বড় হয়ে কি হতে চান?

ছোটবেলায় বাবা-মায়েরা প্রায়ই ঠাট্টাচ্ছলে আমাদের জিজ্ঞেস করতো, “তুমি বড় হয়ে কি হবে?”। চার-পাঁচ বছরের বাচ্চার কাছে এই প্রশ্নের উত্তরের কোন সীমা-পরিসীমা নেই। যখন যা ভালো লাগে, তখন তাই হতে চাওয়ার নামই তো ছোটবেলা। কখনো শুধুই “হ্যান্ডস আপ” বলার জন্য পুলিশ হতে চাওয়া, খলনায়কদের বেদম পেটানোর সুযোগ পাওয়া সিনেমার নায়ক হতে চাওয়া কিংবা আইসক্রিমের কমতি ঠেকাতে আইসক্রিমওয়ালা হতে চাওয়া- আর সেসব অদ্ভুত উত্তর শুনে বাবা-মার বন্ধুদের হাসাহাসি। অথচ ঠিক এই সহজ প্রশ্নটার উত্তর খুঁজে পাওয়াই হয়ে দাঁড়ায় বড়বেলার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

পড়াশুনা শেষে যেকোন একটা ক্যারিয়ার বেছে নাও এবং সেটাতে জীবন গড়ে তুলতেই হবে এই আশার পেছনে অবিরাম দৌঁড়াতে থাকাই কি জীবন? চলার পথের নানা প্রতিকুলতা, হতাশা, ব্যর্থতা এই দৌড়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায় নানান সময়ে। নিজের অজান্তেই আমরা হয়তো নিজেকে একদিন এই রেসের বাইরে আবিষ্কার করবেন।

অ্রাডামের বড় হওয়ার গল্পটা কিন্তু অসাধারণ!

কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, আপনি প্রত্যেকটি সফল মানুষের জীবনের দিকে তাকালে দেখবেন, তারা আজ যেখানে আছেন, সেখানে যে তারা পৌঁছাতে পারবেন সেটা তারা নিজেরাও কখনো ভাবেননি। তারাও জীবনেও অনেকবার রেসের মাঠের বাইরে চলে গেছেন, আবার ফিরেও এসেছেন। প্রতিটি সফল গল্পের শুরুতেই সঠিক পথে নিয়েছেন খুব ছোট্ট কিছু পদক্ষেপ, যা তাদের নিয়ে এসেছে আজকের অবস্থানে।

নাসার অ্যাডাম স্টেলজনারের কথাই ভাবুন, তিনি বর্তমানে মার্স রোভার ল্যান্ডিং পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। এ কাজের আগে তিনি সানফ্রান্সিসকোর এক সংগীত স্কুলের ড্রপআউট ছিলেন। অথচ অ্যাডামের এই ড্রপআউট থেকে মঙ্গল গ্রহ চড়ে-বেড়ানোর গল্পটার শুরু কিন্তু একদম হঠাৎ করেই। এক রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই তার মনে প্রশ্ন এলো, “তারাগুলো আস্তে আস্তে জায়গা পাল্টাচ্ছে কেন!”

কেন এমনটা হচ্ছে তা জানার জন্যে তিনি জ্যোতিবিজ্ঞানের ক্লাস করা শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই আগ্রহের পারদটা পদার্থবিজ্ঞানের দিকে গড়াতে শুরু করে। ইঞ্জিনিয়ারিং মেকানিক্সে পিএইচডি শেষ করে তিনি নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরিতে যোগ দেন। তার কাছে অদ্ভুত এবং ভয়াবহ জটিল সব সমস্যার সমাধান চাইতে থাকে নাসা। তিনিও সেগুলোর সমাধানের জন্য দিনরাত এক করে কাজ করতে শুরু করেন। পরবর্তীতে এই ল্যাবরেটরির একটি নতুন ডিপার্টমেন্টে কাজ শুরু করেন তিনি, যা শুধুমাত্র বিভিন্ন রোভারের ল্যান্ডিং নিয়ে কাজ করে। বর্তমানেও তাই করে যাচ্ছেন। এই সবকিছুর শুরু সেই রাতে যেদিন অ্যাডাম আকাশের দিকে তাকিয়েছিলেন এবং একটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য নিজের দীর্ঘ যাত্রটুকু শুরু করেন।

