প্রসঙ্গ: বাণিজ্য
পাশের বাংলার ‘পোস্ত’ এসেছে বলাকায়। ক’দিন আগেও সেখানে চলেছে ‘ভয়ংকর সুন্দর’ যার প্রোডাকশন দেশি হলেও গল্প আর নায়ক এসেছিল পাশের দেশ থেকে। ফেসবুক আর অনলাইনে ‘লড়াই, লড়াই, লড়াই চাই’ বলে সারা দিন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে যেভাবে বিশ্লেষণ করছেন তাতে সকলেরই সাধুবাদ প্রাপ্য। কিন্তু পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে আমাদের চলচ্চিত্র এখনও বয়ঃসন্ধি কাটাতে পারেনি কিছু সুনির্দিষ্ট সমস্যার কারণেই।
গেল বছরের খতিয়ানই নেই না কেন!! কলকাতার সবচে বড় বাজেটের চলচ্চিত্র ছিল ‘চ্যাম্প’। বক্সিং নির্ভর সিনেমাটার প্রচারণা যেভাবে চালানো হয়েছে, পারলে বোমা ফাটিয়ে প্রোমোশনাল দেখানো হয়েছে টেলিভিশনে, যাতে দর্শকের মনে হয়েছে এই চলচ্চিত্র অবশ্যই দেখতে হবে।
তো খুব আগ্রহ নিয়েই সিনেমাটি দেখতে বসা এবং যথারীতি ভয়ানক হতাশ হওয়া। বিশ বছর আগের মদ চলে, কিন্তু বিশ বছর পুরানো সিনেমার গল্প না! সাথে মহান (!) অভিনেতাদের কাজকর্ম দেখলে চিরকালের মতো সিনেমা দেখার খিদেটাই নষ্ট হয়ে যায়। অথচ এনারাই বাংলাদেশে আসে চলচ্চিত্র বিনিময় নিয়ে কথা বলতে।
একটি দেশের চলচ্চিত্র দিয়ে সমাজের বা বোধের মানদণ্ড নিরূপণ করা যায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় সমস্যা কাহিনীর সংকট। সাথে ভালো বিপণনের অভাব আমাদের ছোট্ট চলচ্চিত্রের বাজারকে আরও বেশি সংকুল করে তুলছে। ফলে মুখ থুবড়ে পড়ছে বড় বাজেটের অনেকগুলো প্রয়াস। ভালো পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, অন্যান্য কলাকুশলীর সংকটও আমাদের আছে।
প্রসঙ্গ: নিরীক্ষা
পশ্চিম বাংলার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র কিংবা ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র, দু’ক্ষেত্রেরই পরিস্থিতি অতীব বাজে। সারা বছরে হাতেগোণা দুই- একটা চলচ্চিত্র ছাড়া বাকি কোনো চলচ্চিত্রতে লগ্নি করা মূল টাকাই তুলে আনতে পারছে না ভেঙ্কটেশ-ধাণুকারা; যার বড় কারণ হিন্দি চলচ্চিত্রের বিরামহীন রাজত্ব, তামিল-তেলেগু চলচ্চিত্রের হুবহু নকলনবিশি বাংলা সিনেমা থেকে সেদেশের দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্র টিকিয়ে রাখার জন্যই বাংলাদেশের বাজারটুকু জরুরি।
প্রসঙ্গ: কি করিতে হইবে? লড়াই? কিভাবে?
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের মুখ থুবড়ে পরার প্রধানতম কারণ মৌলিক গল্পের সংকট। হিসেব খুব পরিষ্কার, সেটা বুঝতে চলচ্চিত্র সমালোচক বা গোয়েন্দা হতে হয়না। বাংলাদেশে যে ক’জন ভালো মানের চলচ্চিত্র নির্মাতা আছেন বা যারা মৌলিক গল্প দেখিয়ে দর্শক ধরতে চাইছেন তাদেরকে পঙ্গু করে দিলেই কলকাতার চলচ্চিত্রের বাংলাদেশে রমরমা ব্যবসা গড়ে উঠবে। এই কাজটি খুব সুকৌশলে সুন্দর পরিকল্পনামাফিক করে যাচ্ছে একশ্রেণির স্বার্থলোভী, অর্থপিপাসু লোকজন। এদের সাথে পেরে ওঠা দায় হলেও পারতে হবে, ঠিক যেভাবে ভারত নিজেদের সিনেমা শিল্পকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে কিছু ভালো মানের চলচ্চিত্র নির্মাণ হলেও তা ভারতে প্রদর্শনের সুযোগ সুবিধা কিন্তু দেওয়া হচ্ছে না। ঠিক যেমনটা চলছে টেলিভিশনের চ্যানেলগুলো প্রদর্শন নিয়ে। সাথে এদেশের কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষতো আছেনই।
জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, আলমগীর কবির, সুভাষ দত্ত, তারেক মাসুদের মতো শক্তিমান চলচ্চিত্র পরিচালক যেদেশে ছিলেন সেই দেশে গল্প বলার লোকের অভাব পড়ার কথা না। হয়তো আরেকজন জহির রায়হান বা তারেক মাসুদ একদিন এসে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে উজ্জ্বল করবে। সেই আশায় দর্শক দিন গুজরান করছেন।