বাঙালি নারীর চিরায়ত সব পরিচয় পেরিয়ে নতুন এক মাত্রায় আত্মপ্রকাশ করেছিলেন নাজমুন আরা সুলতানা। ১৯৭৫ সালে, মুনসেফ পদে দেশের প্রথম নারী হিসেবে দীর্ঘ-বন্ধুর সে যাত্রায় তিনিই ছিলেন প্রথমা। আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে সুপ্রীম কোর্টের প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে কর্ম অবসরে যাচ্ছেন তিনি। বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার অসামান্য এক পথচলার শেষতম কর্মদিবস আজ।
একজন নারী হিসেবে দেশের প্রথম মুনসেফ, প্রথম জেলা জজ, হাইকোর্টের অতিরিক্ত বেঞ্চের বিচারপতি, সর্বশেষ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে ২০১১ সালে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দু’বার সদস্য হয়েছেন আন্তর্জাতিক নারী আইনজীবী সংস্থারও। ফতোয়াকে অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় ছিল তাঁর কর্মজীবনের অন্যতম আলোচিত রায়।
প্রথম নারী বিচারপতিকে একবার দেখতে একসময় এজলাসে ভিড় জমাতো লোকেরা। তবে এখন সময় বদলেছে। নাজমুন আরা সুলতানার দেখানো পথে বিভিন্ন সময়ে শামিল হয়েছেন আরও অনেকেই। বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে কাজ করছেন মোট সাতজন নারী বিচারপতি।
বাংলাদেশে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বেঞ্চে দ্বিতীয় নারী বিচারপতি হিসেবে ২০০২ সালে নিয়োগ প্রাপ্ত হন বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী। তিনি দেশের বাইরে মুসলিম নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেছেন একাধিকবার। পদাধিকার বলে এখন কাজ করছেন বাংলাদেশ হার্ট ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি ও নির্বাহী সচিব হিসেবে। বিদেশে উচ্চতর শিক্ষা নিয়েছিলেন বিচারপতি জিনাত আরা। জটিল সব মামলায় নিয়মিত আলো ছড়িয়েছেন দেশের বাইরেও।
শুধু বিচারকের কাজই নয়, নারী বিচারপতিদের সরব হতে দেখা যায় বিভিন্ন জনমানুষের দূর্ভোগের বেলাতেও। ২০০৭ সালের ঘটনা। সিডরে আক্রান্ত উপকূল। সেসময় বিপর্যস্ত কিছু এলাকার বাঁধ মেরামতের পদক্ষেপে সরকারের নিষ্ক্রিয়তাকে অবৈধ ঘোষণা করেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
হিউম্যান রাইটস নিয়ে নিয়মিত কাজ করেছেন বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ। পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি জনমত গড়ছেন ডিজিটাল ম্যারেজ রেজিস্টেশনের জন্য। যা ভবিষ্যতে নারীর অধিকার রক্ষা এবং সামাজিক হয়রানি প্রতিরোধে কাজ করবে সুরক্ষা কবচ হিসেবে। হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে সর্বশেষ ২০১৫ সালে কাজ শুরু করেন বিচারপতি কাশেফা হোসেন।
দেশের ভবিষ্যৎ বিচার ব্যবস্থায় নারী উপস্থিতি আরো সরব হবে বলে আশাবাদ সকলের। সময়ের সাথে বেড়েছে নারী আইনজীবীর সংখ্যাও। বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা আর অ্যাডভোকেট মেহেরুন্নেসা খাতুনের দেখানো পথে নারীরা আলোকিত করে চলবেন বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা আর আইন বিভাগকে।