দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা ও শান্তিতে নোবেলজয়ী নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মশতবার্ষিকী আজ। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বরে পরলোকগত এই নেতার সম্মানে সারা বিশ্বে আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ম্যান্ডেলা দিবসও। তাঁর সম্মানে ২০০৯ সাল থেকে তাঁর জন্মদিনটিকে ম্যান্ডেলা দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ।
১৯১৮ সালে ম্যান্ডেলার জন্ম। বাবা নাম রেখেছিলেন রোলিহ্লাহলা ডালিভুঙ্গা মানডেলা। স্কুলের এক শিক্ষক তাঁর ইংরেজি নাম রাখেন নেলসন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার আপামর মানুষের কাছে তিনি ‘মাদিবা’। বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের এই মহান নেতা দীর্ঘ কারাজীবন শেষে প্রতিশোধ নেওয়ার বদলে বেছে নেন ঐক্যের রাজনীতি। শ্বেতাঙ্গদের বৈষম্য থেকে মুক্তি দিয়ে গণতান্ত্রিক রেইনবো নেশন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তাঁর বহুমাত্রিক ও বর্নিল জীবন প্রেরণা দিয়েছে বেশ কয়েকটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের। অনন্য এক জীবন আর জটিল রাজনৈতিক চালে আবদ্ধ এক দক্ষিণ আফ্রিকার কথা ফুটে উঠেছে সেই সিনেমাগুলোয়।
ম্যান্ডেলা
পুরো সিনেমাটিরই লিংক:
টেলিভিশনের জন্য ১৯৮৭ সালে সিনেমাটি বানিয়েছিলেন ফিলিপ সেভিল। চিক্রনাট্য লিখেছিলেন রোনাল্ড হারউড। এইচবিওতে দেখানো সিনেমাটিতে ম্যান্ডেলা চরিত্রে অভিনয় করেছেন ড্যানি গ্লোভার, উইনির চরিত্রে ছিলেন আলফ্রে উডার্ড।
গুডবাই বাফানা
ট্রেইলার লিংক:
0
প্রিটোরিয়ার জেলে কয়েদ নেলসন ম্যান্ডেলা আর তাঁর আন্দোলনের সঙ্গীদের ভাষা জানতেন বলে জেমস গ্রেগরিকে পাঠিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার, তাঁদের ওপর নজর রাখতে। শ্বেতাঙ্গ অফিসার জেমস বন্দিকে নজরদারির বদলে নিজেকে কী ভাবে জড়িয়ে নিলেন বর্ণবৈষম্য থেকে ম্যান্ডেলার মুক্তির স্বপ্নে, জেমস-এর বিখ্যাত আত্মজীবনী Goodbye Bafana: Nelson Mandela, My Prisoner, My Friend থেকে সেই আশ্চর্য কাহিনির অসাধারণ চলচ্চিত্রায়ণ করেছেন দু’-দুবার কান উৎসবে সেরা ছবির সম্মান ও অস্কার জয়ী পরিচালক বিলি আগস্ট।
ইনভিকটাস
ট্রেইলার লিংক:
নেলসন ম্যান্ডেলার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা নিয়ে অস্কারজয়ী অভিনেতা-পরিচালক ক্লিন্ট ইস্টউড নির্মাণ করেন ইনভিকটাস। সিনেমার গল্পটা ১৯৯৪ সালের। বর্ণবাদ পরবর্তী প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যান্ডেলা দায়িত্ব নিলেও পুরো দক্ষিণ আফ্রিকা তখনও “সাদা” আর “কালো”-য় বিভক্ত! এই বিভক্তি দূর করতে প্রখর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেলসন ম্যান্ডেলা শুরু করলেন নতুন জাতি গঠনের প্রক্রিয়া, রিকনসিলিয়েশন। কালো-সাদার মিলনের জন্য ম্যান্ডেলা বেছে নিলেন সাদাদের প্রতিনিধিত্বকারী Springboks দলকে। ক্যাপ্টেন Francois Pienaar- এর