আপনি ক্যারিয়ার নিয়ে যে চাপ সহ্য করছেন সেটা মোকাবেলার জন্য অ্যাডামের গল্পটা ভাবুন এবং একইভাবে নিজেকে প্রশ্ন করুন, “আমার সবার আগে কি করা উচিত?” কিংবা “কি নিয়ে আমি আরো জানতে চাই?”। এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই আপনাকে জানিয়ে দেবে আসলে আপনি কি করতে ভালোবাসেন এবং কি করতে চান।

আপনার আইকনদের ফলো করুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে

আপনি যদি বুঝতে না পারেন প্রথম পদক্ষেপে আপনার কি করা উচিত, তাহলে প্রক্রিয়াটার শুরু হতে পারে এভাবে-

আপনি যা করতে ভালোবাসেন, সেই কাজের সাথে যুক্ত মানুষদের অনুসরণ করুন

ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যমের জোয়ারের এই যুগে যেকোন ইন্ডাস্ট্রি বা কোম্পানির ভেতরের মানুষ না হয়েও খুব সহজেই পছন্দের কাজের জায়গাগুলো সম্বন্ধে জানা যায়। আপনি যে কাজ করতে পছন্দ করেন, সেগুলোর সাথে সম্পৃক্ত মানুষদের ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে ফলো করার মাধ্যমে আপনিও তাদের কর্মজীবন ও চিন্তাভাবনার জগৎ সম্বন্ধে জানতে পারেন। এছাড়াও পছন্দের কাজের সাথে যুক্ত হতে হলে কি পড়তে হবে, জানতে হবে, কোন ধরনের দক্ষতা অর্জন করার দিকে মনোযোগী হতে হবে সে সম্বন্ধেও একটি ধারণা পাওয়া যায়। এর এসবই আপনি কোন পথে জীবন বেছে নিতে চাইছেন সেটা ঠিক করার জন্য খুবই জরুরি।

বিনামূল্যে আগ্রহের বিষয় সম্বন্ধে জানুন

জ্ঞান, এখন এতটাই বিস্তৃত যে, আপনাকে বিনামূল্যে খুব সহজেই পছন্দের বিষয় নিয়ে জানানোর জন্য অপেক্ষা করছেন হাজার হাজার শিক্ষক, অনলাইন স্কুল, কোর্স, লেকচার এবং আরো অনেক কিছু। আপনার শুধু একটু কষ্ট করে খুঁজে নিতে হবে। বিভিন্ন চাকরি ও সেই সম্পর্কিত নানা বিষয় সম্বন্ধে জানার জন্য খান একাডেমি, কোর্সেরা, আইটিউনস বা ইউএকাডেমির ফ্রি ক্লাসগুলো করতে পারেন। যা আপনাকে কোন কাজে প্রবেশের আগে সেই কাজ বা চাকরি সম্পর্কে একটি সম্যক জ্ঞান দেবে। এতে করে কাজটির ধরণ আপনার আগ্রহের সাথে মিলে যায় কিনা তা আপনি নিজেই বিচার করতে পারবেন।

শেখার দরজা খোলা পুরো দুনিয়াজুড়েই

একই পথের পথিক খুঁজে নিন

দায়িত্ববোধ কাজকে অনুপ্রাণিত করে। এমন বন্ধু খুঁজে বের করুন যিনি আপনার মতোই জীবনে নিজের পথ খুঁজছেন। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখুন। কাউকেই খুঁজে না পেলে, আপনি যা যা করবেন বলে ভাবছেন তা বন্ধুদের ঘটা করে জানান সামনাসামনি অথবা সামাজিক মাধ্যমে। এতে নিজের মাঝে লক্ষ্য অর্জন করার তাগাদা জন্মাবে। যখনই কোন লক্ষ্য ঠিক করবেন, সেটা অর্জনের জন্য একটি সময়সীমা বেঁধে নিন। এতে নিজের কাজের অগ্রগতি কিংবা অবগতি দুই নিয়েই ওয়াকিবহাল থাকা যায়। এছাড়াও আপনি কি করছেন সেটা সম্বন্ধে আশপাশের মানুষের জানা থাকলে তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ, ইন্টার্নশিপ পাওয়ার সুযোগ বাড়ে। নিজের অগ্রগতি সবসময় পর্যবেক্ষণ করুন। প্রয়োজন হলে নিজের আইডিয়া, সামনে আরো কি কি করবেন বলে ভাবছেন, ব্যর্থতা, সফলতা- সবকিছু একটি জার্নাল আকারে গুছিয়ে সংরক্ষণ করুন।

তারপর নিজেকে আরেকবার প্রশ্ন করুন, “বড় হয়ে আপনি কি হতে চান?”