মৃত্যু থেকে ফিরে আসছে উলভারিন!

২০১৩ তে উলভারিন তার হিলিং পাওয়ার হারায়। প্রচন্ড দুর্বলতা জেঁকে বসে তার পুরো শরীরজুড়ে। জীবনের সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থা নিয়েও সে এক্স মেন, অ্যাভেঞ্জারসের সদস্য  হিসেবে অ্যাডামেন্টিয়ামের ধারালো থাবায় শত্রু ঘায়েল করতে পিছপা হয়নি।
৩ বছর হয়ে গেলো লোগান নেই। যাদেরকে সে ঠিকমতো চিনতোও না, এমন অনেক মানুষের সাহায্যে জীবন উৎসর্গ করেছিলো এই সুপারহিরো। সেই উলভারিনকেই আবারো কমিক বুকে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে মারভেল কমিক্স। মারভেলের চিফ এডিটর অ্যাক্সেল আলোনসো বলেন, “ আসলেই লোগান মৃত্যু থেকে ফিরে আসছে। ৩ বছর মারভেলের দুনিয়ায় না থাকার পর লোগান এবার আসছে জমাট অ্যাকশন ও ধারালো নখের আঁচড়ে সব ছিন্নভিন্ন করে দিতে। মৃত্যু থেকে সে কিভাবে ফিরলো, কেন ফিরলো এবং কি করে ইনফিনিটি স্টোন তার হাতে এলো এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই সাজানো হয়েছে এবারের গল্প।”

কি আছে এই নতুন উলভারিনে?

মারভেল ইউনিভার্সে উলভারিনের মৃত্যু সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিলো লরার মনে। লোগান ও লরার জীবনে ছিলো কিছু অদ্ভুত ভাগ্যের মিল। কারো সাথে পশুর মতো ব্যবহার করলে, কাউকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে সেই ব্যক্তিটির কেমন লাগে সেটা লোগানের চেয়ে ভালো আর কেইবা জানে! লরার সাথেও হয়েছে একই ঘটনা। তাই লরার কষ্টটা শুধু লোগানই বুঝতো। লোগানই প্রথম ব্যক্তি যে লরাকে শুধুই একজন মানুষ হিসেবে দেখেছিলো। অস্ত্র বা পশু হিসেবে নয়। লরাকে যা হিসেবে তৈরি করা হয়েছিলো, সে যে তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু করার সামর্থ্য রাখে- এই বোধটি লরার মধ্যে জাগিয়েছিলো উলভারিন। তাই লোগানের মৃত্যুর পর লরা থেমে যায়নি। লরা উলভারিনের মতো কস্টিউম ধারণ করে তার দেখানো পথেই এগোতে থাকে।

তো লরার কি হবে তারপর?

উলভারিনের কস্টিউমে লরা

নিজেকে সে আবার X-23 হিসেবে দেখতে চাইবে না স্বাভাবিকভাবেই। কেননা, এরই মধ্যে আসল এক্স-মেন দলের সাথে কাজ করে সে যেই দক্ষতা অর্জন করেছে, এই অবস্থা থেকে আবার X-23 চরিত্রে ফিরে যাওয়া গল্পে নতুন কিছুই যোগ করে না। তাই ইউনিভার্স 616 তে লরাকে সম্পূর্ণ নতুন কোন রূপে দেখার সম্ভাবনাই বেশি। তবে সুখবর হচ্ছে কমিক্সের দুনিয়ায় স্পাইডারম্যান একাধিক, দেখা গেছে একাধিক হাল্কও। তাই, লরার মধ্যে দ্বিতীয় উলভারিনের আশাও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

কিন্তু শুধুই লরার গল্পই উলভারিনের ফিরে আসার একমাত্র কারণ নয়। তরুণ লোগান ইউনিভার্স ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ওল্ড ম্যান লোগান এর চরিত্রকে ঘষামাজা করে গড়ে তুলা হয়েছিলো আগেই । কেইট বিশপ (হকআই) এবং বুড়ো স্টিভ রজার্সের সাথে খানিক ঠোকাঠোকির পর ওল্ড ম্যান লোগান সহজেই কমিক বুক ফ্যানদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। তার সাথে ফিরে আসা লোগানের বোঝাপড়াকে মারভেল নতুন গল্পে কিভাবে ব্যবহার করে সেটিও দেখার বিষয়।

তাই, আসল লোগান ফিরে আসলে এই বুড়ো লোগানের কি হবে? – মিলবে এই প্রশ্নের উত্তরও।

ওল্ড ম্যান লোগান। যেন কোন ওয়েস্টার্ন সিনেমার ক্লিন্ট ইস্টঊড!

