ডিসেম্বরের শেষেই উচ্চাঙ্গসংগীতের মহোৎসব!

আগামী ২৬ থেকে ৩০ ডিসেম্বর বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ধানমন্ডির আবাহনী মাঠে পাঁচ দিনব্যাপী বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের ষষ্ঠতম অধিবেশন আয়োজিত হতে যাচ্ছে। এবছর উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে। রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলণে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি জনাব আবুল খায়েরের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন উৎসবের নিবেদক স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, উৎসব সহযোগী ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব কমিউনিকেশন জারা জাবীন মাহবুব ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী । এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমেই এবারের আয়োজনের বিস্তারিত সম্পর্কে নিশ্চিত করেছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন।

আয়োজনের ব্যাপ্তি, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রথম সারির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিল্পীর অংশগ্রহণ এবং দর্শকসংখ্যা বিচারে এরই মধ্যে এ উৎসব পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উচ্চাঙ্গসংগীত আসর হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। তবে ভেন্যু জটিলতায় উৎসবের এবারের আসর পণ্ড হওয়ার যোগাড় হয়েছিলো। গত ২২ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলন আহবান করে উৎসবের পরিকল্পনাও তাই বাতিল করেন আয়োজকরা। সেই ঘোষণার সাথে সাথেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় ভক্ত-দর্শকদের আক্ষেপের সুর বেজে উঠে। কারণ সারা বছর ধরে শুধু এই উৎসবের জন্যেই যে অপেক্ষা করেন দেশের নানা প্রান্তের মানুষ। তাই ভক্তদের কথা বিবেচনা করে আবারও আয়োজকরা নতুন উদ্যমে ভেন্যু খুঁজতে শুরু করেন। অবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ বিবেচনা, মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর মহোদয়ের একনিষ্ঠ উদ্যোগ ও শুভার্থীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিশ্চিত হয় ধানমন্ডির আবাহনী মাঠ। এরপরও চ্যালেঞ্জ কম ছিলো না। শীতকালে এই উপমহাদেশের গুরু-ওস্তাদ-পণ্ডিতদের শিডিউল মেলানো যে বড়ই কঠিন! তাও যে অনুষ্ঠান হ্ওয়ার কথা ছিলো নভেম্বরে, সেটা হঠাৎ করে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চলে গেলে এত কম সময়ের নোটিশে আবার সব তারকা শিল্পীদের একত্রিত করতে পারাও কঠিনই বটে। তবে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন এতকিছুর পরেও হতাশ করেনি দর্শকদের। উৎসবের পরিধি সংকুচিত না করে, মূল পরিকল্পনা খর্ব না করে বা মূল শিল্পী পরিবর্তন না করেই বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব আয়োজিত হচ্ছে। এবারের আয়োজনে শুধুই উপমহাদেশের শাস্ত্রীয়সংগীত নয়, যুক্ত করা হয়েছে ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যালও। কাজাখস্থান থেকে আসছে ৫৮ সদস্যের অর্কেস্ট্রা দল, থাকবে সাসকিয়া রাও-এর চেলো। আজকের সংবাদ সম্মেলনে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন আয়োজকরা।

‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব ২০১৭’ এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার। আবাহনী মাঠে এ উৎসবের ৬ষ্ঠ অধিবেশনে উদ্বোধন পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার জনাব হর্ষবর্ধন শ্রীংলা, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি, আবাহনী লিমিটেডের সভাপতি সালমান এফ রহমান এবং স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী।

কারা থাকছেন এবারের আয়োজনে?

পাঁচদিন ব্যাপী এবারের আয়োজনে কোন দিন কোন কোন শিল্পির পরিবেশনা থাকছে তা একটু দেখে নেয়া যাক।

দিন ১: মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

. এল সুব্রহ্মণ্যন ও আস্তানা সিম্ফনি ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রা
রাজরূপা চৌধুরী (সরোদ)
বিদুষী পদ্মা তলওয়াকার (খেয়াল)
ফিরোজ খান (সেতার)
সুপ্রিয় দাস ও বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয় (খেয়াল)
রাকেশ চৌরাসিয়া (বাঁশি) ও পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায় (সেতার)

দিন ২: বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

অদিতি মঙ্গলদাস ডান্স কোম্পানি (কথক)
বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয় (তবলা)
পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা (সান্তুর)
পণ্ডিত উল্লাস কশলকর (খেয়াল)
উস্তাদ শহীদ পারভেজ খান (সেতার)
অভিজিত কুন্ডু ও বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয় (ধ্রুপদ)
পণ্ডিত রনু মজুমদার (বাঁশি) ও পণ্ডিত দেবজ্যোতি বোস (সরোদ)

