যে লিগে জাস্টিস সুনিশ্চিত

যারা এই আণুবীক্ষণিক (মানে অতি ক্ষুদ্র, এতোই ক্ষুদ্র যে দেখতে মাইক্রোস্কোপ লাগবে) লেখককে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন, কিংবা সৌভাগ্যক্রমে বা নেহায়েত দৈবদুর্বিপাকে আগের দুয়েকটা লেখা পড়ে ফেলেছেন তারা হয়তো আমাকে ডিসি-র একজন স্বঘোষিত ফ্যান হিসেবে চেনেন। তা ডিসি’র ফ্যান সংখ্যা লাখে-কোটিতে গোনা হয়, আমার মতো এক-দু’টা এদিক-সেদিকে থাকতেই পারে। তবে সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো ডিসি-র এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্স এখনো জমছে না। ওয়ান্ডার ওম্যানের সলো মুভি আশাবাদ জাগিয়েছিলো, কিন্তু সর্বশেষ ‘জাস্টিস লিগ’ একেবারেই ন্যায়বিচার করতে পারেনি। তবে সমব্যথী বন্ধুগণ, নিরাশ হবেন না। সামনে আসছে শুভ দিন, অ্যাকোয়াম্যানের স্যালুট নিন। ডিসেম্বরে আসছে অ্যাকোয়াম্যান। তবে সেটায় জ্যাসন মোমোয়া’র ‘অ্যাকোয়াম্যান’ ত্রিশূলের খেল দেখাতে না পারলে ডিসি-র ভবিষ্যৎটাই শূলে চড়তে পারে। বালাই ষাট। ওসব না ভেবে চলুন ডিসেম্বর পর্যন্ত আরো একবার আশায় বুক বাঁধি।

তো হলিউডে জাস্টিস লিগ ফ্রাঞ্চাইসের ভবিষ্যতের আলাপ অন্য আরেকদিন করা যাবে। আজ অন্য আরেকটা জাস্টিস লিগ গড়ে ওঠার দৃশ্য দেখি চলুন। ঘটনাস্থল ‍মু্ম্বাই। আরো নির্দিষ্ট করে বললে ‘আসালফা স্লাম’। মাস দুয়েক আগে আসালফা আলোচনায় এসেছিলো অন্য কারণে। মুম্বাই আর মেট্রোরেলের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ট। ছোটো পাহাড়ের মতো জায়গায় বেশ কিছুটা জায়গা নিয়ে আসালফা বস্তির অবস্থান। মেট্রোতে ভ্রমণ করা যাত্রীরা ওই এলাকাটা পার করার সময় ‘আসালফা’র বেশ ভালো একটা ভিউ পান। তেমনই একটা ভ্রমণে তরুণ শিল্পী দেদিপ্পা রেড্ডির নজর পড়ে আসালফার ল্যান্ডস্কেপ। দেখে মুখ দিয়ে বেরিয়েই যায়, “আরেহ্ এ তো দেখি পুরা ইটালির পজিটানো! পজিটানোর ইন্ডিয়ান ভারশন হতে পারে কিন্তু এখানে।” যেই ভাবা সেই কাজ। ওখান থেকেই শুরু। দেদিপ্পার উদ্যোগে তৈরি হয় ‘চলো রাঙিয়ে তুলি আসালফা’ ক্যাম্পেইন। তাদের টিমের প্ল্যানিংয়ের সাথে যুক্ত হয় সাড়ে সাতশো স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী। আসালফার দেয়ালে দেয়ালে তৈরি হয় নতুন নতুন ছবি। ভারতীয় স্টাইলের গ্র্যাফিতি আর ম্যুরালে একসময়ের ম্যাড়মেড়ে, মনমরা দেখতে বস্তিটির চেহারাই পাল্টে যায়।

 

চেহারা পাল্টে গেছে আসালফার? তাতে কী? তাই বলে মুম্বাই তো আর পাল্টে যাবে না। ‘ক্রাইম’-ও একেবারে উঠে যাবে না। আর তাই যাবতীয় ক্রিমিনালদের মোকাবেলা করতে আসালফা’তেও গড়ে উঠেছে নিজস্ব জাস্টিস লিগ। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বাহিনী। বাহিনী? বাহিনী কেনো লাগবে? আরে একা একা তো আর আসালফা বাঁচানো সম্ভব না। ইউ কা’ন্ট সেভ দ্য আসালফা অ্যালোন।

যা হোক। মূল কাহিনীর সাথে মিল রেখে দেখা যায় আসালফার ডার্ক নাইট (ব্যাটম্যান) নিজেই নেমে পড়েছেন লিগ গঠনে। সদ্য রাঙিয়ে তোলা আসালফার এ-গলি ও-গলি ঘুরে ঠিক ঠিক খুঁজে বের করলেন অ্যাকোয়াম্যান, সুপারম্যান আর ফ্ল্যাশকে। আর সবশেষে যখন ওয়ান্ডার ওম্যানের দেখা মিললো তখন তো একদম গুজবাম্প তৈরির মতো পরিস্থিতি। নাহ্ পাঠক, আমি আর বলছি না। নিজেই ভিডিওটা দেখে নেবেন। এ এমন এক জাস্টিস লিগ ভার্শন, যেটায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত।

ভিডিওটা মূলত ‍তুষার লালের ইউটিউব চ্যানেল থেকে বানানো। তুষারের চ্যানেলটা কিন্তু বেশ জনপ্রিয়। এই চ্যানেলে তুষার ও তার সাথীরা বিশেষত ভারতীয় বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন জনপ্রিয় গান, টিভি শো ইত্যাদির সাউন্ড ট্র্যাকের কাভার তৈরি করেন। এবারে তুষার ও তার সঙ্গীরা তাদের স্টাইলে জাস্টিস লিগের সাউন্ডট্র্যাককে ট্রিবিউট দিয়েছেন। আর সেটার ভিডিও তৈরির জন্য বেছে নিয়েছেন আসালফা-কে।

ভিডিওটায় তুষাররা আসালফা’রই কয়েকটি বাচ্চাকে দিয়ে অভিনয় করিয়েছেন। প্রত্যেকের পারফরমেন্সই দুর্দান্ত। আর ভিডিওটা তৈরি করতে যেয়ে তুষারের মনে হয়েছে সম্ভাবনাময় এই পাঁচটা বাচ্চাই শুধু নয়, আসালফা ও এর আশেপাশের স্কুলের বাচ্চারা সুবিধাপ্রাপ্ত অন্য শিশুদের থেকে একটু পিছিয়েই আছে। তাই ভিডিওটার সাথে ওদের জন্য জুড়ে দিয়েছে ডোনেশনের অপশন। ওরা যাতে সঠিক শিক্ষা পায়। ওদের সম্ভাবনার সাথে যেনো ন্যায়বিচার হয়।

 

ভিডিওটা দেখার পর ডিসি’র ফ্যান হিসেবে আমি যারপরনাই আবেগাপ্লুত। তবে অ্যাডভার্টাইজিংয়ের নিমগ্ন ছাত্র হিসেবে আমার মাথায় কী ভাসছে তা আর এখানে না বলাটাই ভালো।