২৫ বছর পর টুইন পিকস : জেনে রাখুন ২৫টি বিষয়

ছোট্ট এক সাদামাটা শহর টুইন পিকস। জীবনযাপন নিরুত্তাপ, শান্ত। এমনই শহরে এক টিনেজার তরুণীর মৃতদেহ পাওয়া গেল নদীর ধারে, প্লাস্টিকের ব্যাগে মোড়ানো অবস্থায়। সে ছিল সবার প্রিয় মুখ, নাম—লরা পামার। লরার এই মৃত্যুরহস্য ভেদ করতে এফবিআইয়ের এক স্পেশাল এজেন্ট ডেল কুপারের আগমন হলো শহের। কুপারের সঙ্গে সঙ্গে সময়ের চাকা গড়িয়ে সবাই দেখেছিলেন, যেমনটা আমরা খোলা চোখে দেখতে পাই; সবকিছু আদতে তেমন নয়—‘দ্য অউলস আর নট অলওয়েজ অ্যাজ দে সিমস’! নব্বই দশকের গোড়ার দিকে, তামাম দুনিয়াকে রহস্য আর স্যুরিয়াল জগতের খেলায় বুঁদ করে রাখা এক কাল্ট টেলিভিশন সিরিজ ‘টুইন পিকস’ এমন গল্প নিয়েই শুরু হয়েছিল।

‘টুইন পিকস’ পুরোপুরি সমাধান দিয়ে শেষ তো হয়ইনি, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এক জিজ্ঞাসা আর রহস্যের মাঝে আটকে রেখেছিল সব দর্শককে। সিরিজটির নির্মাতা ডেভিড লিঞ্চ সবাইকে চমকে দিয়ে বেশ কয়েক বছর আগে জানিয়েছিলেন, ‘টুইন পিকস’ ফিরবে আবারও! সেই ঘোষণা অনুযায়ী, ২১ মে টেলিভিশনের পর্দায় ফিরেছে ‘টুইন পিকস’; তৃতীয় সিজন নিয়ে। প্রায় ২৫ বছর পর ফিরে আসা এই সিরিজটির বিষয়ে ২৫টি বিচিত্র তথ্য নিয়েই এই আয়োজন।

১. বিখ্যাত এই টেলিভিশন ড্রামার শেষ পর্বে অন্যতম চরিত্র লরা পামারকে বলতে দেখা যায়, ‘তোমার সাথে ২৫ বছর পর আবার আমার দেখা হবে।।’ সেই ২৫ (অন এয়ার পিছিয়ে যাওয়ায় ২৫ বছরের একটু বেশি) বছর পরেই আবার ফিরছে বটে ‘টুইন পিকস’।

আবার দেখা হবে ২৫ বছর পর

২. লরা পামারের সেই বিখ্যাত ছবিটি আসলেই অভিনেত্রী শেরিল লি’র স্কুল প্রমের ফটো!

বিখ্যাত সেই প্রম ফটো

৩. যারা এই সিরিজটি দেখেছেন, সবাই জানেন রহস্যময় ভয়ংকর খুনী ‘বব’-কে। এই চরিত্রে অভিনয়কারী ফ্র্যাংক সিলভা ছিলেন এই সিরিজের একজন সেট ডেকোরেটর। তিনি লিঞ্চের বিখ্যাত ছবি ‘ব্লু ভেলভেট’ ছাড়াও ‘ডিউন’ ছবিটিতেও কাজ করেছিলেন।

৪. ডেভিড লিঞ্চ এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তার আরেক বিখ্যাত ছবি ‘লস্ট হাইওয়ে’ এবং ‘টুইন পিকস’, দুটোই একটি বিশেষ কাল্পনিক জগতের প্রতিনিধিত্ব করে।

ডেভিড লিঞ্চ জানিয়েছিলেন, তার আরেক বিখ্যাত ছবি ‘লস্ট হাইওয়ে’ও ‘টুইন পিকস’-এর কাল্পনিক জগতকেই প্রতিনিধিত্ব করে

৫. এই সিরিজের মূল গল্পে অড্রি এবং এজেন্ট কুপারের মধ্যে প্রেম হওয়ার কথা ছিল। তবে ছবির গল্পেই বয়সের ব্যবধান অনেক বেশি হওয়ায় অভিনেতা কাইল ম্যাকলাকলান (ডেল কুপার) এতে অস্বীকৃতি জানান!