দিন ৩: বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয় (সেতার)
বিদ্বান ভিক্কু বিনায়করাম ও সেল্বাগনেশ বিনয়াকরাম (ঘটম ও কাঞ্জিরা)
আবীর হোসেন (সরোদ)
গাজি আবদুল হাকিম (বাঁশি)
পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর (ধ্রুপদ)
বিদুষী কালা রমানাথ (বেহালা)
পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী (খেয়াল)

দিন ৪: শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয় (সরোদ)
উস্তাদ রাশিদ খান (খেয়াল)
পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার (সরোদ)
. মাইসোর মঞ্জুনাথ (বেহালা)
পণ্ডিত যশরাজ (খেয়াল)
সাসকিয়া রাও (চেলো)
পণ্ডিত বুধাদিত্য মুখার্জী (সেতার)

দিন ৫: শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

বিদুষী সুজাতা মহাপাত্র (ওডিশি)
বিশ্বমোহন ভট্ট (মোহনবীণা)
ব্রজেশ্বর মুখার্জী (খেয়াল)
পণ্ডিত কুশল দাস ও কল্যাণজিৎ দাস (সেতার)
পণ্ডিত কৈবল্যকুমার গুরভ (খেয়াল)
পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চোরাসিয়া (বাঁশি)

উৎসবপ্রাঙ্গণে প্রবেশের নীতিমালাঃ

প্রতিবছর বেঙ্গল ক্লাসিক্যাল মিউজিক ফেস্টিভ্যালে আসতে আসতে অনেকেরই মুখস্থ হয়ে গিয়েছিলো এর নিয়মনীতি। আয়োজক এবং দর্শক দু’পক্ষের জন্যেই ছিলো তা সুবিধার। কিন্তু এবার নিয়মিত ভেন্যু থেকে সরে গিয়ে আয়োজনটি স্থান নিয়েছে ধানমন্ডি আবাহনী মাঠে। তাই উৎসবপ্রাঙ্গণের ভেতর ও বাইরের নিয়মগুলোর উপর একটু চোখ বুলিয়ে নিন।

. প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরদিন ভোর ৫টা পর্যন্ত চলবে এই উৎসব।

. প্রতিবারের মতো অনলাইনে নিবন্ধন করে উৎসবে বিনামূল্যে প্রবেশের পাশ সংগ্রহ করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। সীমিত সময়ের জন্য অনলাইনে নিবন্ধন চলবে।

. অনুষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত কিন্তু নিবন্ধন ছাড়া প্রবেশ সম্ভব নয়।

. যাদের হাতে ইন্টারনেট সংযোগ নেই তারা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ধানমন্ডিতে অবস্থিত জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠ (বাড়ি নং ৬০, সড়ক নং ৭/এ, ধানমন্ডি)-এ নিবন্ধন করতে পারবেন।

. অনুষ্ঠানস্থলে নিবন্ধন করা যাবে না।

. প্রতিদিন রাত ১২টায় গেট বন্ধ হয়ে যাবে তবে ভেন্যুর ধারণক্ষমতা অতিক্রম করলে বা অন্য যে কোন বিবেচনায় কর্তৃপক্ষ পূর্ব-ঘোষণা ছাড়াই রাত ১২টায় গেট বন্ধ করে দিতে পারে।

. মাঠে ব্যাগ নিয়ে ঢোকা যাবে না। মাঠে ব্যাগ রাখার কোন ব্যবস্থা থাকবে না। ঢোকার সময় গেটে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা তল্লাশি/ সিকিউরিটি চেক হবে। প্রত্যেককে নিজের সঙ্গে কোন প্রকার শনাক্তকরণ পরিচয়পত্র রাখার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। মাঠে কোন ক্যামেরা (আয়োজকের নিবন্ধিত ও তালিকাভুক্ত ফটো সাংবাদিক ব্যতীত), খাবার, কোন প্রকার পানীয় বা ধূমপানের সরঞ্জাম নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না।

. মাঠে একাধিকবার প্রবেশ ও প্রস্থান করা যাবে না।

. বারো বছরের কম বয়সী শিশুদের সঙ্গে আনা যাবে না।

১০. আবাহনী মাঠে গাড়ি পার্কিংয়ের কোন ব্যবস্থা নেই।

১১. নীতিমালা অনুযায়ী প্রেস এবং মিডিয়ার জন্য সংবাদ সংগ্রহের সব রকম সুবিধা থাকবে।