আমেরিকান হিপহপ ঘরানার সঙ্গীতশিল্পী পিটবুল এর জন্মদিন আজ। মিস্টার ওয়ার্ল্ডওয়াইড মঞ্চনামেও পরিচিত এই র্যাপারের প্রকৃত নাম আরমান্ডো ক্রিস্টিয়ানো পেরেয, জন্ম ১৯৮১ সালে ফ্লোরিডার মায়ামি-তে। তার পরিবার প্রথম প্রজন্মের কিউবান অভিবাসী; পিটবুলের বেড়ে ওঠা মায়ামির ল্যাটিন অধ্যুষিত অঞ্চলে, এর গলিঘুঁজিতে তার র্যাপ জীবন শুরু। তার বাবা ছিলেন কিউবার বিখ্যাত বিপ্লবী-কবি হোসে মারতির ভক্ত, ৩ বছর বয়স থেকেই পিটবুল এই কবির কবিতা মুখস্ত আবৃত্তি করতেন। পরে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি- শব্দ কতোটা শক্তিশালী হতে পারে এটা প্রথম বুঝেছেন তিনি এই কবিতাগুলো থেকে।
আশির দশকে মায়ামি-তে ল্যাটিন আমেরিকানদের অভাব ছিলো না। এই অভিবাসী ল্যাটিনোরা ছিলো বেশ দরিদ্র এক জনগোষ্ঠী। এরকম একটা লোকালয় থেকেই পিটবুলের উঠে আসা- প্রথম থেকেই সাফল্যের জন্য তাই তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পিটবুল নামের পিছনের গল্প-ও তাই। পিটবুল এমন এক জাতের কুকুর, যার কামড় খুব শক্ত- দাঁতের ফাঁকে একবার কোনকিছু পেলে সহজে ছাড়ে না আর। মায়ামির ল্যাটিনো ক্রিস্টিয়ানো পেরেয সংগীত দুনিয়ায় এসে তাই হয়ে উঠলেন পিটবুল- লক্ষাধিক রেকর্ড যার বিক্রি হয়েছে এই ষোল বছরের ক্যারিয়ারে।
২০০২ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম বড় ব্রেক পান পিটবুল। জনপ্রিয় র্যাপার লিল জন এর মিক্সড এলবামে স্থান পায় তার ওয়ে সিঙ্গেলটি। পরের বছর ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ফ্র্যাঞ্চাইজির দ্বিতীয় ছবিতে গানটি ব্যবহৃত হয়। শ্রোতাদের মধ্যে পরিচিত হতে থাকে পিটবুলের নাম। ২০০৪ এ বের হয় তার প্রথম অ্যালবাম M.I.A.M.I.
ক্যারিয়ারজুড়েই পিটবুল কাজ করেছেন অনেক সহশিল্পীর সাথে। ২০১১ সালে জেনিফার লোপেজ এর সাথে করা অন দ্য ফ্লোর তাকে প্রথম আন্তর্জাতিক তারকাখ্যাতি এনে দেয়। এই গান বেজেছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের অজস্র ক্লাবে, ইউটিউব ভিউ প্রায় ১.১ বিলিয়ন। তিনি কাজ করেছেন এনরিক ইগ্লেসিয়াস, শাকিরা, ফ্লো রিডা- পপ মিউজিকের এমন এমন তারকাদের সাথে। তবে এই কারণে প্রায়শই সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় তাকে। অনেকেরই মতামত পিটবুলের নিজের প্রতিভা খুব বেশি কিছু না, ভালো শিল্পীদের সাথে কাজ করতে জানেন তিনি।
জীবনের প্রথম অংশ দারিদ্র্যে কেটেছে পিটবুলের। মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হয় যায় তিনি যখন খুব ছোট। মায়ের সাথেই মানুষ হয়েছেন, পোষ্য-ও থাকতে হয়েছে অন্য পরিবারে। সফলতা আসার পরেও তাই নিজের শিকড়কে অনেক বেশি স্মরণ করেন তিনি। মায়ামির লিটল হাভানায় তৈরি করেছেন স্কুল- সঙ্গীত, খেলাধুলার শিক্ষা দেয়া হয় সেখানে। ল্যাটিনো কম্যুনিটি ছড়িয়ে আছে এখন পৃথিবীর সবখানে। তার মি. ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডাকনামের কারণ এটাই।
পোশাক, হেয়ারস্টাইল কিংবা স্টেজ এপিয়ারেন্স সব কিছুতেই পিটবুলের নিজস্বতা চোখে পড়ার মতো। র্যাপারদের চিরকালীন ব্যাগি জিনস, বেইসবল ক্যাপ কিংবা কাপড়ের জুতায় তাকে দেখা যায়না কখনো। আরমানির স্যুট পরেন তিনি, সাথে চামড়ার জুতা। ওকলে বা রে-ব্যানের বিশাল কাঁচের সানগ্লাস থাকেই তার চোখে। ‘আমার অবস্থা ইদানিং কেমন তা প্রকাশ করার চেষ্টা করি আমি পোশাকে’- এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন পিটবুল- ‘ভালো জামাকাপড় পরা আমি শিখেছি আমার বাবার কাছে।‘
২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের থিমসং ‘উই আর ওয়ান’ এ কণ্ঠ দিয়েছিলেন এই শিল্পী। ঐ বছরেই হলিউড হল অফ ফেইমে প্রবেশ করে তার নাম। এই পর্যন্ত বেরিয়েছে তার দশটি এলবাম, বিক্রি হয়েছে বিলিয়ন কপি। ২০১৩ এর সিঙ্গেল টিম্বার ১৮টি দেশের বিলবোর্ড হট চার্ট এ দীর্ঘসময় ছিলো এক নাম্বারে। জনপ্রিয়তার পাল্লায় কখনো ঘাটতি হয়নি তার। এই বছর ৩৮ এ পা দিলেন এই শিল্পী। আরো বহুদিন বর্ণাঢ্য সংগীত ক্যারিয়ার কাটাবেন এই ল্যাটিনো- এমন ভাবাই যায়।