৬. টুইন পিকস শহরের অভিবাদনমূলক সাইনবোর্ডে দেখা যায়, এ শহরে লোকসংখ্যা ৫১,২০১। চিত্রনাট্যে ডেভিড লিঞ্চ এই সংখ্যা রেখেছিলেন ৫,১২০। কিন্তু এবিসি টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ এত ‘কম’ জনসংখ্যার বিষয়ে  আপত্তি জানালে এই সংখ্যার সঙ্গে আরও বাড়তি ‘১’ যোগ করা হয়েছিল!

টুইন পিকসের সাইনবোর্ড

৭. লরার অবিকল চেহারার কাজিন ম্যাডি ফার্গুসনের চরিত্রটি সিরিজটিতে থাকার কথা ছিল না। ঘটনা হলো, ডেভিড লিঞ্চ শেরিল লিকে নিয়ে এতটাই মুগ্ধ ছিলেন যে পুরো সিরিজেই তাকে রাখতে চেয়েছিলেন। তাই লরার মৃত্যুর পর তিনি ‘লরার লুক-অ্যালাইক বোন ম্যাডি’ চরিত্রটির সৃষ্টি করেন!

‘লরার লুক-অ্যালাইক বোন ম্যাডি’ চরিত্রটির সৃষ্টি হয় লিঞ্চের শেরিল লিকে নিয়ে মুগ্ধতা থেকে।

৮. বিখ্যাত ব্ল্যাক লজের রহস্যময় রুম প্যাটার্নটি লিঞ্চের সাড়া জাগানো ‘ইরেজারহেড’ ছবিটিতেও ছিল!

লিঞ্চের ‘ইরেজারহেড’- এও ছিল রহস্যময় রুম প্যাটার্ন

৯. লরার চরিত্রটির পেছনে অনুপ্রেরণাদায়ক এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন মেরিলিন মনরো। ডেভিড লিঞ্চ এবং ফ্রস্ট মনরোকে নিয়ে এক বিশাল ক্যানভাসের বায়োপিক (গডেস) বানানোর কাজে হাত দিয়েছিলেন সে সময়ে, যা তাঁরা শেষ করতে পারেননি। সেই কাজের অনেক প্রভাবই এসেছে এই সিরিজ নির্মাণের সময়ে।

মেরিলিন মনরোর আদলে তৈরি হয়েছিল লরার চরিত্রটি

১০. ‘ফায়ার ওয়াক উইথ মি’ কবিতাটি পড়তে থাকা এক-হাতওয়ালা ব্যক্তির চরিত্রটিও এই সিরিজে থাকার কথা ছিল না!

১১. রোবোকপ সিরিজ তথা রোবোকপ হিসেবে অভিনয়কারী মিগুয়েল ফেরারকে বেশ মনে ধরেছিল ডেভিড লিঞ্চের। সে জন্যেই তিনি এফবিআই এজেন্ট রোজেনফিল্ডের চরিত্রটি তৈরি করেন।

রোবোকপের চরিত্রে অভিনয়কারী মিগুয়েল ফেরারের জন্যেই লিঞ্চ এফবিআই এজেন্ট রোজেনফিল্ডের চরিত্রটি তৈরি করেন।

১২. ‘জোসি’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জোয়ান চ্যান। মূলত এই চরিত্রটি হওয়ার কথা ছিল একজন ইটালিয়ানের যাতে অভিনয় করার কথা ছিল ইসাবেলা রোসেলিনির।

জোসি’ চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল ইসাবেলা রোসেলিনির।

১৩. ক্যাপিটাল লেটারে টাইপ করতে পছন্দ করেন ডেভিড লিঞ্চ।

১৪. ‘শেরিফ হ্যারি ট্রুম্যান’ চরিত্রটির নামকরণ করা হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্রান এবং ৮৩ বছর বয়স্ক হ্যারি আর ট্রুম্যান নামের এক ব্যক্তির প্রতি শৃদ্ধা জানাতে।

১৫. দ্বিতীয় সিজনের ‘চেকমেট’ এপিসোডে যে মৃতপ্রায় ব্যক্তিটিকে দেখানো হয়, তিনি ছিলেন কাইল ম্যাকলাকলানের ভাই ক্রেইগ।

ভয়াল দৃশ্যটি পুরোটাই এক টেকে ধারণ করা!