যেহেতু ওল্ড ম্যান লোগান বেশ জনপ্রিয় এবং দুই লোগানের মোলাকাত হবার মতো একটা সম্ভাবনাও আছে, তাই মারভেল তাকে খুব সহজেই মেরে ফেলার কথা না। তাছাড়া তরুণ লোগানের মনে থাকবে নিজের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা প্রশ্ন, যার উত্তর শুধু ওল্ড ম্যান লোগানেরই জানা। আর নিজের তরুণ সংস্করণ কে বিভিন্ন সাবধানবাণী দিয়ে সাহায্য করার জন্য ওল্ড ম্যান লোগানেরও খুব একটা অনীহা থাকার কথা না।

লোগান আর জিন গ্রে এর মিলন কি অবশেষে হবে?

এইবার কি পারবে তারা এক হতে?

নতুন উলভারিন বাজারে আসার খবর শুনার পর থেকে ভক্তদের মনে এই আরেকটি বিশাল প্রশ্ন। এক্স-মেন প্রেমী হয়ে থাকলে লোগান আর জিন গ্রে এর মধ্যকার রোমান্টিকতা নিয়ে আমাদের সবারই কমবেশি জানা আছে। স্কট সামারের সাথে জিনের বিয়েটাই তাদের সম্পর্কের পথে সবসময়ের বাঁধা। যেহেতু সাইক্লপস এখন মৃত, তাই লোগান ও জিনের খুব সহজেই সম্পর্কে জড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। যাকে দূর থেকেই ভালোবেসে গিয়েছিলো সবসময় লোগান, অবশেষে তাকে নিজের করে পাবার সুযোগ পাবে সে।

লোগানের কাছের বন্ধুদের বাইরেও, পুরো মারভেল দুনিয়াটাই আবার কেঁপে উঠবো উলভারিনের পুনার্বিভাবে। লোগান যদিও নিজেকে সবসময় একা মানুষ হিসেবে দাবি করে, কিন্তু প্রয়োজনে কাউকে ফিরিয়ে দেয়নি সে কখনো। যখন লুক কেইজ নতুন অ্যাভেঞ্জারস দের ফিরিয়ে নিয়ে আসে Siege এর পর, প্রথম সে লোগানের কাছেই গিয়েছিলো। সাইক্লপসও নিজের প্রয়োজনে লোগানের কাছেই যেতো। শুরু থেকেই লোগান এক্স-মেন এর গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য।

লোগানের ফেরার সাথেই সাথেই তার বন্ধু-পরিবারের মনে থাকবে অনেক প্রশ্ন। “ কতদিন হলে ফিরলে?”, “কি হয়েছিলো তোমার?” এধরনের প্রশ্ন তো থাকবেই, সেই সাথে তার ছেলে ড্যাকেন এবং এবং আগের বন্ধবী স্টর্ম এর কাছেও নিজের অন্তর্ধান থেকে ফিরে আসা নিয়ে একগাদা উত্তর দিতে হবে লোগানকে। এসবই তার পুনার্গমনকে আরো বিতর্কিত করে তুলবে এই ইউনিভার্স 616 এ।

তাই, মারভেল কমিক ভক্তদের আবার একটু নড়েচড়ে বসার সময় হয়েই এলো। আর হবেই বা না কেন? লম্বা ওভারকোট, কপিরাইটেড চুল-দাড়ি, মুখে মোটা সিগার, ডগ ট্যাগ এই সবকিছু মিলিয়ে উলভারিনের মতো মন জয় করা সুপারহিরো তো আর বারবার মৃত্যু থেকে ফিরে আসে না!