মাস শুরুর ঠিক আগেই দর্শক উপভোগ করেছে খাঁচা। শুরুতে ঢাকা অ্যাটাক, শেষে থাকছে ডুব। হল ফেরত দর্শকদের চোখমুখ বলছে তারা বেশ ভালোই উপভোগ করেছেন ঢাকা অ্যাটাক, অপেক্ষায় আছে কখন দেখবেন ডুব। তবে মাঝের সময়টিতে কি বিরতি থাকছে? না, তা হচ্ছে না; অন্তত শরত বিধৌত আবহাওয়ার এ মাসটিতে। ডুব দেখার আগেই দর্শকরা উপভোগ করতে পারবেন গহীন বালুচর; মুক্তি পেতে যাচ্ছে আগামী ২০ অক্টোবর।
মাত্র দিন দশেক বাকি; গহীনে বালুচর দর্শক-সমালোচকদের আগ্রহের বালুচরের কতটা গহীনে গেল? ভিডিও শেয়ারিং সাইটের উতুঙ্গ জনপ্রিয়তার যুগে সিনেমার জনপ্রিয়তা ও আশু সাফল্যের মাপকাঠি ইউটিউব জানান দিচ্ছে, গহীনে বালুচর এখনও দর্শক-সমালোচকদের আগ্রহের পারদে আগুন ধরাতে পারেনি; অন্ততপক্ষে অপর দুই চলচ্চিত্র- ঢাকা অ্যাটাক ও ডুব’র তুলনায় ম্লান বলা যায়। চলচ্চিত্রটির ট্রেইলার ইউটিউবে এসেছে অনেক আগেই, গত মাসের ২৩ তারিখ। প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ট্রেইলারটির ভিউ এখনো লাখের ঘর ছুঁতে পারেনি। তারও এক সপ্তাহ আগে ইউটিউবে ছাড়া হয়েছিল একটি গান- ভালোবাসায় বুক ভাসাইয়া। গানটির ভিউ সংখ্যা লাখের ঘর পেরোলেও আগ্রহের বালুচরে আটকে আছে, বেশি দূর এগোতে পারছে না। সিনেমাটির আরেক গান, তারে দেখি আমি রোদ্দুরে ছাড়া হয়েছে ট্রেইলারের ছাড়ার সপ্তাহ খানেক পর; এই গানটিকে লাখের ঘর ছুঁতে বহুদূর পাড়ি দিতে হবে।
গহীন বালুচর’র ট্রেইলার ও দুটো গান থেকে ধারণা নেওয়া যাক সিনেমাটি কেমন লাগবে রূপালী পর্দায়, যদিও সেটা নিছকই অনুমান মাত্র। ঝকঝকে রং, সুন্দর লোকেশনে সুন্দর কস্টিউম, আবহমান বাংলার অনিবার্য অনুষঙ্গ নদী ও নৌকার ব্যবহারের সাথে ক্যামেরার সুন্দর কাজ- বিষয়বস্তুর এই সকল দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় সিনেমাটি দৃষ্টি নন্দন হবে। যদিও ট্রেইলার থেকে এটা স্পষ্ট নয় যে, এসবের যথার্থ চলচ্চিত্রিক উপস্থাপন হয়েছে কিনা? গল্প, চিত্রায়ণ, অভিনয়, পরিস্ফুটন –অর্থ্যাৎ সব উপকরণের সামঞ্জ্যপূর্ণ রসায়নে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র হয়ে উঠেছে কিনা? ট্রেইলার বলছে, চর দখলকে ঘিরে এগিয়ে গেছে সিনেমার মূল গল্প, আর মূল গল্পের সমান্তরালে বয়ে গেছে প্রেমের গল্প। প্রেমের গল্পের গতি-প্রকৃতিও সরল নয়; সিনেমার চিরাচিত ত্রিভুজ প্রেম। বাড়তি সংকট হিসেবে নায়ক-নায়িকার প্রেমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় চর দখলকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থানে থাকা সুবর্ণা মুস্তাফা ও রাইসুল ইসলাম আসাদ।
দুটো গানে নায়ক একজন হলেও নায়িকা দুইজন। নায়ক আবু হুরায়রা তানভীর আছেন দুই গানেই। কিন্তু ভালোবাসায় বুক ভাসাইয়া গানে তার বিপরীতে জান্নাতুন নূর মুন, আর তারে দেখি আমি রোদ্দুরে গানে তার বিপরীতে আছেন নীলাঞ্জনা নীলা। দুই জনের মধ্যে সম্ভবত বিজয়ী নায়িকা মুন। মুন-তানভীর তাদের গানে দুজন দুজনকে বুক ভাসিয়ে ভালোবাসে। কিন্তু নীলা তার গানে তানভীরকে রোদ্দুরে দেখে, ছায়ায় দেখে, কিন্তু তানভীর তাকে সেভাবে দেখে কই? সিনেমাটির মূল তিন চরিত্রে তিন নবাগতকে দেখা গেলেও, বাকি চরিত্রগুলোতে নেয়া হয়েছে পুরনো পরীক্ষিতদেরই; সুবর্ণা মুস্তাফা, রাইসুল ইসলাম আসাদের সাথে আছেন ফজলুর রহমান বাবু, আফরোজা বানু, জিতু আহসান, রুনা খান, শর্মী মালা, লুৎফর রহমান জর্জ|
মুক্তি পূর্ববর্তী প্রচার ও দর্শক আগ্রহের পালে তেমন হাওয়া না লাগলেও হয়তো মুক্তির পর বেশ আলোচনা জন্ম দিতে পারেগহীন বালুচর। কারণ-চুম্বন! হ্যাঁ চুম্বন দৃশ্য রয়েছে সিনেমাটিতে- নান্দনিক ও আবেগঘন। দুটো গানে নায়ক-নায়িকার ঠোঁটে ঠোঁট মেলানোর দৃশ্য আছে। নাতিদীর্ঘ সময় ধরে দ্বিধা-দ্বন্ধের দোলাচালে বেশ বিচলিত হয়েও ভালোবাসার আবেগঘন গাঢ়ত্বে তানভীর-মুন নৌকায় ঠোঁটে ঠোঁট মেলায়। বাকিটুকু থাক বড় পর্দায় দেখার জন্য। ছোট পর্দার প্রতিষ্ঠিত পরিচালক বদরুল আনাম সৌদ । সরকারি অনুদানে নির্মিত গহীন বালুচর-ই বড় পর্দায় তার প্রথম কাজ। এর আগেও ছোট পর্দার অনেক পরিচালকই বড় পর্দায় কাজ করেছেন। সাফল্য ধরা দিয়েছে কেবল গুটিকয়েকের হাতেই। বাকিদের বদৌলতে এফডিসির লোকজনের বাঁধা বুলি দাঁড়িয়ে গেছে, নাটকের লোকদের দিয়ে সিনেমা হয়। সৌদ সেই গুটিকয়েকদের দলে ভিড়বেন, নাকি এফডিসির লোকদের খুশি করবেন, সেটা বোঝা যাবে সিনেমা মুক্তির পরে। ফলাফল যাই হোক না কেন, ঢাকাই সিনেমার দর্শকদের জন্য একটি মনে রাখার মতো হয়েই দেখা দিয়েছে চলতি অক্টোবর মাস।