১৬. ম্যাডি ফার্গুসনের চরিত্রটিকে হত্যার যে ভয়াল দৃশ্য দর্শক দেখেছেন, সেটি পুরোটাই এক টেকে ধারণ করা!

১৭. হ্যাংক জেনিংস চরিত্রটি কিছুটা ভিক্টর হুগোর ‘লা মিজারেবল’ উপন্যাসের অমর চরিত্র জাঁ ভালজাঁ থেকে অনুপ্রাণিত। কারাগারে জেনিংসের কয়েদী নম্বরটিও (২৪৬০১) জাঁ ভালজাঁর কয়েদী নম্বরের অনুরুপ।

১৮. এই সিরিজের অন্যতম নির্মাতা মার্ক ফ্রস্ট একটি ক্যামিও অ্যাপেয়ারেন্স করেছিলেন দ্বিতীয় সিজনে। টেলিভিশনে চলতে থাকা খবরে এক রিপোর্টার হিসেবে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।

১৯. এজেন্ট ডেল কুপারের মিডল নেম ‘বি’র পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো বার্থোলোমিউ। ডি. বি. কুপার নামটি কুখ্যাত প্লেন হাইজ্যাকার ডি. বি. কুপারের নাম থেকেই অনুপ্রাণিত।

২০. দ্বিতীয় সিজনের ১৫তম এপিসোডটি ভীষণ আগ্রহ থেকে নিজেই পরিচালনা করেছিলেন অভিনেত্রী ডায়ান কিটন।

২১. ‘ম্যান ফ্রম অ্যানাদার প্লেস’ চরিত্রে অভিনয়কারী মাইকেল জে. অ্যান্ডারসন এক সময় নাসার কম্পিউটার সিস্টেম টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন।

২২. তৃতীয় সিজনে অভিনয় করার কথা ছিল বিখ্যাত গায়ক ও অভিনেতা ডেভিড বাউয়ির। ২০১৬ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।

তৃতীয় সিজনে ডেভিড বাউয়ির অভিনয় করার কথা ছিল।

২৩. এভারেট ম্যাকগিল এবং ওয়েন্ডি রোবি অভিনয় করেছিলেন নাদিন এবং এড হার্লি দম্পতির চরিত্রে। মজার বিষয় হচ্ছে, এই জুটি স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ‘পিপল আন্ডার দ্য স্টেয়ারস’ নামের একটি ক্রাইম থ্রিলার ছবিতে।

২৪. টুইন পিকসের কোনো এপিসোডেরই নাম দেওয়ার কথা ছিল না, স্রেফ পর্বসংখ্যা দেওয়ার কথা ছিল। জার্মানিতে এই সিরিজের প্রচারের সময় এপিসোডগুলোর বিভিন্ন নামকরণ করা হয়। ইংরেজি নামগুলো প্রকৃতপক্ষে সেই জার্মান নামগুলোরই অনুবাদ।

২৫. ‘লরা পামারকে কে হত্যা করেছে’— সোভিয়েত রাষ্ট্রপতি মিখাইল গর্বাচেভও নাকি সেই সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছিলেন। গর্বাচেভ ‘টুইন পিকস’ সিরিজটি ভীষণ ভক্ত ছিলেন কী না!

‘লরা পামারকে কে হত্যা করেছে’— জানতে চেয়েছিলেন সোভিয়েত রাষ্ট্রপতি মিখাইল গর্বাচেভও

এখন সময় হাতে এক কাপ ‘ড্যাম ফাইন কফি’ নিয়ে আবার বুঁদ হওয়া সেই রহস্যের শহরে, যার নাম ‘টুইন পিকস’!

লেখা ও ছবির সূত্র : র‌্যাংকার, ভালচার এবং বাজফিড