গেম অফ থ্রোনস: ৭.০৫: রিভিউ

গেম অফ থ্রোনসের সপ্তম সিজনের পঞ্চম এপিসোডের নাম ইস্টওয়াচ। ওয়ালে একটু দূরে দূরে পাহারা দেয়ার জন্য নাইটস ওয়াচ অনেকগুলো প্রাসাদ বানিয়ে রেখেছিল। অতীতে নাইটস ওয়াচের রক্ষীরা ওয়াল জুড়ে মোট উনিশটি প্রাসাদে পাহারা দিত। সেসময় হোয়াইট ওয়াকারের ভয় ছিল, তারপর আস্তে আস্তে ওয়ালের ওপারের ‘ভয়’ কমে গেল। এখন শুধু ওয়াইল্ডলিংদের সাথে হালকা ঠোকাঠুকি বা আমদানি-রপ্তানি বন্ধের জন্য দারোয়ানের কাজ ছাড়া এদের তেমন কোন কাজ নেই। তাই ধীরে ধীরে নাইটস ওয়াচের সদস্য কমে এল, সেই সাথে বন্ধ করে দিতে হলো প্রায় সবগুলো প্রাসাদই। এখন মাত্র তিনটা প্রাসাদে তারা পাহারা দেয়, একদম পশ্চিমে শ্যাডো টাওয়ার, মাঝখানে ক্যাসেল ব্ল্যাক, এবং একদম পূর্বে ইস্টওয়াচ-বাই-দ্যা-সি। এই পর্বের নাম সেই পুবপাড়ের প্রাসাদের নামে, কারণ সেখানে ঘটতে যাচ্ছে এক অসম্ভব ঘটনা।

রোজ রোড

তার আগে আমরা আগের পর্বের শেষ থেকে শুরু করি। ড্রোগন আর ডোথরাকিদের যুগপৎ আক্রমণে ছাইভস্ম হয়ে যাওয়া ল্যানিস্টার সৈন্যবাহিনীর দৃশ্যে পর্ব শুরু হলো। একদম শেষ দৃশ্যে ডেনেরিসের দিকে বর্শা হাতে ঘোড়া ছোটানো জেইমিকে প্রায় অলৌকিকভাবে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে বাঁচায় ব্রন। আরেকটু এদিক ওদিক হলে ড্রোগনের আগুনে ছাই হয়ে যেতে হতো। এখন দেখা গেল যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বেশ দূরে পানিতে ডুবন্ত ব্রন জেইমিকে টেনে ডাঙায় তুলছে। খটকা লাগল জেইমি আর ব্রন পানিতে পড়ার পরে এতদূর ডুবসাঁতার দেয়ার মতো অবস্থায় ছিল কীভাবে? কিংবা জেইমিকে ধরার জন্য ডেনেরিস কেন ডোথরাকিদের লাগিয়ে দেয়নি? তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে একটা সোনার হাতে ডুবসাঁতার দিয়ে এতদূর আসলো কীভাবে? এর সাথে তুলনা করার মতো একটি ঘটনা এই সিজনেই আছে। ইউরনের সামনে থেকে থিওনের পালিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তাকেও আর ধরার চেষ্টা করেনি কেউ। কিন্তু থিওনের নিজের পদবী বা ক্ষমতা কিছু নেই। তাই তাকে তাড়া করার চেয়ে ইয়ারা এবং স্যান্ড স্নেকদের ধরতে পারাটাই ইউরন গ্রেজয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল। এখানে পরিস্থিতি ভিন্ন। জেইমি ল্যানিস্টারকে না চিনলেও তার বর্ম দেখে বোঝাই যায় সে সাধারণ কোন সৈন্য না। ডেনেরিস খুব কাছ থেকেই তাকে দেখেছে। উপরন্তু সে আরেকটু হলেই ডেনেরিসকে মেরে ফেলতো। এমন সৈন্যকে ধরার সবরকম চেষ্টাই ডেনেরিসের করার কথা। তাই খটকা থেকেই যায়।

এরকম খটকা এই পর্বে আরো বেশ কয়েকবার বিভিন্ন দৃশ্য নিয়ে লেগেছে। ক্রমেই মনে হচ্ছে গেম অফ থ্রোনসের প্লটের শক্ত বুনিয়াদ ভেঙে পড়ছে, আর অন্যান্য সাধারণ টিভি শো-এর মতো কিছু কিছু জনপ্রিয় চরিত্রকে স্রেফ বাঁচিয়ে দেয়া হচ্ছে অলৌকিকভাবে। এই সিরিজের দৃশ্যায়ন বা ক্যামেরার কাজ যত ভাল হচ্ছে, ততই গল্পের গাঁথুনি আর চরিত্রগুলোর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে।

এর পরের দৃশ্যে দেখা গেল যুদ্ধজয়ের পর বন্দী ল্যানিস্টার বাহিনীর সাথে ডেনেরিসের বোঝাপড়া। আনুগত্যের আহ্বান, অথবা নিশ্চিত মৃত্যুর হুমকি। যে কোন বিজয়ী শাসকের জন্য বন্দীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। ডেনেরিস এখানে শাসন করতে এসেছে। তার পরিবারের হারিয়ে ফেলা সিংহাসন পুনরুদ্ধার এবং রাজত্বকে তার পরেও জারির ব্যবস্থা করতে এসেছে। পুরো জনপদকে শুধু ভয়ভীতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে অচিরেই তার পতন হবে। কারণ নিপীড়িত জনতা কখনই বেশিদিন পরাধীনতা মেনে নেয় না। রবার্ট ব্যারাথিয়ন যখন ক্ষমতা দখল করেছিল, তখন প্রায় সবাইকেই সে নতিস্বীকারের পর ক্ষমা করে দিয়েছিল। অন্তত ক্ষমা করে দেয়া হবে – এই আশ্বাসেই অনেকে তার আনুগত্য মেনে নিয়েছিল। কারণ মানুষ সর্বোপরি শান্তিকামী। ডেনেরিস পুরোপুরি তার বিপরীত পদ্ধতিতে এগুচ্ছে এবং বহিরাগত হিসেবে একই রকমের প্রতিরোধ সামনে আরো পাবে বলেই মনে হচ্ছে। রবার্ট এদিক দিয়ে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল, কারণ সে ওয়েস্টেরোসেই বড় হওয়া। তাছাড়াও এয়রিস টারগারিয়েনের উন্মত্ত অত্যাচারে এমনিতেও জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল। এখানে ডেনেরিস ভিন্ন পথে এগিয়েছে। সরাসরি কিংস ল্যান্ডিং বা সার্সেইকে আক্রমণ না করে তার আশেপাশের সহায়কদের আক্রমণ করছে। স্বভাবতই তারা ডেনেরিসকে খারাপ আর সার্সেইকে “কম খারাপ” মনে করবে। মানুষ মূলত সরাসরি আক্রান্ত হলে গুটিয়ে যায়, খড়কুটো যা পায় ভালোমন্দ বাছবিচার না করে সেটাই আঁকড়ে ধরে। তাই র‍্যান্ডিল টার্লির অবস্থান থেকে প্রতিটা যুক্তিই অকাট্য ছিল। আবার অন্যভাবে দেখলে র‍্যান্ডিল টার্লি কিছুদিন আগেই টাইরেলদের প্রতি তার পরিবারের শত শত বছরের আনুগত্যকে তুচ্ছ করে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। সে শাস্তি ওলেনা টাইরেল দিতে পারেন নাই। ডেনেরিস তার হয়ে দিয়ে দিল। একইসাথে ডিকনের মৃত্যুতে টাইরেলদের মতই টার্লি হাউজ বিলুপ্ত হয়ে গেল। এখানে উল্লেখ্য যে স্যাম টার্লি এখনো বেঁচে থাকলে সে নাইটস ওয়াচের সদস্য বলে নিজের হাউজের কোন সম্পত্তি বা উত্তরাধিকার সে পাবে না। তার কাছে এখন তাদের বংশের ভ্যালিরিয়ান তলোয়ারটি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট রইল না!

ড্রাগনস্টোন

“We both want to help people. We can only help them from a position of strength. Sometimes strength is terrible.”

ড্রাগনস্টোনের শুরু হলো ড্রোগন আর জন স্নোয়ের প্রথম ‘সাক্ষাতের’ মধ্য দিয়ে। জনের সামনে বিশালকায় ড্রোগনের ভীতিকর অবয়ব দেখে শিহরিত হতে হয়। যত যাই হোক, গেম অফ থ্রোনসের কম্পিউটার গ্রাফিক্সের কাজ অসামান্য! যত নিখুঁতভাবে ড্রোগনকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রতিটি দৃশ্যে তা সত্যিই মনোমুগ্ধকর! এই সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত ডেনেরিসের মাতৃসুলভ চোখে কেবলই তার সন্তান। এই ব্যাপারটা হয়তো আমাদের সকলের জন্যেও খাটে। নিজের সন্তান, তা সে যতই ভয়ঙ্কর খুনে কিংবা সমাজ ও মানুষের চোখে যতই ভীতি আর ঘৃণামিশ্রিত আতঙ্কের নাম হোক না কেন, মায়ের কাছে তারা আদর আর মায়ার শিশুই হয়ে থাকে হয়তো। ডেনেরিস এই অল্প সময়েই ওয়েস্টেরোসে গিয়ে লঙ্কাকাণ্ড করে এসেছে, সেটা জনের জানা আছে। যাবার আগে জন তাকে নিষেধও করেছিল। কিন্তু ডেনেরিস সে নিষেধে পাত্তা দেয় নি। ডেনেরিসের মতে ওয়েস্টেরোসে শত শত বছর ধরে চলতে থাকা ক্ষমতার লড়াই আর সেই লড়াইয়ের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকা সাধারণ মানুষকে সে মুক্তি দিতে চায়। এজন্য যদি তাকে কঠোর হতেও হয় তবে তাই সই। যদিও সে নিজেও ক্ষমতাধর হয়েছে জনমনে ভয়ভীতি সৃষ্টি করেই। শক্তি প্রয়োগ করে নিষ্ঠুরতা দেখিয়ে যে আনুগত্য অর্জন করা যায়, সে আনুগত্যের স্থায়িত্ব বেশিদিন হয় না।

একদিকে ডেনেরিস আর জনের শীতল তর্ক যখন চলছে, তখন ড্রাগনস্টোনেই ডেনেরিসের শেষ দুই উপদেষ্টা ভ্যারিস আর টিরিয়নও আলাপ করছে কীভাবে ডেনেরিসকে তার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করা থেকে বিরত রাখা যায়। রাজা এয়রিস যখন সন্দেহগ্রস্ততার পঙ্কিলতায় ধীরে ধীরে উন্মাদ হয়ে উঠছিল তখন এই ভ্যারিসকেই এসোস থেকে নিয়ে এসে কিংস ল্যান্ডিংয়ের গুপ্তচর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। ভ্যারিসের কাজ ছিল রাজার বিরুদ্ধে যেকোন ষড়যন্ত্র হলেই তার খবর দেয়া। প্রতারককে এয়রিস রাজদরবার থ্রোন রুমে সবার সামনে ওয়াইল্ডফায়ারে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারত। যে কোন গুপ্তচরের জন্য মানুষগুলোর এহেন পরিণতির দায়ভার নেয়া আসলেই কষ্টকর। তাই ভ্যারিস নিজেই নিজেকে বোঝাত যে এদের মৃত্যুর জন্য সে দায়ী না। টিরিয়ন এই মুহূর্তে হয়ত সেই টানাপোড়েনের ভেতর দিয়েই যাচ্ছে। নিজের চোখে সে আগেও দেখেছে ড্রোগন মানুষ পুড়িয়ে মারছে। কিন্তু সেটা ছিল আত্মরক্ষার খাতিরে। হার্পির সন্তানেরা যখন ডেনেরিসকে ফাইটিং পিট-এ আক্রমণ করে তখন ড্রোগন তাকে রক্ষা করেছিল এভাবে। কিন্তু এবারের ঘটনায় ডেনেরিসই আক্রমণকারী। যুদ্ধের অজুহাত দিয়ে নির্বিচার হত্যার দায়ভার পুরোপুরি এড়ানো যায় না। তাই ডেনেরিসকে বুঝিয়ে সুজিয়ে থামানোর উপায় খুঁজছে টিরিয়ন।

আর সে সুযোগও তার হাতে চলে আসে দৈবক্রমে। উইন্টারফেল থেকে মেয়স্টার য়োলকান ব্র্যানের হয়ে চিঠি পাঠিয়েছে জনের কাছে। ব্র্যান আর  আরিয়ার উইন্টারফেলে প্রত্যাবর্তনের খবরের পাশাপাশি ভারি এক দুঃসংবাদ এসেছে। হোয়াইট ওয়াকার ও তার মৃতবাহিনী ওয়ালের খুব কাছে চলে এসেছে। কিন্তু মাঝখানের প্রাসাদ ক্যাসেল ব্ল্যাকে না গিয়ে তারা আঘাত হানবে পুবপাড়ের প্রাসাদ ইস্টওয়াচে। হাতে সময় বেশি নেই। জন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো যে সে আবারও ওয়ালে যাবে, সাথে যে কয়জন যায় যাবে। এ সুযোগটা লুফে নিল টিরিয়ন – আসন্ন বিপদের মুখেও দুই রাণীর আমৃত্যু যুদ্ধকে থামানোর সুযোগ। যদি কোনভাবে সার্সেইকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করা যায়, তাহলে তাতে ডেনেরিসও রাজি হবে। তাদের দ্বিপাক্ষিক যুদ্ধের চেয়েও বড় বিপদ সামনে। এর প্রমাণ অবশ্য ডেনেরিসেরও লাগবে। তাই টিরিয়ন প্রস্তাব দিল হোয়াইট ওয়াকারদের মৃত বাহিনীর একজনকে ধরে নিয়ে আসতে হবে সার্সেইয়ের কাছে। যদিও এই প্রস্তাবে জন বা অন্যেরা কেন রাজি হলো সে প্রশ্ন থেকেই যায়। জেনে বুঝে মৃতবাহিনীর মোকাবিলা করতে যাওয়া একরকম আত্মহত্যার শামিল। কিন্তু জন সম্ভবত এতটাই মরিয়া, যে কোন মূল্যে তার ডেনেরিসসহ পুরো ওয়েস্টেরোসকে বুঝাতেই হবে। ও হ্যাঁ, এর মাঝে ড্রাগনস্টোনে স্যার জোরাহ মরমন্ট ফিরে এসেছে। প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে তার গ্রে-স্কেল রোগ সারিয়েছে স্যাম। ডেনেরিসও তাকে দেখে খুশি। আর রাণীর জন্য সেই মৃতবাহিনীকে মোকাবিলা করতেও স্যার জোরাহ প্রস্তুত। এখন বড় বিড়ালের গলায় এই ঘণ্টা বাঁধার আগে ছোট বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে হবে, অর্থাৎ সার্সেইকে যুদ্ধবিরতির জন্য রাজি করাতে হবে। সেদিকে যাওয়ার আগে বরং কিংস ল্যান্ডিংয়ের পরিস্থিতি দেখে নেয়া যাক।

কিংস ল্যান্ডিং

“I shouldn’t have listened to you. She should have died screaming.”

জেইমির প্রায় অলৌকিক জীবনপ্রাপ্তির পর তাকে দেখা গেল কিংস ল্যান্ডিংয়ে। সার্সেইয়ের কাছে এরইমধ্যে খবর চলে এসেছে। ডেনেরিসের বিপুল ডোথরাকি বাহিনী আর বিধ্বংসী ড্রাগনদের মোকাবিলা করার মতো শক্তি তাদের নেই। সার্সেই আর জেইমি দুজনেই তা হাড়ে হাড়ে অনুধাবন করতে পারছে। এর মধ্যেই কথা প্রসঙ্গে টিরিয়ন আর ওলেনা চলে এল। সার্সেই অবশেষে জানতে পারল যে জফ্রির মৃত্যুর পেছনে টিরিয়ন না, ওলেনাই দায়ী। তারই চক্রান্তে বিষক্রিয়ায় জফ্রির মৃত্যু হয়েছিল। অথচ বেঁচে থাকতে ওলেনাকে সে এটার শাস্তি দিতে পারে নি। স্রেফ তার বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি হিসেবেই বীভৎস সব চিন্তা করেছিল সার্সেই – ভেবেছিল তাকে চামড়া ছাড়িয়ে কিংস ল্যান্ডিংয়ের প্রাচীরে ঝুলিয়ে রাখবে, কিংবা চাবুক মারতে মারতে কিংস ল্যান্ডিংয়ের রাস্তা দিয়ে নিয়ে রেড কিপ প্রাসাদের সামনে সর্বসমক্ষে তার শিরোশ্ছেদ করবে। জেইমিই তাকে নিরস্ত করে ওলেনাকে একপ্রকার কষ্টহীন মৃত্যু “উপহার” দিয়েছে। তাই সার্সেইয়ের ভেতরের প্রতিহিংসাপরায়ণ মাতৃসত্ত্বাটি আবার জেগে উঠলো। তার একমাত্র দুর্বলতা ছিল তার সন্তানেরা, যাদেরকে রক্ষা করার জন্য সে কী না করেছে। অথচ তাদেরকেই একে একে হারাতে হয়েছে, অসহায়ের মতো চেয়ে দেখা ছাড়া তার কিছুই করার ছিল না। যে পর্বে ওলেনা মারা গেল সেই পর্বেই দেখিয়েছিল সার্সেই তার সন্তানদের হত্যাকারীদের কীরকম শাস্তি দেয়। কিন্তু হাতে পেয়েও ওলেনাকে সে সেরকম শাস্তি দিতে পারল না।

এর পরের দৃশ্যটা টিরিয়ন আর জেইমির মধ্যে। একটু আগে যে বলেছিলাম, এই পর্বে বেশ কিছু খটকা জাগানো ঘটনা ঘটেছে, এই দৃশ্যটি সেগুলোর একটি। সার্সেইকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করাতে টিরিয়ন জেইমির সাহায্য নিতে চায়, আর এজন্য সে নিজে সশরীরে এসে হাজির হয়েছে কিংস ল্যান্ডিংয়ে! এখানে প্রায় সবাই তাকে পিতৃহন্তা ও রাজার খুনী হিসেবে চেনে। ওয়েস্টেরোসে বামন খুব বেশি নেই, এখানে পা দেয়ামাত্রই তাকে পাকড়াও করবে কেউ না কেউ, কারণ তার মাথার দাম অনেক। টিরিয়ন যখন টাইউইনকে খুন করে পালিয়ে গিয়েছিল তখন অনেকেই অন্য বামনদের মেরে কাটা মাথা দরবারে হাজির করেছিল পুরষ্কারের আশায়। এই অবস্থায় টিরিয়নের কিংস ল্যান্ডিংয়ে আসা জনের নাইট কিংকে মোকাবিলার চেয়েও নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। কিন্তু টিরিয়নও প্লটের বর্ম পরে আছে, তাই সে অসম্ভবও সম্ভব হবে। এমনকি জেইমির সাথে তার দেখা হওয়ার পদ্ধতিটাও যথেষ্টই জটিল। প্রথমে সে ব্রনের সাথে যোগাযোগ করে বলেছে সে জেইমির সাথে দেখা করতে চায়। ব্রনের সাথে তার যোগাযোগ হলো কীভাবে? আবার তাকে কিংস ল্যান্ডিংয়ে নিয়ে গেল স্যার ড্যাভোস, যে কিনা নিজেও স্ট্যানিসের সহচর হিসেবে চিহ্নিত ও পলাতক আসামী। ব্রন আবার এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছে, যদিও জেইমিকে এভাবে ভুলিয়ে ভালিয়ে আনাতে তার নিজেরও ব্যক্তিগত ঝুঁকি আছে। পুরো শহরেই কাইবার্নের গুপ্তচর গিজগিজ করছে। ব্রন টিরিয়নকে একেবারে রেড কিপের ভেতর নিয়ে আসছে এটা কেউ দেখলো না? ব্রনই বা সেই ঝুঁকি নিবে কেন? টিরিয়নের মৃতবাহিনীর একজনকে ধরে আনার মূল পরিকল্পনার চেয়ে সশরীরে কিংস ল্যান্ডিংয়ে আসার সিদ্ধান্ত কোন অংশেই কম খামখেয়ালি নয়। ডেনেরিসই বা তার বিজ্ঞ হ্যান্ডকে এখানে আসতে দিল কেন? ইতোমধ্যেই তো তার উপদেষ্টারা একে একে কমেছে, যার সিংহভাগ দায়ভার টিরিয়নের ঘাড়েই বর্তায়। বাকি আছে স্রেফ ভ্যারিস আর টিরিয়ন। এমনিতেই দেখিয়েছে গত পর্বে ডেনেরিস তাকেও সন্দেহ করছে, সে আসলে তার ভাইবোনকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে না তো? তাহলে এখন তাকে কিংস ল্যান্ডিং যেতে দিল কোন সহচর ছাড়াই? জেইমির সাথে টিরিয়নের কী কী কথা হচ্ছে তা ডেনেরিসের জানার উপায় নেই। এতটা নির্বোধ কারো পক্ষে এমনিতেও রাজকার্য চালানো সম্ভব না।

এবং এর পরের দৃশ্যে সার্সেই জেইমিকে জানালো যে টিরিয়নের গতিবিধি তার নখদর্পণে ছিল। ডেনেরিসের আক্রমণ থেকে আপাতত মুক্তি পেতেই সে টিরিয়নকে জব্দ করে নি। এখন মনে হচ্ছে সার্সেই তার চরিত্রের চাইতেও বেশি বুদ্ধিমানের মতো আচরণ করছে। এই নাজুক পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতিই সার্সেইয়ের জন্য মঙ্গল হবে। পরে সুযোগ-সুবিধা বুঝে ডেনেরিসকে জব্দ করার চেষ্টা করা যাবে। এই দৃশ্যে সার্সেই আরো একটি নীরব বোমা ফাটিয়েছে। তার আর জেইমির আরেক সন্তান জন্মাতে যাচ্ছে। দিকে দিকে যখন হাজারবর্ষী হাউজ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তখনও এরা ঠিকই বংশের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা নিজেদের অজান্তেই চালিয়ে যাচ্ছে, হোক না সেটা ভাই-বোনের মাঝেই! এমন একটা বাক্য শুধুমাত্র ওয়েস্টেরোসের বেলাতেই লেখা সম্ভব। জেইমি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে শুনতে পেল কাইবার্ন বলছে, “I could give you something.”, যা সম্ভবত গর্ভপাত ঘটানোর জন্যে কোন ওষুধ দেয়া প্রসঙ্গে। সার্সেই যদিও তা নাকচ করে তাকে বিদায় দিয়েছিল। ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক, এই গর্ভাবস্থাকে ব্যবহার করে সার্সেই আবারও জেইমিকে কুক্ষিগত করে ফেললো। তার হিংস্র তীব্র প্রতিহিংসাপরায়ণতার সাথে জেইমি একমত হতে পারছে না বহুদিন ধরেই। কিন্তু তার মায়াজাল ছাড়িয়ে নিজে নিজে কোন সিদ্ধান্ত নিতে সে অপারগ।

কিংস ল্যান্ডিংয়ের সেরা দৃশ্যটি স্যার ড্যাভোস আর গেন্ড্রির মধ্যে। গেন্ড্রির প্রতিটি দৃশ্যই দারুণ উপভোগ্য ছিল, বিশেষ করে যেভাবে তাকে একটু একটু করে ক্যামেরায় নিয়ে আসা হলো। সাত ঘাটের পানি খেয়ে গেন্ড্রি আবার রাজধানীর চোরবাজারেই থিতু হয়েছে। কামারের কাজে হাত পাকিয়েছে। এমনকি হরিণের শিঙয়ের প্রতীক আঁকা একটা হাতুড়িও বানিয়ে ফেলেছে, ঠিক তার বাবা রবার্ট ব্যারাথিয়নের মতো। হাতুড়ি হাতে শক্ত করে ঘুরিয়ে যে দশাসই দুটো বাড়ি দিল, তাতে বোঝাই যাচ্ছে সামনের আসন্ন যুদ্ধে তার ভূমিকা থাকবে। স্যার ড্যাভোস বলামাত্রই সে কিংস ল্যান্ডিং ছেড়ে যেতে একপায়ে রাজি। ড্যাভোস তাকে ড্রাগনস্টোনে এনে জনের সাথে দেখা করিয়ে দিল। মজার ব্যাপার হলো এই দুই জারজ ভাবছে তাদের বাবারা প্রাণের বন্ধু ছিল। কিন্তু সত্য হলো যে গেন্ড্রির বাবার হাতুড়ির আঘাতেই জনের বাবার মৃত্যু হয়েছিল ট্রাইডেন্ট নদীর তীরে। গেন্ড্রির মাধ্যমে ব্যারাথিয়ন হাউজের কোন একটা সূত্র পাওয়া গেল। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে যে কোন রাজা জারজদের বৈধতা দিতে পারে। উত্তরের রাজা কি গেন্ড্রি ব্যারাথিয়নকে বৈধতা দিয়ে দিবে?

ওল্ডটাউন

“Archmaester, please. It’s real. I’ve seen it.”

ওল্ডটাউনের সিটাডেলে স্যামের কাজ পুরনো বইপত্রের নতুন প্রতিলিপি তৈরি করা। ব্র্যানের পাঠানো চিঠি এখানেও এসেছে, তাতে নাইট কিং ও তার মৃতবাহিনীর ক্রমশ এগিয়ে আসার সতর্কবাণী দেয়া হয়েছে। ঘটনাক্রমে আর্চমেয়স্টাররা যখন এই চিঠি নিয়ে আলাপ করছিলেন তখন সেই ঘরে স্যামও কতগুলো বই নামিয়ে রাখতে এসেছিল। খোঁড়া ছেলের কথা শুনেই সে ব্র্যানকে চিনতে পারল। প্রায় চার সিজন আগে ব্র্যান যখন মিরা, জোজেন, আর হোডরের সাথে ওয়াল পার হয়ে আরো উত্তরে থ্রি-আইড-রেইভেনের খোঁজে যাচ্ছিল, তখন স্যাম আর গিলির সাথে তাদের দেখা হয়েছিল। তারা উল্টো হোয়াইট ওয়াকারদের তাড়া খেয়ে দক্ষিণে ফিরছিল। আসার পথে স্যাম ড্রাগনগ্লাস দিয়ে একটা হোয়াইট ওয়াকারকে মেরেও ছিল। স্যাম বললো যে এই খোঁড়া ছেলেটা কোন জাদুবলে ওয়ালের উত্তরে এতদিন থেকে আবার ফিরে এসেছে। নিশ্চয়ই তার কথা গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত। এর বিপক্ষে আর্চমেয়স্টার এব্রোস বললো যে এই চিঠির কথা ডেনেরিসের চক্রান্ত হতে পারে। দক্ষিণের সৈন্যদের উত্তরে পাঠিয়ে দিলে অরক্ষিত রাজ্যগুলোকে সে সহজেই দখল করতে পারবে। যদিও তার এই যুক্তিতে গলদ আছে। উইন্টারফেলের এক খোঁড়া স্টার্ক কেন ডেনেরিস টারগারিয়েনকে সাহায্য করবে? ডেনেরিস যদি একবার দক্ষিণের রাজ্যগুলো দখল করে ফেলে, তখন সে উত্তরের রাজ্যতেও আঘাত হানতে পারে। তাই কোনোভাবেই ব্র্যানের তাকে সাহায্য করার কথা না। বিশেষ করে যখন তার নিজের ভাই-ই নর্থের রাজা।

– It brings to mind the work of Jenny of Oldstones, the charlatan who claimed descent from the children of the forest.

– Don’t forget the prophet Lodos, who promised that the Drowned God would rise up and destroy Aegon the Conqueror.

মেয়স্টারদের কথার মাঝে এভাবে পুরানো ইতিহাস আলটপকা উঠে আসাটা বেশ লাগে। জেনি অফ ওল্ডস্টোনসের ঘটনাটা যদি বেশি আগের না। এয়রিসের দাদা ৫ম এয়গন টারগারিয়েনের সময়ের। তার বড় ছেলে ডানকান টারগারিয়েন রিভারল্যান্ডের এক সাধারণ মেয়ে জেনির প্রেমে পড়ে। সে এমনই প্রেম, যে প্রেমের জন্য সিংহাসনের দাবিও ছেড়ে দেয় সে। পরে তার ছোট ভাই জ্যাহ্যারিস রাজা হয়। এই জেনিকে ঘিরে বেশ রহস্যময় কিছু গল্প আর গান রচিত হয়েছে। সে দাবি করত যে সে চিলড্রেন অফ দ্যা ফরেস্ট-দের বংশধর। তার এক বন্ধু রিভারল্যান্ড থেকে তার সাথে কিংস ল্যান্ডিংয়ে এসেছিল। অনেকে বলত সে নাকি আসলে এক ডাইনি। সে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে রাজপুত্র এয়রিস আর রাজকন্যা রায়েলার ঔরসে ‘প্রিন্স দ্যাট ওয়াজ প্রমিজড’-এর পুনর্জন্ম হবে। এই ভবিষ্যদ্বাণী শুনে রাজা জ্যাহ্যারিস তার দুই ছেলেমেয়ের মাঝে বিয়ে দিয়ে দেন। এই জেনি, ডানকান আর জেনির বন্ধু ডাইনিকে নিয়ে অনেক গল্পগাঁথাই রচিত হয়েছে। আরেকজনের কথা মেয়স্টাররা বলেছে, লোডোস। এর কাহিনী অবশ্য আরো আগের, প্রথম এয়গনের সময়ের। আয়রন আইল্যান্ডের রাজা হ্যারেন দ্যা ব্ল্যাককে তার প্রাসাদ হ্যারেনহালের পুড়িয়ে মারার পরে অনেকেই সেখানের রাজা হবার দাবি তোলে। তাদের মাঝে একজন ছিল এই লোডোস, যে দাবি করেছিল যে সমুদ্র থেকে এক বিশাল ক্র্যাকেনকে জাগিয়ে তুলতে পারবে সে। এই ক্র্যাকেনই এয়গনের বিনাশ করবে। এয়গন যখন আয়রন আইল্যান্ড জয় করার জন্য আক্রমণে আসে তখন লোডোসসহ তার অনুসারীরা সমুদ্রে তাদের দেবতার সাথে দেখা করতে ঝাঁপ দেয়। অনেকের লাশই এরপর পাওয়া যায়, কিন্তু লোডোসের লাশ আর কখনই পাওয়া যায় নি। স্বভাবতই ড্রাগন আর জাদুবিদ্যার এই সাম্রাজ্যে মেয়স্টাররা অতিরিক্ত রকমের সংশয়বাদী। কালে কালে ভণ্ড পীর দেখে তারা এখন সবার ব্যাপারেই সন্দিহান।

“What does “annulment” mean?”

ওল্ডটাউনের পরের দৃশ্যটাও ইতিহাসের পাতার এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার নিশ্চয়তা দিল। গিলি বসে বসে হাই সেপ্টন মেয়নার্ডের লিপি পড়ছিল। এই হাই সেপ্টন মোটামুটি বিশাল নথিবিদ। আমাদের মাঝে অনেকে যেমন উঠতে বসতে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়, তেমনি এই মেয়স্টারও তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর জিনিসের কথা লিখে রেখে গেছেন। তবে তুচ্ছ ব্যাপারস্যাপারের মধ্যেই হীরে-জহরত লুকিয়ে আছে। গিলি এমনই এক তথ্য খুঁজে পেল। কোন এক রাজপুত্র ‘রেগার’ তার বিবাহিত স্ত্রীকে আইনগতভাবে ত্যাগ করে নতুন একজন স্ত্রী নিয়েছিল। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে এটি রাজপুত্র রেয়গার, তার স্ত্রী এলিয়া মার্টেলকে সরিয়ে রেখে লিয়ানা স্টার্ককে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিল। অর্থাৎ সারাজীবন জারজের তকমা পাওয়া জন স্নো আসলে আইন ও সমাজের চোখে এক ‘বৈধ’ শিশু। এই তথ্য বলার পরেও স্যাম আগের ঘটনা নিয়েই গজগজ করছিল। হায় স্যাম! রাগের মাথায় পাঠাগার থেকে যা পারে কয়েকটা বই নিয়ে সে গিলি আর লিটল স্যামসমেত সিটাডেল ছেড়ে রওনা দিল, সম্ভবত ওয়ালের উদ্দেশ্যে।

উইন্টারফেল

এবারের পর্বে উইন্টারফেলের দৃশ্যগুলোয় সানসা আর আরিয়ার মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করার বিষয়টা তুলে ধরেছে। সানসা প্রকৃতরূপেই উইন্টারফেলের কূটনীতিবিদ হয়ে উঠেছে। নর্থের লর্ডরা জনের অনুপস্থিতিতে ক্রমশ অসহিষ্ণু, কিন্তু সানসা একদম শান্তস্বরেই তাদেরকে বুঝিয়ে সুজিয়ে ঠাণ্ডা করল। আরিয়া আবার এটাকে ভুল বুঝে সানসার বড় উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নকশা মনে করছে। এর কারণ সানসা আর আরিয়ার সম্পর্কের টানাপোড়েন। ছোটবেলা থেকেই সানসা আর আরিয়ার স্বভাব পুরোপুরি বিপরীত, অনেক সময় একে অপরকে দেখতেই পারতো না। এতদিন দূরে থাকায় দুজনই অনেক বদলে গেছে, কিন্তু নিজেদের প্রতি শীতল আচরণ পুরোপুরি কাটে নি বলেই মনে হয়েছে। উপরে উপরে তবু আরিয়ার বদলটুকু সানসা চোখে দেখেছে, কিন্তু সানসার সংগ্রামের ছিটেফোঁটাও আরিয়া দেখেনি। তাই সানসার নেতৃত্ব বা এর পেছনে উদ্দেশ্য নিয়ে সে সন্দিহান। আবার অন্যদিকে সানসা আরিয়ার এহেন প্যাঁচানো চিন্তার জটাজালে নিজেই পেঁচিয়ে পড়ছে। এই সুযোগে লিটলফিঙ্গার তার স্বভাবসুলভ চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। সানসা একদম প্রথম সিজনে রবার্ট ব্যারাথিয়নের মৃত্যুর পরপরই নেডকে বন্দী করা হলে উইন্টারফেলে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। যে চিঠিতে তার বড় ভাই রব স্টার্কের কাছে রাজা জফ্রির অনুগত হবার কাতর অনুরোধ করেছিল। তখনকার স্মল কাউন্সিল তথা সার্সেই, পাইসেল, ভ্যারিস আর লিটলফিঙ্গার নানাভাবে তাকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে ওই চিঠি লিখিয়েছিল। এটা এতই স্পষ্ট ছিল যে রব চিঠিটা পড়ামাত্রই বলেছিল, হাতের লেখা সানসার হলেও কথাগুলো সার্সেইয়ের। লিটলফিঙ্গার মেয়স্টার য়োলকানকে দিয়ে সেই চিঠির শেষ কপিটা উদ্ধার করে। তারপর সেটা নিজের বিছানার নিচে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আরিয়া সারাদিন ধরেই লিটলফিঙ্গারকে অনুসরণ করছে  যা সম্ভবত লিটলফিঙ্গারও টের পেয়েছে। তাই এই টোপ। আর সেই টোপে নিরীহ মেষশাবকের মতো আরিয়ার ধরা পড়া। আরিয়া জানেই না যে সানসা ঠিক কী পরিস্থিতিতে এই চিঠি লিখতে বাধ্য হয়েছিল। এখানে দৃশ্যটি দেখা যাবে

অন্যদিকে ব্র্যান এদের দুই বোনকে ফেলে থ্রি-আইড-রেইভেনের সাহায্য ওয়ালের উত্তরে ‘টহল’ দিয়ে বেড়াচ্ছে। ক্রমেই একে অপর থেকে দূরে সরে যাওয়া স্টার্করা একা একা বেশিদিন টিকতে পারে না। কিন্তু একসাথে জোট বেঁধে থাকলে বা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে তাদের হারানো প্রায় অসম্ভব।

“When the cold winds blow the lone wolf dies and the pack survives”

লিটলফিঙ্গারের এসব চক্রান্তকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সানসা, আরিয়া, আর ব্র্যান এই উক্তির যথার্থতা প্রমাণ করবে অচিরেই!

ইস্টওয়াচ

অবশেষে পর্বের নামকরণের সার্থকতার অংশে পূর্ণমান পাওয়ার জন্য এই দৃশ্যের অবতারণা। ইস্টওয়াচ-বাই-দ্যা-সি প্রাসাদটা টরমুন্ড ও তার সঙ্গী ওয়াইল্ডলিংরা পাহারা দিচ্ছে। জন, জোরাহ আর ড্যাভোস এসে পৌঁছেছে। টরমুন্ড জানালো যে ওদের মতোই আরো তিনজন কাছাকাছি এসে রক্ষীদের হাতে ধরা পড়েছে। তারপর হাউন্ড, বেরিক আর থোরোসের সাথে এদের দেখা হলো। প্রায় সবাই সবাইকে আগে থেকেই চেনে। জন যেমন হাউন্ডকে উইন্টারফেলে দেখেছিল, যখন রাজা রবার্ট এসে নেডকে হ্যান্ড হতে অনুরোধ করেছিল। গেন্ড্রির অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখের না। বেরিক ডোন্ডারিয়নের দল ‘ব্রাদারহুড উইদাউট ব্যানার’রা তাকে আর আরিয়াসহ কয়েকজনকে আটক করেছিল। পথে মেলিসান্দ্রের সাথে দেখা হলে তারা পয়সার বিনিময়ে গেন্ড্রিকে তার কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল। জোরাহ আর থোরোসের পরিচয় আরো আগে থেকে। গেম অফ থ্রোনসের কাহিনীরও পাঁচ-ছয় বছর আগে আয়রন আইল্যান্ড বিদ্রোহ করে নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করেছিল। এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিল বেয়লন গ্রেজয়। বিদ্রোহ দমন করতে যে সৈন্যবাহিনী গিয়েছিল তার একদম সামনে ছিল থোরোস আর জোরাহ। তারাই প্রথম ফটক ভেঙে ঢুকে পড়েছিল। থোরোসের হাতে ছিল এক জ্বলন্ত তলোয়ার। সেই যুদ্ধ থেকেই তাদের পরিচয়টা বন্ধুত্বপূর্ণ। আবার এখানেই টরমুন্ড জানতে পারল জোরাহ মরমন্ট নাইটস ওয়াচের লর্ড কমান্ডার জেওর মরমন্টের ছেলে। সেই লর্ড কমান্ডার যে তাদেরকে পেলে কচুকাটা করতো।জোরাহ মনে করিয়ে দিল যে তার বাবার পরিণতিও ভাল কিছু হয় নি। ওয়ালের উত্তরে অভিযানে গিয়ে সে নিজের নাইটস ওয়াচের ব্রাদারদের হাতেই খুন হয়েছিল। এখন এই ঘোরতর দুঃসময়ে সবাই একত্র হয়েছে। সাতজন যোদ্ধা, যাদের দেখে বারবার সেভেন সামুরাইয়ের কথাই মনে পড়ে যায়।

এই পর্বে মূলত সামনের শেষ দুই পর্বের আগে সব গুছিয়ে নেয়ার পালা ছিল। গল্প যেদিকে যাচ্ছে, আর যেভাবে যে যার সাথে জুড়ে যাচ্ছে সেটা অনেকাংশেই তাড়াহুড়ো করে মিলিয়ে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এইচবিও’র-ই আরেকটি অনুরূপ টিভি শো রোম-এও একই ঘটনা ঘটেছিল। প্রথম সিজনের ধীর লয়ের পর যখন দ্বিতীয় সিজনেই তারা শো’টা শেষ করে দিচ্ছিল, তখন সব কাহিনী খুব দ্রুততার সাথে এগিয়ে নেয়া হয়েছিল। গেম অফ থ্রোনসের এই সিজন জুড়েই এই অনুভূতি হয়েছে। তবে এই পর্বে এসে সেটা বেশ প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি চোখে লেগেছে প্রায় জোর করেই চরিত্রগুলো কিছু বলছে বা করছে যা তাদের চরিত্রের সাথে যায় না।

এই পর্বে প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রই বেশ কয়েকটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের সামনে একাধিক পথ খোলা ছিল, এবং সেগুলোর মাঝে যে কোন একটি বেছে নেয়ার সুযোগ ছিল। এটা পর্বের একদম শুরুতে টার্লিদেরকে দেয়া ডেনেরিসের শর্ত থেকেই স্পষ্ট হয়েছে। ডেনেরিসেরও সামনে সুযোগ ছিল সবাইকে ক্ষমা করে দেয়ার, কিন্তু সে সুযোগ সে নেয় নি। বরং কঠোরতার পথ বেছে নিয়েছিল। এভাবে সার্সেই বা জেইমির সামনেও সুযোগ এসেছে সুবিধাজনক চুক্তির, এবং তারা সেটা নিয়েছে। সুযোগ পাওয়ামাত্রই জন ড্রাগনস্টোনে আপাত বন্দীদশা থেকে বেরিয়ে সবচেয়ে কঠিনতম স্থানে পৌঁছে গেছে। স্বেচ্ছায় মরণ-অভিযানে নাম লিখিয়েছে স্যার জোরাহ ও গেন্ড্রি। আসন্ন বিপর্যয়ে সব ধ্বংস হবার আগেই কারো কারো চরিত্রের দৃঢ়তা যেমন স্পষ্ট হচ্ছে, তেমনি কারো কারো চরিত্রের স্বার্থপরতা ও কাপুরুষতাও প্রকট হয়ে উঠছে।