চাকুরির আক্রায় ফ্রি-ল্যান্সিংয়ে ভর করে টেনে টুনে কোনোমতে দিন পার করে দিচ্ছেন দেশের লাখো তরুণ। এর মধ্যে কেউ কেউ বেশ ভালো করছেন, রীতিমত খুলে বসেছেন লাভজনক ব্যবসা। সেই যাই হোক না কেন, শ্রমে-ঘামে উপার্জিত সেই অর্থ পেতে পোহাতে হয় বেশ বিড়ম্বনা। এ বিড়ম্বনার অবসান ঘটাতে পারে পেপ্যাল সেবা।
বিশ্বায়ন ও তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে রাতের পর রাত জেগে বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে লড়াই করে কাজ নিয়ে আসতে হয়, কাজ করতে হয়। ক্রেতা কাজে সন্তুষ্টি হলেই মেলে মজুরি। নানা পন্থা থাকলেও ফ্রিল্যান্সিং খাতে অর্থ লেনদেনের সবচেয়ে সহজ ও বহুল প্রচলিত পদ্ধিত হচ্ছে পেপ্যাল। অনেক মার্কেট প্লেসে থেকে কাজ পাওয়ার, অ্যাকাউন্ট খোলার, কিংবা অ্যাকাউন্ট অনুমোদন পাওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে পেপাল অ্যাকাউন্ট- অর্থাৎ কাজ পেতে হলে পেপ্যাল অ্যাকাউন্টধারী হতে হবে। এমনকি ক্রেতারাও কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে পূর্বশর্ত হিসেবে জুড়ে দেয় পেপ্যাল সেবার প্রাপ্যতাকে।
তরুণদের আগামী দিনের একরাশ স্বপ্ন দেখানো ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম উদ্যোগ ছিল পেপ্যাল– অর্থ্যাৎ বাংলাদেশ থেকে পেপ্যাল সুবিধা পাওয়া যাবে। অন্ততপক্ষে, ফ্রি-ল্যান্সিংয়ের জন্য যতটুকু সেবা দরকার ততটুকু সেবা পাওয়া যাবে।
আগের বার কয়েকের মতো আবারো সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে পেপ্যাল সেবা উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছে, তারিখ ১৯ অক্টোবর। উদ্বোধনের ঘোষণার পরপরই একে ঘিরে চলছে আশা-নিরাশার নানান জল্পনা-কল্পনা। একেক মহলের কথা একেক রকম, তবে কোনো মহলের কথাতেই সুর্নিদিষ্ট কোনো চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না; ঠিক কোন ধরনের সেবা কতটা পাওয়া যাবে। ফ্রি-ল্যান্সিংয়ের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, বিদ্যমান জুম সেবাই পুণরায় উদ্বোধন করা হবে। আবার এ খাত সংশিষ্টদেরই কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বলছেন, বর্তমানের তুলনায় কিছুটা বাড়িত সেবা পাওয়া যাবে। সেই বাড়তি সেবা কতটা, সেটা নিয়েও চলছে ‘তালগাছ আমার’ – এ ধরনের বাদানুবাদ।
পেপ্যাল আসবে কিনা- এ বিষয়ে ICE Today-এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে, পেপ্যালের পক্ষে এরিয়েল নামের জনৈক ব্যক্তি নিম্নলিখিত উত্তরটি দেন:
Hi! PayPal is not currently available in Bangladesh and we don’t have news to share right now regarding future plans. However, Xoom, a PayPal service, has been live in Bangladesh since November 2015. Through Xoom, people in the U.S. can send money to loved ones by depositing money to leading banks in the country, including Sonali Bank. -Ariel
বাংলায় বললে উত্তরটি এভাবে বলা হয়: বর্তমানে বাংলাদেশে পেপ্যাল সেবা চালু নেই। আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনাতেও বাংলাদেশে সেবা প্রদানের বিষয়ে কোনো খবর নেই। তবে, নভেম্বর ২০১৫ থেকে বাংলাদেশে বিদ্যমান জুম সেবার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত কোনো ব্যাক্তি বাংলাদেশে অর্থ পাঠাতে পারবে, আর সেই অর্থ সোনালী ব্যাংকসহ দেশের অন্যান্য শীর্ষ ব্যাংকগুলো থেকে উত্তোলন করা যাবে। – এরিয়েল
সরকারের ঘোষণা ও পেপালের বক্তব্যে সৃষ্ট ধোঁয়াশায় আলোর দেখা পাওয়া যাচ্ছে গণমাধ্যম সূত্রে সরকারেরই যথাযথ কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে; বলা যেতে পারে পেপ্যাল কেন্দ্রিক চলতি বিতর্কের প্রায় পূর্ণাঙ্গ উত্তর রয়েছে বক্তব্যটিতে: পেপ্যাল-এর সেবা চালু হবে, তবে বাংলাদেশ থেকে কোনো ওয়ালেট খোলা যাবে না। কেন ওয়ালেট খোলা যাবে না? কেননা পেপ্যাল ওয়ালেটের আওতায় অর্থ লেনদেনের প্রদানকৃত সেবা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান বিধি নিষেধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তবে অ্যাকাউন্ট থাকলে পেপ্যাল-এর গেটওয়ে ব্যবহার করে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ফ্রি-ল্যান্সাররা অর্থ তুলতে পারবেন।
সেই যাই হোক, দেশের লাখো ফ্রি-ল্যান্সারের জন্য আদতে পেপাল বিষয়ক কোনো সুখবর নেই। বিদ্যমান জুম সেবা অনেকটাই ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার। ঢাল-তলোয়ারের কথা যখন এলো তখন একটা গল্প বলা যাক। তবে গল্পটা অনেকেরই জানা থাকতে পারে- জানা গল্প আবার বলায় ঢাল-তলোয়ার নিয়ে তেড়ে আসবেন না; অনুগ্রহপূর্বক গল্পটি এড়িয়ে শেষ অনুচ্ছেদে চলে যান, যদি লেখাটি পড়ে শেষ করার আগ্রহ আপনি ধরে রাখতে পারেন।
একবার এক সামিরক অভিযানে এক প্লাটুন সৈন্য প্রেরণ করা হয়। অভিযানটি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলে সেটা নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিশনের মুখোমুখি হয় প্লাটুনটির কমান্ডার।
তদন্ত দল: অভিযান ব্যর্থ হওয়ার বিষয়ে আপনি অনেকগুলো লিখিত কারণ দেখিয়েছেন। আমাদের সবার হাতে সেই কারণগুলোর তালিকা রয়েছে। তবুও শুরুতে আপনার মুখ থেকে কারণগুলো শুনতে চাই। এরপর যাচাই-বাচাই করে দেখা হবে এ বিষয়ে আপনার কর্তব্যে অবহেলা ছিল কিনা, থাকলেও কতটা।
কমান্ডার: সবগুলো বলতে হবে? এতে তো অনেক সময় লাগবে?
তদন্ত দল: ঠিক আছে, আপনি উল্লেখযোগ্য কারণগুলো বলুন।
কমান্ডার: রাস্তা খুব খারাপ ছিল। যে গতিতে যাওয়ার কথা ছিল সে গতিতে যেতে পারি নি। কিছুদূর যাওয়ার পর চাকা পাংচার হয়ে যায়। আরও কিছুদূর যাওয়ার পর যাওয়ার পর গাড়ির স্প্রিং ভেঙ্গে যায়। এ সব ঠিকঠাক করতে সময় লেগেছিল বেশ কিছুক্ষণ। আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় আমাদের ঘুর পথে যেতে হয়েছিল। বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের অস্ত্রগুলো ঠিক মতো কাজ করছিল না। সেগুলো ঠিকঠাক করতে হয়েছিল।
তদন্ত দল: এত কিছুর পরও আক্রমণ চালানোর জন্য ঠিকঠাকমতো অবস্থান নিতে পেরেছিলেন?
কমান্ডার: হ্যাঁ, পেরেছিলাম। সব কিছুর পরও আমরা শত্রু পক্ষের কাছাকাছি খুব ভালো স্থানে অবস্থান নিয়েছিলাম।
তদন্ত দল: তবে গুলি চালান নি কেন?
কমান্ডার: গুলি চালানোর মুহূর্তে দেখি আমাদের অস্ত্রগুলোতে কোনো বুলেট নেই।
তদন্ত দল: অনর্থক এতগুলো কারণ না দেখিয়ে বললেই হত বুলেট ছিল না। সব কিছু ঠিক থাকার পরও বন্দুকে বুলেট না থাকলে যুদ্ধ হয় নাকি!
থমকে থমকে পূর্বাভাস দেওয়া হয়-আসছে, আসবে। এক বুক আশায় আবারো কাজগুলো গুছিয়ে নিতে শুরু করে দেশের লাখো তরুণ-তরুণী। প্রতিবারের পূর্বাভাসে যতটা গর্জন ঘটেছিল, ততটা বর্ষণ হয়নি। এবারো তেমনিটই হতে যাচ্ছে, এটা অনেকটা নিশ্চিত করে বলা যায়। এবার না আসলে কবে আসবে? আর কত অপেক্ষা করতে হবে?