সহযোগিতায় পুরো দেশের প্রতিনিধিত্বকারী একটি দল হিসেবে উপস্থাপন করলেন তিনি রাগবি দলকে যাতে মাত্র একজন কালো খেলোয়াড়। সিনেমাতে ম্যান্ডেলার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেন মরগ্যান ফ্রিম্যান। ম্যাট ডেমন অভিনয় করেন Francois Pienaar চরিত্রে। আর হ্যা, ‘ইনভিকটাস’ একটা ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ ‘অপরাজেয়’। শব্দটা রোবেন দ্বীপে বন্দি ম্যান্ডেলার প্রিয় কবিতার শিরোনাম থেকে নেওয়া।
ম্যান্ডেলা অ্যান্ড ডি ক্লার্ক
ট্রেইলার লিংক:
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসন ব্যবস্থা অবসানে শেষ মুহূর্তের আলোচনা-উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয় ম্যান্ডেলা অ্যান্ড ডি ক্লার্ক চলচ্চিত্রটি। নামভূমিকার দুই নোবেল জয়ীর চরিত্রে অভিনয় করেন দুই অস্কারজয়ী মাইকেল কেইন ও সিডনি পয়টিয়ার। সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন জোসেফ সার্জেন্ট।
ম্যান্ডেলা: লং ওয়াক টু ফ্রিডম
ট্রেইলার লিংক:
জাস্টিন চ্যাডউইক পরিচালিত এই সিনেমাটিতে নেলসন ম্যান্ডেলার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ব্রিটিশ অভিনেতা ইদ্রিস এলবা। ম্যান্ডেলার দীর্ঘ এক সংগ্রামী ও স্বাপ্নিক জীবনের চলচ্চিত্রায়ণ ঘটানোর চেষ্টা ছিল এই সিনেমায়। ম্যান্ডেলার আত্মজীবনী থেকেই চিত্রনাট্য লিখেছিলেন উইলিয়াম নিকলসন। মাত্র দুই ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের সিনেমায় ম্যান্ডেলার বৈপ্লবিক ও ব্যক্তিগত জীবনের কতটুকু ঘটনা উঠে এসেছে তানিয়ে প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল প্রিমিয়ারের সময়। সিনেমাটিতে নেলসন ম্যান্ডেলার সাবেক স্ত্রী ও দক্ষিণ আফ্রিকান রাজনীতিবিদ উইনি ম্যান্ডেলার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন নাওমি হ্যারিস।
ম্যান্ডেলা’স গান
ট্রেইলার লিংক:
আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে তারুণ্যের একটা সময় কর্মমুখর ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। তাঁর সেই উত্তাল যোদ্ধা জীবনেরই চলচ্চিত্রায়িত রূপ ম্যান্ডেলা’স গান। সিনেমাটি প্রযোজনা-পরিচালনা করেন জন আরভিন।
এবং
উইনি ম্যান্ডেলা
ট্রেইলার লিংক:
ম্যান্ডেলার দীর্ঘ লড়াইয়ের প্রধানতম সাথী ছিলেন উইনি। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং সাবেক ফার্স্টলেডি উইনি মাদিকিজেলা-ম্যান্ডেলার জীবনের গল্পটাও অনন্য এবং ম্যান্ডেলার জীবনের সাথে অচ্ছেদ্য। বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন করে নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে তিনিও কারাবন্দি হয়েছিলেন এবং প্রায় তিন দশক ধরে তারা ছিলেন বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক। যদিও পরবর্তীতে নানা আইনি ও রাজনৈতিক কেলেংকারীতে তার সুনাম ক্ষুন্ন হয়। জেনিফার হাডসন, টেরেন্স হাওয়ার্ড ও ওয়েন্ডি ক্রুওসন অভিনীত উইনি ম্যান্ডেলা সিনেমাটির পরিচালনা করেন ড্যারেল রুড।