বাংলাদেশের রূপের অনন্য এক কাব্য স্থান পেয়েছে মানুষের মনে, সময়ের নানা পরিক্রমায়, নানা ভাবে। কখনো লেখকের লেখনীতে, গায়েনের গানে কিংবা চিত্রীর ক্যানভাসে। প্রকৃতি যেখানে প্রেরণা তখন শিল্পীর মনে প্রাকৃতিক নিয়মেই তৈরি হয় আরো নানান উপাদান, যেখানে কেবল শুদ্ধ প্রকৃতি উঠে আসে না, আসে আরও নতুন গল্প। সেই গল্প প্রাণ পায় নতুন করে, নতুন চেহারা নিয়ে, রঙয়ের খেলায়।
প্রকৃতির এমনই সব সুন্দরতম মুহূর্ত নিয়ে ক্যানভাসে গল্প বলেছেন শিল্পী সোহাগ পারভেজ। সেই গল্পে রয়েছে মানুষের জীবন, একান্ত মুহূর্ত। এমনই সব গল্প নিয়ে সেজেছে গ্যালারীর দেয়াল, চলছে তারই প্রদর্শনী গত ১১ নভেম্বর থেকে গ্যালারী টোয়েন্টি ওয়ানে।
রূপসী বাংলার রূপের নানা কাব্য দিয়ে সাজানো এই প্রদর্শনী, রূপ বৈচিত্রে বাংলাদেশ। এই প্রদর্শনীতে শিল্পী সোহাগ পারভেজ ঠাঁই দিয়েছেন তার দেখা বাংলাদেশের রূপের গল্প। কেমন সেই বাংলাদেশের রূপ?
চলুন পরিচিত হই-
বাংলার বহমান নদীর গল্প কি কেবল পদ্মার ঢেউ, গভীরতম মেঘনা অথবা যমুনার দেখতে কালো জলের নদীতেই শেষ! না, আছে আরও আরও নদী। সেই দূর পাহাড়ের দেশেও। আর সব নদীর মতই এঁকেবেঁকে চলে সে, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে। শিল্পীর ভালোবাসার নাম যখন বান্দরবান তখন নদীর নামটিতো হবে সাঙ্গু! সেই নদীই রয়েছে প্রদর্শনীতে, বিশাল এক ক্যানভাসে। সাঙ্গুর রূপই তুলে ধরেছেন শিল্পী ক্যানভাসে। কত রঙয়ে যে রঙ্গীন সাঙ্গু, কত আবেগী- সে কেবল শিল্পীর তুলির ভাষাতেই মেলে। পুরো পাহাড়ী এলাকার কোল জুড়ে বয়ে গেছে সাঙ্গু, তার সাথে সাথে বয়েছে পাহাড়ের জীবনও। সময়ের সাথে কি রূপও বদলে যায়নি খানিকটা? হ্যাঁ বদলেছে, তাই এই ছবিটিও দেখে রাখুন। হয়তো পাহাড় এখন প্রস্তুত হচ্ছে নতুন কোন রূপের গল্প নিয়ে।
দেশের দক্ষিণের রূপ গোলপাতা, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ডোরাকাটায়। তবে শিল্পী এই দক্ষিণের রূপ দেখেছেন অন্যভাবে। ক্যানভাসে এঁকেছেন জল রঙয়ে, খুলনার বেড়িবাঁধ। একটুখানি প্রাণ, একটুখানি জীবনযাপন, মানুষের আবাস আর তার সাথে বাঁধের নীল লবন পানি। জল রঙয়ে প্রাণবন্ত খুলনার বেড়িবাঁধ।
নদীর চলনে চাহনিতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি। চাঁদপুরে রয়েছে সেই বহতা নদীর চিহ্ন, তিন নদীর মিলনে সৃষ্ট মোহনা। কারা সেই নদী? মেঘনা-ডাকাতিয়া-গোমতী। সেই তিন নদীরই একটির পাড়ে গড়েছে আরেক জীবন। দেশের বৃহত্তর এক বেদে পল্লী রয়েছে ডাকাতিয়া নদীর কোলে। আর সেই বেদে পল্লীর রূপের দেখা মেলে সোহাগ পারভেজের ক্যানভাসে। নীল আকাশ, সবুজ মাঠ আর তাদের টং ঘরের জীবন। মাছ ধরে ফিরছে ঘরের কর্তা? দূরে কি তাদেরই আবাস? ওই টং ঘরে? ওই বড় নৌকাগুলোয়?
এতো গেল প্রদর্শনীর সেই কাজগুলি, যেখানে রয়েছে কেবল বাংলাদেশের প্রকৃতি। এই ক’খানি কাজ দিয়েই শেষ হয়নি বাংলাদেশের রূপের গল্প। আরও যদি দেখতে চান, তবে গ্যালারীতে হাজির হতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। তবে শুধু রূপের বৈচিত্রেই শেষ কথা বলেননি শিল্পী। গ্যালারীতে ঢুকবার পথে চোখে পড়বে বাংলাদেশের জীবন-আচার দিয়ে সাজানো ১০টি সিরিজ ছবি। ছোট ছোট ১০টি গল্পেই উঠে এসেছে বাংলাদেশের জীবনের রূপ। সেখানে বাংলার গল্প রাখালের বাঁশিতে, পালতোলা নৌকায় কিংবা ধান ভাঙ্গার মুহূর্ত দিয়ে সাজানো।
লালন-রবীন্দ্রনাথের কুষ্টিয়া শহরে জন্মানো শিল্পী সোহাগ পারভেজ যেন মনে প্রাণে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন দেশ জুড়ে। ক্যানভাসে তুলে এনেছেন সেই বাংলারই রূপ। আগামী ২৬ নভেম্বরের পর্যন্ত রোজ দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আপনার জন্য খোলা রয়েছে গ্যালারী টোয়েন্টি ওয়ান। প্রকৃতির কাব্য, বৈচিত্রময় বাংলাদেশ সেখানে রয়েছে আপনারই প্রতীক্ষায়।