নর্থের একপাশে সাগরে ‘বিয়ার আইল্যান্ড’ নামে ছোট্ট একটি দ্বীপে এই হাউজের অবস্থান। গেম অফ থ্রোনসে আমরা এই হাউজের কয়েকজনকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে পেয়েছি যেমন সাবেক লর্ড কমান্ডার জেওর মরমন্ট, স্যার জোরাহ, ইয়াং লেডি লিয়ানা মরমন্ট।
তাছাড়া পুরো সিরিজে এই হাউজের দুটি বিষয়কে খুব তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বলে মনে হয়। প্রথমত এরা হল অল্পসংখ্যক হাউজগুলোর একটি যাদের কাছে পৈতৃকভাবে ‘ভ্যালারিয়ন স্টিল’ এর তৈরি তলোয়ার আছে (আসলে ছিল বললে ভালো, কেননা সেটা এখন জন স্নোর হাতে)। দ্বিতীয় হল, এরা প্রচন্ডভাবে হাউজ স্টার্কের প্রতি অনুগত।
ইতিহাস বলে, হাউজ মরমন্ট বলে একসময় কিছু ছিলোই না। অনেক বছর আগে নর্থের রাজা বা স্টার্ক হাউজের লর্ড রড্রিক স্টার্ক, একটি রেসলিং ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ‘বিয়ার আইল্যান্ড’ জয় করেছিলেন যা পরবর্তীতে তিনি মরমন্ট ফ্যামিলিকে দান করে দেন। সেখান থেকেই মরমন্ট হাউজের উত্থান। আর এই কারণেই স্টার্কদের প্রতি তাদের আনুগত্যের বিষয়টা অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই! তাদের ব্যানারের প্রতীক হল, ‘কালো ভাল্লুক’। যা দ্বারা তারা বোঝাতে চায়, ‘হেয়ার উই স্ট্যান্ড’। উল্লেখ করা উচিত যে, এই হাউজটি অন্যান্য হাউজগুলোর তুলনায় অনেক গরিব। অর্থবিত্ত, সৈন্য-সামন্ত সবক্ষেত্রেই তারা যোজন যোজন পিছিয়ে।
লর্ড কমান্ডার জেওর মরমন্টের একমাত্র ছেলে স্যার জোরাহ, সিজনের শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত সারভাইভ করা একটি চরিত্র। কিন্তু মরমন্টরা মনে করে জোরাহর কিছু কৃতকর্মের কারণে তারা অসম্মানিত হয়েছে। এজন্য মরমন্টরা তাকে ত্যাগ করেছে, নিজেদের একজন হিসেবে অস্বীকার করেছে। কিন্তু জোরাহ ছিল খুব ভালো যোদ্ধা। যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান। পিতা জেওর মরমন্ট নাইট ওয়াচের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে, জোরাহ হাউজ মরমন্টের নেতৃত্বে চলে আসে। রবার্ট’স রেবেলিওনের সময় জোরাহ রবার্ট ও নেডের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল, এমনকি রবার্ট ব্যারাথিউন রাজা হওয়ার পরে গ্রেজয়রা যে রেবেলিওন করেছিল সে লড়াইয়েও নেড স্টার্ক ও জেইমি ল্যানিনস্টারের নেতৃত্বে সে ব্যারাথিয়নের পক্ষে লড়েছিল এবং গ্রেজয়দের পরাস্ত করতে ভূমিকা রেখেছিল। গ্রেজয়দের পরাস্ত করার পরে, ল্যানিস-পোর্টে অশ্বারোহীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব যুদ্ধ আয়োজন করা হয়। সেখানে জোরাহ অংশগ্রহণ করে এবং একে একে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করে। ফাইনালে তার মুখোমুখি হয় স্যার জেইমি ল্যানিস্টার। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, ফাইনালে জোরাহ পরাজিত করে জেইমিকে। তার এই বীরত্ব মুগ্ধ করে সবাইকে। রাজা রবার্ট ব্যারাথিয়ন নিজেই সকলের সামনে তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন। আর সেখানেই জয় উদযাপন করতে গিয়ে জোরাহ প্রেমে পড়ে যায় হাইটাওয়ার হাউজের লর্ড লেইটন হাইটাওয়ারের সুন্দরী মেয়ে লাইনেস হাইটাওয়ারের। বিয়েও হয়। লাইনেস ছিল স্যার জোরাহর দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী অবশ্য আগেই মারা যায়, তাদের কোনো সন্তানও ছিলনা। এই বিয়ের পরেই মূলত সমস্যাটা শুরু হয়। স্ত্রী ছিল উচ্চ ও ধনী বংশের বিলাসী কন্যা। কিন্তু মরমন্টদের এতো অর্থ না থাকায়, স্ত্রীর চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল স্যার জোরাহকে। স্ত্রীকে খুশি রাখবার জন্য তারপর সে চেষ্টা করল অন্যায় ও ঘৃণিত পথে অর্থ উপার্জনের। শুরু করল দাস ব্যাবসা। যা নেড স্টার্কের কানে পৌঁছালে, ওয়ার্ডেন অফ দ্যা নর্থ হিসেবে নেড তার বিচার করে এবং মৃত্যুদণ্ড দেয়। যদিও সেই যাত্রায় জোরাহ, নিজের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে দেশত্যাগ করে এবং রক্ষা পায়।
স্যার জোরাহর অনুপিস্থিতে মরমন্ট হাউজের নেতৃত্বে আসেন তারই আন্টি, জেওর মরমন্টের বোন মেগ মরমন্ট। তার পাঁচ কন্যা। কিন্তু সেই মেয়েদের পিতা কে তা সম্পর্কে কিছু উল্লেখ নেই । মেগ ও তার বড় কন্যা ডেসি, রব স্টার্কের পক্ষে ল্যানিস্টারদের বিপক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং রেড ওয়েডিংয়ে নিহত হন। তিনি মারা যাওয়ার পরে তার আরেক কন্যা ইয়াং লেডি লিয়ানা মরমন্ট এখন মরমন্ট হাউজের নেতৃত্বে আছে। কথিত আছে, নেড স্টার্কের বোন ও জনের মা লিয়ানা স্টার্কের নামানুসারেই তার নাম লিয়ানা রাখা হয়েছে। ছোট্ট লিয়ানাও তার বংশের ধারা অনুযায়ী, স্টার্কদের প্রতি নিজের লয়্যালিটি দেখিয়ে যাচ্ছে বারবার। স্ট্যানিস ব্যারাথিয়ন যখন নর্থের লর্ডদের চিঠি পাঠিয়ে তাকে রাজা হিসেবে মেনে নেয়ার নির্দেশ দেন তখন লর্ড লিয়ানা জবাব দিয়েছিল, ‘তখনই হাউজ মরমন্ট আপনাকে রাজা মানবে, যখন হাউজ স্টার্ক আপনাকে রাজা হিসেবে গ্রহণ করবে!’ লিয়ানা জন স্নোকেও সমর্থন করেছে উইন্টারফেল জয় করতে।
স্টার্ক পরিবারের প্রতি তাদের লয়্যালিটি, মরমন্টদের অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। পুরো সিরিজে দেখা গেছে খুব কম হাউজ ও তাদের লর্ডরা আছে যারা সবরকমের ক্ষমতার লোভ, ভয় ভীতি উপেক্ষা করে এরকম বিশ্বস্ত থেকেছে যে কারো প্রতি এবং নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি।
‘Bear Island knows no king but the King in the North, whose name is STARK.’ এই হল মরমন্ট হাউজ!