এক লিংক থেকে আরেক লিংকে ঘুরতে ঘুরতে হারিজ হলো ভৌতিক ও রোহমর্ষক সব ঘটনা। পড়েত পড়তেই কানে আসছে খসখসে, হুটোপুটি-দাপাদাপির শব্দ, বাথরুমে ফোটায় ফোটায় পড়া জলের শব্দ অন্তরাত্না কাপিয়ে দিচ্ছে। রাতও গভীর, ঘরে শুধু ল্যাপটপের নীল আলো; আবছা অন্ধকারে তাকাতে রক্ত হিম করা অবয়বের আভাস। দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম; নড়াচড়াও বন্ধ।
আড়চোখে ধরা পড়ল, আরে এ তো চিরচেনা উইকিপিডিয়ার পাতা। সত্যি উইকিপিডিয়ার পাতা; এতেই আপনি পড়ছেন ভয়ংকর ও রোমহর্ষক সত্যি ঘটনা, যা হার মানাবে স্টিফেন কিংয়ের ভৌতিক গল্পকে কিংবা কেভিন স্পেসি অভিনীত সেভেন সিনেমার বিভৎস নৃশংসাকে। বিগত প্রায় ৫০০ বছরের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা থেকে উল্লেখযোগ্য ১০টি ঘটনা আপনাদের জন্য তুলে ধরা হলো। সাবধান! এগুলো কোনো গাল-গল্প নয়; সবই একদম সত্যি ঘটনা!!!
১. হিন্টারকাইফেক’র খুন
জার্মানির ছোট্ট একটি শহর হিন্টারকাইফেক, ১৯২২ সাল। শহরের ছয়জন লোক দু’ধারী কুঠারের আঘাতে খুন হয়; এবং এ খুনের প্রকৃত কারণ ও খুনীর পরিচয় আদৌ জানা যায়নি। গা ছমছম করা বিষয় হচ্ছে: কৃষক আন্দ্রিয়াস গ্রুবার তার প্রতিবেশিদের জানান, খুনের ঘটনার কয়েকদিন আগেই তিনি নিকটবর্তী বন থেকে ওই খামার পর্যন্ত পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছিলেন এবং ছাপগুলো ছিল শুধুই খামারের দিকে। শুধু তাই নয়, খামারটি ভুতুড়ে এমন কথা বলে কাজের মেয়েটি খুনের ঘটনার ছয় মাস আগে কাজ ছেড়ে পালিয়ে যায়।
২. সডার শিশুদের অন্তর্ধান
পশ্চিম ভার্জিনিয়া, যুক্তরাষ্ট্র; ১৯৪৫। বড়দিনের সন্ধ্যায় জর্জ ও জেনি সডারের বাড়িতে আগুন লাগে। চার সন্তানসহ তারা দুইজন আগুন হাত থেকে রেহাই পেলেও আগুনের শিকার বাকি পাঁচ সন্তানের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। মিস্টার ও মিসেস সডারের বিশ্বাস ছিল তাদের পাঁচ সন্তান বেঁচে আছে; তাদের বিশ্বাস এতটাই দৃঢ ছিল যে সন্তানদের খোঁজে তারা রীতিমত বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দিয়ে পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। আশির দশকের শেষে জেনি সডারের মৃত্যুর অবধি ওই বিলবোর্ডটি নামানো হয়নি। এ ঘটনাটিকে ঘিরে প্রচুর রহস্যজনকআলোচনা-সমালোচনা ও ঘটনাদি ঘটলেও সবচেয়ে রহস্যজনক ছিল ১৯৬৭ সালে সডার পরিবারের ঠিকানায় আসা একটি চিঠি: একটি ছবিসহ চিঠির লেখক নিজেকে সডারদের হারিয়ে যাওয়া সন্তান বলে দাবি করেন।
সডার পরিবারের সর্বশেষ জীবিত সদস্য সিলভিয়া এখনও বিশ্বাস করে যে তার সহোদর ভাই-বোনেরা আগুন থেকে রেহাই পেয়েছিল।
৩. ডেইটলভ গিরিপথের রহস্য
ডেইটলভ গিরিপথ, উত্তর উরাল পর্বত, ১৯৫৯। নয়জন অভিজ্ঞ পর্বতারোহী রহস্যজনকভাবে মারা যায়। তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, ছয়জন মারা যায় হাইপোথার্মিয়াতে, কিন্তু বাকিদের মধ্যে মস্তিষ্কে ক্ষত ও খুলিতে ফাটলসহ নানাবিধ শারিরীক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। এমনকি এদের মধ্যে একজনকের জিহ্বা খুঁজে পাওয়া যায়নি!
ঘটনার পর আজও এ বিষয়ে নিত্য নতুন ব্যাখ্যা হাজির করা হয়। তবুও পর্বতারোহীদের তাঁবুগুলো ভেতর থেকে কেন কাটা হয়েছিল, অথবা তাঁবুগুলো থেকে বেরিয়ে যাওয়া অদ্ভুত পায়ের ছাপ, কিংবা কোথা থেকে এল সেই ক্যামেরা যা পর্বতারোহীদের কারও কাছেই ছিল না; এ সব চাক্ষুষ বিষয়ে কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা দাঁড়া করানো যায়নি।
৪. এলিসা লাম’র মৃত্যু
সেসিল হোটেল, লস অ্যাঞ্জেলস, যুক্তরাষ্ট্র, ২০১৩। হোটেলের পানির রঙ কালচে, সেই সঙ্গে বিদঘুটে গন্ধ। হোটেলের ছাদে থাকা পানির ট্যাঙ্কে গিয়ে দেখা গেল হোটেলেরই অতিথি ২১ বছর বয়সী এলিসা লাম’র নগ্ন দেহ পানিতে ভাসছে, এবং পাশেই ভাসছিল তার গায়ের জামা। এর আগে সপ্তাহখানেক ধরে নিঁখোজ লামের পরিবার, হোটেল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়িয়েছিল এলিসাকে।
রহস্যজনক এ মৃত্যুর পেছনে কোনো ধরনের শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ কিংবা আত্নহত্যার আলামত পাওয়া যায়নি। তাহলে কিভাবে মারা গেল লাম? ছাদের দরজা সব সময় বন্ধ থাকে, আর দরজা খোলার চাবি ও পাসওয়ার্ড থাকে হোটেলেরই নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে। ছাদ থেকে পানির ট্যাঙ্কে পৌঁছাতে মই ব্যবহার করতে হয়; আর ট্যাঙ্কের ঢাকনাগুলোও বেশ ওজনদার ও শক্ত করেই আটকানো থাকে। এতটা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে কিভাবে সে হোটেলের ছাদে গিয়েছিল? কেন গিয়েছিল?
সবচেয়ে গা ছমছমে বিষয়টি হচ্ছে লামের অন্তর্ধানের আগে সেসিল হোটেলের এলিভেটরের একটি ভিডিও ফুটেজ; এতে লামকে বেশ কিম্ভুতকিমাকার, অস্থির দেখাচ্ছিল। কি ছিল সেই অস্থিরতার কারণ? খুনের প্রকৃত কারণের সঙ্গে এই ভিডিও ফুটেজ ঘিরে রহস্যের এখনও কোনো কুলকিনারা পাওয়া যায়নি। রহস্য যদি আপনার আগ্রহের বিষয় হয়, এবং আপনি ডকুমেন্টারি দেখতেও ভালোবাসেন; তবে দেখুন – এলিসা, দ্য ডকুমেন্টারি।
৫. এইচ এইচ হোমস
শিকাগো ,যুক্তরাষ্ট্র, ১৮৯১-৯৪। কাগজ-কলমের তথ্য অনুসারে, ড. হেনরি হাওয়ার্ড হোমস বিশ্বের প্রথম সিরিয়াল কিলার। খুন করার জন্য শিকাগো শহরে তিনি গড়ে তুলেছিলেন আস্ত একটি হোটেল, বর্তমানে যা ‘খুনের প্রাসাদ’ নাম পরিচিত। ওহ হ্যাঁ, হোটেলটির নকশাও তিনি নিজ হাতেই করেছিলেন। হোমস মোট ২৭টি খুনের কথা স্বীকার করলেও তদন্তকারী দলের অভিমত যে প্রকৃত সংখ্যা কমপক্ষে ২০০ হবে। সহজাত ঠাণ্ডা মাথার এই খুনি মৃত্যুদণ্ডের আগেও ছিল অসম্ভব ঠাণ্ডা। হোমস নিজেই নিজেকে জন্মগত শয়তান মনে করতো, এবং তা ভেবে সে অনুভব করত নারকীয় সুখ। ‘খুনের প্রাসাদে’ হোমসের নারকীয় সেই সব কর্মকাণ্ড বীভৎস সব সাইকো সিনেমাকেও হার মানায়!
৬. এলিজাবেথ বাথোরি
তৎকালীন কিংডম অব হাঙ্গেরি, ১৫৯০-১৬০৯। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বলছে, কাউন্টেস এলিজাবেথ বাথোরি বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি খুন করা নারী সিরিয়াল কিলার। নৃশংস কায়দায় সে ৬৫০ জনেরও বেশি নারী, কিশোরী ও কন্যা শিশুকে হত্যা করেছিল। হ্যাঁ, সংখ্যাটি ছয়শত পঞ্চাশ জনেরও বেশি! বিশ্ব রেকর্ডধারী এ খুনি মধ্যযুগীয় সামন্তবাদের নোংরামি, ক্ষমতার জোরে শুধু পারিবারিক পদবীর কারণে ফাঁসির দড়ি থেকে রক্ষা পায়; তাকে শুধু একটি প্রাসাদে মৃত্যু অবধি আটকে রাখা হয়েছিল শাস্তি হিসেবে।
৭. ব্ল্যাক ডালিয়া খুন
লস এঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৪৭। ২২ বছর বয়সী এলিজাবেথ সর্টের মৃতদেহ লেইমেন্ট পার্কে পাওয়া গিয়েছিল, ছিন্নভিন্ন-ক্ষতবিক্ষত অবস্থায়। বীভৎস এ খুনের ঘটনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্ট চাঞ্চল্য ও গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যমূলক অতিরঞ্জনে তিনি ব্ল্যাক ডালিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেন। পুলিশ কিংবা তদন্তকারী সংস্থাগুলো এ ঘটনার আদৌ কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি। খুনের কয়েক দিন পর জনৈক ব্যক্তি নিজেকে খুনি হিসেবে স্বীকার করে। পরবর্তীতে একইভাবে আরও ৫০ জনেরও অধিক ব্যক্তি নিজেকে খুনি হিসেবে স্বীকার করলেও পুলিশ কিন্তু কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উইকিপিডিয়ার পাতাজুড়ে এ ঘটনার বিশদ বিবরণ দেওয়া আছে।
৮. জনি গচ
আইওয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৮২। খবরের কাগজ বিলি করার পথেই হাওয়া হয়ে যায় জনি গচ। ধারণা করা হয়েছিল, সে অপহৃত হয়েছে। জনি গচের মা, নরিনের বিশ্বাস ছিল যে তার ছেলে জীবিত। নরিন বলত, অন্তর্ধানের পর তার ছেলেকে ওকলাহোমায় দেখা গেছে; দুই জন লোক তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার আগে সে সাহায্যের জন্যে চেঁচাচ্ছিল। ঘটনাটি এ অবধি তেমন একটা ভৌতিক মনে না হলেও সবচেয়ে রোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটে জনি গচের অন্তর্ধানের ১৫ বছর পর। নরিন গচের দাবি, ১৯৯৭ সালে রাত আড়াইটায় তার ঘুম ভাঙ্গে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে। দরজা খুলে দেখে ২৭ বছর বয়সী জনি, এবং তার সাথে একজন অপরিচিত ব্যক্তি। তারা দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আলাপ করে, এবং তাদেরকে এরপর আরও কখনও দেখেনি নরিন। ওহ হ্যাঁ, আপনি যদি ডকুমেন্টারি দেখতে ভালোবাসেন, তবে দেখে নিতে পারেন এ ঘটনাটি নিয়ে তৈরি ডকুমেন্টারি-হু টুক জনি?
৯. সমারটন রহস্য
সমারটন, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, ১৯৪৮। সমারটন সমুদ্রতীরে একজন অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ পাওয়া গিয়েছিল; আজও সে ব্যাক্তির পরিচয় মেলেনি। কিন্তু অজ্ঞাত ব্যক্তিটি একগাদা ব্যাখ্যাতীত সূত্র রেখে গেছেন; যার মধ্যে সবচেয়ে অদ্ভুতটি হচ্ছে রূবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়ামের শেষ পাতাটি যা তার পকেটে পাওয়া গিয়েছিল। ওতে লেখা ছিল ‘তামাম সুদ’- অর্থাৎ ‘সমাপ্ত’ বা ‘শেষ’। সমারটন রহস্য তথা তামাম সুদ ঘটনাটিকে অস্ট্রেলিয়াতে এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় রহস্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১০. রোয়ানোক কলোনি
আমেরিকান হরর স্টোরি’র সুবাদে আপনি হয়তো ইতোমধ্যেই রোয়ানক কলোনি নামটির সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু যদি না হয়ে থাকেন অবশ্যই পরিচিত হয়ে নিতে পারেন নিচের লেখাটুকু পড়ে।
উত্তর ক্যারোলাইনা, যুক্তরাষ্ট্র, ১৫৯০। রোয়ানক দ্বীপে ১৫৮৫ সালে ব্রিটিশ কলোনি স্থাপন করেন ওয়ালটার র্যালে। ইঙ্গ-স্প্যানিশ যুদ্ধের পর ১৫৯০ সালে রেইলে’র বন্ধু ও ব্রিটিশ দলপতি জন হোয়াইট দ্বীপটিতে ফিরে এসে দেখেন সেখানে কোনো মানুষ নেই। দ্বীপের অধিবাসী ৯০ জন পুরুষ, ১৭ জন নারী এবং ১১ জন শিশুর কারোরই কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কোনো সূত্রও পাওয়া যায়নি- কি ঘটেছিল, কিভাবে ঘটেছিল, কেন ঘটেছিল? কিংবা অধিবাসীদের কারোরই কোনো চিহ্ন নেই কেন? শুধু একটি মাত্র সূত্রই পাওয়া যায়, আর সেটি হচ্ছে দ্বীপের একটি বোর্ডের ওপর লেখা ‘ক্রোয়াটোয়ান’।