আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস উপলক্ষে লুভা নাহিদ চৌধুরীর একক সংগীতসন্ধ্যা

বিশ শতকের প্রথম দশকে বাংলা গান পায় নব পথের দিশা। বাঙালিকে সুরের জাদুতে, বাণীর মাধুর্যে আবিষ্ট করতে আসেন মহামহিম রবীন্দ্রনাথ, আসেন অমিত প্রতিভাধর নজরুল। আবির্ভাব ঘটে আরো তিন দিকপাল অতুলপ্রসাদ সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (ডি এল রায়) ও রজনীকান্ত সেনের। অবশ্য পঞ্চকবির মধ্যে শেষোক্ত তিন কবির গানের সঙ্গে বর্তমান শ্রোতাদের সংশ্লেষ তুলনামূলক কম।

লুভা নাহিদ চৌধুরীর সাথে বাদ্যযন্ত্রে সঙ্গত করছেন সহশিল্পীরা

আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ গতকাল ২০ মে প্রধান মিলনায়তনে আয়োজন করে লুভা নাহিদ চৌধুরীর একক সংগীতসন্ধ্যা। অনুষ্ঠানে শিল্পী মূলত তিন কবির গান পরিবেশন করেন।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক স্থপতি লুভা নাহিদ চৌধুরী শিল্পসংগঠক হিসেবেই বেশি পরিচিত। তবে ১৯৭৫ সাল থেকে তিনি প্রথমে পণ্ডিত মিথুন দে ও পরে বরকত হোসেন সাহেবের কাছে সংগীতে তালিম  নেন। শাস্ত্রীয়সংগীত চর্চা করলেও শিল্পী অতুল-দ্বিজেন-রজনীকান্তর ত্রিধারা সংগীতের অনুরাগী। অার তাই সবার কাছে এই তিন কবির সৃজনীউৎকর্ষ তুলে ধরতে তিনি আগ্রহী। পাশ্চাত্য সংগীতরীতি সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান এবং দেশীয় সংগীতের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা ডি এল রায়-অতুলপ্রসাদ-রজনীকান্তের রচনাগুলোকে স্নাত করেছে এক অমিত সংগীতরসে, যা রবীন্দ্রবলয়ে অবস্থান করে তাঁদের পক্ষে অর্জন করা ছিল প্রায় অসম্ভব।

জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে লুভা নাহিদ চৌধুরীর পরিবেশনা

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মঞ্চে উঠে শিল্পী একে একে গাইলেন ১৪টি গান। দ্বিজেন্দ্রলালের দুটি ও রজনীকান্তের একটি করে এবং বাকি সবকটি অতুলপ্রসাদের রচনা। তিনি পরিবেশনা শুরু করেন অতুলের আগমনী ‘এসো গো একা ঘরে’ গানটি দিয়ে। এরপরে একে একে গেয়ে শোনান, ‘আমি সারা সকালটি বসে বসে’, ‘তুমি কবে আসিবে মোর আঙিনায়’, বৈতালিক ‘আমার পরাণ কোথা যায়’, বাউলাঙ্গের ‘ওরে বন তোর বিজনে’, গজল প্রভাবীত ‘বল গো সজনী’, কীর্তনাঙ্গের ‘আজি এ নিশি সখি’, বৈতালিক ‘ক্রন্দসী পথচারিণী’ এবং ‘আমার ঘুম ভাঙানো চাঁদ’।

প্রতিটি গান শুরু করার আগেই তিনি শ্রোতাদের পরিচয় করিয়ে দেন গানটির সুর ও রাগের সঙ্গে। দীর্ঘদিন লক্ষ্ণৌ প্রবাসী হওয়ায় গজলের প্রভাব কিভাবে এসেছিল অতুলের গানে সেটি বোঝাতে গাইলেন ‘বল গো সজনী’।

সুরের মায়াজালে আবিষ্ট শ্রোতারা

চল্লিশের দশকের অন্যান্য সংগীতরচয়িতাদের মনোজ্ঞ দুটি গান গাইলেন – জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ গোস্বামীর কণ্ঠে রেকর্ড করা দরবারি রাগে ঝাঁপতালের গান ‘বাজে মৃদঙ্গ বীণা’ এবং ১৯৩৮ সালে হিমাংশু দত্তের সুরে ‘ঝরানো পাতার পথে’। ফিরে এলেন ত্রিধারায় পশ্চিমা ঢঙের সুরে বাঁধা রজনীকান্তের ‘বেলা যে ফুরায়ে যায়’ গান গেয়ে। শিল্পী পরিবেশনা শেষ করেন অতুলপ্রসাদের বহুশ্রুত ‘বঁধুয়া নিঁদ নাহি আঁখিপাতে’ গানটি দিয়ে।

মঞ্চশিল্পী হিসেবে অনিয়মিত হলেও গতকালের আসরে দর্শক উপস্থিতি জানান দিয়েছে, লুভা নাহিদ চৌধুরীর শিল্পীসত্ত্বার খবর মোটেই অজানা নয়, তিন কবির গানের মুগ্ধ শ্রোতার সংখ্যাও এ শহরে বড় কম নয়।

ছবিঃ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন