তার নাম আরিফা পারভীন, কিন্তু মৌসুমী বলেই চিনি আমরা সক্কলে। বাংলা সিনেমার ষাটের দশকের মিষ্টি মেয়ে কবরী অথবা ঝকঝকে সুদর্শনা ববিতার সময় পেরিয়ে এমনকি ঘরের লড়াকু মেয়ে শাবানাও যখন আস্তে আস্তে ব্যাটন ছেড়ে দেওয়ার মতো অভিনেত্রী খুঁজছেন তখন মৌসুমীর আগমন এফডিসির সিনেমা পাড়ায়। শুরু ১৯৯৩তে, ২৫ বছর পেরিয়েও ঠিক এই মূহুর্তেও সিনেমা হলে ঝড় তুলছেন ‘দুলাভাই জিন্দাবাদ’ দিয়ে। আজকের মত আরও বহু বছর তার শুভ জন্মদিন প্রার্থনা করলে আদতে তা বাংলাদেশের সিনেমার জন্যই মঙ্গল। শুভ জন্মদিন মৌসুমী।
মৌসুমী তার দীর্ঘ দুই যুগের ক্যারিয়ারে সমৃদ্ধ করেছেন নিজেকে, আমাদের সিনেমাকেও। তিনটি জাতীয় পুরষ্কার ঝুলিতে ভরেছেন। কেবল নায়িকা হয়েই নায়কের ঝলমলে উপস্থিতির মাঝে পর্দায় নিজেকে হারিয়ে ফেলেননি। এমনকি খুব অল্প বয়সে নিজেই শুরু করেন প্রযোজনা। নায়িকাদের চিরায়ত বিবাহ পরবর্তী জটিলতা? সেসবের কোন আঁচ অন্তত তার বেলায় পায়নি দর্শক। বরং এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে এখনো সক্রিয় সিনেমা পাড়ায়। নাম লিখিয়েছেন পরিচালকের খাতাতে, সেটাও ২০০৩ সালে।
সময়ের স্রোতে এফডিসির অনেক কিছু বদলে গেলেও মৌসুমী বড়পর্দায় বরাবরই নিয়মিত ছিলেন। গ্রাম-বাংলার মানুষের কাছে এখনও তিনি খায়রুন সুন্দরী । যার কষ্ট ছুঁয়ে যায় আজও সবাইকে। প্রথম সিনেমার সেই বলিউডি অনুকরণ? বাংলার লোকে জুহি চাওলাকে ভুলেছে হয়তো, হাস্যোজ্জ্বল মৌসুমীকে নয়। সেকারণেই কিনা, এযুগের নায়িকা মীম আর মৌসুমী সমান্তরালে পর্দা ভাগাভাগি করেন। মানুষ আজও ভালোবাসে, একজন মৌসুমীকে ভালোবাসে।
মৌসুমীর যেসব অভিনয় ছিনিয়ে নিয়েছে দেশের সিনেমার সর্বোচ্চ সম্মান, জাতীয় পুরষ্কার-
মেঘলা আকাশ
ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মৌসুমী। নার্গিস আক্তারের পরিচালিত এই সিনেমার মূল উদ্দেশ্য ছিল এইচআইভি নিয়ে সচেতনতা তৈরি। এক ঝাঁক তারকা শিল্পীর সাথে অভিনয় করে বেশ আলোচিত হন তিনি। সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০০১ সালে।
দেবদাস
মৌসুমীর পক্ষেই বোধকরি সম্ভব, কারণ অভিষেকের ২০ বছরের মাথায় চন্দ্রমুখী চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি দেবদাস সিনেমায়। চমক কোথায় জানেন? সহশিল্পী তালিকায়। সিনেমার অন্য দুই প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন তার থেকে প্রায় দুই দশক জুনিয়র অপু বিশ্বাস ও শাকিব খান। পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম প্রথম এই সিনেমা নির্মাণ করেছিলেন সাদাকালো যুগে। পূননির্মাণও হয় তার হাতেই। সিনেমা মুক্তির সাল ২০১৩। মিষ্টি মেয়ে বলে অভিহিত আরেক যুগের আরেক নায়িকা কবরীও কিন্তু অভিনয় করেছিলেন চন্দ্রমুখী চরিত্রে।
তারকাঁটা
তারকাঁটা সিনেমাটি ছিল ২০১৪ সালের বেশ বড় ধামাকা। পর্দায় ছিলেন মৌসুমী, হাল আমলের ঢাকা অ্যাটাকের ক্রেজ আরিফিন শুভ এবং মীম। অনেকগুলো দুর্দান্ত গান সমৃদ্ধ এই সিনেমা পরিবেশনার দায়িত্বে ছিল জাজ মাল্টিমিডিয়া। প্রযোজক শুক্লা বণিক এবং পরিচালনায় মুহম্মদ মুস্তফা কামাল রাজ। বাকি দুই চলচ্চিত্রের তুলনায় এখানে মৌসুমী ছিলেন পার্শ্ব চরিত্রে এবং সে বছরের জাতীয় পুরস্কারের তালিকা নিয়েও সেকারণেই বেশ আলোচনা তৈরি হয়েছিল।