একজন মেসির ঝলকে উতরে গেলো আর্জেন্টিনা

ড্র করলে হয়তো বিশ্বকাপ মূল আসরের মুখ দেখা হবে না, জিতলেও আছে বাদ পড়ার সম্ভাবনা-এমনি কঠিন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়েছিলো আর্জেন্টিনা। সেই সাথে ইকুয়েডরের মাঠে ৯ হাজার ফুট উঁচুতে খেলার চ্যালেঞ্জ। ঝামেলা এখানেও। এই মাঠে আর্জেন্টিনার সর্বশেষ জয় পেয়েছিল ১৬ বছর আগে। বিশ্বকাপ কেন, অংশ নেওয়ার লাইসেন্স পাওয়াটাই যেন অনিশ্চিত। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো বাছাইপর্ব থেকে ছিটকে যাবার ভয়টাই ছিল সম্ভাব্য। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয় বটে, খেলা শুরু হতে না হতেই ৪০ সেকেন্ডের মাথায় ইকুয়েডরের গোল!! এবার আর দেরি কেন। সেই কাল রাত থেকে উদ্ধার করতে হাল ধরেন মেসি। জাদুকরের জাদুর জন্য ঠিকঠাক মঞ্চ। অবশেষে উদ্ধার পেল আর্জেন্টিনা, একজন মেসির ঝলকে।

খেলার বাকি গল্পে নায়ক শুধু মেসি। ১২ মিনিটে প্রথম গোলটি করেন মেসি। নিজেই ড্রিবল করে বলটি বাড়ালেন বা প্রান্তে থাকা ডি মারিয়ার দিকে। এগিয়ে গিয়ে আবার বক্সের ভিতরে নিজেই পাস রিসিভ করলেন। তারপর বা পায়ের সেই চেনা শটে গোল। গোল করে এক মুহুর্তও অপেক্ষা না করে বলটি হাতে নিয়ে ছুটলেন সেন্টারের দিকে। খুব বেশি উদযাপনের বালাই নাই। খেলা তো তখন মাত্র শুরু! ড্রয়ের  হিসাব সেখানে কোন মানেই রাখে না।

খেলার ২০ মিনিটের সময় ডিফেন্ডারের ছোট্ট ভুলে ডি বক্সের ঠিক আগে বল পেয়ে যান মেসি। একাই বক্সে ঢুকে জোরালো শটে ক্রসবারের নিচে দিয়ে বল পাঠিয়ে দিলেন জালে। এবার অবশ্য উদযাপন চেপে যাননি। বরং এরপর ম্যাচে আর্জেন্টিনার শরীরী ভাষাই বদলে যায়। কেবল না একটু খানি হালে পানি পায় তারা। এবার বড় জয়ই তাদের মূল লক্ষ্য। যেকোন মুহূর্তে ২-২ হয়ে গেলে ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল।

দ্বিতীয়ার্ধে ইকুয়েডোরের গুছানো আক্রমণের বিপরীতে আর্জেন্টিনাও তৃতীয় গোলের জন্য মরিয়া হয়ে হানে একের পর এক আক্রমণ। চোখের পলক ফেলতে না পারা টানটান উত্তেজনার খেলা বুঝি একেই বলে। তবে, ৬২ মিনিটে বক্সের কাছে হঠাৎ বল পেয়ে যান মেসি, আর মুহূর্তের মধ্যে আশপাশ থেকে ধেয়ে আসা ৩ জন ডিফেন্ডারের প্রতিরোধ ঠেকিয়ে, সবাইকে বোকা বানিয়ে গোলকিপারের মাথার উপর দিয়ে নিখুঁত চিপ শটে বল পাঠিয়ে দেন জালে। হ্যাটট্রিকের সাথে সাথে দলের জন্য বড় জয়ও সুনিশ্চিত হয় অবশেষে।

দিনশেষে খেলাটা মেসিরই ছিল। অবশ্য এমন দিন তার জন্য নতুনও না। ক্লাব হোক আর জাতীয় দল, সাফল্য তাকে কখনোই ছেড়ে যায়নি। কিশোর বয়স থেকে সবাইকে চমকে দেয়া এই মেসি ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় জুড়েই নিজের দায়িত্ব পালনে অনন্য ছিলেন। ৩০ বছর বয়সে অধিনায়ক হিসেবে যেভাবে জাতীয় দলের হাল ধরার কথা, মেসি এখন ঠিক তাই করছেন। এবং এ কাজেও যে তিনি অনন্য, শেষ ম্যাচে তার ভূমিকা সেই বিশ্বাসকেই আরও সুদৃঢ় করলো। তবে কোয়ালিফাইতো মেসি পার করালেন! মূল পর্বে কি হবে?