তিন মাস আগেও উন্নত বিশ্ব হয়তো ভাবতেও পারেনি একটি ভাইরাস কেড়ে নিতে পারে এক লাখেরও বেশি প্রাণ!
২০১৯ এর ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে এই ভাইরাসের সূত্রপাত হয়। সেখান থেকে চার মাসের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পরেছে ১৮৫ টি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
এই ভাইরাস সংক্রমনের লক্ষণ সাধারন জ্বর, ঠান্ডা-কাশি, শ্বাসকষ্ট। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই প্রাণ নিয়েই শান্ত হয় এই সংক্রমণ।
শুরুতে পুরো বিশ্বই এই সাধারণ দর্শণ ভাইরাসটি নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাতে চায়নি। কারণ এর সংক্রমনের ফলে মৃতের হার ছিলো নেহাত দুই থেকে চার শতাংশের মতো। শুরুতে সংক্রমনের সংখ্যাও খুব বেশি ছিলো না। আর তাই সেই হিসেবে মৃত্যুর মাত্রা নিয়ে সুশীল সমাজ তেমন একটা মাথা ঘামাতে চায়নি। কিন্তু ১১ এপ্রিল না পড়তেই পুরো পৃথিবী জুরে এই ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে এক লাখেরও বেশি প্রাণ, শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাড়ে ১৭ লাখ।
বাংলাদেশের সময় অনুসারে ১১ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যা ৬.৩০ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে মারা গেছেন ১ লাখ ৩ হাজার ৫৩৬ জন। আর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৭ লাখ ৯ হাজার ১৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪০৪ জন।
চীনের পর ইওরোপে থিতু হয়েছিলো করোনাভাইরাস। সব থেকে বেশি তান্ডব চালিয়েছে ইতালি এবং এরপরই রয়েছে স্পেন। তবে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো দুই সপ্তাহ আগেও ভাবতে পারেনি করোনার ছোবলে অল্প সময়েই ১৮ হাজারের বেশি প্রাণহানী ঘটবে। এই পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ৪ হাজার ৭৮০। শুধু যে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতম হচ্ছে তাই নয়, বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভীতকেও নাড়িয়ে দিয়েছে এই মহামারী।
বিংশ শতাব্দিতে এসে উন্নত প্রযুক্তি আর চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাদুর থেকে ছড়ানো একটি ভাইরাস যে পুরো পৃথিবীর মানুষকে চার দেয়ালের ভিতর আটকে দিতে পারে, এমন ধারণা কারো মধ্যে হয়তো উঁকিও দেয়নি।
মানব সভ্যতায় মহামারীর ইতিহাস নতুন নয়। কিন্তু মানুষের অস্তিত্বকে নাড়িয়ে দিতে পারে এমন মহামারীর মুখোমুখি হয় নি আধুনিক বিশ্ব। তাই অনেকের মতে, বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় এই করোনা মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বিশ্বের প্রতিটি দেশ।
১৯১০-১১ সালের দিকে ভারতে সূত্রপাত ঘটে ‘সিক্সথ কলেরা’-এর। এরপর তা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে মিডেল ইস্ট, উত্তর আফ্রিকা, ইওরোপ এবং রাশিয়ায়। ওই মহামারীতে মারা যায় প্রায় ৮ লাখের মতো মানুষ। ১৮৫২ সালের দিকে ‘থার্ড কলেরা’ আঘাত হানে ভারত সহ আরও বেশ কিছু দেশে। তখন মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছিলো ১০ লাখের কাটা।
১৯১৮ সালে হওয়া ‘স্প্যানিশ ফ্লু’-কে ধরা হয় মহামারী ইতিহাসের সবথেকে ভয়াবহ অধ্যায় হিসেবে। এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলো ৫০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ এবং মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছিলো ৫০ মিলিয়ন। এর আগে সবথেকে ভয়াবহ মহামারী হিসেবে পরিচিত ছিলো ১৩৪৬-১৩৫৩ সালের ’দ্য ব্ল্যাক ডেথ’। এই মহামারীতে মারা যায় ২০০ মিলিয়ন মানুষ।
তবে সব কথার শেষে উঠে আসে, ওই সময়গুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা বর্তমানের তুলনায় কিছুই ছিলো না বলতে গেলে। আর তাই মৃত্যুর হারও ছিলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেই হিসারে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে এখনও কিছুই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
তাই যেহেতু ওষুধ অথবা চিকিৎসা ব্যবস্থা দিয়ে এর তান্ডব কমানো যাচ্ছে না, এর লাগাম টানতে আমাদেরই সচেতন হতে হবে। দেরী হলেও এখনও যদি সচেতন হওয়া যায়, ঘরে থেকে ও সামাজিক দুরত্ব মেনে চলা যায়, নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে বাঁচানোর সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে।