ্রামীন আবহের ছবি। চলছে ধান কাটার উৎসব, ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত সকলে। কোথায় পেলেন শিল্পী এমন গ্রাম? পেলেন রায়ের বাজারে! জল রঙয়ে আঁকা রায়ের বাজার, সাল ১৯৭৫।
![](http://icetoday.net/wp-content/uploads/2017/11/6-4.jpg)
মিরপুরকে কেমন দেখেছেন শিল্পী আবদুর রাজ্জাক? ১৯৯৬ সালে প্যাস্টেল মাধ্যমে আঁকা ছবি। মিলিয়ে নিন বর্তমানের সাথে। কিছুদিন পর এমন ছবি রূপকথাও মনে হতে পারে। বেড়িবাঁধ এলাকায় এমন নৌকায় পারাপার এখন শখেই করে অনেকে।
![](http://icetoday.net/wp-content/uploads/2017/11/7-3.jpg)
আরও একটি অবাক করা ছবি, এই ছবিটিও মিরপুরের! হ্যাঁ, ১৯৫৫ সালের মিরপুর ছিল এমনই। জল রঙয়ে আঁকা এক মিরপুর।
![](http://icetoday.net/wp-content/uploads/2017/11/8-3.jpg)
১৫ নভেম্বর পর্যন্ত গ্যালারী চিত্রকে চলবে এই প্রদর্শনী। শিল্পী আব্দুর রাজ্জাকের হাতের ছোঁয়ায় বিভিন্ন সময়ে সৃষ্টি হওয়া এমন অনবদ্য সব ছবির দেখা মিলবে সেখানেই। আরও থাকছে তার নির্মিত ভাস্কর্য, তৈলচিত্র এবং ছাপচিত্র মাধ্যমে করা বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ছবি। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে।