এবিপির সেরা বাঙালি, ‘বাংলাদেশি’ মাশরাফি

শুধু কবিতার জন্য অমরত্ব তাচ্ছিল্য করা সুনীল একবার বলেছিলেন, বাংলা কবিতার রাজধানী শহরের নাম ঢাকা, যদিও তাতে অবাক হয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু এবারের এবিপি আনন্দের কৃতি বাঙালি সম্মাননা মনে করিয়ে দিয়েছে বাংলার ক্রিকেটের রাজধানীর নামও ‘চাকা নট নড়নচড়নের’ ঢাকা। ইডেন গার্ডেন নয় শেরে বাংলাই বাংলার হোম অব ক্রিকেট।

টেলিভিশন সুতরাং এবিপির তালিকা হয় টিআরপির আঁক কষে, সেকারণেই তালিকায় থাকেন সর্বঘটের কাঁঠালী কলা কানাডা প্রবাসী, উত্তর ভারতে বড় হওয়া ‘আমিতো বাঙালি আছি’রাও। সুতরাং, বাংলাদেশিরাও অলংকৃত করেন সে তালিকা। ২০১৭’র তালিকায় অবশ্য একসাথে এসেছেন দু’জন। তাদের একজন মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা, অপর জন জয়া আহসান। নিজ দেশে টানা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী জয়া সাফল্য পেয়েছেন কলকাতার সিনেমাতেও। জয়াতো এমনকী অভিনয় করেছেন এবছরের ভারতের জাতীয় পুরস্কার পাওয়া সিনেমা বিসর্জনের প্রধান চরিত্রেও।

ভারতের নারী দলের পেসার ঝুলন গোস্বামীর কাছে থেকে সম্মাননা নিচ্ছেন ম্যাশ

যদিও মাশরাফির ভারত তথা আইপিএল অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি। শাহরুখ খানের ধামাকাদার দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়েও বেশিদিন থিতু হননি। কিন্তু মাশরাফিকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে কি শুধুই ক্রিকেটার হিসেবে? তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবিসংবাদিত নায়ক। ‘অধিনায়ক’ মাশরাফি নিজের জীবনে ঘুরে দাঁড়ানো থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন বলেই পুরো দলকে সাথে নিয়ে তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পের সংখ্যাও কম নয়। সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সাফল্য এখনো ফ্যানেদের মস্তিষ্কে জ্বল জ্বল করছে। তবে মাশরাফি শুধু ক্রিকেট দলের নন, পুরো বাংলাদেশেরই অন্যতম প্রতিনিধি। দেশের ভালো দিন বা খারাপ দিন যেমনই কাটুক, মাশরাফি প্রশ্নে সবাই একমত। বাঙালির নিজের দেশে, বাংলাদেশে তিনিই সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি, যাকে ভালোবাসেন সবাই। নিজের ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে যার বোলার পরিচয়ের চেয়ে বেশি আলোচ্য থেকেছে অগণিত ইনজুরির কথা। অদম্য বাঙালি বলেই না আবারো ফিনিক্স পাখির মত উড়েছেন তিনি। ফিরে এসেছেন বার বার, নিজের জায়গা পাকা করে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন অধিনায়ক হিসেবে। গণিতের সংখ্যার হিসেবে মাশরাফির ট্রফির তালিকা কিংবা উইকেটের সংখ্যা অনার্স বোর্ডে হয়ত সমীহ পাবে না বেশিদিন, অদূর ভবিষ্যতেই নতুন কোনো টাইগার হয়ত পেছনে ফেলবেন তাকে। তবুও ভক্তরা আজীবন শ্রদ্ধায় মাথা নত করবেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ১৯তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক ঘটা নড়াইল এক্সপ্রেসের কাছে।

এবিপি আনন্দের মূল অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সবার প্রিয় পাগলার জীবন নিয়ে বানানো ভিডিওচিত্রটিতে তাকে সরাসরি তুলনা করা হয়েছে সৌরভ গাঙ্গুলির সাথে!! হার না মানার জীবনে অন্য দেশের কালজয়ী বাঙালিদের সাথে এক তালিকায়, এক মঞ্চে উঠেছেন মাশরাফি। আরোও অনেক বাংলাদেশি বা বাঙালি এরপর সে মঞ্চে স্থান পেয়েছেন, পাচ্ছেন বা ভবিষ্যতে পেলেও আপাতত সেরা বাঙালিদের যেকোন তালিকায় মাশরাফিই সবচেয়ে বিশেষ।